- বইয়ের নামঃ জলাভূমির আতঙ্ক
- লেখকের নামঃ রকিব হাসান
- সিরিজঃ তিন গোয়েন্দা সিরিজ
- প্রকাশনাঃ সেবা প্রকাশনী
- বিভাগসমূহঃ রহস্যময় গল্প, গোয়েন্দা কাহিনী, রোমাঞ্চকর গল্প
জলাভূমির আতঙ্ক
এক
‘খাইছে!’ চেঁচিয়ে উঠল মুসা। ‘গাছে লাগল তো!’
ম্যানগ্রোভ গাছের প্রায় পাতা ছুঁয়ে উড়ে গেল হাইড্রোপ্লেন। এক জায়গায় জটলা করে আছে গাছগুলো।
ছোট্ট বিমানের নাকটা টেনে তুলল পাইলট রাস্টি কালাহান। ‘ভয় পেলে?’
‘না!’ হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে ভুরুর ঘাম মুছল মুসা। গলা কাঁপছে। ‘কিন্তু আরেকটু হলেই তো লেগে যেত!’
‘সব সময় রোডেও-মেজাজে থাকে কাজিন রাস্টি,’ রবিন বলল। পিছনের সিটে ঠাসাঠাসি করে বসেছে কিশোরের সঙ্গে।
রাস্টি কালাহান ওর দূর সম্পর্কের ভাই, মায়ের পক্ষের। উইকএন্ডে সোয়াম্পল্যান্ড রোডেও দেখতে তিন গোয়েন্দাকে দাওয়াত করেছে। রকি বিচ থেকে ফ্লোরিডার মায়ামি, সেখান থেকে এই গেইটর সোয়াম্পে উড়ে এসেছে ওরা। সোয়াম্পল্যান্ড গুডস-এ নেমে কিছু প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনে নিয়ে চলে যাবে রাস্টির ফিশিং ক্যাম্পে। নিরালা ওই ক্যাম্পটাতেই থাকবে কটা দিন।
একটা ‘কী’র কাছাকাছি এল প্লেন। স্থানীয় লোকেরা দ্বীপকে ‘কী’ বলে। দক্ষিণ ফ্লোরিডার এই এভারগ্লেডে এ রকম হাজার হাজার দ্বীপ ছড়িয়ে আছে।
এক ঝাঁক সাদা পাখি উড়ে গেল। রকি বিচ থেকে কিনে আনা ট্র্যাভেল বুকে ছাপা একটা পাখির ছবির সঙ্গে মিলিয়ে দেখে রবিন বলল, ‘ইগ্রেট!’
‘খিদে পেয়েছে কারও?’ পাখি নিয়ে এখন মাথাব্যথা নেই মুসার। এক মুঠো চিপস মুখে পুরল। ‘বহুক্ষণের জন্যে এটাই হয়তো শেষ খাওয়া।’
‘বহুক্ষণ না, মাত্র কয়েক মিনিট,’ রাস্টি বলল। ‘সোয়াম্পল্যান্ড গুডসে পৌঁছে গেছি। খাবার কিনে নেব।’ করাত-ঘাসে ছাওয়া দিগন্ত বিস্তৃত জলাভূমির মাঝখানে বিশাল এক প্রাকৃতিক দীঘির দিকে এগিয়ে চলেছে প্লেন। নীচে নামছে ক্রমশ।
‘স্কি করে ল্যান্ড করাবেন?’ নীচে পানির দিকে তাকিয়ে আছে কিশোর।
‘হ্যাঁ,’ রাস্টি জবাব দিল। ‘চাকার বদলে রানার লাগানো থাকে হাইড্রোপ্লেনের তলায়। পন্টুনের মতই কাজ করে রানার। এর সাহায্যে পানিতে ভেসে থাকে প্লেন।’
পানি ছুঁলো রানার। তারপর হাঁসের মত ভেসে সোয়াম্পল্যাস্ত গুডসের দিকে এগিয়ে গেল বিমান। কিনারে কাঠের জেটি। সেটায় প্লেন ভিড়াল রাস্টি। ওর সঙ্গে ডাঙায় নামল তিন গোয়েন্দা।
পানির কিনারে মস্ত একটা কাঠের ছাউনি। এটাই সোয়াম্পল্যান্ড গুডস। জেনারেল স্টোর। গেইটর সোয়াম্পের একমাত্র বাণিজ্যিক এলাকা। সমস্ত প্রয়োজনীয় জিনিস পাওয়া যায় এখানে। নৌকা এমনকী ঘোড়াও ভাড়া পাওয়া যায়।
মাটিতে পা দিয়েই ডাফেল ব্যাগ থেকে একটা ল্যাসো টেনে বের করল মুসা-লম্বা দড়ির মাথায় ফাঁস পরানো—এর সাহায্যে গরু ধরে কাউবয়রা।
একটা ডক পোস্ট লক্ষ্য করে ল্যাসো ছুঁড়ল ও। ‘রকি বিচে পার্কিং মিটারগুলোর ওপর প্রচুর প্র্যাকটিস করেছি। একটাও মিস করিনি। গরু ধরার জন্যে আমি এখন রেডি।’
হাসল কিশোর। ‘মিটার আর গরু এক জিনিস নয়। একটা অচল, আরেকটা সচল। সচল প্রাণীর গায়ে ফাঁস পরানো অনেক কঠিন।’
জেনারেল স্টোরের বারান্দায় সবে পা রেখেছে ওরা, পার্কিং লটের দিক থেকে গর্জন শোনা গেল, ‘নড়লেই গলা ফাঁক করে দেব!’ জলাভূমির আতঙ্ক
ঝট করে ফিরে তাকাল কিশোর। একজন পুলিশ অফিসারের গলায় ছুরি চেপে ধরেছে একজন স্থানীয় ইনডিয়ান।
‘আরে, কী করছে!’ চেঁচিয়ে বলল রবিন।
রাস্টি সহ সবাই দৌড় দিল সেদিকে।
ওদের দেখে ছুরি নামালো ইনডিয়ান। অফিসারকে ছেড়ে দিল। ধূসর চুলে আঙুল চালাতে চালাতে হাসিমুখে বলল, ‘আরে, রাস্টি যে! কেমন আছো?’
‘ভাল,’ জবাব দিল রাস্টি।
রাস্টির দিকে অবাক চোখে তাকাল রবিন। ওঁকে চেনেন?’
‘চিনি, বিশ বছর ধরে, সেই সোয়াম্পল্যান্ড গুডস খোলার সময় থেকেই। ও ডিন ওয়াটারম্যান।
‘একটু আগে কী করছিলেন আপনি?’ ডিনকে জিজ্ঞেস করল কিশোর।
‘আমার গলায় ছুরি চেপে ধরে ডাকাতটা কীভাবে হুমকি দিচ্ছিল ডেপুটি ক্যানারকে দেখাচ্ছিলাম।’ ছুরিটা খাপে ভরে রাখলেন ডিন।
‘ডাকাত!’ ভুরু কুঁচকে গেছে রবিনের।
‘হ্যাঁ,’ ডিন জানালেন। ‘দুদিন আগে মায়ামির একটা ব্যাংকে পঞ্চাশ লাখ ডলার ডাকাতি হয়েছে। প্রচণ্ড ঝড় হচ্ছিল সে-সময়।’
‘কিন্তু আপনার গলায় ছুরি চেপে ধরেছিল কেন?’ জানতে চাইল রাস্টি।
‘পুলিশ রোড ব্লক দিয়েছিল। গাড়িতে করে পালাতে পারবে না বুঝে সোয়াম্পল্যান্ড গুডসে এসে ঢুকল ওরা। এখানে গাড়ি ফেলে আমার একটা এয়ারবোট নিয়ে পালিয়েছে। বোটের চাবি দেয়ার জন্যে আমার গলায় ছুরি চেপে ধরেছিল।’
কিশোর ও রবিনের দিকে ফিরে রাস্টি বলল, ‘করাত-ঘাসের ভিতর দিয়ে সহজেই ছুটে যেতে পারে এয়ারবোট।’
‘জানি,’ মাথা ঝাঁকাল কিশোর। ‘মাত্র কয়েক ইঞ্চি পানিতেও চলতে পারে।’
ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করছিলেন এতক্ষণ ডেপুটি শেরিফ গ্রেগ ক্যানার। পেন্সিলের পিছনটা ঠুকলেন নোটপ্যাডে। ডিনকে বললেন, ‘চলুন, তদন্তটা সেরে ফেলা যাক। আপনি বলছিলেন ডাকাতদের চেহারা দেখতে পাননি।
‘না, পাইনি। কালো হুড দিয়ে মুখ মাথা সব ঢেকে রেখেছিল, ‘ ডিন জবাব দিলেন।
‘ডাকাতদের বোটটা খুঁজে পেয়েছে পুলিশ?’ কিশোর জানতে চাইল।