তা হলে ওটা কী? প্রশ্ন করল মুসা।
আমি তো কিছুই শুনিনি, জানাল রবিন।
মুসা ওর বাহু চেপে ধরে দাঁড় করিয়ে দিল।
থামলে কেন? কিশোর জবাব চাইল।
শ শ শ, সতর্ক করল মুসা। কী একটা যেন আমাদেরকে ফলো। করছে।
কে জানে কী, বলল কিশোর। তবে ওটার গায়ে ভয়ানক দুর্গন্ধ। আর ক্রমেই কাছিয়ে আসছে।
ওরা চারজন ঠায় দাঁড়িয়ে রইল। শীঘ্রি ট্রেইলে মিলিয়ে এল। অন্যান্য হাইকারদের চলার শব্দ। ঠিক এমনিসময় ওরা শুনতে পেল। ওদের পিছনে ভারী পদশব্দ। গাছের ফাঁক দিয়ে ওরা যখন উঁকি দিল, কিছুই দেখতে পেল না।
খাইছে, শব্দ শুনে মনে হচ্ছে বড়সড় কিছু, ফিসফিস করে বলল। মুসা। বিশাল সাইযের।
আমাদেরকে মনে হয় ফলো করছে, শিউরে উঠে বলল ডানা।
ঢোক গিলল রবিন।
চলো রেঞ্জারকে খুঁজে বের করি। তিনি নিশ্চয়ই জানবেন ওটা কী।
ওরা চারজন ট্রেইল ধরে হনহন করে পা চালাল।
৩
ক্লাসের অন্যদের নাগাল ধরল ওরা চারজন। কাঁধের উপর দিয়ে বার বার পিছু চাইল ওরা, কিন্তু ভারী পায়ের শব্দটা আর শুনতে পেল না। রেঞ্জার পপি ওদেরকে ছোট ছোট জীব-জন্তু দেখালেন। কিন্তু তাঁর কোন কথাতেই কান দিল না কিশোর, ওর দৃষ্টি নিবদ্ধ রইল। মাটিতে।
ওরা লাঞ্চের জন্য শেল্টারে ফিরে আসা মাত্রই, রেঞ্জার পপি হাত নেড়ে বিদায় জানিয়ে ট্রেইল ধরে হাঁটা দিলেন।
আপনি আমাদের সাথে পিকনিক করলে খুশি হতাম, মিসেস হকিন্স বললেন।
উঁচু গাছ-পালার জটলার দিকে নার্ভাস দৃষ্টিতে চাইলেন রেঞ্জার পপি।
ধন্যবাদ, কিন্তু…আমি একটা জিনিস খুঁজছি। মনে হয় জানি কোথায় পাবে ওটাকে। রেঞ্জার পপি গ্রীনহিলস স্কুলের ছেলে মেয়েদেরকে একাকী রেখে উধাও হয়ে গেলেন।
বেশিরভাগ ছেলে-মেয়ে শশব্যস্তে এগোল শেল্টারের নীচে বসতে আর লাঞ্চ খেতে। কিন্তু তিন বন্ধু আর ডানা বিশাল এক হেমলক গাছের তলায় বসে পিনাট বাটার স্যাণ্ডউইচ আর প্রেটযেল খেতে লাগল।
আঙুল থেকে পিনাট বাটার চেটে কিশোরের কাঁধে খোঁচা দিল রবিন।
কী ব্যাপার, এত চুপচাপ কেন? প্রশ্ন করল।
বিশ্রী গন্ধটা বোধহয় ওর মাথা গুলিয়ে দিয়েছে, হেসে বলল মুসা।
বন্ধুরা কিশোরের জবাবের অপেক্ষায় থাকল। কিন্তু ওর মুখে কুলুপ আঁটা।
কিশোর আরেক কামড় স্যাণ্ডউইচ খেয়ে রবিনের কথার জবাব দিল।
আমি জঙ্গলের মধ্যে কিছু একটা দেখেছি, বলল ও। এবং আমাদের সাবধান থাকা উচিত।
কী বলছ তুমি? প্রশ্ন করল মুসা। এই পাহাড়ে কীসের কাছ থেকে সাবধান থাকতে হবে?
কিশোর বন্ধুদের সবার চোখের দিকে চাইল। এবার ফিসফিস করে জবাব দিল।
বিগ ফুট!
বিগ ফুট? ওর বন্ধুরা সভয়ে একসঙ্গে বলে উঠল।
শ শ শ, সতর্ক করল কিশোর। একটা আঙুল রাখল ঠোঁটে। ও শুনে ফেলবে।
কে শুনে ফেলবে? রবিনের জিজ্ঞাসা। তোমার কথার মাথা-মুণ্ড কিছুই বুঝছি না।
বিগ ফুট, আবারও বলল কিশোর।
বিগ ফুট এক ধরনের দানো। জঙ্গলে থাকে, বলল মুসা।
প্রশান্ত মহাসাগরের কাছে, যোগ করল রবিন।
এখন বুঝলে তো আমি কী বলতে চাইছি, বলল কিশোর।
আমরা কিছুই দেখিনি, ডানা বলল ওদেরকে। আর আমরা প্রশান্ত মহাসাগরের ধারেকাছেও নেই। তা ছাড়া এসব জঙ্গলে কোন দানো-টানো লুকিয়ে থাকার প্রশ্নই আসে না।
অত শিয়ের হয়ো না, ফিসফিসিয়ে বলে কাঁধের উপর দিয়ে চাইল কিশোর।
এই জঙ্গলের একমাত্র দানো হচ্ছ তুমি, রবিন বলল কিশোরকে।
রবিন ঠিকই বলেছে, বলল মুসা। এখানে দানো আছে তা তুমি হলফ করে বলতে পারো না।
পারি, কিশোর বলল। ট্রেইলে ট্র্যাক দেখেছি আমি। বিগ ফুটের ট্র্যাক!
স্মিত হাসল রবিন।
ওগুলো ছিল আমাদের স্কুলের ছেলে-মেয়েদের ট্র্যাক।
কিশোর গভীর শ্বাস টেনে মাথা ঝাঁকাল।
প্রথমে আমিও তাই ভেবেছিলাম। কিন্তু এই ট্রাকগুলো বিশাল।
তা হলে রেঞ্জার পপির বুটের ছাপ, বলল ডানা। ওঁর বুট জোড়া বিরাট।
এই ট্র্যাকগুলোর কাছে তাঁর বুটের ছাপ নস্যি, তর্কের সুরে বলল কিশোর। আর এই ট্রাকগুলো যার সে খালি পায়ে ছিল। পায়ের পাতায় ছাপ দেখেছি আমি।
রবিন কিশোরের পিঠ চাপড়ে দিল।
এবার বোঝা গেল। তুমি সম্ভবত কোন জন্তুর থাবার ছাপ দেখেছ, বলল ও।
জন্তু কোন সন্দেহ নেই, গম্ভীর স্বরে বলল কিশোর। এবং সেই জন্তুটা হচ্ছে বিগ ফুট!
৪
মুসা তর্ক করার সুযোগ পেল না, কারণ ঠিক সে মুহূর্তে দীর্ঘদেহী, লোমশ এক লোক টলতে টলতে বেরিয়ে এল বনভূমির ভিতর থেকে। লোকটা অন্তত সাত ফুট লম্বা। পিঠে ঝুলছে লম্বা এক পনিটেইল। দাড়ি তার বেল্টের কলস ছুঁয়েছে প্রায়। সত্যি কথা বলতে কী, সর্বাঙ্গে লোম তার। এমনকী আঙুলের গাঁটগুলোও লোমে ভরা।
কে ওটা? রবিন ফিসফিস করে জানতে চাইল।
ত্যাগ করল মুসা।
হয়তো আরেকজন রেঞ্জার।
হ্যাটটা সুন্দর, ঠাট্টা করে বলল কিশোর। লম্বা, লোমশ লোকটির মাথায় পেল্লায় এক হ্যাট। কাউবয়রা যে ধরনের হ্যাট পরে।
ওটাকে দশ-গ্যালন হ্যাট বলে, ব্যাখ্যা করল রবিন।
আমার মনে হচ্ছে সাড়ে সাতশো গ্যালন, বলল কিশোর।
জঙ্গল এতটাই ঘন লোকটাকে আসতে দেখিনি, ডানা ফিসফিস করে বলল।
আমরা এরকম একটা লোককে মিস করলাম কীভাবে? প্রশ্ন। করল রবিন। ও তো ক্রিসমাস ট্রীর সমান! কথাটা সত্যি, গাছের নীচ দিয়ে হাঁটার সময় মাথা নোয়াতে হয় লোকটিকে।
ও মনে হয় টেক্সাস থেকে এসেছে, মৃদু গলায় বলল ডানা। শুনেছি ওখানে নাকি সব কিছুই বড় বড়। মাথা নোয়াতে নোয়াতে লোকটা কুঁজো হয়ে গেছে।