জানি! বলল কিশোর। উইল আমাদেরকে সাহায্য করেছে। চলো ওকে ধন্যবাদ জানাই!
পরে, বলল জিনা। আগে তোমাকে একটা জিনিস দেখাতে চাই। তোমার সাহায্য দরকার! জলদি!
জিনা কিশোরকে পিছনে নিয়ে, নীচে নেমে এসে বাইরে বেরিয়ে এল। লোকজন দলে দলে গ্লোব ছেড়ে বেরোচ্ছে। সূর্য পাটে বসেছে।
এদিকে, বলল জিনা। থিয়েটারের পিছনে, গাছ-গাছালির জটলার উদ্দেশে পা বাড়াল ও।
ও আর কিশোর অন্ধকারময় ছাউনির ভিতরে ঢুকতেই, এক গাছের কাছে। অদ্ভুতদর্শন এক অবয়ব দেখতে পেল কিশোর। বেগুনী এক আলখেল্লা ওটার লোমশ পিঠ ঢাকতে পারেনি। সোনালী এক পরচুলা আর সিংহের মুখোশ লুকোতে পারেনি লোমশ মাথাটা।
ঢোক গিলল কিশোর।
সেই ভালুকটা! তুমি ওকে চুরি করেছ!
করতে বাধ্য হয়েছি, জানাল জিনা। আমি যখন মালগাড়িটার কাছে যাই তখন কেউ ওখানে ছিল না। ওর গায়ে পোশাক পরিয়ে দিই। যাতে এখানে আসার পথে কেউ দেখলে মনে করে ও-ও একজন অভিনেতা।
কিন্তু তুমি ওকে এভাবে চুরি করতে পারো না! বলল কিশোর।
আমি চুরি করিনি। ওকে রক্ষা করেছি, বলল জিনা। ওকে নিয়ে এখন কী করব বুঝতে পারছি না। তুমি কী বলে?
ঠিক এমনিসময় ভালুকের মালিক ধেয়ে এসে জঙ্গলে ঢুকল।
আমার ভালুক কোথায়? গর্জে উঠল। মুখের চেহারা লাল। কটমট করে চেয়ে রয়েছে। মুখ খিস্তি করছে। চোরের দল! চেঁচিয়ে উঠল। ওকে ফিরিয়ে দে! আমি ওকে লড়াইয়ের জন্যে বিক্রি করব!
না! বলল জিনা। লোকটা আর ভালুকটার মাঝখানে দাঁড়িয়ে রয়েছে। ও নিরীহ ভালুক! যোদ্ধা নয়!
ও ঠিকই বলেছে! কথাটাকে সমর্থন করল কিশোর। তা ছাড়া ভালুক লড়াই ভাল নয়! মোটেই ভাল নয়!
সত্যি কথা, গমগম করে উঠল একটি কণ্ঠ।
কিশোর, জিনা আর ভালুকের মালিক পাই করে ঘুরে দাঁড়াল। জঙ্গলের। কিনারে দাঁড়িয়ে উইল আর পাক।
৯
আপনি সুবিধের লোক নন, ভালুকের মালিকের উদ্দেশে তিরস্কার করে বলল উইল। নিরীহ এক ভালুককে কিনা লড়াইয়ের জন্যে বেচে দিতে চান। যাকগে, আমি একটা নাটক লেখার কথা ভাবছি, যেখানে ভালুকের জন্যে। একটা পার্ট থাকবে। কাজেই এই টাকা কটা নিয়ে কেটে পড়ুন।
ভালুকের মালিকের হাতে কটা সোনার মুদ্রা গুঁজে দিল উইল।
লোকটার চোখজোড়া বিস্ফারিত হয়ে গেল। হেসে উঠল সে।
বেশ তো, ওকে নিতে চান নিন না! বলল। তারপর হাঁটা ধরল।
ধন্যবাদ! চেঁচিয়ে বলল উইল। এবার পাকের দিকে ফিরল। আমাদের নতুন অভিনেতাটিকে আস্তাবলে নিয়ে যাও। সবাইকে বোলো কেউ যেন ওকে ভয় না পায়। ভালুকটা ওদের সবার চাইতে শান্ত।
চল আমার সাথে, বলল পাক। ভালুকটাকে এক হাতে জড়িয়ে ধরে গাছের জটলা থেকে বের করে নিয়ে গেল। মঞ্চ ভাল লাগবে তোর, বুড়ো খোকা।
বাই, পাক! বাই, ডন! বলে উঠল জিনা।
পাক মৃদু হেসে হাত নাড়ল। ভালুকটার দৃষ্টি দুমুহূর্ত স্থির হয়ে রইল কিশোর আর জিনার উপর। ওর চোখে কৃতজ্ঞতার ছাপ। এবার টলতে টলতে চলে গেল পাকের সঙ্গে।
ডনকে সাহায্য করার জন্যে ধন্যবাদ, উইল, বলল জিমা। এবং আমাদেরকেও সাহায্য করার জন্যে।
ধন্যবাদ তো আমি তোমাদেরকে দেব, বলল উইল। তোমাদের জন্যেই তো আজকের দিনটা ভালয় ভালয় পার করা গেছে।
আসলে বলতে চাইছেন রাতটা, বলল কিশোর।
ঠিক বলেছ, বলল উইল। ওহ, এই যে তোমার ব্যাগ। তুমি এটার। কথা ভুলে গেছ। কিশোরের হাতে চামড়ার ব্যাগটা তুলে দিল। এবার ওদের স্ক্রল দুটো তুলে ধরল।
তোমরা এগুলো রাখতে পারো, বলল উইল। কিশোরের হাতে তুলে দিতেই ও স্ক্রল দুটো ব্যাগে ঢুকিয়ে রাখল। এখন কোথায় যাবে তোমরা? প্রশ্ন করল উইল।
লণ্ডন ব্রিজের ওপাশে, জানাল জিনা।
ও, তা হলে চলো তোমাদেরকে আমার নৌকায় করে পৌঁছে দিই। এসো।
ধুলোময় এক পথ ধরে ওদেরকে নদীর দিকে নিয়ে চলল উইল। পড়ন্ত বিকেলের আলো গাছ-পালা ভেদ করে তেরছা হয়ে পড়েছে। শীঘ্রিই ওরা টেমস নদীতে ভেড়ানো ছোট্ট এক দাঁড় টানা নৌকা দেখতে পেল।
উঠে পড়ো, বলল উইল।
ওরা তিনজন একে একে নৌকায় চড়ল। উক থেকে নৌকার বাঁধন খুলল উইল। এবার দাঁড় বাইতে লাগল।
আকাশের বেগুনী-গোলাপী রং প্রতিফলিত হচ্ছে নদীর পানিতে। ছোট ছোট ঢেউ। এমুহূর্তে অল্প কটা সাদা রাজহাঁস ভেসে বেড়াচ্ছে নদীর বুকে। আগের মতই দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে নদীটা, কিন্তু কিশোর এবার আর কিছু মনে করল না। ওর সহ্য হয়ে গেছে।
নোটবই আর পেন্সিল বের করল ও।
কী করছ? উইল জিজ্ঞেস করল।
নোটবইতে কিছু স্মৃতি লিখে রাখতে চাই, জানাল কিশোর।
আমি আমার স্মৃতির বইতে তোমাদের দুজনের নামই লিখে রাখব, বলল উইল।
মুচকি হাসল কিশোর।
আমার একটা প্রশ্ন আছে, উইলের উদ্দেশে বলল জিনা। রানী এলিজাবেথের দাঁতগুলো অমন কালো কেন?
অতিরিক্ত চিনি, বলল উইল।
ওঁর নিশ্চয়ই খুব খারাপ লাগে, বলল জিনা।
না, না। রানী জানেনই না তাকে, কেমন দেখায়। গত বিশ বছর ধরে। আয়না দেখেন না তিনি, জানাল উইল।
সত্যি? জিনা অবাক।
হ্যাঁ, বলল উইল। রানী ভান করেন তার বয়স কম এবং তিনি সুন্দরী। ঠিক তুমি যেমন ভান করেছ তুমি ছেলে, আর ভালুকটা যেমন ভান করেছে ও অভিনেতা। আসলে গোটা দুনিয়াটাই একটা রঙ্গমঞ্চ।
কথাটা মনে ধরল কিশোরের। নোটবইতে টুকে নিল।
পাশ কাটানোর সময় লণ্ডন ব্রিজের দিকে মুখ তুলে চাইল কিশোর। সেতব দোকান-পাটগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। নাটকের দর্শকদের ভিড় পাতলা হয়ে আসছে।