কেইনের বাড়ি তন্নতন্ন করে খুঁজেছে পুলিশ, খেতে খেতে গোয়েন্দাদের জানালেন মিস্টার ব্রুক। নানা রকম দামী দামী চোরাই মালে ভর্তি ছিল বাড়ির নিচতলার স্টোররূম। বড় বড় মার্কেটের দোকান থেকে চুরি গেছে ওসব। লিস্ট আছে মিয়ামি পুলিশের কাছে। সেই সঙ্গে চোরাই পথে আনা প্রচুর ইলেকট্রনিক সামগ্রী, বিশেষ করে কম্পিউটারের পার্টস, বেআইনী ভাবে আনা। গ্যাংলীডার রাগবি ড্যাগো দক্ষিণ ফ্লোরিডাতেও তার ব্যবসা বিস্তার করতে চেয়েছিল। দলে ঢুকিয়ে নিয়েছিল স্মাগলার কেইনকে।
খালাস পেয়ে যাবে না তো? প্রশ্ন করল জিনা।
না, তা পাবে না, মাথা নাড়লেন মিস্টার ব্রুক। প্রথমেই আমার এ কথাটা মনে হয়েছে। পুলিশকে জিজ্ঞেস করেছিলাম। ওরা বলল, না, ওর বিরুদ্ধে এত বেশি প্রমাণ আছে ওদের হাতে, কোনমতেই ছাড়া পাবে না কেইন। আর ড্যাগো তো আগে থেকেই অভিযুক্ত হয়ে আছে। মুখ তুললেন মিস্টার ব্রুক। আমাদের দ্বীপ থেকে কেন তাড়াতে চেয়েছিল ওরা, বলেছে কিছু?
কেইন আর ড্যাগো অন্তত আমাদের সামনে মুখ খোলেনি, কিশোর বলল। পরে কি করবে জানি না। তবে নীরা বেগম জেরার মুখে ক্যানারি পাখির মত গান গাওয়া শুরু করেছিল। আর পিকোটাকেও ধরে ফেলেছে পুলিশ। সে তো এমন কাণ্ড করল, যেন পেটে যা আছে উগরে দিতে পারলে বাঁচে।
পিকো কে?
কেইনের বিসকেইনি বের বাড়ির পাহারাদার।
ও। তা কি বলল?
পুরো দ্বীপটাই কিনে ফেলতে চেয়েছিল কেইন, ছুরি দিয়ে স্টেক কেটে কাঁটা চামচে গেঁথে মুখে পুরল কিশোর। ওদের হেডকোয়ার্টার বানাতে চেয়েছিল। চোর-ডাকাত স্মাগলারদের স্বর্গদ্বীপ। ফ্লোরিডার পশ্চিম উপকূলে সুন্দর, ছিমছাম, নিরিবিলি একটা দ্বীপের চেয়ে ভাল হেডকোয়ার্টার ওদের মত অপরাধীরা আর কোথায় পাবে? স্থলপথ, জলপথ, আকাশপথ, সব দিক থেকে ঢোকা যায়।
হুঁ, তা ঠিক। আমার গাছগুলো কে চুরি করেছে, বলেছে নাকি? জানতে চাইলেন মিস্টার ব্রুক।
ওই দুই শয়তানই লোক দিয়ে করিয়েছে, কিশোর জানাল। এনডি আর কোরি। আপনি যে ভেবেছেন বিক্রির জন্যে নিয়ে গেছে, তা না; আসলে বিরক্ত করে করে আপনাকে বিয়ে করার জন্যে।
সে তো বোঝাই যাচ্ছে এখন, মাথা দোলালেন মিস্টার ব্রুক। আর টাকা খেয়ে ওদের সহায়তা করে এসেছে শয়তান গেকোটা।
তাই তো, গিরগিটিটার কথা তো ভুলেই গিয়েছিলাম, খেতে খেতে মুখ তুলল মুসা। ওটার কি গতি করেছে মিয়ামি, পুলিশ? নারকেল গাছে তুলে দিয়ে গেছে, যেখানে ওর আসল বাসা?
হাসলেন মিস্টার ব্রুক। না, নারকেল গাছে তোলেনি। তবে শাসিয়ে দিয়ে গেছে, দ্বীপের কারও ব্যাপারে যেন আর নাক না গলায়। ওর জায়গায় একজন অফিসারকে বসিয়ে গেছে অস্থায়ী ভাবে দ্বীপে পুলিশের দায়িত্ব পালনের জন্যে। বলে গেছে যত শীঘি পারে কাউন্টিতে নালিশ করে ওর ডেপুটিগিরি খতম করে ওকে জেলে ভরার ব্যবস্থা করবে।
মজার ব্যাপারটা কি জানেন? আবার আগের কথায় ফিরে এল কিশোর। নীরা লেভিন কিন্তু ওদের সঙ্গে থেকেও জানত না কেইনের আসল ব্যবসাটা কিসের। তাকে বলা হয়েছিল এক্সপোর্ট-ইমপোর্টের ব্যবসা আছে কেইনের। সে একজন বিরাট বড়লোকের স্ত্রী হওয়ার স্বপ্নে বিভোর ছিল। সেজন্যেই পুরো দ্বীপটা কিনে নেয়ার ব্যাপারে সহায়তা করে আসছিল কেইনকে। একটু-আধটু অপরাধ করে ফেলেছিল।
বহু জায়গা এখন খালি পড়ে আছে দ্বীপে, মিস্টার ফ্রক বললেন। সব নীরার কেনা, তার নিজের নামে। অনেকেই তার কাছে জমি বেচে দিয়ে চলে গেছে। অনেকে বাড়িঘরের কাজ শুরু করেছিল মাত্র, তাদের জায়গাও কিনে নিয়েছে নীরা।
তার অত সাধের কেইন তো গেছে চোদ্দ শিকের আড়ালে, মুসা বলল। এখন এসে ওসব জায়গা ভোগ করুক। ইচ্ছে করলে তাবু খাঁটিয়ে বাস করতে পারে।
যদি সে-ও বেরোতে পারে শিকের আড়াল থেকে, ফোড়ন কাটল রবিন।
তা পারতেও পারে, কিশোর বলল। যে রকম খেপেছে কেইনের ওপর, ওর বিরুদ্ধে সাক্ষী দিতেও দ্বিধা করবে না। তার শাস্তির মেয়াদ কমিয়ে তখন তাড়াতাড়িই ছেড়ে দেয়া হবে জেল থেকে।
তা তো হলো, জিনা বলল। কিন্তু আমরা এখন কি করব? বাড়ি ফিরে যাব?
উঁহু, অত তাড়াতাড়ি না, জোরে জোরে মাথা নাড়ল মুসা। কিছুই দেখা হলো না এখানকার সমুদ্র। শুনেছি, পুরানো আমলে আশেপাশে প্রচুর জাহাজডুবী হয়েছে। সমুদ্রে ডুব দিয়ে দিয়ে গুপ্তধন খুঁজব। তা ছাড়া কেগের দাওয়াতটার কথা ভুলে যাচ্ছ কেন? না খেয়ে চলে গেলে নিরাশ হবে না ভদ্রলোক?