ওসব ছবিতে কিছু প্রমাণ হয় না, তর্কের সুরে বলল রবিন।
হয় যদি তাদের কাউকে তুমি চেনো, বলল কিশোর। কয়েক পাতা উল্টে অস্পষ্ট এক ছবি বের করল ও। এবার বন্ধুদেরকে দেখাল। সাদায়-কালোয় রেঞ্জার পপি। উনি বিগ ফুট ধরতে গ্রীন হিলসে আছেন।
আমি তারপরও বিশ্বাস করি না, বলল মুসা। আর বিগ ফুট যদি সত্যি সত্যি রুবি মাউন্টেনে ঘাঁটি গেড়ে থাকে তো আমরা কী করব?
আমাদের করার কাজ একটাই আছে, বলল কিশোর। বুক ভরে শ্বাস নিয়ে ধীরে ধীরে বলল, আমরা বিগফুটকে পাকড়াও করব!
৯
কী বলছ এসব উল্টো পাল্টা? লাইব্রেরি ত্যাগ করার সময় বলল মুসা। বিগ ফুট বলে যদি কিছু থাকে, তো সে এক কামড়ে আমাদের সাবাড় করে দেবে।
মাথা ঝাঁকিয়ে সায় জানাল ডানা।
মুসা ঠিক বলেছে।
আমরা আবার রুবি মাউন্টেনে যাব, ব্যাখ্যা করল কিশোর। একমাত্র তা হলেই প্রমাণ হবে মিস্টার স্কোয়াশ আসলেই বিগফুট।
রবিন শরীরের ভর এক পা থেকে অন্য পায়ে বদলে নিল।
শোনো, আমি বিগ ফুটে বিশ্বাস করি না, বলল ও। কিন্তু এভাবে রুবি মাউন্টেনে যাওয়াটা আমাদের ঠিক হবে না। ভালুক-টালুক কিংবা অন্য কোন বুনো জন্তু আক্রমণ করতে পারে।
ডানা মাথা ঝাঁকাল। চোখ ছানাবড়া।
চলে আসার সময় কিছু একটা দেখেছি আমি। বিশালদেহী। আমার ধারণা জন্তুটা বিপজ্জনক।
খাইছে, আমাদের আস্ত গিলে খাবে, বলল মুসা।
কিশোর ওর ব্যাকপ্যাক তুলে ধরল বন্ধুদের দেখানোর জন্য।
বিগ ফুট ধরতে যা যা লাগে সব আছে এখানে।
কী? অ্যাটম বোমা? রবিনের প্রশ্ন।
চাচার ক্যামেরা। লোড করা আছে। বিগ ফুটের ছবি তুলব আমরা, জানাল কিশোর।
আমাদের ওখানে যাওয়া ঠিক হবে না, বলল মুসা।
ব্যাকপ্যাক পিঠে ঝুলিয়ে নিয়ে সরাসরি মুসার চোখে চোখ রাখল কিশোর।
তুমি না বলেছিলে রুবি মাউন্টেন তোমার বাসার ব্যাকইয়ার্ডের মত নিরাপদ?
শ্রাগ করল মুসা।
তখন তো বিগ ফুটের প্রসঙ্গ আসেনি।
আর আমিও তখন বুনো জন্তুটাকে দেখিনি, ডানা বলল কিশোরকে।
কিশোর বাস স্টপের দিকে হাঁটা দিল।
সেই বুনো জন্তুটাই বিগফুট, আমি যার ছবি তুলতে যাচ্ছি।
তুমি কিন্তু মারা পড়বে, সাবধান করল রবিন।
একা একা ওখানে যাওয়াটা খুব বিপজ্জনক হবে, সতর্ক করল মুসা।
ওর দিকে চাইল কিশোর।
কে বলল একা যাচ্ছি? বলল ও। তোমরাও যাচ্ছ আমার সাথে!
১০
তিন বন্ধু আর ডানা রুবি মাউন্টেনের গোড়ায় সিটি বাস থেকে নেমে পড়ল।
তোমরা ঠিক জান তো এখানেই নামবে? বাস ড্রাইভার জিজ্ঞেস করল। আমি কিন্তু ছটার আগে ফিরছি না। তখন কিন্তু আঁধার হয়ে যাবে।
কোন অসুবিধা নেই, ড্রাইভারকে বলল কিশোর। আমরা ছটার সময়ই ফিরব।
ড্রাইভার শ্রাগ করে বাস চালু করল। এ মুহূর্তে রুবি মাউন্টেনে যাওয়ার মেটে সংযোগ রাস্তার উপর দাঁড়িয়ে ছেলে মেয়েরা। জঙ্গলে একটা পাখি ক্য-ক্য করে ডেকে উঠলে আঁতকে উঠল ডানা।
ইস, কেন যে এলাম! কিশোরকে উদ্দেশ্য করে বলল ও।
বিগফুটের ছবি নেয়ার পর তোমার আর আফসোস থাকবে না, বলল কিশোর। ব্যাকপ্যাক থেকে ক্যামেরা বের করে গলায় ঝুলাল। চলো, শেল্টারের দিকে যাই।
বাহ, ক্যামেরাটা সুন্দর তো। কীভাবে ব্যবহার করে জানো? প্রশ্ন করল রবিন।
মুখের চেহারা লাল হয়ে গেল কিশোরের।
অবশ্যই জানি। চাচা গত সামারে শিখিয়ে দিয়েছে।
ছেলে-মেয়েরা রাস্তা ধরে এগোল। শেল্টারের উল্টোদিকে গাছের এক জটলার আড়ালে সেঁধিয়ে পড়ল। অপেক্ষা করছে বিগফুটের জন্য।
অপেক্ষার প্রহর যেন আর ফুরোয় না। মৌমাছি ভনভন করছে, মশা কামড়াচ্ছে।
উফ, খেয়ে ফেলল! বলে শরীর মোচড়াল ডানা।
খুশি থাকো যে বিগফুট তোমার পায়ের পাতা চিবিয়ে খাচ্ছে না, বলল মুসা।
আউচ, ডানা মশার কামড় খেয়ে ককিয়ে উঠে লাফিয়ে পড়ল। কিশোরের সামনে। আর পারছি না।
কিশোর ডানার মুখে হাত চাপা দিল।
চুপ না করলে আমার কামড় খাবে, বলল ও। বিগফুট আওয়াজ পেলে আর সামনে আসবে না। চুপচাপ বসে থাকো। আমার সামনে থেকে সরো।
ডানা কিশোরের সামনে ঝুঁকে বসে স্থির থাকার চেষ্টা করল। কাজটা সহজ হলো না। চারদিকে পোকা-মাকড়। তা ছাড়া আঁধার ঘনাচ্ছে। বিশাল এক মাকড়সা ওর জুতোর ডগা লক্ষ্য করে এগোলে ঢোক গিলল ও।
বাপরে, অস্ফুটে বলে উঠল ডানা। দেখো।
কিশোর মাথা ঝাঁকিয়ে ক্যামেরা তাক করল। শেল্টারের ওপাশে কটা গাছের দিকে নজর ওর। লোমশ, বিশালকায় এক অবয়ব ওদের দিকে পিঠ ফিরিয়ে দাঁড়িয়ে।
ওই যে বিগফুট, ফিসফিস করে বলল কিশোর। এবার একের পর এক ছবি নিতে লাগল।
১১
এটাকে সরাও! ডানা গুঙিয়ে উঠে লাফ দিল।
সামনে থেকে সরো, হিসিয়ে উঠল কিশোর। ও ছবি নিচ্ছে আর ডানা ক্রমাগত চেঁচিয়েই যাচ্ছে।
সরাও না! চেঁচিয়ে উঠে শূন্যে পা ছুঁড়তে লাগল ডানা। ওর সাদা জুতো আঁকড়ে ধরে রয়েছে লোমশ মাকড়সাটা।
কী হয়েছে তোমার? ফিসফিস করে প্রশ্ন করল মুসা। তুমি কি চাও বিগ ফুট আমাদের দেখে ফেলুক?
জুতোটা আঙুল ইশারায় দেখাল ডানা। আরেকটু হলেই কেঁদে ফেলবে।
এটাকে ফেলো নইলে আমাকে কামড়াবে!
মাকড়সাটাকে এক ঝলক দেখে নিয়ে চোখ ঘুরাল মুসা। তারপর টু শব্দটি না করে এক ঝটকায় জুতোর উপর থেকে ফেলে দিল।
গেছে, বলল মুসা।
হ্যাঁ, গেছে, সায় জানাল রবিন। বনভূমির যেখানটায় দাঁড়িয়ে ছিল লোমশ জানোয়ারটা সেদিকে ভ্রূ দেখাল। গাছ-পালা ছাড়া এখানে এখন আর কিছু নেই।