আগন্তুক সোজা ওদের দিকে হেঁটে এল।
চার বন্ধুর কাছ থেকে কফুট দূরে দাঁড়িয়ে পড়ল সে।
শুনলাম তোমাদের ক্লাস নাকি গাড়ি-প্লেনের আগে প্রকৃতি কেমন ছিল জানতে চায়, গর্জে উঠল লোকটা। তোমাদের রেঞ্জারকে দেখলাম সটকে পড়ল, কাজেই আমি তোমাদেরকে আগেকার মানুষের জীবন সম্পর্কে জানাতে চাই। আমরা নাচ দিয়ে শুরু করব।
ডানা একটা হাত তুললে লোকটা ভ্রু কুঁচকে চাইল।
কী চাও তুমি? ঘাউ করে উঠল।
আপনার নামটা তো জানা হলো না, বলল ডানা।
নাম? থতমত খেল বিশালদেহী।
হ্যাঁ আমরা আপনাকে কী বলে ডাকব? ডানা জিজ্ঞেস করল।
লোমশ চিবুক ঘষে মুহূর্তের বিরতি নিল সে। ছেলে-মেয়েরা পরস্পর মুখ চাওয়াচাওয়ি করল। এবার জবাব দিল লোকটা।
স্কোয়াশ, শেষমেশ গর্জে উঠল। মিস্টার স্কোয়াশ। এখন শেল্টারে যাও
আমরা দলে দলে ভাগ হব।
ছেলে-মেয়েরা হনহন করে খোলা বিল্ডিংটার দিকে পা চালাল। দাঁড়িয়ে রইল শুধু কিশোর। ওর দৃষ্টি স্থির মি. স্কোয়াশের পিঠে।
চলে এসো, রবিন গলা ছেড়ে বলল কিশোরকে।
কিশোর জবাব দিল না। একদৃষ্টে চেয়ে রয়েছে।
এসো, রবিন বলল আবারও, ফিরে এসে কিশোরের বাহু ধরে টানল।
কিশোর ঢোক গিলে রবিনের দিকে চাইল।
মিস্টার স্কোয়াশের মধ্যে অদ্ভুত কিছু একটা আছে, বলল ও।
জানি, বলল রবিন। কত দিন গোসল করে না কে জানে।
উঁহু, অন্য কিছু, বন্ধুকে বলল কিশোর।
কী?
ঠিক জানি না, বলল কিশোর। কিন্তু জানতে হবে!
৫
মি. স্কোয়াশ একটা মাইক্রোফোন তুলে নিয়ে কথা বলল। তার। কণ্ঠস্বর প্রতিধ্বনিত হলো পাহাড়ে।
তোমরা এখান থেকে যাওয়ার আগে অতীতের জীবনযাত্রা সম্পর্কে জানতে পারবে, ছেলে-মেয়েদেরকে বলল সে।
একটা টেপ প্লেয়ার চালু করল মি. স্কোয়াশ। লাউডস্পিকার। ফাটিয়ে ফেলল ফিডল মিউজিক।
আগে একটু স্কয়্যার নাচ হয়ে যাক, মাইক্রোফোনে চেঁচাল মি. স্কোয়াশ। সবাই একজন পার্টনার খুঁজে নিয়ে ঘুরতে থাকো।
ছেলে-মেয়েরা পার্টনার খুঁজে নিতে ব্যস্ত হলো। মি. স্কোয়াশ এবার নাচটা ওদেরকে শিখিয়ে দিল।
মি. স্কোয়াশ বড় এক বৃত্ত ঘিরে ছেলে-মেয়েদেরকে জড় করল, আরও কিছু স্টেপ যাতে শিখিয়ে দিতে পারে।
.
নাচ শেষে তিন বন্ধু আর ডানা হেমলক গাছটার নীচে বসে লেমোনেড পান করছিল। মি. স্কোয়াশ, মিসেস হকিন্স আর ক্লাসের অন্যান্যরা। রয়েছে শেল্টারে।
মিস্টার স্কোয়াশের পা দুটো কী বিশাল বাপরে বাপ, বলল কিশোর। আমার ধারণা লোকটা বিগফুট।
হেসে উঠল মুসা।
নাচতে গিয়ে তোমার মাথা ঘুরে গেছে, বলল ও। ।
লোকটা যখন হাসল তখন ওর দাঁতগুলো দেখনি? বলল কিশোর। হাল ছাড়ার পাত্র নয় সে।
মানলাম দাঁতগুলো হলদেটে, বলল ডানা। কিন্তু তাতে কী? হয়তো ডেন্টিস্টের কাছে যাওয়ার পয়সা নেই বেচারার।
হয়তো ডেন্টিস্টকে ও খেয়ে ফেলেছে, বাতলে দিল কিশোর।
সবাই জানে বিগফুটের বড় বড় হলুদ দাঁত থাকে। ঠিক মিস্টার
স্কোয়াশের মত।
হতে পারে। কিন্তু আমি শিয়োর বিগফুট পাহাড়ে স্কয়্যার ড্যান্স করে না, বলল রবিন।
রবিন ঠিকই বলেছে, বলল মুসা। মিস্টার স্কোয়াশের দুটো পা হয়তো বিশাল, কিন্তু তাতেই সে দানব হয়ে যায় না।
কিশোর শেল্টারের দিকে চকিতে চাইল। মি. স্কোয়াশ এক কোণে বসে ছেলে-মেয়েদের লেমোনেড পান করা দেখছে।
বিশ্বাস করতে না চাইলে কোরো না, বন্ধুদেরকে বলল কিশোর।
কিন্তু বিগফুট যখন গ্রীন হিলসে দাপিয়ে বেড়াবে তখন মজা টের পাবে!
৬
দিন শেষে ছেলে-মেয়েরা ক্লান্ত হয়ে পড়ল। রুবি মাউন্টেনে ওদের ফিল্ড ট্রিপ প্রায় ফুরিয়ে এসেছে। মিসেস হকিন্স ছাত্র-ছাত্রীদের মাথা গুনছেন! কিশোর চেয়ে চেয়ে দেখছে মি. স্কোয়াশকে। লোকটা এক গাছের নীচে দাঁড়িয়ে বনভূমির দিকে চেয়ে রয়েছে। ভাবখানা এমন যেন কিছু শুনতে পেয়েছে। এবার এক ছুটে পিকনিক শেল্টারের পিছনে গিয়ে হারিয়ে গেল গাছের জটলার ওপাশে।
দেখো, বলে রবিনকে আঙুল দিয়ে খোঁচা দিল কিশোর। বিগফুট উধাও হয়ে গেল!
বিদায় পর্যন্ত নিল না, রবিন বলল।
তাকে গিয়ে আমাদের জানানো দরকার আমরা কতটা এনজয় করেছি, বলল ডানা। কিন্তু সে সময় ওরা পেল না, কেননা রেঞ্জার পপি শিস দিতে দিতে ট্রেইল ধরে এগিয়ে এলেন। ওদেরকে পিকনিক শেল্টারের কাছে দেখে মৃদু হাসি ফুটল তাঁর মুখে।
আমি ভেবেছিলাম আপনারা চলে গেছেন বুঝি, মিসেস হকিন্সকে বললেন তিনি।
মিসেস হকিন্স তার আধো হাসিটা হাসলেন।
আমরা স্কয়্যার ড্যান্স শিখতে ব্যস্ত ছিলাম, তবে এখন যাওয়ার জন্যে তৈরি হচ্ছি।
স্কয়্যার ড্যান্স দারুণ জিনিস, সায় জানালেন রেঞ্জার পপি।
রুবি মাউণ্টেনে আরও স্কয়্যার ড্যান্স হওয়া উচিত। ব্যাকপ্যাক আর ক্যামেরা নামিয়ে রেখে বাসে একটা কুলার তুলতে সাহয্য করলেন। কজন ছেলে-মেয়েকে।
কিশোর রেঞ্জার পপির ক্যামেরাটা ইশারায় দেখাল।
যা খুঁজছিলেন পেয়েছেন? জবাব চাইল ও।
না, বললেন মহিলা। একটুর জন্যে মিস করেছি।
কিশোর তাঁকে আরও প্রশ্ন করতে চেয়েছিল, কিন্তু মিসেস হকিন্স ওর কাঁধে হাত রাখলেন। টিচারের লম্বা, সবুজ নখগুলো দেখে পিছিয়ে গেল ও। হনহন করে পা চালিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে যোগ দিল। বাসে ওঠার জন্য।
আমি ক্লান্ত, ওরা বসার পর অভিযোগ করল ডানা।
আমিও, বলল রবিন। তবে আমার ভাল লেগেছে। অনেক কিছু জানতে পারলাম।