হ্যাঁ, ঘৃণায় নাক কুঁচকাল ম্যাগি। আর তার কেনা সম্পত্তির মধ্যে একটা হলো ওই নীরা লেভিন।
কিন্তু জায়গা বেচার জন্যে এত চাপাচাপি করছে কেন ওরা? জানতে চাইল কিশোর।
টাকা কামাইয়ের নতুন ধান্দা! রুক্ষ শোনাল ম্যাগির কণ্ঠ।
গুজব শোনা যাচ্ছে, কুপার জানাল, চিরকালই ক্যাসটিলো কীর দরিদ্র প্রতিবেশী এই গাল আইল্যান্ড। ক্যাসটিলোর পুরো পশ্চিম উপকূলটাই উপসাগরের মধ্যে ঢুকে রয়েছে। সবখানে রয়েছে সাদা সৈকত। সংস্কার করা হয়েছে ওগুলোর। নীরার মত উন্নয়নকারীরা আমাদের এই ছোট্ট দ্বীপটাকেও আরেকটা ক্যাসটিলো কী বানিয়ে ফেলতে চাইছে। আরেকটা গুজব আমি শুনেছি, ডগি, মানে ডগলাস নাকি গাল আইল্যান্ডটাকে একটা প্রাইভেট রিসর্ট বানানোর স্বপ্ন দেখছে। এখানে আসতে হলে তখন তোমাকে এটার মেম্বার হতে হবে। সরাসরি আর এ ভাবে চলে আসতে পারবে না।
কিন্তু তারপরেও, মুসা বলল, আপনার এই জায়গাটুকুর জন্যে দশ লাখ ডলার অনেক বেশি না?
তা তো বেশিই, কুপার বলল। রেস্টুরেন্টটা দিয়ে দিতে আপত্তি ছিল না আমার। কিন্তু বাড়িটা তো ছাড়তে পারব না। বহু বছর ধরে আছি। আমার মত আরও অনেকেই আছে। ভালবেসে ফেলেছি দ্বীপটাকে। থোক না সাধারণ, কিন্তু এ তো এখন বাড়ি। আর আমরা চাই, এখন যেমন আছে ঠিক তেমনই থাকুক দ্বীপটা। অন্য কিছু হলে আমাদের বিদেয় হতে হবে।
তারমানে আপনার ধারণা, কিশোর বলল, ডগলাস আপনাকে তাড়াতে চাইছে?
তোমার কি মনে হয়? ভুরু নাচাল কুপার। হঠাৎ করেই যদি কোন জায়গায় অকারণে অ্যাক্সিডেন্ট, চুরি-ডাকাতি এ সব শুরু হয়ে যায়…
এবং কিডন্যাপিং, যুক্ত করল মুসা।
হ্যাঁ, ওই মেয়েটার কথা শুনেছি, কপার বলল। আর আমি বাজি ধরে বলতে পারি, ওকে উদ্ধারের কোন চেষ্টাই করেনি ওই গেকোটা। মেয়েটার জন্যেই এলে নাকি?
মাথা ঝাঁকাল কিশোর। আমি কিশোর পাশা। ও আমার বন্ধু মুসা আমান। গত রাতে এসেছি আমরা। আমাদের আরও এক বন্ধু এসেছে, রবিন মিলফোর্ড। জিমার কি হয়েছে, খোঁজ-খবর নিচ্ছি আমরা…
বাইরে খোয়ার মধ্যে টায়ার ঘষার কর্কশ শব্দে ছেদ পড়ল কথায়। গাড়ির দরজা লাগানোর শব্দ হলো। ছুটে ঘরে ঢুকল রবিন।
সদ্য প্রিন্ট করে আনা ছবিগুলো তুলে দিল কিশোরের হাতে।
বাহ, বড় তাড়াতাড়ি দিল তো, কিশোর বলল।
চলো, টেবিলে গিয়ে বসে দেখা যাক, মুসা বলল।
এক্সকিউজ আস, কুপার, বলে টেবিলের দিকে হাঁটতে শুরু করল কিশোর। তিনজনে এসে বসল আবার আগের টেবিলটায়। রবিনের জন্যেও খাবারের অর্ডার দেয়া হলো।
ছবিগুলো টেবিলে ছড়িয়ে দেখতে শুরু করল ওরা।
এটা দেখো, বেশ স্পষ্ট, একটা ছবি দেখাল রবিন।
মিস্টার ব্রুকের কাঠের তৈরি কেবিন ক্রুজারের সামনে দাঁড়ানো জিনা আর ইভা। কিশোরের কাছে এটা সাধারণ ছবি মনে হলো।
ঘাটতে ঘাটতে একটা ছবিতে আটকে গেল তার চোখ। টেনে নিয়ে উত্তেজিত কণ্ঠে বলে উঠল, এটাই আমাদের দরকার!
হাতে নিয়ে তিনজনেই ভালমত ছবিটা উল্টেপাল্টে দেখতে লাগল। বোঝার চেষ্টা করল। ছবিতে আরেকটা গাড়ির পেছনের অংশ দেখা যাচ্ছে। মিস্টার ফ্রকের গাড়িতে বসে ভোলা। তাড়াহুড়া করে তোলার কারণে অস্পষ্ট রয়ে গেছে ছবির অনেক কিছু। বোঝা কঠিন।
ছবির এক জায়গায় আঙুল রাখল কিশোর। দেখো, এটা জেরি আঙ্কেলের গাড়ির জানালার ফ্রেম। এটা গাড়ির হুড।
আর এটা, রবিন বলল, সামনের গাড়িটার পেছনের বাম্পার।
ঠিক, একমত হলো কিশোর। আর এটা দেখো। সাদা-কালো স্টিকার। বাম্পারের বা সাইডে, নিচের দিকে লাগানো। কোন ধরনের আইডেন্টিফিকেশন নম্বর।
ভাড়া করা গাড়ির এ সব থাকে, উত্তেজিত হয়ে উঠল রবিন। কোম্পানির নিজস্ব একটা সিরিয়াল নম্বর দিয়ে রাখে গাড়িতে।
এ ছবিটা বড় করা দরকার, কিশোর বলল। আমি শিওর, এ গাড়িটা দিয়েই জিনাকে কিডন্যাপ করা হয়েছে। এই কোড নম্বরটা যতক্ষণ না বুঝতে পারছি…।
খাওয়া শেষ করে আর দেরি করল না রবিন। উঠে দাঁড়াল। এনলার্জ ছবিটা নিয়ে ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই ফিরে আসছি আমি।
বেরিয়ে গেল সে।
মুসার দিকে তাকাল কিশোর। আমরা আর বসে থেকে কি করব? চলো, একটু সৈকতের দিক থেকে ঘুরে আসি।
ওদিকে কেন? বলতে গেল মুসা।
তদন্ত করতে। ভুলে যাচ্ছ কেন, সৈকতে যাবার পথেই নিখোঁজ হয়েছে জিনা। বলা যায় না, জরুরী সূত্র পেয়ে যেতে পারি ওদিকে।
কুপারের বিল মিটিয়ে দিল কিশোর। রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে গাড়িতে চাপল দুজনে। স্টার্ট দিয়ে দক্ষিণে গাড়ি ঘোরাল মুসা। মেইন রোড ধরে সৈকতের দিকে চলল।
কি বলেছিলাম? দিনের বেলা দারুণ লাগবে! চতুর্দিকের চমৎকার প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখে শিস দিতে শুরু করল কিশোর।
একটা মোড় ঘুরতেই সাদা সৈকত চোখে পড়ল। নারকেল আর উঁচ উঁচ রয়্যাল পামের সারি তিনদিক থেকে ঘিরে রেখেছে সৈকতটাকে। সারা দ্বীপে এখানেই কিছু মানুষের ভিড় দেখা গেল।
দিনটা কিন্তু পানিতে নামার মতই, লোভাতুর দৃষ্টিতে সাগরের নীল পানির দিকে তাকাল মুসা।
হাসল কিশোর। পরে। সাঁতার কাটার অনেক সুযোগ পাবে।
বালির প্রান্তে সারি দিয়ে থাকা গাছের ছায়ায় গাড়ি রাখল মুসা। গাড়ি থেকে নামল দুজনে।
শক্তিশালী ইঞ্জিনের গর্জন শুনে ফিরে তাকাল মুসা। পেছনের একটা সরু গলি থেকে বেরিয়ে এল একটা সাদা-কালো ট্রাক। তীব্র গতিতে ছুটে এল ওদের দিকে।