ময়লা হয়ে আছে গাড়িটা। প্রচুর ধুলো। ব্যবহার করা হয় না বোধহয়, পরিষ্কারও করেন না সে-জন্যে। অফিসের পেছনে ফেলে রেখেছেন। অফিসের অপরিষ্কার আসবাবপত্রগুলোর কথা মনে পড়ল কিশোরের! কোন কারণে. সব কিছুর প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন যেন মিস্টার ব্রুক।
এই কিশোর, দেখো, নাইলনের সুতোয় বোনা একটা ফিতে তুলে দেখাল রবিন। একদিকের গ্লোভ কম্পার্টমেন্টের কজায় আটকে ছিল।
সামনের সীটের নিচে খুঁজছিল কিশোর। ঘাড় ফিরিয়ে জিনিসটার দিকে তাকিয়ে বলল, কিসের ফিতে?
যে কোন জিনিসের হতে পারে এটা, রবিন বলল। টেপ প্লেয়ার, ক্যামেরা।
এটা না তো? উজ্জ্বল হলুদ রঙের একটা স্পোর্ট-স্টাইল ক্যামেরা বের করে দেখাল কিশোর। ধাতব আংটার সঙ্গে ছেঁড়া ফিতের মাথাটা লেগে রয়েছে এখনও।
পেলে নাকি কিছু? দরজার কাছ থেকে শোনা গেল মুসার কণ্ঠ।
অ, ঘুম ভাঙল। ক্যামেরাটা মুসাকে দেখাল কিশোর।
আরি, জিনার এ রকম একটা ক্যামেরা ছিল না! চেঁচিয়ে উঠল মুসা।
মাথা ঝাঁকাল কিশোর। হ্যাঁ। কজায় আটকে গিয়েছিল ফিতেটা। তাড়াহুড়ো ছিল, তাই ভোলার চেষ্টা না করে হ্যাঁচকা টানে ছিঁড়ে নিয়ে এসেছিল। ছবিটা তুলে নিয়েই লুকিয়ে ফেলেছিল সীটের নিচে।
রবিনের দিকে তাকাল সে, রবিন, ছবিটা ডেভেলপ করা দরকার। মেইনল্যান্ডে চলে যাও। এক ঘণ্টায় ছবি দিয়ে দেয় যে সব দোকানে, ওদের কাছ থেকে করিয়ে আনে।
জানালাটা মেরামত করিয়ে আনব?
নাহ, আপাতত দরকার নেই। পরে সময় করে করা যাবে। বৃষ্টি এলে। প্লাস্টিক দিয়ে আটকেই ঠেকাব আপাতত।
গাড়ি নিয়ে রওনা হয়ে গেল রবিন।
সেদিকে তাকিয়ে থেকে মুসা বলল, আমরা চলো যাই পেলিক্যান লেনে। গাড়িটা যেখানে পাওয়া গেছে। দেখে আসা দরকার।
চলো। ডেপুটি গেকো আসলেই সূত্র খুঁজেছে বলে আমার মনে হয় না। তাহলে এই ফিতে আর ক্যামেরাটা আমাদের হাতে পড়ত না।
মিস্টার ব্রুকের গাড়িটা নিয়ে রওনা হল দুজনে।
কয়েক মিনিট পর জায়গাটাতে পৌঁছে গেল ওরা। ম্যাপ দেখে মুসাকে গাড়ি থামাতে বলল কিশোর। বালির ওপরে ইট বিছিয়ে রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। বালিতে টায়ারের দাগগুলো ভালমত লক্ষ করল সে। কিডন্যাপারের গাড়ির চাকার দাগ দেখলে যাতে পরে চিনতে পারে।
বাড়িঘর তো নেই বললেই চলে, চারপাশে তাকিয়ে দেখতে দেখতে বলল মুসা। জিনার কিডন্যাপিঙের পর বিশেষ কেউ আর আসেনি বোধহয় এদিকে। এখনও সূত্র পাওয়ার আশা আছে।
নোটবুক বের করে পেন্সিল দিয়ে তাতে নানা রকম টায়ারের দাগের নমুনা এঁকে নিচ্ছে কিশোর, এই সময় সেখানে এসে থামল একটা পুলিশের গাড়ি। স্টিয়ারিঙের নিচ থেকে ধীরে-সুস্থে বেরিয়ে এল পেশীবহুল একজন লোক। কোমরের বেল্টে দুই হাতের বুড়ো আঙুল ঢুকিয়ে দিয়ে, হাঁটার তালে তালে রিভলভারের খাপ দোলাতে দোলাতে পুরানো ওয়েস্টার্ন সিনেমার নায়কদের মত কিশোরের সামনে এসে দাঁড়াল। আমি গেকো, ভারিক্কি চালে পরিচয়টা জানিয়ে যেন কৃতার্থ করে দিতে চাইল গোয়েন্দাদের। ডেপুটি শেরিফ হেরিং গেকো।
মানে মৎস্য-গিরগিটি, মুখ ফসকে বেরিয়ে গেল মুসার। হেরিং হলো মাছ আর গেকো গিরগিটি।
কি বললে?
না, কিছু না।
কিছু হারিয়েছ? মৎস্য-গিরগিটি কথাটা বোধহয় শোনেনি গেকো, কিংবা শুনলেও ঠিক বুঝতে পারেনি। নইলে রেগে যেত, জানা কথা।
উঁহু, মাথা নাড়ল কিলোর। আমি কিশোর পাশা। হাত বাড়িয়ে দিল সে।
কিন্তু ধরল না গেকো। আঙুল দুটো যে ভাবে ঢুকিয়ে রেখেছিল, সেভাবেই রাখল। গিরগিটির মতই মাথাটা একপাশে কাত করে এক চোখ উঁচু করে তাকাল। কিশোর পাশা?
হ্যাঁ। ও আমার বন্ধু, মুসা আমান।
ও, তোমাদের কথাই বলেছে তাহলে গ্লেজব্রুক। নিখোঁজ মেয়েটাকে খুঁজতে এসেছ তোমরা।
মাথা ঝাঁকাল কিশোর।
ওকে কিডন্যাপ করা হয়নি, রায় দিয়ে দিল ডেপুটি। সুতরাং যেখান থেকে এসেছ, সেখানে ফিরে যেতে পারো।
কিডন্যাপ হয়নি, আপনি কি করে জানলেন? কণ্ঠস্বর স্বাভাবিক রাখতে কষ্ট হলো কিশোরের।
তাহলে টাকা দাবি করে নোট পাঠাত, এ তো সহজ কথা।
সব সময় টাকার জন্যে কিডন্যাপ করে না। আরও নানা কারণ থাকে।
থাকে, অস্বীকার করছি না, কথাটার কোন সদুত্তর না দিয়েই অন্য প্রসঙ্গে চলে গেল গেকো। তোমরা এখন অন্যের জমির ওপর দাঁড়িয়ে আছ। সেটা যে। অপরাধ জানা আছে কি?
কিন্তু আমরা তো কোন ক্ষতি করছি না।
ওসব বুঝি না। এ জায়গাটা অন্য মানুষের। এবং আমি জানি, যার জায়গা, সে তোমাদের এখানে আসা পছন্দ করবে না।
চারপাশে তাকিয়ে সাইনবোর্ড খুঁজল কিশোর। কই, কোথাও তো লেখা নেই।
সব সময় যে লিখে দিতে হবে এমন কোন কথা নেই, জবাব দিল শেরিফ। আমাকে রেখেছে তাহলে কিসের জন্যে? আমার কাজ, এ রকম অপরাধ যাতে না করে কেউ সেদিকে লক্ষ রাখা।
তাহলে মালিকের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে আসা যেতে পারে।
ওই কথাটি চিন্তাও কোরো না, কঠিন কণ্ঠে বলল ডেপুটি। বাইরে থেকে নাক গলাতে আসা দুটো বালকের সঙ্গে প্যাচাল পাড়ার চেয়ে অনেক বেশি জরুরী কাজ আছে নীরা লেভিনের। এটা ট্যুরিস্ট স্পট, শান্তিতে সময় কাটাতে আসে লোকে। এখানে কোন রকম গোলমাল চাই না আমি, বলে দিলাম।
সে তো বুঝতেই পারছি, মুসার দিকে ঘুরল কিশোর। চলো হে, মুসা, ডেপুটি সাহেব এখানে শান্তি বজায় রাখতে থাকুন। আমরা অন্য কাজে যাই।