ইভার সবুজ চোখের তারায় শংকা দেখতে পেল কিশোর।
না! দেখিনি! হঠাৎ রেগে গেলেন মিস্টার ব্রুক। তাই তো বলি! আমি আরও ভেবে অবাক হচ্ছিলাম, অস্বাভাবিক কিছু ঘটছে না কেন আজ? এসো, ভেতরে এসো। সব বলছি তোমাদের।
উজ্জ্বল আলোয় আলোকিত একটা ঘরে ঢুকল ওরা। ফরমিকার কাউন্টার থেকে শুরু করে লাল প্লাস্টিকের চেয়ার আর অন্যান্য আসবাবপত্র সব কিছুতে ধুলো পড়ে আছে। মলিন হয়ে গেছে চেহারা, লক্ষ করল কিশোর। যত্ন নেয়া হয় না বোঝা যায়। যেন কোন কারণে ওগুলোর প্রতি একটা অনীহা জন্মে গেছে মালিকের।
পেছনে আমার বেডরূম, পর্দা ঝোলানো একটা দরজা দেখালেন মিস্টার ব্রুক। ইভারটা তার পাশে।
কাউন্টারের পেছনে সারি সারি নম্বর। প্রতিটি নম্বরের ওপরে হুক। চাবি ঝুলছে ওগুলো থেকে।
সুন্দর একটা রিসর্ট ছিল এটা, দুঃখের সঙ্গে জানালেন মিস্টার ব্রুক। ফলের হালুয়া কাটতে চাচাকে সাহায্য করল ইভা। এটা নিয়েই ব্যস্ত ছিল। কিশোরদের আসার শব্দ শুনে কাজ রেখে তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে গিয়েছিল দুজনে। প্রচুর ট্যুরিস্ট আসত। ভালই ছিলাম আমরা। কিন্তু দুর্ঘটনাটাও ঘটল, আমরাও গেলাম।
চাচার সঙ্গে সুর মেলাল ইভা, চাচার ডকটার সর্বনাশ করে দিয়ে গেছে হলুদ রেসিং বোটটা।
দুজন ট্যুরিস্ট রোদ পোয়াচ্ছিল, এই সময় এসে তো মারল বোটটা। ফুঁসে উঠলেন মিস্টার ব্রুক। দুজনকেই হাসপাতালে নিতে হয়েছে।
বোট চালকের কি খবর? জানতে চাইল কিশোর।
ওর আর কি হবে? বিরক্তিতে মুখ বাঁকালেন মিস্টার ব্রুক। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছে অ্যাক্সিডেন্টের পর পরই ফুল স্পীডে পালিয়ে গেছে সে। তার মানে ইচ্ছে করে ভেঙে দিয়ে গেছে ডকটা। পুলিশ পরে জানতে পেরেছে বোটটা নাকি চোরাই বোট ছিল। চোরটাকে ধরতে পারেনি। বোটটাও নাকি আর খুঁজে পায়নি। পুলিশের ধারণা, ডকে বাড়ি লেগে বোটটারও ক্ষতি হয়েছিল। ফেটে-টেটে গিয়েছিল নিচের দিকে। পানি ঢুকে ডুবে গেছে চ্যানেলে। চোরটাও মরেছে পানিতে ডুবে। কিন্তু আমার বিশ্বাস হয় না।
ঘটনাটা কি জিনার নিখোঁজ হওয়ার আগের? জানতে চাইল কিশোর।
আগের দিনের, ইভা জানাল।
জিনা কি করে নিখোঁজ হলো, খুলে বলবে? অনুরোধ করল কিশোর।
বলব না কেন? বলার জন্যেই তো তোমাদের ডেকে আনলাম, ইভা বলল।
গাল আইল্যান্ডে বেড়াতে গিয়ে জিনার রহস্যময় ভাবে নিখোঁজ হওয়ার খবরটা মুসাদের বাড়িতে ফোন করে ইভাই জানিয়েছিল। মুসা গিয়ে খবর দিয়েছে। কিশোর আর রবিনকে। তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে সেদিনই রকি বীচ থেকে গাল আইল্যান্ডের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে তিনজনে।
খুক করে কাশল ইভা। জিজ্ঞেস করল, খাবে কিছু?
মাথা নাড়ল কিশোর, না, আমরা খেয়ে এসেছি। তুমি বলো।
জিনা এখানে বেড়াতে আসার পর থেকে রোজই আমরা একসঙ্গে সৈকতে বেড়াতে যেতাম। সেদিন আমার কিছু জরুরী কাজ ছিল অফিসে। চাচাকে সাহায্য করতে হয়েছিল। জিনাকে বললাম সৈকতে চলে যেতে। আমি পরে যাব।
লাঞ্চের পর খাবার নিয়ে গেলাম সৈকতে। আমাদের বসার প্রিয় জায়গাগুলোতে খুঁজলাম। কোথাও পেলাম না তাকে। ভাবলাম, শহরে-টহরে গেছে। চলে আসবে।
আমি অপেক্ষা করতেই থাকলাম। কিন্তু সে আর আসে না। চাচার গাড়িটা নিয়ে বেরিয়েছিল সে। আরও কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে মোটেলে ফিরে এলাম। চাচাকে বললাম সব। তখনও খারাপ কিছু সন্দেহ করিনি আমরা।
সন্ধ্যার পরেও যখন ফিরল না, ভীষণ দুশ্চিন্তা হতে লাগল। বিভিন্ন জায়গায় ফোন করে খোঁজ নিল চাচা। আমিও কয়েক জায়গায় ফোন করলাম। কোথাও যায়নি জিনা।
একটানা কথা বলে দম নেয়ার জন্যে থামল ইভা।
গেকো গাড়িটা পরে খুঁজে পেয়েছে পেলিক্যান লেন-এ, মিস্টার ব্রুক জানালেন, পরিত্যক্ত অবস্থায়।
গেকো! চোখের পাতা সরু করে ফেলল মুসা। গেকো তো জানি এক ধরনের গিরগিটি?
আরে না না, এ গেকো সে গেকো নয়, না হেসে পারলেন না মিস্টার ব্রুক। এর পুরো নাম হেরিং গেকো। ডেপুটি শেরিফ। আমাদের এখানকার পুলিশ ফোর্স। ওই একজনের ওপরই দায়িত্ব দেয়া হয়েছে পুরো দ্বীপ দেখাশোনার। যাই হোক, আঙুলের ছাপটাপ খোঁজাখুঁজি করেছে সে। পেয়েছে তিনজনের। আমার, জিনার আর গাড়ির গ্যারেজের মিস্ত্রির।
মাত্র একজন পুলিশ? বিশ্বাস হচ্ছে না রবিনের। আস্ত একটা দ্বীপের দেখাশোনার জন্যে মাত্র একজন?
হ্যাঁ, বিরক্তির সঙ্গে জবাব দিলেন মিস্টার ব্রুক। অথচ দেখো, সীভিউর কাউন্টি কর্তৃপক্ষ পাশের দ্বীপ ক্যাসটেলো কী-কে দিয়েছে পাঁচজন পুলিশ। আর আমাদের মাত্র একজন। বড় বেশি পক্ষপাতিতু!
তা, আপনাদের গেকো সাহেব কোন সূত্রটুত্র পেয়েছে? জানতে চাইল কিশোর।
কিছু না, জবাব দিলেন মিস্টার ব্রুক। গাড়িটা রেখেছি অফিসের পেছনে। তোমরা ইচ্ছে করলে ওটাতে সূত্র পড়ে আছে কিনা খুঁজে দেখতে পারো। তার জন্যে গাড়িটাকে টুকরো টুকরোও যদি করে ফেলতে হয়, তাতেও আমার আপত্তি নেই।
জিনাকে জিম্মি হিসেবে আটকে রেখে টাকার জন্যে নোট পাঠিয়েছে? কিংবা ফোন-টোন কোন কিছু?
কিছুই পাঠায়নি। পাঠিয়ে লাভ হবে না, জানে। আমার তো টাকা-পয়সা নেই যে দিতে পারব। শুধু কি কিডন্যাপিং; চুরি-দারি আরও কত কিছুই করছে। এই তো, জিনা নিখোঁজ হওয়ার তিন রাত আগে আমার দুটো পাম গাছ চুরি করে নিয়ে গেছে।
খাইছে! চোখ বড় বড় হয়ে গেল মুসার। পাম গাছ! গাছ চুরি করে কার কি লাভ?