পড়ে দেখি- শুরু করেছিল কিশোর।
গিয়ে দেখি! বলল জিনা। বেয়ার গার্ডেনের উদ্দেশে হাঁটা দিল।
কিশোর বইটা ঢুকিয়ে রেখে ওর পিছু নিল। কাছাকাছি হতেই, জোরাল। চেঁচামেচি আর হাসাহাসির শব্দ শুনতে পেল গোল বাড়িটার ভিতর থেকে।
থেমে দাঁড়াল জিনা।
দাঁড়াও, বলল ও। জায়গাটা মনে হচ্ছে ভাল না। আরেকটু বরং পড়ে দেখো।
কিশোর বইটা আবারও খুলল। জোরে জোরে পড়ল:
বেয়ার গার্ডেন নামের মল্লভূমিতে, দর্শকরা
কুকুরের সঙ্গে ভালুকের লড়াই দেখত।
প্রাচীন ইংল্যাণ্ডে পশুর লড়াই ছিল
প্রচলিত এক খেলা, আজকে এটা
আইন করে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
কুকুরের সাথে ভালুকের লড়াই? ছি! বলল জিনা। আমি এসব সইতে পারব না!
আমিও না, বলল কিশোর। চলো চলে যাই। হাঁটা দিল।
অ্যাই, কিশোর! ওদিকে তাকাও! বলে উঠল জিনা। কাছের এক মালগাড়ি আঙুল-ইশারায় দেখাল। এই ভালুকটা ব্রিজে আমাদের পাশ দিয়ে গেছিল!
৪
মালগাড়িটার কাছে দৌড়ে গেল কিশোর আর জিনা। ওটার পিছনদিকে একটা খাঁচা। খাঁচার ভিতরে বিশাল এক বাদামি ভালুক।
জানোয়ারটা জবুথুবু হয়ে বসা। মাথা এখনও নিচু। মালগাড়িটায় এক সাইনবোর্ড লাগানো। তাতে লেখা; নাচুনে ভালুক ডন।
ডন? প্রশ্ন করল জিনা। তুমি কি মারামারি করবে?
নিঃসঙ্গ চেহারার ভালুকটা প্রকাণ্ড মাথা তুলে জিনার দিকে চেয়ে রইল। ওটার কালো চোখজোড়া বিষণ্ণ। নিচু এক গোঙানি বেরিয়ে এল ওটার বুক চিরে।
বুঝতে পারছি, বলল জিনা। তুমি লড়তে চাও না। তুমি চাইছ আমি যাতে তোমাকে দূরে কোথাও নিয়ে যাই। ভালুকের খাঁচার দরজার দিকে হাত বাড়াল ও।
সরে যাও ওখান থেকে! ক্রুদ্ধ চিৎকার ছাড়ল কে একজন। ওটা আমার ভালুক!
চরকির মতন ঘুরে দাঁড়াল কিশোর আর জিনা। মালগাড়ির চালক রীতিমত তেড়ে আসছে ওদের দিকে।
ও আমার! আমি ওকে বিক্রি করব! গর্জাল লোকটি।
চলে এসো, জিনা, বলল কিশোর। জিনাকে টান দিয়ে রাস্তা ধরে হেঁটে চলা মানুষের ভিড়ের মধ্যে নিয়ে এল।
কিন্তু ডনকে যে আমার উদ্ধার করতে হবে! জরুরী কণ্ঠে বলল জিনা। কাঁধের উপর দিয়ে চাইল। ওই লোকটা ওকে লড়াইয়ের জন্যে বেচে দিতে
জানি, বলল কিশোর। কিন্তু আমরা তো ওকে চুরি করে নিয়ে যেতে পারি না। লোকটা হাজার হলেও ওর মালিক।
চারধারে নজর বুলাল ও। ভালুকটার উপর থেকে জিনার মনোযোগ সরাতে চাইছে। সেই টোকাই ছেলেগুলোকে দেখতে পেল। গোলাকার, সাদা। এক-দালানের দিকে হেঁটে চলেছে ওরা।
সেই ছেলেগুলো! বলে উঠল কিশোর। চলো, দেখি ওরা কোথায় যায়।
ডনের কী হবে?
পরে ভাবা যাবে, জিনার প্রশ্নের জবাবে বলল কিশোর। এখন চলো। ছেলেগুলোকে ফলো করি।
সাদা দালানটার দিকে জিনাকে এগিয়ে নিয়ে চলল সে। কাছে আসার পর, কিশোর সামনে লাগানো সাইনবোর্ডটা পড়ল:
গ্লোব থিয়েটারে নাটক
আ মিডসামার নাইটস ড্রিম
ভাল! ভাবল কিশোর। জিনা নাটক ভালবাসে। স্কুলে অভিনয়ও করে।
থিয়েটারের দরজায় দাঁড়িয়ে ছিল এক লোক। হাতে একটা বাক্স।
স্ট্যাণ্ডের জন্য এক পেনি! স্ট্যাণ্ডের জন্য এক পেনি! চেঁচাচ্ছে।
টোকাই ছেলেগুলো বাক্সে কয়েন ফেলে ভিতরে প্রবেশ করল।
মাত্র এক পেনি! বলল কিশোর। একদম সস্তা!
কিন্তু আমাদের কাছে তো পেনি নেই, বলল জিনা। তা ছাড়া, আমি চাই ফিরে নিয়ে ভালুকটাকে মুক্তি দিতে।
দীর্ঘশ্বাস ফেলল কিশোর।
মুক্তি যদি দিতেও পারো কী করবে ভালুকটাকে নিয়ে? জিজ্ঞেস করল।
কিছু একটা ভেবে বের করে ফেলব, জানাল জিনা।
মালিকটা যখন কাছেপিঠে থাকবে না তখন ভেবে বের কোরো, বাতলে দিল কিশোর। এখন এই নাটকটা সম্পর্কে কিছু জানা যাক।
চটপট গবেষণার বইটা বের করল ও। গ্লোব থিয়েটারের এক ছবি খুঁজে নিল। ও চায় জিনা ভালুকটার কথা ভুলে যাক, তাই আবেগ ঢেলে পড়ল:
প্রাচীন ইংল্যাণ্ডে প্রথম থিয়েটার গঠিত
হয়। তখনকার দিনে যেহেতু বিদ্যুৎ
ছিল না, দিনের আলোয় নাটক
মঞ্চস্থ হত। প্রায় সবাই নাটক দেখতে
যাওয়ার সামর্থ্য রাখত।
ভাল না? বলল কিশোর।
দীর্ঘশ্বাস ফেলল জিনা।
কিশোর দরাজ, নাটুকে কণ্ঠে পড়তে লাগল:
দর্শনীর তারতম্যের উপরে দর্শকদের বসার
স্থান নির্ভর করত। যারা বেশি
টাকা দিত তারা মঞ্চের উপরে উঁচু গ্যালারিতে
বসত। অন্যরা দাঁড়াত নীচে—
এই, ছেলে! কে একজন চেঁচিয়ে উঠল।
মুখ তুলে চাইল কিশোর।
এক লোক শশব্যস্তে ওদের দিকে এগিয়ে এল। লোকটার পা দুখানা লম্বা, পরিপাটী করে ছাঁটা দাড়ি আর উজ্জ্বল একজোড়া চোখ।
বাহ, তুমি তো ভারী চমৎকার করে পড়তে পারো! বলল লোকটা। আমি ওখান থেকে শুনছিলাম!
কিশোর লাজুক হাসল।
না, সত্যি অসাধারণ তোমার আবৃত্তি! লোকটা বলল। ঠিক তোমার, মতই একটা ছেলে খুঁজছি আমি!
৫
ভাল আবৃত্তি করে এরকম ছেলে দরকার কেন আপনার? লোকটিকে জিজ্ঞেস করল জিনা।
কারণ একটু আগে আমি দুটো পরীকে হারিয়েছি! জবাব এল। কিশোরের দিকে আঙুল নির্দেশ করল। তুমি দুজনেরটাই পড়তে পারবে?
আপনি একটা পাগল, ভাবল কিশোর।
আচ্ছা, চলি, দেখা হবে, বলল ও। জিনাকে কনুইয়ের আলতো তো মেরে এগোতে বলল।
দাঁড়াও, দাঁড়াও, বলল জিনা। লোকটার দিকে ঘুরে চাইল। ও দুজনেরটাই পড়তে পারবে মানে কী? কোথায় পড়তে হবে ওকে?
দুটো ছেলের পরীর অভিনয় করার কথা ছিল, কিন্তু তারা আসেনি, বলল লোকটি। কিন্তু এই ছেলেটা কী সুন্দর আবেগ দিয়ে পড়ে! ও আমাদের উদ্ধার করতে পারবে!