জানি, কেইন বলল।
সত্যি? কিশোর অবাক। কি করে জানলেন?
জানানোর লোক আছে আমার, প্রশ্নটা এড়িয়ে গেল কেইন। তা গাল আইল্যান্ডে কি উদ্দেশ্যে?
আমাদের এক বন্ধু নিখোঁজ হয়ে গেছে এখান থেকে, জবাব দিল কিশোর। জরজিনা পারকার। আমাদের বিশ্বাস, কিডন্যাপ করা হয়েছে তাকে।
গুরুতর অভিযোগ, হাসি মুছল না লোকটার মুখ থেকে। কিন্তু রোদের মধ্যে গরমে দাঁড়িয়ে কেন? এসো, ভেতরে এসো। ঠাণ্ডা কিছু খাবে?
ঠাণ্ডা খাওয়ার তেমন কোন ইচ্ছে নেই কিশোরের, কিন্তু ঘরের ভেতরটা দেখার সুযোগটাও ছাড়তে চাইল না। রাজি হয়ে গেল।
জিনিসপত্র সব এলোমেলো হয়ে আছে, কিছু আবার ভেবে বোসো না। গোছানোর সময় পাই না, দামী দামী জিনিসপত্রে সাজানো একটা সান-রূম পেরিয়ে দুজনকে বিরাট রান্নাঘরে নিয়ে এল কেইন। সাদা বিশাল কাউন্টারটাতে অসংখ্য বাক্স আর বাদামী ব্যাগ পড়ে আছে। কিশোরকে সেগুলোর দিকে তাকাতে দেখে বলল, কাল সন্ধ্যায় একটা ছোটখাট পাটি আছে।
ইনটারকমে কথা বলল কেইন। প্রায় সঙ্গে সঙ্গে ঘরে ঢুকল একজন লোক। উচ্চতা পাঁচ ফুট দশের কম হবে না। খোঁচা খোঁচা দাড়ি। উষ্কখুষ্ক চুল। পেশী যেন ফুটে বেরোচ্ছে। নড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে কিলবিল করে উঠছে হাতের পেশী।
এনডি টাওয়ার, গোয়েন্দাদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিল কেইন। এনডি, ও কিশোর পাশা। আর ও মুসা আমান।
আরেকটু হলেই ওদের চাপা দিয়ে ফেলেছিলাম আজ, এনডি বলল, যেন মস্ত বড় একটা রসিকতা। রাস্তায় হাঁটার সময় আরও সাবধান হওয়া উচিত তোমাদের।
যাই বলেন, দারুণ একখান ট্রাক কিন্তু আপনার, খোঁচাটা না দিয়ে ছাড়ল না কিশোর। রাস্তায় বেরোলেই দেখা হয়ে যায়…
বাদ দাও ওর কথা, কিশোরকে থামিয়ে দিল কেইন। এনডি, ওদের সোডা দাও।
বিশাল রেফ্রিজারেটর থেকে চার ক্যান সোডা বের করল এনডি।
বাপরে বাপ, কতবড় ফ্রিজ! প্রচুর খাবার ধরে নিশ্চয়, রেফ্রিজারেটরটার কাছে এগিয়ে গেল মুসা। রসে ভেজানো কালো আঙরের একটা ক্যান বের করল মুসা। খাবই যখন, ভাল করে খাই। ক্যানটা খুলতে গিয়ে ফ্রিজের দরজার দিকে চোখ পড়তেই স্থির হয়ে গেল তার হাত। বিদ্যৎ খেলে গেল যেন শরীরে।
কিশোর তখন সৈকতে ভোলা ইভা আর জিনার যুগল ফটোগ্রাফটা দেখাচ্ছে কেইনকে। মাত্র গত সপ্তাহে তোলা।
ছবিটার দিকে ঠিকমত তাকালও না কেইন। সরি। কখনও দেখিনি একে।
এনডিকে দেখাল কিশোর। আপনি দেখেছেন?
উঁহু, না দেখেই বলে দিল এনডি। পরে তাকাল ছবির দিকে।
আপনি শিওর?
মেয়েটা সুন্দরী, কোন সন্দেহ নেই। চোখে পড়ার মত। দেখলে ঠিকই মনে থাকত।
রেফ্রিজারেটরের কাছ থেকে ফিরে এল মুসা। উত্তেজনা চাপা দিতে কষ্ট হচ্ছে তার। কিশোরের দিকে তাকিয়ে ইশারা করতে যাবে, ফোন বাজল দোতলায়।
কোরি, ধরো তো! দরজার দিকে ফিরে চিৎকার করে বলল এনডি।
ছুটন্ত পায়ের শব্দ শোনা গেল। দৌড়ে যাচ্ছে কোরি।
কয়েক সেকেন্ড পর রান্নাঘরে উঁকি দিল আরেকটা লোক, বস, আপনার ফোন! মিয়ামি থেকে। এনডি যেমন লম্বা, কোরি তেমনি খাটো। হালকা-পাতলা। মাথার কালো লম্বা চুল ব্যাকব্রাশ করা। এনডির দিকে তাকিয়ে বলল, আমি কুকুরগুলোকে ঘরে আটকে রাখতে যাচ্ছি।
যাও, বলে ডাকল আবার কেইন, কোরি, শোনো। এদের নাম জানো? ও কিশোর পাশা। আর ও মুসা আমান।
অস্বস্তিভরা চোখে ওদের দিকে তাকাল কোরি, কিছু বলল না।
আপনারা মনে হচ্ছে সবাই খুব ব্যস্ত, কিশোর বলল কেইনের দিকে তাকিয়ে। আমরা বরং চলে যাই।
কিন্তু যাওয়ার কোন ইচ্ছে নেই কিশোরের। তার ধারণা, যত বেশি সময় থাকা যাবে, তত বেশি সূত্র পাওয়া যাবে। একটা ব্যাপারে ইতিমধ্যেই শিওর হয়ে গেছে-ওদেরকে ফলো করে আসা ট্রাকটার মালিক ডগলাস কেইন।
কেউ কিছু বলছে না দেখে থাকার আশা ত্যাগ করল কিশোর। সোডা খাওয়ানোর জন্যে ধন্যবাদ। আর কুকুরগুলোকে ডেকে ফেরানোর জন্যেও।
তোমাদেরকেও ধন্যবাদ, কেন ধন্যবাদ দিল, সে-কথাটা আর খোলসা করল কেইন। কোরি, তুমি আর এনডি ওদেরকে এগিয়ে দিয়ে এসো। দেখো, কুকুরগুলো যেন আর বিরক্ত করতে না পারে।
বাইরের ঘরে কিশোররা ঢুকেছে, এই সময় দরজার বাইরে নীরা লেভিনকে দেখা গেল।
তাড়াতাড়ি এগিয়ে গেল এনডি, কাঁচের স্লাইডিং ডোরের ছিটকানিটা খুলে দেয়ার জন্যে।
ভেতরে ঢুকে কিশোরদের দেখে থমকে দাঁড়াল নীরা। কোথায় যেন দেখেছি তোমাদের?…ও, কুপারের রেস্টুরেন্টে। আমার পিছু নিয়েছ কেন?
আপনার পিছু নেব কেন? হাসিমুখে জবাব দিল কিশোর। আপনার অনেক আগেই আমরা এসেছি।
মনে মনে রেগে গেলেও রসিকতার ঢঙে মুসা বলল, মনে তো হচ্ছে আপনিই আমাদের অনুসরণ করে এসেছেন।
হয়েছে, হয়েছে! আমার কথা তুলে নিলাম! নীরস স্বরে জবাব দিল নীরা।
একটা মেয়েকে খুঁজতে এসেছে ওরা এখানে, বিশ্রী একটা পরিস্থিতি তৈরি হতে যাচ্ছে দেখে তাড়াতাড়ি বলে উঠল এনডি। আমরা বলে দিয়েছি সে এখানে নেই। তাই ওরা এখন চলে যাচ্ছে।
ওদের দরজার বাইরে বের করে দিয়ে দরজা লাগিয়ে দিতে গেল এনডি, কিন্তু কি ভেবে দাঁড়িয়ে গেল কিশোর। ছবিটা বের করে জিনার ছবিতে আঙুল রেখে দেখাল নীরাকে। দেখুন তো, আপনি দেখেছেন নাকি?
ছবিটার দিকে তাকিয়ে আছে নীরা, কিশোর তার মুখের দিকে তাকিয়ে লক্ষ করছে কোন প্রতিক্রিয়া হচ্ছে কিনা।
তিন দিন হলো নিখোঁজ হয়েছে, কিশোর বলল। ভাবলাম, মিস্টার কেইন। কিংবা তাঁর কর্মচারীদের কেউ দেখে থাকতে পারে, সৈকতের এত কাছে বাড়ি যখন।