ফ্লোরিডায় কিছুদিন ধরে পামের এক ধরনের রোগ হচ্ছে, পাম-ফাঙ্গাস বলে এক জাতের ফাঙ্গাস ধ্বংস করে দিচ্ছে গাছগুলোকে, মিস্টার ব্রুক জানালেন। কাজেই এ সব গাছের এখন খুব কদর এ অঞ্চলে। সুস্থ গাছ পেলে ভাল দাম দিতে রাজি আছে অনেকে।
মজার ব্যাপার হলো, ইভা বলল, এত নিঃশব্দে কাজটা করেছে ওরা, রাতের বেলা কোন শব্দই শুনিনি আমরা। এমনকি গাছগুলো যে গায়েব হয়ে গেছে পরদিন সকালেও খেয়াল করিনি আমি। মাটিতে গর্ত দুটো প্রথমে চাচার চোখেই পড়েছে।
প্রায় সারাটা জীবনই এখানে কাটিয়ে দিলাম, মিস্টার ব্রুক বললেন, চোরের ছায়াও দেখিনি কখনও। ঘরের দরজা-জানালায় তালা তো দূরের কথা, ছিটকানিও লাগাইনি কোনদিন। কিন্তু হঠাৎ করেই বড় বড় শহরের মত চুরি-ডাকাতি আর নানা রকম অপরাধের কাজ শুরু হয়ে গেছে গাল আইল্যান্ডেও। ফোঁস করে। নিঃশ্বাস ফেললেন তিনি। বাস্তবে ফিরে এলেন যেন। এই দেখো, খালি নিজের দুঃখের বয়ানই করে চলেছি। এতটা পথ গাড়ি চালিয়ে এসেছ, নিশ্চয় খুব ক্লান্ত। চলো, ঘুমানোর জায়গা দেখিয়ে দিই। আমারও ঘুম পেয়েছে।
ভাববেন না, মিস্টার ব্রুক, দৃঢ়কণ্ঠে বলল কিশোর, জিনাকে তো খুঁজে বার করবই আমরা, আপনার গাছগুলোও খুঁজে বের করে দেব।
অত মিস্টার-ফিস্টার বলা লাগবে না, স্রেফ আঙ্কেল বলবে আমাকে, বলে দিলেন মিস্টার ব্রুক। নিজের বাড়ি মনে করবে। সামান্যতম অসুবিধে হলেও জানাবে আমাকে।
একটা হুক থেকে চাবি খুলে নিয়ে কিশোরের হাতে ফেলে দিলেন তিনি। দশ নম্বর কটেজটার চাবি। ওখানেই থাকার ব্যবস্থা করেছেন ওদের।
সারি ধরে হেঁটে গিয়ে শেষ মাথার কটেজটা, বলে দিলেন তিনি। জিনাকে দিয়েছিলাম তিন নম্বরটা। ও আসার পর ইভাও তার সঙ্গেই ঘুমাত।
থ্যাংকস, অ্যান্ড গুডনাইট, জেরি আঙ্কেল, দরজার কাছে গিয়ে ফিরে তাকিয়ে হাত নাড়ল মুসা।
ইভাও চলল ওদের সঙ্গে। কিশোর বলল, আসা লাগবে না। তুমি যাও। আমরা চিনে নিতে পারব।
তোমরা আসায় একটা পাষাণ নেমে গেল আমার মন থেকে, ইভা বলল। উফ, কি দুশ্চিন্তাই যে হচ্ছিল।
আর দুশ্চিন্তার দরকার নেই, রবিন বলল। জিনাকে খুঁজে বের করবই আমরা।
ইভাকে গুডনাইট জানাল তিন গোয়েন্দা। ঘরে ঢুকে ওর দরজায় ছিটকানি এবং শিকল লাগানোর শব্দ না শোনা পর্যন্ত অপেক্ষা করল। তারপর রওনা হলো গাড়ির দিকে। ব্যাগ-সুটকেসগুলো আনতে হবে।
ওগুলো নিয়ে এল নিজেদের ঘরে।
খুব সুন্দর, বড় একটা ঘর। বড় বড় খাট। ধপ করে বিছানায় বসে পড়ে মুসা বলল, উফ, বাপরে বাপ! এত কাহিল জীবনে হইনি!
হবেই। এত পথ গাড়ি চালানো কি সোজা কথা, রবিন বলল।
কথা না বলে আর, শুয়ে পড়ো, কিশোর বলল। তাড়াতাড়ি উঠতে হবে আবার ঘুম থেকে। সাতটার মধ্যে তদন্ত শুরু করে দেব। প্রথমেই খুঁজে দেখতে হবে গাড়িটা। যেটা থেকে নিখোঁজ হয়েছে জিনা।
মুসা বলল, একবার ঘুমালে এখন আমার কানের কাছে কামান দাগলেও উঠতে পারব কিনা সন্দেহ। তবু, সকাল বেলা ঠেলাঠেলি করে দেখো।
হেসে মাথা ঝাঁকিয়ে বাতি নিভিয়ে দিল কিশোর।
সবে শুয়েছে, হঠাৎ ঝনঝন করে কাঁচ ভাঙার শব্দ হলো।
ঝট করে উঠে বসল আবার কিশোর। মুসা আর রবিনও ঘুমায়নি এখনও। শব্দটা যেদিক থেকে এসেছে সেদিকে তাকিয়ে আছে।
ঘটনাটা কি… বলতে গেল মুসা।
কিন্তু কথা শেষ হলো না তার। ভেসে এল তীক্ষ্ণ চিৎকার।
.
০৩.
আই, কিশোর! কিশোর! চিৎকার করছে ইভা। তোমাদের গাড়ি! জানালার কাঁচ ভেঙে কে জানি ঢোকার চেষ্টা করছে!
এক লাফে বিছানা থেকে নেমে ছুটে বেরিয়ে এল ওরা। রবিন গেল ইভার কাছে। মুসা আর কিশোর ছুটল গাড়ির দিকে।
ওই যে যাচ্ছে! ওই যে ব্যাটা! চিৎকার করে উঠল মুসা। ছুটন্ত মূর্তিটার দিকে দৌড় দিল সে। তাকে অনুসরণ করল কিশোর।
কিন্তু ধরা গেল না লোকটাকে।
পালাল ব্যাটা! হাঁপাতে হাঁপাতে বলল মুসা।
সামনের বাঁ পাশের জানালাটা ভেঙেছে, কিশোর বলল।
গাড়ির দিকে এগোল দুজনে। ততক্ষণে পৌঁছে গেছে রবিন আর ইভা।
গাড়ির জানালা দিয়ে মাথা ঢুকিয়ে দিল রবিন।
কার-ফোনটা নিয়ে গেছে, তারের ছেঁড়া মাথাটা তুলে দেখাল সে। আর কিছু মনে হয় নিতে পারেনি। ইভার চেঁচামেচি শুনে দৌড় দিয়েছে।
নেয়ার মত আর তেমন কিছু ছিলও না ভেতরে। আগেই নিয়ে গেছে ওরা।
তবু, কিশোরও আরেকবার ভালমত দেখল, আর কিছু খোয়া গেছে কিনা।
সীটের ওপর পড়ে থাকা কাঁচের টুকরো পরিষ্কার করল। জানালায় আটকে থাকা টুকরোগুলোও টেনে টেনে তুলে ফেলে দিল। ফোকরটা বন্ধ করে দিল প্লাস্টিকের কাপড় দিয়ে। আরও একবার ইভাকে গুডনাইট জানিয়ে শুতে গেল আবার নিজেদের ঘরে।
কিছু একটা ঘটছে এখানে, কিশোর বলল, তাতে কোন সন্দেহ নেই। জিনাকে কিডন্যাপ করে নিয়ে গেল। আমরা যাতে ওকে খোঁজাখুঁজি না করি, সে জন্যে নানা রকম শয়তানি শুরু করেছে এখন। ফোনটা নিয়েছে বটে, কিন্তু চুরি করার উদ্দেশ্যে আসেনি চোর। চুরি করতে এলে অত শব্দ করে জানালার কাঁচ ভাঙত না। নিঃশব্দে সারার চেষ্টা করত।
হুঁ, হাই তুলতে তুলতে বলল মুসা। সকাল বেলা দেখব, শয়তানিটা কার। এখন ঘুমানো যাক।
দ্বিতীয়বারের মত বাতি নিভিয়ে শুয়ে পড়ল ওরা।
রাতে আর কিছু ঘটল না।
পরদিন খুব সকালে ঘুম ভেঙে গেল কিশোরের। এক ডাক দিতেই উঠে গেল রবিন। তাকে নিয়ে গাড়িটা দেখতে চলল কিশোর।