রানী যখন পরীদেরকে বলল তাকে গান গেয়ে ঘুম পাড়াতে, জিনা এগিয়ে গেল। ওর স্ক্রল থেকে পরিষ্কার কণ্ঠে এবং আবেগ ঢেলে গেয়ে উঠল:
ইউ স্পটেড স্নেকস, উইথ ডাবল টং,
থর্নি হেজহগস, বি নট সীন;
জিনা এমনভাবে হাত নাড়ল যেন সাপ আর কাঁটাচুয়াদের তাড়িয়ে দিচ্ছে।
নিউটস অ্যাণ্ড ব্রাইণ্ড ওয়র্মস, ড নো রং,
কাম নট নিয়ার আওয়ার ফেয়ারি কুইন…
জিনা তর্জনী তুলে গোসাপ আর অতি ছোট চোখবিশিষ্ট পোকাদের শাসাল। দর্শকরা হাসিতে ফেটে পড়ল।
জিনা গান গেয়ে চলল। গানের কথার সঙ্গে মিলিয়ে অঙ্গ ও মুখভঙ্গি করছে। ও এমনকী খানিক নাচও জুড়ে দিল গানটির সঙ্গে।
ওর যখন শেষ হলো, দর্শকরা তখন হাততালি দিচ্ছে, হর্ষধ্বনি করছে আর মাটিতে পা ঠুকছে।
অসাধারণ, অ্যাণ্ডি! জিনা মঞ্চ ত্যাগ করলে বলল উইল।
দারুণ দেখিয়েছ! কিশোর বলল।
ধন্যবাদ! বলল জিনা। স্ক্রলটা উইলকে ফিরিয়ে দিল। আমাকে কি আবার মঞ্চে যেতে হবে?
নাটক শেষ হোক, আমরা সবাই যখন অভিবাদন জানাব তখন যাবে, জানাল উইল।
এসময় দর্শকদের আবারও হাসাহাসি করতে শুনল কিশোর। নাটক দেখতে মন চাইল ওর। কাজেই থিয়েটারের পিছনদিকে আবছায়া এক জায়গা খুঁজে নিয়ে সেখান থেকে দেখতে লাগল।
নাটকের চরিত্রদের কথা-বার্তা সব না বুঝলেও কাহিনিটা ঠিকই বুঝতে পারল ও। প্রেম-ভালবাসা নিয়ে নাটক। কিন্তু কেউই পছন্দের মানুষটিকে বিয়ে করতে পারছে না।
সবচেয়ে মজার অংশটা পরী রাজা ও পরী রানীকে নিয়ে। রাজা পাগল রানীর জন্য। তাই সে রানীর চোখের পাতায় জাদুর ফুলের রস চিপে দেয়, রানী যাতে যাকে প্রথমে দেখবে তার প্রেমে পড়ে যায়।
পাক কাজ করে রাজার পক্ষে। সে আরেকটু কায়দা করতে চায়। গেঁয়ো এক লোককে গাধার মাথা পরায় সে। ঘুম ভাঙতেই রানী গর্দভ মানবটিকে দেখে। জাদুর বলে রানী পাগলের মত লোকটির প্রেমে পড়ে যায়।
পরী রাজা শেষমেশ জাদুর মায়া কাটিয়ে দেয়। গর্দভ মানব যখন ঘুমিয়ে ছিল পাক তখন তাকে আবার মানুষ বানিয়ে দেয়। ঘুম ভাঙার পর লোকটা ভাবে সে স্বপ্ন দেখেছে।
ইতোমধ্যে কিশোরের পাশে, এক দল অভিনেতা জড় হয়েছে নাটকের শেষ দৃশ্যের জন্য।
আমার সিংহের মুখোশটা পাচ্ছি না! একজন হাহাকার করে উঠল। মুখোশ ছাড়া সিংহ সাজব কীভাবে!
আস্তে, মুখোশ ছাড়াও চলবে, বলল উইল। স্রেফ গর্জন ছেড়ো! দুবার হুঙ্কার দিলেই হবে।
অভিনেতাদেরকে মঞ্চের দিকে ঠেলে দিল উইল। ভ্রূ জোড়া মুছে নিল। এবার নজর পড়ল কিশোরের উপরে।
অ্যাণ্ডিকে নিয়ে এসো! বলল সে। নাটক শেষ হয়ে এসেছে প্রায়।
জিনা? কোথায় জিনা? ভাবল কিশোর। বেশ কিছুক্ষণ ওকে দেখেনি ও। কস্টিউম রূমে উঁকি দিল। নেই।
বুকের ভিতরে ধড়াস করে উঠল কিশোরের। মাথায় এল ভয়ঙ্কর এক ভাবনা…
না, ফিসফিসিয়ে বলল।
সিঁড়ি ভেঙে দৌড়ে নেমে এল কিশোর। দরজা খুলল। জিনাকে থিয়েটারের পিছনের গাছ-গাছালির আড়াল থেকে দৌড়ে আসতে দেখে স্বস্তি ফিরে পেল।
এখন অভিবাদন জানানো হবে! বলে জিনার হাত চেপে ধরল। কোথায় গেছিলে? কী করছিলে?
পরে দেখাব! বলল জিনা।
ওরা দুজন দুদ্দাড় করে সিঁড়ি ভেঙে উপরে উঠে গেল।
উইল আর কজন অভিনেতা অপেক্ষা করছিল।
পাক তখন মঞ্চে তার শেষ বক্তৃতা দিচ্ছে:
সো গুড নাইট আনটু ইউ অল।
গিভ মি ইয়োর হ্যাণ্ডস ইফ উই বি ফ্রেণ্ডস…
কিশোর! অ্যাণ্ডি! বলল উইল। ওদের হাত চেপে ধরল।
পাক তার বক্তব্য শেষ করল। করতালিতে ফেটে পড়ল দর্শকরা। সে সঙ্গে শিস দিচ্ছে, তারস্বরে চেঁচাচ্ছে।
কিশোর আর জিনা উইল আর অন্যান্য অভিনেতাদের সঙ্গে দৌড়ে মঞ্চে গিয়ে উঠল। জনতার উল্লাসধ্বনির মধ্যে একবার…দুবার…তিনবার মাথা নুইয়ে অভিবাদন জানাল ওরা।
৮
উইল সামনে এগিয়ে গিয়ে দুহাত উঁচু করল। জনতা ধীরে ধীরে শান্ত হয়ে এল।
আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ, বলল সে। এবং দুনিয়ার সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ মানুষটি, ধন্যবাদ আপনাকেও। তিনি আজকে উপস্থিত থেকে আমাদের সবাইকে কৃতজ্ঞ করেছেন।
মঞ্চের উপরে গ্যালারি, সেদিকে নত হয়ে এক মহিলার উদ্দেশে অভিবাদন জানাল উইল। মুক্তোখচিত সাদা এক পোশাক আঁর পরনে। নেকারে মুখ ঢাকা।
মহিলা উঠে দাঁড়িয়ে ধীরে ধীরে নেকাব সরালেন। ফ্যাকাসে, কুঁচকানো চামড়া আর ছোট ছোট কালো চোখ দেখা গেল। মাথায় লাল পরচুলা।
দর্শকরা সশ্রদ্ধ শ্বাস চাপল। ধপ করে হাঁটুর উপর বসে পড়ল সবাই।
রানী এলিজাবেথ দীর্ঘজীবী হোন! বলল উইল।
রানী এলিজাবেথ দীর্ঘজীবী হোন! চেঁচিয়ে উঠল জনতা।
রানী এলিজাবেথ দীর্ঘজীবী হোন! চেঁচাল কিশোর আর জিনা।
রানী স্মিত হাসলেন। তার দাঁতগুলো সব কালো! দর্শকরা ব্যাপারটাকে যেন পাত্তাই দিল না। আরও জোরে উল্লাসধ্বনি করে উঠল।
রানী একটা হাত তুলতেই মুহূর্তে নিশ্চুপ হয়ে গেল জনতা।
আমি আপনাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি, বললেন রানী। এবং আমি সব কজন দক্ষ অভিনেতাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আজকে তারা আমাদেরকে উপহার দিয়েছেন বিশেষ এক জাদু-নাটকের জাদু। তাঁরা দিনকে রাত করে দিয়েছেন।
আরি, ফিসফিস করে বলল কিশোর। এই তো-সেই বিশেষ জাদু। ওদের মিশন শেষ হয়েছে।
দর্শকরা আবারও হর্ষধ্বনি করে উঠল। অভিনেতারা মঞ্চত্যাগের পর। উইলকে ঘিরে ধরে অভিনন্দন জানাল।
জিনা একপাশে টেনে নিয়ে গেল কিশোরকে।
পেয়ে গেছি! বলল ও। আমাদের জাদু!