রবিন আর জিনারও আগ্রহ আছে। ইভার নেই। বহুবার দেখেছে সে। তবে বাধা দিল না। কিছু বলল না। ওরা দেখতে চাইছে, দেখুক।
নিরাপদেই পেরিয়ে এল বিশাল জলাভূমিটা। কোথায় পড়তে যাচ্ছিল রাতের বেলা, দিনের আলোয় দেখে শিউরে উঠল মুসা। সত্যি ভয়ানক জায়গা! বড় বাঁচা বেচেছে।
.
কজওয়ে ধরে গাল আইল্যান্ডে যখন ঢুকছে ওরা, মাথার ওপর উঠে এসেছে সূর্যটা। তীব্র হয়ে উঠেছে এ অঞ্চলের কড়া রোদ।
গাল আইল্যান্ডে ফিরে মোটেলে ঢোকার পথেই দেখা হয়ে গেল হারম্যান কেগের সঙ্গে। সবুজ গাড়িটা রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে গাড়ি থামাতে বলল কিশোর।
নেমে গেল ওরা দল বেঁধে। গাড়িটা থেকে খানিক দূরে ঝড়ে উপড়ে পড়া একটা পাম গাছের ওপর ছাতার নিচে বসে গভীর মনোযোগে পামের জটলার ছবি আঁকছে সে। রোদ থেকে বাঁচার জন্যে বালিতে খাড়া করে গেঁথে দিয়েছে বড় একটা ছাতা।
ছেলেমেয়েদের সাড়া পেয়ে মুখ ঘুরিয়ে তাকাল। মুহূর্তে স্থির হয়ে গেল হাত। থেমে গেল পেন্সিল। তোমরা!
হ্যাঁ, আমরা, হাসিমুখে জবাব দিল কিশোর। আজ আর কোন অভিযোগ নিয়ে আসিনি আপনার কাছে। আসল কিডন্যাপাররা ধরা পড়েছে।…জিনা, হারম্যান কেগ।
মাথা নাড়ল জিনা, জীবনেও দেখিনি একে।
উঠে এল কেগ। ভুরু কুঁচকে জিনাকে দেখতে লাগল।
পরিচয় করিয়ে দিল কিশোর। সংক্ষেপে জানাল সব।
খোদা বাঁচিয়েছে আমাকে! জোরে নিঃশ্বাস ফেলে মাথা নাড়তে নাড়তে বলল। কেগ। ওর ঘড়িটা যে আমার ঘর থেকে নিয়ে গেছ, একটা কাজের কাজ করেছ। চুরি করে আমার ঘরে ঢুকেছিলে বলে এক বিন্দু রাগ নেই আর আমার।
কিন্তু একটা কথা বলুন তো, কিশোর বলল, বীমার দালালি ছেড়ে আপনি এতদিন ধরে এই গাল আইল্যান্ডে এসে বসে আছেন কেন?
অবাক হয়ে গেল কেগ। আমি বীমার দালালি করি কে বলল তোমাকে?
ভুলে যাচ্ছেন কেন, আমরা গোয়েন্দা। কেইন আর ড্যাগোর মত অপরাধীকে ধরিয়ে দিয়ে এলাম, আর আপনি কি কাজ করেন, সেটা বের করতে পারব না?
তা ঠিক, মাথা ঝাঁকাল কেগ। আর মিথ্যে বলব না। সত্যি কথাটাই বলি। বীমার দালালি আমার পেশা নয়। আমি এ লাইনে নতুন। মানুষকে পলিসি গছানো যে কি কঠিন ব্যাপার, যে এ কাজ না করেছে সে বুঝবে না। অনেক চেষ্টা-চরিত্র। করে যা-ও বা একজনকে রাজি করালাম, এমন একটা প্যাঁচে ফেলে দিল আমাকে যে, পারলে কোম্পানির ম্যানেজার আমাকে পুলিশে দেয়। কিছুটা সেই ভয়ে, আর মনের দুঃখে এসে এই স্বেচ্ছা নির্বাসন নিয়েছি।
পচা পচা ছবি আঁকার জন্যে, হাসল মুসা। গলা লম্বা করে কেগের হাতের ছবিটা দেখল। এগুলো কি পামের জটলা, না মুঠি বাধা ছাগলের শিং? শিঙের মাথায় ওগুলো কি? তুলোর পোঁটলা?
স্তব্ধ হয়ে গেল কেগ। ধীরে ধীরে হাসি ফুটল গম্ভীর মুখে। তারপর অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল। ঠিক বলেছ। আমি জানি আমার আঁকা ভাল হয় না। কিন্তু এত সহজে সত্যি কথাটা আমার মুখের ওপর কেউ বলেনি আর। শুধু এ কথাটার জন্যে তোমাদেরকে একটা দাওয়াত দিয়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে।
খাওয়ার দাওয়াত তো? সঙ্গে সঙ্গে প্রস্তাবটা লুফে নিল মুসা। বলুন, কবে আসতে হবে?
কেগকে ধন্যবাদ দিয়ে, হাসাহাসি করতে করতে গাড়িতে ফিরে এল ওরা।
মোটেলের সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই গাড়ির শব্দ শুনে অফিস থেকে ছুটে বেরিয়ে এলেন মিস্টার ব্রুক। গাড়ির কাছে এসে উদ্বিগ্ন কণ্ঠে বলতে লাগলেন, এসেছ তোমরা! বাঁচা গেল। দেরি দেখে আমি তো চিন্তায়ই পড়ে গিয়েছিলাম…
হ্যাঁ, চাচা, গাড়ি থেকে নামতে নামতে জবাব দিল ইভা। অ্যালিগেটর অ্যালিতে থেমেছিলাম। জলাভূমিটা দেখতে চেয়েছিল ওরা।
অ। টেলিফোনে সব শুনেও নিশ্চিত হতে পারছিলাম না, মিস্টার ব্রুক বললেন। মনে হচ্ছিল, ড্যাগো আর কেইন সহ ধরা তো পড়েছে মাত্র চার পাঁচজন। কিন্তু ওদের দলে আরও লোক আছে নিশ্চয়। যারা তখন ওবাড়িটাতে ছিল না। প্রতিশোধ নেয়ার জন্যে রাস্তায় যদি কিছু করে তোদের?
কিছু যে করেনি, দেখতেই তো পাচ্ছ, হেসে বলল ইভা।
ড্রাইভিং সীট থেকে লাফ দিয়ে নেমে এল মুসা। কিন্তু কথাটা হলো আঙ্কেল, আপনার দুশ্চিন্তা কমেছে, কিন্তু আমার যে বেড়ে যাচ্ছে।
অবাক হয়ে তার দিকে তাকালেন মিস্টার ব্রুক। ইভাও অবাক।
কেন, এখন আর দুশ্চিন্তা কিসের? জানতে চাইলেন মিস্টার ব্রুক। সব ঝামেলা তো শেষ।
দুশ্চিন্তাটা হলো, কেউ খাওয়ার কথা বলছে না, মুখ গোমড়া করে বলল মুসা। নাড়িভুড়ি হজম হয়ে গেলে কোন মানুষ বাঁচে বলে আমার জানা নেই।
হা-হা করে হেসে উঠলেন আঙ্কেল ব্রুক।
চমকে গেল ইভা। চাচাকে এ ভাবে হাসতে বহুকাল দেখেনি।
হাসতে হাসতে মিস্টার ব্রুক বললেন, ভাল কথা মনে করেছ তো। তোমাদের অপেক্ষায় থেকে থেকে পেট বলে যে একটা জিনিস আছে, ভুলেই গিয়েছিলাম। চলো চলো, কুপারের ওখানেই গিয়ে খাওয়াটা সেরে আসি। আমরা যে বিজয়ী হয়েছি, লাঞ্চ দিয়ে সেটা সেলিব্রেট করব।
তা-ই চলুন। মিস্টার কুপারকেও জানাতে পারব, তার রেস্টুরেন্টটা বেঁচে গেছে। কেইনের শয়তানি বন্ধ হয়েছে। আবার আসবে ট্যুরিস্ট, জমে উঠবে ব্যবসা।
সেটা জানে না মনে করেছ? সুখবরটা অনেক আগেই দিয়ে দিয়েছি ওকে।
আরও একবার জানাব আমরা, চলুন।
আবার গাড়িতে উঠল সবাই। দলে এবার যুক্ত হলেন মিস্টার ব্রুক।
কুপারস ডিনারের সামনে এনে গাড়ি রাখল মুসা। গাড়ি থেকে নেমে সারি দিয়ে ভেতরে ঢুকল সবাই। তাড়াহুড়ো করে চেয়ার টানাটানি করে এনে টেবিল গুছিয়ে দিল কুপার আর ম্যাগি। আরাম করে বসল সবাই। পনেরো মিনিটের মধ্যেই বিরাট এক ট্রে বোঝাই করে বার্গার আর স্টেক স্যান্ডউইচ নিয়ে হাজির হলো ম্যাগি।