ছোট এক মাকড়সাকে এত ভয়! তোমার চেঁচানিতে বিগ ফুট ভয় পেয়ে পালিয়েছে, ডানাকে বলল মুসা।
ওটা ছোট হলো? ডানা তীক্ষ্ণস্বরে চেঁচিয়ে উঠল। আস্ত গ্রীন হিলসের সমান।
কাজ হয়ে গেছে, বলল কিশোর। প্রমাণ এখন আমাদের কাছে।
রেডিয়াম ঘড়ি দেখে নিল রবিন।
এখনই না গেলে বাস মিস করব, বন্ধুদেরকে বলল ও।
এসো, বলল মুসা। মেটে রাস্তাটা ধরে দৌড় দিল বাস স্টপের উদ্দেশে। বন্ধুরা ওর পিছু নিল।
পোকার কামড় খেয়ে জান শেষ, অভিযোগ করল ডানা। ভীষণ জ্বলুনি হচ্ছে।
পিছনে দেখো, হঠাৎই বলে উঠল রবিন। কাঁধের উপর দিয়ে চাইল ওরা চারজন। মি. স্কোয়াশ দানবীয় পা পেলে তেড়ে আসছে। ওদের দিকে। মাথায় কাউবয় হ্যাট চোখে খেপাটে দৃষ্টি।
মুসা সবার আগে বাসটাকে দেখতে পেল।
দাঁড়ান! চিৎকার করল ও। বাস থামানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু দেরি হয়ে গেছে। ওরা যখন মেটে রাস্তাটার শেষ প্রান্তে, এসময় বাসটা গোঁ গোঁ করে রওনা হয়ে গেল।
আমরা রুবি মাউন্টেনে আটকা পড়ে গেছি! আর্তনাদ ছাড়ল রবিন।
আমরা খতম, বলল কিশোর।
এখনই না, চেঁচাল মুসা। দৌড়াও!
১২
মুসা, ডানা, রবিন আর কিশোর বাসের পিছন পিছন দৌড় দিল।
দাঁড়ান! চেঁচাল ওরা। রাস্তার এক বাঁক ঘুরল। আরেকটু হলেই সিটি বাসটার পিছনে ধাক্কা খেত ওরা।
আমি ভেবেছিলাম তোমরা হিচ হাইকিং করে শহরে ফিরে গেছ, ওরা বাসে উঠলে বলল ড্রাইভার। ভাগ্যিস একজন প্যাসেঞ্জার তোমাদের হাত নাড়া দেখতে পেয়েছিল।
ডানা হাঁফাচ্ছে দস্তুর মত, একটা সিটে নেতিয়ে পড়ল।
থেমেছেন বলে ধন্যবাদ, বলল ও।
আপনি আমাদের জীবন বাঁচিয়েছেন! ড্রাইভারকে বলল রবিন। পিছনের জানালা দিয়ে চাইল ও। দেখতে পেল মি. স্কোয়াশ রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে।
বাস সগর্জনে বড় রাস্তা ধরে গ্রীন হিলসের দিকে ছুটে চলল। কিশোর ওর ক্যামেরা শক্ত করে চেপে ধরে আছে, কিন্তু কেউ কোন কথা বলল না, যতক্ষণ পর্যন্ত রুবি মাউন্টেন আর মি. স্কোয়াশ দৃষ্টিসীমার আড়াল না হলো।
.
পরদিন সকাল। স্কুল বসার আগে ওরা ডেনভারস ডিপার্টমেন্ট স্টোরে মিলিত হলো। ছবি ভর্তি এক খাম কিশোরের হাতে।
এখানে আছে আমাদের প্রমাণ, বলল ও।
দেখি, বলল মুসা।
কিশোর খামটা খুলল, কিন্তু কেউ একজন পিছন থেকে ওর চেপে ধরল।
কিশোর চোখ তুলে চাইতেই রেঞ্জার পপির ক্রুদ্ধ মুখের চেহারা দেখতে পেল।
বাস ড্রাইভারের কাছে শুনলাম তোমরা রুবি মাউন্টেনে গিয়েছিলে। ওখানে কী করতে গিয়েছিলে? প্রশ্ন করলেন।
বিরাট ঝুঁকি নিয়ে ফেলেছ তোমরা। ওখানে বুনো জীব-জন্তু ঘুরে বেড়ায়।
কিশোর রেঞ্জার পপির হাত থেকে ছুটে খামটা তুলে ধরল।
ওখানকার বুনো জীব-জন্তুদের সম্পর্কে আমরা সবই জানি। এ ও জানি আপনি পালের গোদাটাকে খুঁজে বেড়াচ্ছেন। কিন্তু আমরা আগে ওটাকে খুঁজে পেয়েছি। এই ছবিগুলো তার প্রমাণ। মিস্টার স্কোয়াশ ইতিহাস হয়ে যাবে!
কপাল কুঁচকে গেল রেঞ্জার পপির।
তুমি কী বলছ কিছুই বুঝতে পারছি না, বললেন তিনি। বোঝার মত সময়ও নেই, কারণ আমাকে একজন স্কয়্যার নাচ জানা। টিচারের খোঁজ বের করতে হবে।
মিস্টার স্কোয়াশকে নিন না, বলল ডানা।
রেঞ্জার পপিকে বিভ্রান্ত দেখাল।
আমি কোন স্কোয়াশকে চিনি না, যে ছিল সে দুমাস আগে চলে গেছে।
কিশোর বন্ধুদের দিকে চেয়ে
উঁচু করল। কোমরে হাত রাখলেন রেঞ্জার পপি।
বড় কেউ সাথে না থাকলে আর কখনও রুবি মাউন্টেন যাবে। না। বড় ধরনের বিপদ ঘটে যেতে পারে।
রেঞ্জার পপি চলে না যাওয়া অবধি অপেক্ষা করল কিশোর। ওর মুখে অলিম্পিক সোনা জয়ের হাসি।
উনি বিগফুটের খোঁজ করছেন, কিন্তু দেখা পাননি। আমরা পেয়েছি। এই যে প্রমাণ।
আমার কাছে দাও, বলল রবিন। খামটা ছিনিয়ে নিল কিশোরের হাত থেকে। এবার বিনাবাক্যব্যয়ে ছবিগুলো দেখে চলল একটার পর একটা।
বিগ ফুটের ছবি পেলে? মুসার প্রশ্ন।
মাথা নাড়ল রবিন।
একটা ফুটের ছবি তো বটেই। ডানার পায়ের ছবি!
কী? চেঁচিয়ে উঠে ছবিগুলো ছোঁ মেরে কেড়ে নিল কিশোর। ওগুলো এক ঝলকে দেখে নিয়ে জ্বলন্ত চোখে ডানার দিকে চাইল। তোমাকে বলেছিলাম না সামনে থেকে সরতে? খেঁকিয়ে উঠল।
উপস, বলল ডানা। আমিই মনে হচ্ছে গ্রীন হিলসের একমাত্র বিগফুট!
খাইছে, প্রমাণ হলো রুবি মাউন্টেনে বিগ ফুট-টুট বলে কিছু নেই, বলল মুসা।
হাজার হলেও বিগফুট স্কয়্যার নাচ নাচে না, খিল খিল করে হেসে বলল ডানা।
হেসে উঠল রবিন।
কিশোরও না!