কিশোর লক্ষ করল একটা পুলেও ডাইভিং বোর্ড নেই। পাড়ের চারপাশ ঘিরে মোটা শিকলের বেড়া। অনেক নিচে পানি।
বেশ কিছুটা দূরে বোট হাউস আর জেটি। জেটিতে বাঁধা একটা সাদা বোট। চ্যানেলের বাইরে খোলা সাগরে একটা ইয়ট দেখা যাচ্ছে। বেআইনী কাজ কারবার করে রাজার হালেই আছে কেইন আর ড্যাগো। হেলিকপ্টার, ইয়ট কোন কিছুরই অভাব নেই।
কিশোরের গায়ে কনুই দিয়ে তো লাগাল মুসা। কোন দিকে তাকিয়ে আছ?
পুলের দিকে দৃষ্টি ফেরাল আবার কিশোর। বিশাল একটা ত্রিকোণ পাখনা ভেসে উঠেছে একটা পুলের পানিতে। মসৃণ গতিতে ঘুরতে লাগল পুলের কিনার ঘেষে।
হাঙর!
হোয়াইট শার্ক!
মানুষখেকো বলে ভয়ানক বদনাম আছে এগুলোর।
আপনাআপনি দ্বিতীয় পুলটার দিকে নজর চলে গেল কিশোরের। ওটাতেও কি হাঙর আছে?
যেন তার মনের কথা পড়তে পেরেই হেসে বলল কোরি, ওটাতে কি আছে, ভাবছ, তাই না? যাও, নিজের চোখেই দেখো।
দ্বিতীয় পুলটার কাছে নিয়ে আসা হলো ওদের। ছোট একটা বাক্সের ভেতরে রাখা সুইচ টিপে দিল এনডি। পানি নিরোধক আবরণে মোড়া বা জ্বলে উঠল পুলের নিচে। একবার তাকিয়েই শিউরে উঠল কিশোর। মস্ত দুটো অ্যালিগেটর শুয়ে আছে পানির তলায়। আলো দেখে নড়েচড়ে উঠল দানব দুটো। বিকট ভঙ্গিতে হাঁ করে ওপরের দিকে তাকাল একটা। ভঙ্গিটা মোটেও ভাল লাগল না ওর। জানোয়ারগুলো হয়তো ভেবেছে, খাবার নিয়ে আসা হয়েছে।
মনে হয় না মানুষের মাংসে এদেরও অরুচি আছে।
.
১৩.
কোন একটা পুলের পানিতে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়া হবে ওদের-ভাবছে কিশোর। যেটাতেই ফেলা হোক, ফলাফল সমান। পাড়ের এত নিচে পানি, কোনমতেই হাত বাড়িয়ে নাগাল পাবে না। ধরে উঠতে পারবে না-যদি ওঠার সময় পায়, যদি তার আগেই ছিন্নভিন্ন করে না ফেলে ওদেরকে ভয়াবহ জানোয়ারগুলো।
ধাক্কা খাওয়ার অপেক্ষাতেই আছে সে আর মুসা। মনে মনে বাঁচার উপায় খুঁজছে।
নড়ে উঠল মুসা।
উঁহু! সঙ্গে সঙ্গে পিস্তলের খোঁচা মারল তার পাঁজরে এনডি। ওসব করে কোন লাভ হবে না। ফুটো হওয়া রক্তাক্ত লাশটা তখন ফেলে দেব পুলের পানিতে। হজম করে ফেলবে অ্যালিগেটরেরা।
ঘড়ি দেখল কোরি। তারপর বলল, আসলে, এখুনি তোমাদের মারা হবে না। বসের নির্দেশ নেই। একটু ভয় দেখানো হলো কেবল। তবে বাড়াবাড়ি করলে ভয়টা সত্যে পরিণত হবে, মনে রেখো।
মনে মনে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল কিশোর। যতক্ষণ শ্বাস ততক্ষণ আশ। বেঁচে থাকলে মুক্তির সুযোগ থাকবে। জিজ্ঞেস করল, কি করতে চান আমাদের নিয়ে?
খিকখিক করে হাসল কোরি। আমাদের বস্ খুব মজার লোক। এসো, দেখাচ্ছি তোমাদের।
সাগরের উল্টো দিকে বনে ঘেরা একটা জায়গায় ওদের নিয়ে আসা হলো। গাছপালার ভেতরে এক টুকরো খোলা জায়গা। কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে ঘেরা। মাঝখানে মস্ত একটা তাঁবু। এত বড়, একটা দোতলা বিল্ডিং অনায়াসে ঢেকে দেয়া যাবে ওই তাবু দিয়ে।
খাইছে! এটা কি জিনিস? চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে মুসা। সার্কাস দেখাবে নাকি?
তাই মনে হচ্ছে? হেসে বলল কোরি। সার্কাসের তাবু নয়। এটা আমাদের অস্থায়ী গুদাম। বনের মধ্যে বড় বেশি পোকামাকড়ের আড্ডা। খুব জ্বালায়। বেশি বেড়ে গেলে গ্যাস দিয়ে মেরে ফেলা হয় ওগুলোকে। তাতে পোকাও মরে, জিনিসপত্রও নষ্ট হয় না।
এখন পোকামাকড় বেড়ে গেছে। কয়েক মিনিটের মধ্যেই পোকা মারার গ্যাস ছাড়া হবে তাঁবুটাতে, কোরির কথার খেই ধরল এনডি, দারুণ মজা পাচ্ছে যেন বলতে। ধাতব দুটো সিলিন্ডার দেখাল। তামার একটা টি-এর মত সরু পাইপ দিয়ে যুক্ত করা হয়েছে সিলিন্ডার দুটোর মুখ। টির ছোট দুটো মাথা সিলিন্ডারে লাগানো, লম্বা মাথাটা চলে গেছে তাঁবুর নিচ দিয়ে ভেতরে। তাঁবুর সমস্ত দরজা-জানালা বন্ধ করে দিলে বাতাস আটকে যাবে। ক্যানভাসের লম্বা লম্বা বেলুনের মত কতগুলো জিনিস দেখাল সে। তখন এগুলো দিয়ে তাঁবুর কানাগুলো মাটির সঙ্গে চেপে রাখা হবে।
হট ডগ তো মনে হচ্ছে না এগুলোকে, মুসা বলল।
বাহ্, এ সময়েও খাবারের চিন্তা, এনডি বলল। সত্যি তোমার স্নায়ু ভীষণ শক্ত। না, হট ডগ নয়। এগুলোকে আমরা বলি স্যান্ড স্নেক। কানাগুলোকে এ জিনিস দিয়ে চেপে দিলে এক বিন্দু গ্যাসও আর বেরোতে পারে না।
আর ভেতরে যারা থাকে, এনডি থামতেই কোরি বলল, দশ মিনিটের মধ্যে খতম। জ্যান্ত কোন প্রাণীই আর এরপর বেঁচে থাকতে পারে না।
কি জিনিস রাখা হয় তাবুটাতে? জিজ্ঞেস করল কিশোর।
হাসল এনডি। কি জিনিস? ধরো স্মাগলিঙের মাল। দেখবে নাকি? এসো।
তাবুর দরজা দিয়ে ভেতরে নিয়ে আসা হলো ওদের। নানা আকারের প্রচুর বাক্স সাজিয়ে রাখা হয়েছে ভেতরে। বেশির ভাগ বাক্সের গায়েই বার্মিজ আর থাই ভাষায় লেখা দেখতে পেল কিশোর। তার মনে পড়ল, ওই দুটো দেশ, বিশেষ করে মিয়ানমার হলো হেরোইন চোরাচালানিদের স্বর্গরাজ্য। তারমানে মাদকদ্রব্যের ব্যবসা করে কেইন।
তাঁবুর মধ্যে কাঠের তৈরি একটা কেবিন দেখা গেল। ওটাও অস্থায়ী। তবে লোহার ফ্রেম দিয়ে এমন করে নাট-বল্ট লাগিয়ে আটকানো, বেশ মজবুত, বোঝা যায়। দরজার বাইরের দিকে লাগানো লোহার চ্যাপ্টা ডাণ্ডাটা খুলে দিল কোরি। আড়াআড়ি লাগিয়ে দরজা আটকে রাখা হয়েছিল। টান দিয়ে পাল্লা খুলল। তারপর দুজনকে ঠেলে দিল দরজার অন্যপাশে। পরক্ষণে আবার পাল্লা লাগিয়ে ডাণ্ডা তুলে দিল।