- বইয়ের নামঃ আমাজানের গহীনে
- লেখকের নামঃ রকিব হাসান
- সিরিজঃ তিন গোয়েন্দা সিরিজ
- প্রকাশনাঃ সেবা প্রকাশনী
- বিভাগসমূহঃ গোয়েন্দা কাহিনী, রোমাঞ্চকর গল্প
আমাজানের গহীনে
পূর্ব কথা
গরমের এক দিনে, ফ্রগ ক্রীক পেনসিলভেনিয়ার বনভূমিতে উদয় হয় রহস্যময় এক ট্রী হাউস।
তিন গোয়েন্দা দড়ির মই বেয়ে ট্রী হাউসে ওঠে। ওরা আবিষ্কার করে ওটা বই-পত্র দিয়ে ভর্তি।
ওরা শীঘি টের পায় ট্রী হাউসটা জাদুর। বইয়ে উল্লেখ করা বিভিন্ন জায়গায় ওদেরকে নিয়ে যেতে পারে। ওদেরকে শুধু একটা ছবিতে আঙুল রেখে সেখানে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করতে হয়।
ওরা এখন পর্যন্ত নানান জায়গায় ভ্রমণ করেছে। এক পর্যায়ে জানতে পারে ট্রী হাউসটার মালিক মরগ্যান লে ফে। রাজা আর্থারের সময়কার এক জাদুকরী লাইব্রেরিয়ান সে। টাইম আর স্পেসে অবাধ বিচরণ তার, বই সগ্রহের বাতিক।
এবার আবার অভিযানে বেরোচ্ছে কিশোর, মুসা, রবিন।
০১.
জলদি এসো! কিশোর আর মুসার উদ্দেশে বলল রবিন।
ফ্রগ ক্রীক উডসে দৌড়ে ঢুকে পড়ল ও।
কিশোর আর মুসা ওকে অনুসরণ করল। এখনও আছে! উত্তেজিত কণ্ঠে চেঁচিয়ে উঠল রবিন।
রবিনের নাগাল ধরল কিশোর আর মুসা। উঁচু এক ওক গাছের পাশে দাঁড়িয়ে রবিন।
মুখ তুলে চাইল কিশোর। বিকেলের রোদে ঝিকোচ্ছে জাদুর ট্রী হাউসটা।
আমরা আসছি, জেরি! চেঁচাল রবিন। দড়ির মইটা ধরে উঠতে শুরু করল।
ওকে অনুসরণ করল কিশোর আর মুসা। ওরা উঠছে তো উঠছেই। শেষমেশ ঢুকতে পারল ট্রী হাউসের ভিতরে।
জেরি? ডাকল মুসা।
কিশোর ব্যাকপ্যাক খুলল। দৃষ্টি বুলিয়ে নিল চারধারে।
এক গাদা বইয়ের উপর তেরছাভাবে রোদ পড়েছে।
কাঠের মেঝেতে চমকাচ্ছে এম অক্ষরটা। এম মানে মরগ্যান লে ফে।
জেরি মনে হয় এখানে নেই, বলল কিশোর। গেল কোথায় তাই ভাবছি, বলল মুসা।
কিঁচ!
হেসে উঠল রবিন। দেখো, দেখো!
ছোট, গোলাপি এক মোজা মেঝের উপর দিয়ে চলে বেড়াচ্ছে। গতকাল রবিন ওর মোজাটাকে জেরির বিছানা বানিয়ে দিয়েছিল।
খুদে পিণ্ডটাকে হাতে তুলে নিল রবিন। আমাজানেরগহীনে
কিঁচ।
মোজার ভিতর থেকে বাদামি-সাদা এক ইঁদুর উঁকি দিল। বড় বড় চোখ ঘুরিয়ে একে একে তিন বন্ধুকে দেখে নিল।
হেসে উঠল কিশোর।
কী রে, জেরি? বলল ও।
তুই কি আজকেও আমাদের হেল্প করবি? রবিনের প্রশ্ন।
এর আগে বিভিন্ন অভিযানে জেরি ওদেরকে সাহায্য করেছে।
মরগ্যানের জন্যে আমাদের আরও কটা জিনিস খুঁজে পেতে হবে, বলল মুসা।
কিশোর নীচের ঠোটে চিমটি কাটল। কোথা থেকে শুরু করব আগে সে সূত্র দরকার, বলল।
বলল তো কী? বলল রবিন।
কী?
আমাদেরকে বেশি দূর খুঁজতে যেতে হবে না, ট্রী হাউসের এক কোনার দিকে ইশারা করল রবিন।
ছায়ার আড়ালে খোলা এক বই।
০২.
আরি, বলে বইটা তুলে নিল কিশোর। কে খুলল এটা?
বইটা বন্ধ করে প্রচ্ছদ দেখল ও।
সবুজ এক অরণ্যের ছবি। গাছগুলো লম্বা-লম্বা আর জড়াজড়ি করা।
প্রচ্ছদে লেখা: দ্য রেইন ফরেস্ট।
বাহ, বলল কিশোর।
না, বলল রবিন।
খাইছে, বলল মুসা।
সমস্যা কী? রবিনকে প্রশ্ন করল কিশোর।
স্কুলে রেইন ফরেস্ট সম্পর্কে পড়েছি। ওখানে বড় বড় পোকা আর মাকড়সা থাকে।
জানি, বলল কিশোর। তাদের অর্ধেকের এখনও নামকরণ হয়নি।
খাইছে, বলে উঠল মুসা।
ভয়ঙ্কর জায়গা, বলল নথি।
ভয় পাচ্ছ কেন? বলল কিশোর। রেইন ফরেস্ট সম্পর্কে নোট নিতে চায় ও। হয়তো অচেনা কয়েকটা পোকাকে নামও দিতে পারবে।
ভয় পাব না? শিউরে উঠে বলল রবিন।
আমরা তো আগেও কত জায়গায় গেছি, বলল মুসা। তখন তো ভয় পাওনি। এখন এত ভয় পাওয়ার কোন মানে হয় না।
কিশোর দীর্ঘশ্বাস ফেলল।
আমাদেরকে ওখানে যেতে হবে। মরগ্যানকে হেল্প করার জন্যে। সেজন্যেই বইটা খোলা পড়ে ছিল।
জানি, বলে ভ্রু কুঁচকাল রবিন।
তা ছাড়া, রেইন ফরেস্ট কেটে ফেলা হচ্ছে, বলল কিশোর। উজাড় হওয়ার আগেই দেখতে চাও না?
রবিন গভীর শ্বাস টেনে ধীরে ধীরে মাথা ঝাকাল।
ঠিক আছে, চলো তবে, বলল কিশোর।
বইটা আবারও খুলল ও। নীল আকাশ, সবুজ গাছ-পালা আর রঙিন ফুল নিয়ে এক ছবি। তাতে আঙুল রাখল।
আমরা ওখানে যেতে চাই, বলল।
বাতাস বইতে শুরু করল।
কিঁচ।
তুই এখানে থাক, জেরি, বলে জেরিকে তুলে পকেটে রাখল রবিন।
বাতাস জোরাল হলো। ঘুরতে আরম্ভ করল ট্রী হাউস। চোখ বুজে ফেলল কিশোর।
শিসের শব্দ তুলে বয়ে যাচ্ছে বাতাস। বন-বন করে ঘুরছে ট্রী হাউস।
এবার সব কিছু স্থির।
একদম নিথর।
বুনো শব্দ নিস্তব্ধতা ভঙ্গ করল।
তীক্ষ্ণ, কর্কশ ডাক।
গুঞ্জন।
কিচিরমিচির।
০৩.
চোখ মেলল কিশোর।
বাতাসে গরম ভাব আর বাষ্প।
মনে হচ্ছে আমরা কোন ঝোপ-ঝাড়ের মধ্যে নেমেছি, বলল রবিন।
ট্রী হাউসের জানালা দিয়ে উকি মারছে ও। ওর পকেট থেকে মুখ। বের করেছে জেরি।
কিশোর আর মুসাও বাইরে তাকাল।
চকচকে সবুজ পাতার সাগরে নেমেছে ওরা। বাইরে ফুল, রঙবেরঙের প্রজাপতি, আর পাখি। ঠিক বইতে যেমন ছিল।
খাইছে, বলল মুসা। আমরা কোন গাছে নামলাম না কেন তাই ভাবছি। যেমনটা সব সময় নামি।
কে জানে, বলল রবিন। এখন চলো তাড়াতাড়ি মরগ্যানের জিনিসটা খুঁজে বের করি। বিরাট বড় কোন মাকড়সার খপ্পরে পড়ার
আগেই যাতে বাড়ি ফিরতে পারি।
দাঁড়াও। ব্যাপারটা অদ্ভুতই বটে, বলল কিশোর। ঝোপের মধ্যে নামলাম কেন বুঝছি না। একটু পড়ে দেখি।