সৈন্যদের তলোয়ারের মত বড়সড়–লম্বা হয়ে গেল ওটা দেখতে দেখতে।
এবার তলোয়ারটার হাতল ধরল কিশোর শক্ত করে। ওর হাতের মুঠোয় এঁটে বসল ওটা।
. তলোয়ার ধরা হাতটা আগে বাড়িয়ে দ্রুত দোলাল কিশোর। তলোয়ারের ব্লেডে চাঁদের আলো পড়তে কয়েকশো তারার উজ্জ্বলতা নিয়ে ঝিকিয়ে উঠল ওটা।
হঠাৎ হুশ! জাতীয় একটা শব্দ কানে এল কিশোরের। তারপর নেজার ম্যাণ্ডারের বর্মের টুকরোগুলো দেখা গেল শূন্যে ভাসছে।
ওগুলো কিশোরের দিকেই ছুটে আসছে।
শিন গার্ডটা ওর হাঁটুতে জুড়ে বসল আঘাত থেকে পা দুটোকে বাঁচানোর জন্য।
ব্রেস্টপ্লেট এসে সেঁটে গেল ওর বুকে।
বর্মের অন্যান্য অংশ এসে টপাটপ জুড়ে বসতে লাগল দেহের বিভিন্ন অংশে।
এবার সোনালি তলোয়ারটা উঁচু করে ঘুরে দাঁড়াল ও। সালমি বেন কাশেমের মুখোমুখি হলো।
জাদুকরের বিরুদ্ধে কী পারবে ও?
একটা অপশক্তির বিরুদ্ধে?
লোকটার মাথা হঠাৎ পিছনে হেলে পড়ল। ঠোঁট বাঁকিয়ে বিদ্রুপের হাসি হাসতে লাগল সে। মুখের ভিতরে লম্বা ছুঁচাল দাঁত আর আলজিভ পরিষ্কার দেখা গেল তার।
ভীতিকর গর্জন ছাড়ল জাদুকর। তার হাতের দশ আঙুলের ডগায়। বিদ্যুৎ চমকে উঠল–সরু, লকলকে এবং ভয়ঙ্কর বিদ্যুৎ।
ভেবেছ তুমি আমাকে হারাতে পারবে? গর্জে উঠল কাজেম। দমকা বাতাস বয়ে গেল গোটা রুমে। তার ধাক্কায় মনে হলো পড়েই যাবে কিশোর।
নিজেকে সামলে নিল ও। পৃথিবীতে এমন কোনও শক্তি নেই যা আমার জাদুর গুণ নষ্ট করতে পারে, আবারও গর্জে উঠল জাদুকর।
সালমি বেন কাজেম তার দুবাহু প্রসারিত করল দুদিকে।
বিকট রূপ ধারণ করতে লাগল সে, অতিকায় দানবে পরিণত হতে লাগল একটু একটু করে।
হঠাৎ চোখ ধাঁধানো বিদ্যুৎ ঝলকে উঠল জাদুকরের ছড়ি থেকে।
কনজারভেটরি ঝলসে উঠল নীলচে সাদা সেই তেজী আলোয়। চোখ ধাঁধিয়ে গেল কিশোরের। চোখ বুজে গেল আপনাআপনি।
আলোটা কিছুক্ষণ ভেসে রইল রুমের বাতাসে। হিশহিশ, মটমট শব্দ তুলল।
কিশোরের বর্ম ভেদ করে দেহে এসে লাগল তার উত্তাপ। মনে। হলো শরীরটা ঝলসে যাবে।
বোলিং করার ভঙ্গিতে মারাত্মক সেই বিজলিটাকে কিশোরের দিকে পাঠিয়ে দিল সালমি বেন কাজেম। ছুটে এল ওটা সোজা কিশোরের উদ্দেশে।
১৭
সময়মত লাফ দিল কিশোর। এক পাশে সরে নিজেকে বাঁচাল এ যাত্রা।
দ্বিতীয় বর্মটা কিশোরের কাছেই দাঁড়িয়ে আছে এখন। হাল ছেড়ো না, কিশোর! ফিসফিস করে বলে উঠল বর্মধারী প্রেতাত্মা।
জিনা! চমকে বলল কিশোর। বিস্মিত। বর্মের ভেতরে তুমি!
হ্যাঁ, জবাব এল ভিতর থেকে।
ব্রেস্ট প্লেটের মাঝখানের ফাঁক দিয়ে পিটপিট করে চেয়ে আছে ও কিশোরের দিকে।
তুমি সত্যিই চমকে দিয়েছিলে, বলল কিশোর।
এখন কী করব! বলল জিনা। লড়বে? নাকি পালাবে?
পালানোর উপায় নেই, ফিসফিস করে জবাব দিল কিশোর। আমাকে লড়তে হবে ওর বিরুদ্ধে–একা।
আপাদমস্তক কেঁপে উঠল জিনা।
ঠনঠন্ আওয়াজ তুলল কিশোরের বর্ম। ভারী এক পা সামনে বাড়িয়ে তলোয়ার উঁচাল ও আধা আত্মবিশ্বাস নিয়ে।
সালমি বেন কাজেম গাছের মত ঠায় দাঁড়িয়ে আছে।
হিংস্র পশুর মত গর্জে উঠল সে বিজাতীয় শব্দে।
কিশোর সরাসরি তার চোখে চোখ রাখল, আক্রমণ করার জন্য জাদুকর তার দুবাহু দুদিকে বাড়াল।
রুপোর ছড়িটা ঘোরাতে লাগল শূন্যে। জোব্বাটা কেমন যেন খসখস শব্দ তুলল।
কিশোর লাফিয়ে পিছু হটল।
মাথা ঝাড়া দিল সে সজোরে। প্রলম্বিত চিৎকার ছাড়ল।
আচমকা জাদুকরের চামড়া চকচক করে উঠল। লম্বা হতে শুরু করল সে।
দুই হাত লম্বা হচ্ছে। আঙুলের নখগুলো হলদে, পৈশাচিক নখরে পরিণত হলো। পা জোড়াও হয়ে উঠল দানবীয় আকৃতির।
শুধু তা-ই নয়, ধড়টাও প্রকাণ্ড হয়ে উঠল। গোটা দেহটা কোনও মহীরূহের আকৃতি পেয়েছে।
অট্টহাসি হাসতে হাসতে শূন্যে উঠে পড়ল জাদুকর। দেখতে দেখতে কিশোরের মাথার উপরে উঠে গেল।
টলমল পায়ে পিছু হঠল গোয়েন্দা-প্রধান। চোয়াল ঝুলে পড়েছে মহাবিস্ময়ে।
জাদুকরের ঘাড় বকের মত লম্বা হতে লাগল। বাজপাখির ঠোঁটের মত লম্বা হয়ে গেল তার নাক।
সিলিং পর্যন্ত পৌঁছে গেল তার মাথা।
তলোয়ার শক্ত করে ধরল কিশোর।
সম্পূর্ণ তৈরি–কীসের জন্য, নিজেও তা জানে না।
চোখ সরু করে সালমি বেন কাজেমের গাঢ় রঙের আঁকাবাঁকা দেহটার দিকে তাকাল। অতিকায় দেহটা ওর মাথার উপর শূন্যে ভাসছে। যেন ওটা মানুষের নয় দানবাকৃতির একটা গ্যাস বেলুন!
হঠাৎ ওটা নীচে নেমে আসতে লাগল।
দুহাতে মাথা ঢেকে ফেলল কিশোর। হিহি শব্দ কানে এল। বাতাসে ডানা ঝাঁপটানোর আওয়াজ উঠল।
ঢোক গিলে উপর দিকে তাকাল কিশোর।
একটা প্রাগৈতিহাসিক ডাইনোসরের মুখোমুখি হলো ও।
অতিকায় করালদর্শন ডাইনোসরবিশাল দুটো পিঙ্গল ডানাও আছে ওটার।
প্রকাণ্ড দেহটা আগাগোড়া পিঙ্গল আঁশে ঠাসা। আঁশ থেকে সমানে চটচটে নরম নোংরা আঠাল রস গড়িয়ে পড়ছে।
কী বিচ্ছিরি গন্ধ! দম বন্ধ হয়ে আসতে চায়।
ডাইনোসরের তিনটে চোখ! সমানে পাক খেল ওগুলো।
দুটো লম্বা, কালো, চেরা জিভ ওটার মুখ থেকে বেরিয়ে এসে লকলক করছে। দুর্গন্ধময় সবুজ লালা ওটার মুখ থেকে ছিটকে পড়ছে। সেগুলোর একেক দলা ফ্লোরে পড়ামাত্র ছাৎ-ছাৎ শব্দ উঠল। নীলচে ধোঁয়া উঠছে সেখান থেকে।
এক পা সামনে এগোল কিশোর। দুহাতে হাতল আঁকড়ে ধরে তলোয়ার চালাল সর্বশক্তি দিয়ে।
ডাইনোসরটা ঝট করে দেহ সরিয়ে নিল। চেরা জিভ দুটো ভয়ঙ্কর ভাবে ওর দিকে এগিয়ে এল। সশব্দে লম্বা শ্বাস টানল ওটা।