মাথা ঝাঁকাল মুসা।
মিস্টার স্কোয়াশ অতীতের অনেক কিছু জানে। জুলিকে বলছিল শুনলাম সে নাকি ওয়েস্ট কোস্টের গহীন পাহাড়ে থাকত।
কিশোর বিনাবাক্যব্যয়ে রবিনের পাশে বসে পড়ল। চারপাশে ছেলে-মেয়েরা ব্যাকপ্যাক রেখে যার যার আসনে বসছে।
আমাকে জানালার পাশে বসতে দেবে? মুসাকে জিজ্ঞেস করল ডানা।
তুমি তো সব সময় জানালার পাশে বসো, অভিযোগ করল মুসা। আমাকে একবার অন্তত বসতে দাও।
ওকে জানালার পাশে বসতে দাও, নইলে বমি করে ভাসাবে, বলল কিশোর।
মুসা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ডানাকে খোলা জানালার পাশে বসার সুযোগ করে দিল। বাসটা মেটে রাস্তার উপর দিয়ে চড়-চড় শব্দ তুলে রওনা দিলে জানালা দিয়ে বাইরে চোখ রাখল ডানা। রুবি মাউন্টেনের কাছ থেকে ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে ওরা।
ওরা বেশি দূর যায়নি এসময় ডানা সিধে হয়ে বসে আর্তচিৎকার ছাড়ল।
ওই যে একটা বুনো জন্তু!
মুসা উঠে দাঁড়াল। জানালা দিয়ে চোখ রাখল আঁধার ঘনিয়ে আসা জঙ্গলের দিকে।
কয়োটি নাকি? প্রশ্ন করল। না, ডানা শ্বাসের ফাঁকে বলল। কয়োটির চাইতে বড়। অনেক
হরিণ হতে পারে, বলল রবিন।
মাথা নাড়ল ডানা।
না, সারা গায়ে লোম। দুপায়ে দৌড়াচ্ছিল।
তা হলে ভালুক হবে, সিদ্ধান্তে পৌঁছল মুসা।
কই, আমি তো কিছুই দেখতে পাচ্ছি না, বলল জুলি। ছেলে মেয়েরা সবাই গাছ-পালার দিকে উঁকি দিল। শুধু কিশোর ঠায় বসে রইল। তাকানোর প্রয়োজন বোধ করছে না সে।
তুমি দেখবে না? মুসার প্রশ্ন।
দেখার দরকার নেই, মৃদু কণ্ঠে বলল কিশোর। আমি জানি ওটা কী!
৩
খাইছে, কিশোরের কী যেন হয়েছে, মুসা রবিন আর ডানাকে শনিবারদিন কথাটা বলল। রুবি মাউন্টেন থেকে গতকাল ঘুরে এসেছে ওরা। এখন স্কুলের খেলার মাঠে জড় হয়েছে। বড় ওক গাছটার নীচে।
কী হয়েছে? প্রশ্ন করল রবিন।
ওকে একটু আগে দেখলাম গ্রীন হিলস লাইব্রেরিতে ঢুকতে, বন্ধুদেরকে জানাল মুসা।
বলো কী! এক সঙ্গে বলে উঠল রবিন আর ডানা। শনিবার সকালে লাইব্রেরিতে যাওয়ার বান্দা তো কিশোর নয়।
সাথে এক গাদা বইও ছিল, বলল মুসা।
দেখতে হচ্ছে, বলল রবিন। ওর ওপর চোখ রাখব আমরা।
ওরা তিনজন খেলার মাঠ আড়াআড়ি পেরিয়ে লাইব্রেরির দিকে ছুটল। সহকারী লাইব্রেরিয়ান মি. লিসেকে সন্তর্পণে পাশ কাটিয়ে নন ফিকশন সেকশনে চলে এল ওরা।
ওই যে কিশোর, ফিসফিস করে বলল মুসা। বড় বড় বই নিয়ে লম্বা এক কাঠের টেবিলে বসা কিশোর। রবিন, মুসা আর ডানা এক শেলফের আড়াল নিতেই ফটাস করে একটা বই বন্ধু করল। গোয়েন্দাপ্রধান। ওরা আবার যখন উঁকি দিল, কিশোর আরেকটা বই খুলেছে।
দেখি ও কী করছে, ফিসফিস করে বলল ডানা, বন্ধুরা ওকে থামাতে পারার আগেই হামাগুড়ির ভঙ্গিতে মেঝেতে বসে পড়ল ও। এবার নিঃশব্দে, একটু একটু করে কিশোরের পিছনে গিয়ে হাজির হলো। কিশোর কী পড়ছে দেখার জন্য ওর কাঁধের ওপর দিয়ে উঁকি দিল।
ইতোমধ্যে মুসা আর রবিনও গোপন স্থান থেকে পা টিপে টিপে বেরিয়ে এসেছে। কিশোরের হাত থেকে বইটা এক টানে ছিনিয়ে নিল মুসা। বইটার নাম: দ্য বিগ ফুট মনস্টার।
তুমি এখনও এসব আজগুবী ব্যাপার নিয়ে পড়ে আছ? মুসা বলল।
আজগুবি নয়, বলল কিশোর। প্রমাণ। বিগফুট সত্যিই আছে!
৮
বিগ ফুট দেখা গেছে এরকম এক তালিকায় আঙুল নামিয়ে আনল রবিন।
প্রায় সব স্টেটে বিগ ফুট দেখা গেছে, মৃদু কণ্ঠে বলল সে।
মাথা ঝাঁকাল কিশোর।
এই বইতে বলছে বিগফুট দানবরা বসবাসের জন্যে নতুন জায়গা খুঁজছে, কেননা নগরায়নের ফলে আশ্রয় হারাচ্ছে তারা। ওরা। খুব লাজুক ধরনের হয়, তাই নির্জন কোন পাহাড়ের সন্ধানে দুনিয়া। চষে বেড়াচ্ছে।
এটা দেখো, মুসা এক ডজন নামের একটি তালিকা ইঙ্গিত করল। এগুলো গ্রীন হিলস থেকে বেশি দূরে নয়।
হ্যাঁ, বিগ ফুট আমাদের আশপাশেই আছে, বলল কিশোর। কোমরে দুহাত রাখল ডানা।
মিস্টার স্কোয়াশ বিশালদেহী আর তার দাঁতগুলো হলদেটে বলেই তুমি তাকে যা খুশি বলতে পারো না।
মাথা ঝাঁকাল কিশোর।
আমি তো তাকে গালি দিচ্ছি না। শুধু বলতে চাইছি মিস্টার স্কোয়াশই বিগ ফুট।
বেশি বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে, মুসা বলল কিশোরকে। বিগ ফুট কাল্পনিক জীব। এই তালিকাটাও বানোয়াট।
টেবিলে দুম করে কিল বসাল কিশোর।
এত এত লোক মিথ্যে বলতে যাবে কোন দুঃখে? কেউ কেউ বিগফুটের অস্তিত্ব সম্পর্কে এতটাই নিশ্চিত যে তারা বিগ ফুটের খোঁজে জীবন পার করে দিচ্ছে। প্রথম যে কাছ থেকে বিগ ফুটের ছবি নিতে পারবে সে বিখ্যাত এবং বড়লোক হয়ে যাবে। বিগ ফুটের দেখা পেলে কোথায় ফোন করতে হবে সে নম্বরও দেয়া আছে। এখানে।
এই নম্বর পাগলদের জন্যে, নরম গলায় বলল নথি।
আমি পাগল নই। এবং সেটা তোমাদের কাছে প্রমাণ করে। ছাড়ব, বলে উঠল কিশোর।
বইটা থেকে পড়তে শুরু করল ও।
বিগ ফুট বাদামী কিংবা কালো লোমে ঢাকা লম্বা এক প্রাণী।
মিস্টার স্কোয়াশের সাথে খানিকটা মিলছে, স্বীকার করল ডানা। কিশোর পড়ে চলল।
বিগ ফুটের গায়ে ভয়ানক দুর্গন্ধ, অনেকটা স্কাঙ্কের মত। আমরা বিশ্রী একটা গন্ধ পেয়েছিলাম, মনে করিয়ে দিল মুসা।
এতেই শেষ নয়, বলল কিশোর। বিগফুটের আরেকটা পরিচিত নাম হচ্ছে সাসকোয়াচ।
শুনতে স্কোয়াশের মত লাগছে, বলে শ্বাস চাপল ডানা।
ঠিক, বলল কিশোর। আরও আছে। এই বইতে তাদের ছবি আছে যারা বিগ ফুটকে দেখেছে।