তাড়াতাড়ি ফোন রেখে গাড়ি থেকে নেমে এল সে।
শব্দটা যেদিক থেকে হয়েছে সেদিকে তাকিয়ে রইল কিশোর। কাউকে আসতে দেখা গেল না। তারমানে কোন বুনো প্রাণী হবে। শেয়াল কিংবা ব্যাকুন।
মুসা জিজ্ঞেস করল, নামলে কেন? চলো, বেরিয়ে যাই।
বেরোবে কি করে? গেট তো খোলে রিমোট কন্ট্রোলে।
গুতো মেরে ভেঙে ফেলব।
আমার মনে হয় না ভাঙতে পারবে। কেইন সিনেমা দেখেনি, এ কথা জোর দিয়ে বলতে পারবে না। গাড়ি নিয়ে যে হরহামেশা গেট ভেঙে বেরিয়ে যায় হিরোরা, এটা তার অজানা নয়। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, যাতে না ভাঙা যায় সে ভাবেই তৈরি করা হয়েছে গেটটা।
তাহলে কি করব? বসে থাকলে তো ধরা পড়ে যাব।
দেখি, কয়েক মিনিট অপেক্ষা করি। পুলিশকে কাছে আসার সময় দিই। আমাদের এদিকে শত্রুপক্ষের কাউকে আসতে দেখলে কেটে পড়ব। যদি না আসে, কয়েক মিনিট পর অ্যাকশনে যাব। শুধু পুলিশের আশায় বসে থাকলে হবে না। আমাদেরও প্রচুর কাজ আছে। কেইন আর ড্যাগোকে হাতে যখন পেয়েছি, প্রতিশোধ না নিয়ে ছাড়ব না। নেমে এসো। লুকিয়ে থাকি।
গাড়ির কাছেই ঝোঁপের আড়ালে গিয়ে বসল তিনজনে।
হ্যাঁ, এবার বলো তো, জিনাকে জিজ্ঞেস করল কিশোর, ধরল কি করে ওরা তোমাকে?
সামনে দিয়ে এসে গাড়িটার পথরোধ করল, জিনা বলল। তারপর এনডি আর কোরি নেমে এসে পিস্তল দেখিয়ে ধরে নিয়ে গেল আমাকে।
হারম্যান কেগ ছিল না ওদের সঙ্গে?
এই কেগটা আবার কে?
বুঝলাম। তারমানে চেনো না একে। কেন তোমাকে কিডন্যাপ করল সেই কথাটা বলো দেখি আগে।
জেরি আঙ্কেলের ডকটা ভাঙার সময় এনডিকে দেখে ফেলেছিলাম আমি, জিনা বলল। বোটের মধ্যে লুকিয়ে ছিল সে। বোট চালাচ্ছিল আরেকটা লোক। পরে আর কখনও দেখিনি তাকে। এনডিকে যে দেখেছি, সেটা বুঝে ফেলেছিল সে। পরের দিন যখন সৈকতে গেলাম, আবার তাকে দেখতে পেলাম কেইনের বাড়িতে। কোরির সঙ্গে ধরাধরি করে একটা বোট থেকে মাল নামাচ্ছিল। বাক্সের গায়ে বার্মিজ লেখা। আমাকে এনডির দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখল এনডি।
কেন তোমাকে কিডন্যাপ করা হলো, সেটা তো বুঝলাম, কিশোর বলল, কিন্তু এত তাড়াতাড়ি আমাদের খোঁজ পেল কি করে ওরা? ফ্লোরিডা থেকেই আমাদের পিছে লেগেছিল। গাড়ির চাকা কেটে দিয়ে ভয় দেখিয়ে আমাদের তাড়াতে চেয়েছে।
সেটা আমারই বোকামির জন্যে, চাপা ক্ষোভের সঙ্গে বলল জিনা। আমাকে যখন ধরে নিয়ে গেল ওরা, কেইনের সামনে হাজির করল, তাকে হুমকি দিয়েছিলাম। তোমাদের নাম করে বলেছিলাম, তোমরা আমাদের বন্ধু। আমার নিখোঁজ হওয়ার খবর শুনলে অবশ্যই আমাকে উদ্ধার করতে আসবে তোমরা। সে-কারণেই নিশ্চয় সাবধান হয়ে গিয়েছিল ওরা। তোমাদের ব্যাপারে খোঁজ-খবর করে নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল, তোমরা বিপজ্জনক। সেজন্যে গাল আইল্যান্ডে ঢোকার আগেই তোমাদের বিদায় করতে চেয়েছিল।
হু, চুপ হয়ে গেল কিশোর।
কেগকে চেনো না, মুসা বলল, কিন্তু তার বাড়িতে তোমার ঘড়ি পাওয়া গেল কিভাবে?
কেগের বাড়িতে আমার ঘড়ি! আমি তো ভেবেছিলাম ঘড়িটা আমি কেইনের বাড়িতে ফেলে এসেছি। কেগকে আমি চিনিই না…
আমি বুঝে গেছি, কিশোর বলল। তোমার কিডন্যাপিঙের দায় অন্য কারও ঘাড়ে চাপিয়ে নিজেরা বেচে যেতে চেয়েছিল। এর জন্যে কেগের চেয়ে উপযুক্ত তোক আর কে আছে? করে বীমার দালালি, অথচ গাল আইল্যান্ডে এসে সময় কাটাচ্ছে পচা পচা ছবি এঁকে। চালচলন রহস্যময়। স্থানীয় লোকও নয় সে। মিয়ামি থেকে পুলিশ এসে তদন্ত চালালে ঘুষখোর গেকোটার সাহায্যে সহজেই তাকে ফাঁসিয়ে দিতে পারত। সেজন্যে ফাঁদ তৈরিও করে রেখেছিল ওরা। কেগের গাড়িটা চুরি করে সেটার সাহায্যে তোমাকে কিডন্যাপ করে, তোমার ঘড়ি নিয়ে ফেলে রেখে আসে তার বাড়ির টেবিলে। তোমার ছবি থেকে তার গাড়ির নম্বর বের করে আমরাও তো তাকে সন্দেহ করা শুরু করে দিয়েছিলাম।
কেইনটা আসলেই পাজি! মুসা বলল। আমরা যখন প্রথম ঢুকলাম তার বাড়িতে, এমন ভঙ্গি করল, যেন ভাজা মাছটি উল্টে খেতে জানে না।
ফ্রিজের দরজায় আটকানো বাবার ছবিটা পেয়েছিলে? জিজ্ঞেস করল জিনা।
হ্যাঁ, মাথা ঝাঁকাল মুসা। রাখলে কখন?
আমাকে ছেড়ে দেয়ার জন্যে কেইনের সঙ্গে যখন চেঁচামেচি করছি আমি, নীরা লেভিন নামে একটা বেটি এসে ঘরে ঢুকল। এনডিকে আমার পাহারায় রেখে মেয়েলোকটাকে বের করে দিয়ে আসতে গেল কেইন। পানি খাওয়ার ছুতোয় ফ্রিজের কাছে গিয়ে তখন চুম্বকের সাহায্যে আটকে দিয়ে এলাম ছবিটা।
ভালই করেছিলে, মুসা বলল। কিন্তু একটা কথা বুঝতে পারছি না। কার্ডটা পাঠালে কি করে?
এ বাড়ি থেকেই জোগাড় করেছিলাম ওটা, জিনা জানাল। দোতলার একটা অফিস ঘরে সামান্য সময়ের জন্যে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল আমাকে। টেবিলে রাখা মিয়ামির সমুদ্রপাড়ের ছবিওয়ালা কার্ডটা দেখেই ফন্দি এল মাথায়। বোকা পিকোটাকে ফাঁকি দিয়ে চুরি করলাম ওটা। একটা কলমও চুরি করলাম। বাথরূমে গিয়ে লিখলাম। দরজা দিয়ে বের করে আমাকে তাবুতে নিয়ে যাওয়ার সময় দরজার পাশের ডাকবাক্সে ফেলে দিলাম, যেটা থেকে পিয়ন এসে চিঠি নিয়ে যায় পোস্ট করার জন্যে। রাতের বেলা ছিল বলেই এত কাজ করতে পেরেছি, দিনে হলে পারতাম না।
তার জন্যে বোকা পিকোটাকে একটা ধন্যবাদ দেয়া উচিত তোমার, মুসা বলল।