জবাব দিতে যাচ্ছিল জিনা, দূর থেকে আসা সাইরেনের শব্দ শুনে থেমে গেল।
সোজা হয়ে বসল কিশোর। চলো, সময় হয়েছে।
পোকা-মারারা তো এল না, মুসা বলল। এনডি আর কোরিরও দেখা নেই।
ঘড়ি দেখল কিশোর। খুব বেশিক্ষণ তো হয়নি। আমরা মরেছি কিনা, একেবারে শিওর হয়ে তারপর আসবে ওরা।
গেটের দিকে ছুটল তিনজনে।
হেলিকপ্টারটা চোখে পড়তে থেমে গেল কিশোর। দাঁড়াও দাঁড়াও, এক কাজ করা যাক। অকেজো করে দিয়ে আসতে হবে ওটাকে, যাতে স্টাট না নেয়। পালাতে না পারে কেইন।
ঠিক। আমি যাচ্ছি। হেলিকপ্টারের দিকে দৌড় দিল মুসা।
বাকি থাকল বোটটা, ছুটতে ছুটতে জিনাকে বলল কিশোর। গাড়িতে করে পালাতে গেলে পুলিশের সামনে পড়ে যাবে ওরা। বেরোতে পারবে না। আমি বোটটার ব্যবস্থা করে আসি। তুমি কোথাও লুকিয়ে পড়ো। খবরদার, কোনমতেই ওদের হাতে পোড়ো না আর। তাহলে তোমাকে ব্যবহার করে পালানোর ব্যবস্থা। করে নেবে ওরা।
ঘন গাছপালা আর ঝোঁপঝাড়ের ভেতর থেকে বেরিয়ে এল কিশোর। সামনে সমুদ্র। বোটহাউসটা দেখা যাচ্ছে। সাগর থেকে একটা চওড়া চ্যানেল বেরিয়ে এসেছে। সেটার মুখেই বানানো হয়েছে বোটহাউসটা। বোটহাউসের বাইরে নোঙর করে রেখেছে একটা বোট। ইয়টটা রয়েছে ভোলা সমুদ্রে। ওটাতে যেতে চাইলে বোটে করে যেতে হবে। বোটটা নষ্ট করে দিলেই যাওয়ার উপায় থাকবে না আর।
পানির কিনারে এসে জুতো খুলে ফেলল কিশোর। ঝাঁপ দিয়ে পড়ল পানিতে। সঁতরে এগোল বোটের দিকে।
কিশোরের কথা অমান্য করল না জিনা। কোন ঝুঁকি নিতে গেল না। একটা ঝোঁপের আড়ালে লুকিয়ে পড়ল। তাকিয়ে রইল বাড়িটার দিকে।
ফর্সা হয়ে আসছে পুবের আকাশ। একটা দুটো করে পাখি ডাকতে আরম্ভ করেছে।
এগিয়ে আসছে সাইরেনের শব্দ।
সামনের দরজা দিয়ে ছুটে বেরোল হঠাৎ পিকো। দৌড় দিল ড্রাইভওয়ে ধরে। কিছুটা এগিয়ে রিমোট কন্ট্রোল তুলে সুইচ টিপে গেটটা খুলে ফেলল।
অবাক হয়ে গেল জিনা। পুলিশকে ঢোকার সুযোগ করে দিচ্ছে নাকি লোকটা?
বুঝল পরক্ষণেই। খোলা গেট দিয়ে দৌড়ে বেরিয়ে গেল পিকো। পুলিশের আসার সঙ্কেত পেয়েই পালাচ্ছে ভীতু লোকটা।
সামনের দরজা দিয়ে হুড়মুড় করে বেরিয়ে এল আরও তিনজন। ডগলাস কেইন, রাগবি ড্যাগো আর নীরা লেভিন। খোলা গেটের দিকে তাকিয়ে দ্বিধা করল ওরা। কি যেন বলল কেইন। শব্দ শুনলেও এত দূর থেকে কথাগুলো বুঝতে পারল নাজিনা। নিশ্চয় পিকোকে গালাগাল করছে।
উত্তেজিত ভঙ্গিতে হাত তুলে হেলিকপ্টারটার দিকে দেখাতে লাগল কেইন। রাগবি দেখাতে লাগল পানির দিকে। বোঝা গেল সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না ওরা, কোন পথে পালাবে। কেইন বলছে হেলিকপ্টারে করে যেতে, ড্যাগো বলছে বোটে করে। শেষমেষ হেলিকপ্টারের দিকেই ছুটল ওরা।
মুচকি হাসল জিনা। মনে মনে বলল, যাও, দেখোগে ওড়াতে পারো কিনা! একবার মুসার হাত পড়লে তোমাদের বাপেরও সাধ্য নেই ওটা আর এত তাড়াতাড়ি ওড়াতে পারো।
পেছনে হট্টগোল শুনে ফিরে তাকাল জিনা। এনডি আর কোরি দৌড়ে আসছে। ভীষণ উত্তেজিত। কেন, সেটাও অনুমান করতে পারল সে। নিশ্চয় কেবিনে ঢুকে ওদেরকে না পেয়ে তাজ্জব হয়ে গেছে ওরা। বসুকে খবরটা দিতে আসছে। কিন্তু সাইরেনের শব্দ শুনে আর বসদেরকে হেলিকপ্টারের দিকে দৌড়াতে দেখে থমকে গেল ওরা। বুঝল, পরিস্থিতি সুবিধের নয়।
যেতে যেতে চিৎকার করে আদেশ দিল কেইন, ওদিকে যাচ্ছ কোথায়, গাধা কোথাকার! জলদি বোট নিয়ে পালাও! ইয়টটা নিয়ে চলে যাও গাল আইল্যান্ডে। আমরা হেলিকপ্টারে করে যাচ্ছি।
পৌঁছে গেছে পুলিশ। গেট দিয়ে ঢুকল প্রথম গাড়িটা। পেছনে একে একে আরও চারটা। পুরো বহর নিয়ে চলে এসেছে ওরা। রাগবি ড্যাগোকে ধরার এমন চমৎকার মওকা কোন ভাবেই হাতছাড়া করতে রাজি নয়।
গাড়ি-বারান্দায় এসে ব্রেক করল সামনের গাড়িটা। ঝটকা দিয়ে খুলে গেল দুদিকের দরজা। প্রথমেই যাকে নামতে দেখল জিনা, দেখে অবাক হয়ে গেল।
রবিন!
বুঝতে পারল না, পুলিশের সঙ্গে ও এল কি করে?
রবিনকে দেখে আর লুকিয়ে থাকতে পারল না জিনা। লাফ দিয়ে ঝোঁপ থেকে বেরিয়ে চেঁচাতে চেঁচাতে ছুটল গাড়ি-বারান্দার দিকে।
দেখল, ইভাও নামছে গাড়ি থেকে। জিনা তো আর জানে না, কিশোর রবিনকে বলে এসেছে মধ্যরাতের পর ওরা মোটেলে ফিরে না গেলে মিয়ামি পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করতে। ডিটেকটিভ ওয়ারেন রবিনের আসার সংবাদটাই জানাতে চেয়েছিল কিশোরকে। লাইন কেটে না দিলে ওই সময়ই রবিনের সঙ্গে কথা বলতে পারত কিশোর।
.
১৫.
চব্বিশ ঘণ্টা পর নিজেদের ভাড়া করা ভ্যানটায় করে আবার গাল আইল্যান্ডে ফিরে চলল তিন গোয়েন্দা। এবার ওদের সঙ্গে রয়েছে জিনা আর ইভা। মিয়ামি পুলিশের সঙ্গে দীর্ঘ সিটিঙের পর, পুরো রিপোর্ট লিখে দিয়ে একটা হোটেলে গিয়ে উঠেছিল গোয়েন্দারা। পুলিশের অনুরোধে-অন্তত একটা দিন যেন থেকে যায় ওরা। ওদেরকে দরকার হতে পারে।
হোটেলে বিশ্রাম নিয়ে শরীরটা ঝরঝরে হয়ে গেছে ওদের। গাড়ি চালানোর সময় মনের আনন্দে শিস দিতে শুরু করল মুসা।
ঘুরপথে না গিয়ে অ্যালিগেটর অ্যালিতে গাড়ি ঢুকিয়ে দিল সে। কিশোর জিজ্ঞেস করলে বলল, দিলের বেলা না দেখে যাচ্ছি না আমি, সে-রাতে কাদের খাবার হতে যাচ্ছিলাম।
দেখো, এখন সত্যি সত্যি না খাবার হয়ে যাও, সাবধান করল বটে কিশোর, কিন্তু আপত্তি করল না। কারণ দিনের আলোয় অ্যালিগেটরে ভরা জলাভূমিটা দেখার লোভ সামলাতে পারল না সে-ও।