গাড়িতে চড়ে রাস্তায় ওঠার পরও ওদের পিছু ছাড়ল না শেরিফ। শহরে ঢোকার পর তারপরে গেল।
শেরিফ চলে গেল সৈকতের দিকে, কুপারস ডিনারটা সামনে দেখে তার পাশে এনে গাড়ি থামাল মুসা।
ঘোট হল ঘরটায় ঢুকল দুজনে। মাত্র একজন কাস্টোমার। সুবেশী একজন অল্প বয়েসী মহিলা। সোনালি চুল। কাউন্টারে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে কফি খাচ্ছে।
কাউন্টারের উল্টো দিকে একটা টেবিলে লাল চামড়ায় মোড়া চেয়ারে বসল দুই গোয়েন্দা।
ওরা বসতেই এগিয়ে এল ওয়েইট্রেস, মহিলা। বয়েস পঞ্চাশ পেরিয়ে গেছে। ধূসর রঙ লেগেছে চুলে।
মেন্যু লাগবে না আমাদের, ম্যাগি, মহিলার হালকা নীল পোশাকের বুকে সুতো দিয়ে লেখা নাম দেখে বলল কিশোর। আমাদের জন্যে ডিম, হোম ফ্রাই, আর টোস্ট।
হোম ফ্রাই হবে না, ম্যাগি জানাল। হ্যাশ ব্রাউন।
আনুন। ওতেই চলবে।
খিদে পেয়েছে খুব। গোগ্রাসে গিলছে দুজনে, এমন সময় পেছনের ঘর থকে সরু একটা দরজা দিয়ে হুড়মুড় করে ঢুকল একজন লোক। ওর দাগ লাগা দোমড়ানো অ্যাপ্রনের বুকে লেখা রয়েছে কুপার।
ম্যাগি, ওয়েইট্রেসকে বলল সে, গ্রিলে মাংস গেঁথে দিয়ে এসেছি। রান্নাটা শেষ করে ফেলগে। অ্যাপ্রনে মুছল তেল মাখা হাত। ওই ডেপুটিটা যদি দ্বীপের এ সব শয়তানি বন্ধ করতে না পারে, পরের বার শেরিফের ইলেকশনে প্রার্থী হয়ে অবশ্যই তার বিরোধিতা করব আমি।
মুখ তুলে তাকাল কাউন্টারে দাঁড়ানো সোনালি চুল মহিলা। কি আজেবাজে বকছ, কুপার!
না, সত্যি বলছি।
ষোলো বছর ধরে এক নাগাড়ে ডেপুটিগিরি করছে এখানে গেকো, মহিলা বলল। তার সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নামলে হেরে ভূত হবে, জানা কথা।
না, হব না। কেন এতদিন টিকে ছিল ওই হাঁদাটা, জানো? দ্বীপে কোন অপরাধ হত না বলে। এখন যখন ঘটতে শুরু করেছে, বেশিদিন আর টিকতে পারবে না। আমার কথা ডায়েরীতে লিখে নিতে পারো তুমি, নীরা।
নীরা!
মাঝপথে থেমে গেল কিশোরের চামচ।
মুসারও কান খাড়া হয়ে গেছে।
লেখালেখির আর দরকার নেই। যার যার নিজের পথ দেখা ভাল, নীরা বলল। তোমার ভালটা তো কখনোই বুঝতে চাওনি। কতবার বলেছি, আখেরটা গুছিয়ে নাও, কিন্তু কানেই যায় না তোমার। ডেভলেপমেন্ট কোম্পানি এখনও তোমার জায়গাটা কিনে নিতে আগ্রহী।
এবং আমি এখনও বলছি, জবাব দিল কুপার, জায়গা আমি বেচব না। বেচো বেচো করে বিরক্ত করতে এসো না তো আর দয়া করে।
শোনো, কুপার, ভেবে দেখো, নীরা বলল, কি পাচ্ছ তুমি এই রেস্টুরেন্ট ব্যবসা থেকে? এক কাপ কফি বেচতে গিয়ে দুতিন কাপ বাড়তি দেয়া, দুটো ডিম ভাজা দিলে একটা ডিম ফ্রি দেয়া-এ সব করে কেউ ব্যবসা চালাতে পারে? লাভ। হয় কিছু? বরং লস। অনেক বেশি লস। লোকসান দিতে দিতে শেষ হচ্ছ। আমি ব্যবসায়ী, আমি জানি। তারচেয়ে বেচে দিয়ে টাকা নিয়ে চলে যাও। কাজে লাগবে। কত চাও, নিজের মুখেই বলো বরং।
মহিলাটাকে ভাল লাগল না কিশোরের। বুঝতে পারছে, কুপারও তাকে দেখতে পারে না।
বেশ, নরম হওয়ার ভান করল কুপার। জায়গাটা যখন এতই তোমার পছন্দ, যাও, দিয়ে দিলাম।
রান্নাঘর থেকে সব কথাই বোধহয় কানে গেছে ম্যাগির। তাড়াতাড়ি দরজা দিয়ে মুখ বের করে চিৎকার করে বলল স্বামীকে, না না, কুপার, এ কি করছ!
কর্কশ কণ্ঠে ধমকে উঠল কুপার, তুমি আবার এ সবে নাক গলাতে এলে কেন? যাও, নিজের কাজ করোগে!।
খাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে দুই গোয়েন্দার। প্রবল আগ্রহ নিয়ে কাউন্টারের দিকে তাকিয়ে আছে।
এই নাহলে পুরুষ মানুষের মত কথা, হাসি ফুটেছে নীরার মুখে। চামড়ার পার্স থেকে চেক বই বের করল। বলল, কত চাও?
দুই হাতের তালুর দিকে তাকাল কুপার। বিড়বিড় করল, দশ লাখ।
দশ লাখ! দম আটকে ফেলল কিশোর।
দশ লাখ, কি? ভুল শুনেছে কিনা বুঝতে চাইল যেন নীরা।
কি আবার, ডলার। দশ লাখ ডলার, কুপার বলল। তুমি জানতে চেয়েছ, কত চাই। আমার দাম আমি বললাম। পছন্দ হলে নাও, নাহলে বিদেয় হও।
না না, বিদেয় হব কেন!
চেক লিখতে শুরু করল নীরা।
.
০৪.
খাইছে! এ জায়গার দাম দশ লাখ ডলার! ফিসফিস করে বলল মুসা।
হুঁ, বিশ্বাস তো আমারও হচ্ছে না, কাউন্টারের দিকে তাকিয়ে থেকে নিচের ঠোঁটে ঘন ঘন চিমটি কাটছে কিশোর।
চেকটা কুপারের হাতে তুলে দিল নীরা।
হাতে নিয়ে দেখল কুপার। দেখল, সত্যি দশ লাখ লিখেছে কিনা। তারপর ধীরে ধীরে ছিঁড়তে শুরু করল। ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে বাতাসে উড়িয়ে দিল। নীরার দিকে তাকিয়ে হাসল, রসিকতা করলাম। কিছু মনে কোরো না।
কুপারের কথা শেষ হওয়ার আগেই ঝটকা দিয়ে ঘুরে দাঁড়াল নীরা। দুপদাপ পা ফেলে চলে গেল দরজার দিকে।
উফ, বাঁচলাম! স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল ম্যাগি। আমি তো ভেবেছিলাম সত্যি সত্যি বুঝি তুমি…
দশ লাখ কেন, দশ কোটি টাকা দিলেও এ জায়গা বেচব না আমি, কুপার বলল।
এক্সকিউজ মী, কাউন্টারের দিকে এগিয়ে যেতে যেতে বলল কিলোর, তার পেছনে এগোল মুসা। আপনাদের কথাবার্তা সব শুনে ফেলেছি। গাল আইল্যান্ডে প্রচুর জায়গা আছে নাকি নীরা লেভিনের?
প্রচুর কি বলছ? খড়খড় করে উঠল ম্যাগি। গাল আইল্যান্ডের অর্ধেকটাই তো তার।
আসলে, শুধরে দিল কুপার, জমি বেচাকেনার যে কোম্পানিতে সে কাজ করে, জায়গাগুলো তাদের। কোম্পানির মালিক ডগলাস কেইন। কারলুর শেষ ধারে, সৈকতের কিনারে তার বাড়ি। এত ধনী, যা ইচ্ছে তাই কিনতে পারে।