খাইছে! বিড়বিড় করল মুসা। ভূতের বাড়ি নাকি?
গাড়ি ঢোকাল এনডি। লম্বা ড্রাইভওয়ে চলে গেছে সুদৃশ্য একটা গাড়ি বারান্দা পর্যন্ত। কয়েকটা গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেল চত্বরের একপাশে। বেশ খানিকটা দূরে, সীমানার উত্তর প্রান্তে সিমেন্টে বাঁধানো বেদির ওপর দাঁড়িয়ে আছে একটা হেলিকপ্টার। চিনতে পারল কিশোর। কেইনের হেলিকপ্টারটা। তারমানে ওদেরকে গাড়িতে করে পাঠিয়ে দিয়ে নিজে হেলিকপ্টারে করে এসে বসে আছে।
কয়েক গজ এগিয়েই থেমে গেল গাড়িটা। একটা বড় গাছের আড়াল থেকে বেরিয়ে এল একজন লোক। হাতে ছোট রিমোট কন্ট্রোলের মত একটা যন্ত্র। গেটের দিকে তুলে বোতাম টিপতেই আপনাআপনি বন্ধ হয়ে গেল গেটের পালা।
মুসার ভূত রহস্যের সমাধান হয়ে গেল। রিমোট কন্ট্রোলের সাহায্যে খোলে, বন্ধ হয় গেটটা।
গাড়ির পাশে এসে দাঁড়াল লোকটা। নিচু হয়ে তাকাল। গাড়ির ভেতরটা দেখল। তারপর সন্তুষ্ট হয়ে মাথা ঝাঁকিয়ে এগিয়ে যেতে ইশারা করল এনডিকে।
গাড়ি-বারান্দার সামনে এনে গাড়ি রাখল এনডি। ইঞ্জিন বন্ধ করে দিয়ে দরজা খুলে নামল। তার আগেই নেমে পড়েছে কোরি। পকেট থেকে চাবি বের করে খুলে দিল কিশোরের হাতকড়া। এনডির হাতে পিস্তল বেরিয়ে এসেছে। মুসার হাতকড়াও খুলে দেয়া হলো। তারপর দুজনকেই বেরিয়ে আসতে বলা হলো।
মুসা আর কিশোর দুজনের পিঠেই পিস্তল ঠেসে ধরে ঘরে ঢোকানো হলো।
বিশাল বড় হলঘর। দুই পাশের দেয়াল ঘেঁষেই দুটো মস্ত মাছের ট্যাংক রাখা। পাঁচশো গ্যালন পানি ধরে একেকটাতে।
আপনার বস্ মনে হয় পুঁটি মাছ খুব পছন্দ করে? একটা ট্যাংক দেখিয়ে এনডির সঙ্গে রসিকতা করল কিশোর।
তা তো করেই, মুখ গোমড়া করে জবাব দিল এনডি। বায়েরটাতে আছে একটা স্টিং রে। আর ডানেরটাতে কয়েক ডজন পিরানহা।
বাপরে, সাংঘাতিক হবি তো। খুনে মাছ পোষে।
খুনে জিনিসই আমার পছন্দ, কথা বলে উঠল একটা কণ্ঠ। ছায়ার মধ্যে থেকে লম্বা লম্বা পায়ে বেরিয়ে এল ডগলাস কেইন। পিতপিতে মাছ পুষে মজা নেই। ঠিকমতই তাহলে আনতে পেরেছ, এনডি। দেরি দেখে আমি তো চিন্তায়ই পড়ে গিয়েছিলাম। যা পিছলা না এগুলো। ভয় পাচ্ছিলাম পালিয়ে না যায়।
নাহ্, যাবে কোত্থেকে, জবাব দিল কোরি। হাতকড়া খোলা কি আর অত সহজ।
কথাবার্তা শুনে পাশের লিভিং রূম থেকে বেরিয়ে এল গাট্টাগোট্টা এক লোক। মাথায় কোঁকড়া চুল। মুখটা কেমন চারকোনা। বড় বড় দাঁত। কাছে এসে দাঁড়াল। মুসা আর কিশোরের আপাদমস্তক দেখে বলল, এই দুটো ছেলেই এত নাকানিচুবানি খাওয়াচ্ছিল তোমাদের?
হাসল কেইন। অত সহজ মনে কোরো না ওদের। খোঁজ-খবর নিয়েছি আমি। কি জেনেছি জানো? শুনলে ভাল লাগবে না তোমার। ওরা কারও পেছনে লাগলে তার সর্বনাশ না করে ছাড়ে না। কেউ রেহাই পায়নি ওদের হাত থেকে।
এতটাই…! কথাটা শেষ করল না লোকটা। এক ভুরু উঁচু করল।
কিশোর, এর নাম রাগবি ড্যাগো, পরিচয় করিয়ে দিল কেইন।
শুরু থেকেই লোকটার দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল কিশোর। কিছু মনে করার চেষ্টা করছিল। মনে হচ্ছিল কোথাও দেখেছে একে। নাম শোনার পর বুঝল কোথায় দেখেছে। পত্রিকায়। ছবি।
আপনিই ফ্লোরিডার সেই কুখ্যাত গ্যাং লীডার নন তো? কিশোর বলল। বহুবার পুলিশের চোখকে ফাঁকি দিয়ে পালিয়েছেন। সারা আমেরিকার পুলিশ আপনাকে খুঁজছে।
তুমি জানলে কি করে? অবাক হলো ড্যাগো।
জানি বলেই তো গোয়েন্দাগিরি করতে পারি, জবাবটা এড়িয়ে গেল কিশোর।
কি বুঝলে? ড্যাগোর দিকে তাকিয়ে ভুরু নাচাল কেইন। বলেছিলাম না, ডেঞ্জারাস ছেলে ওরা। নাম শুনেই চিনে ফেলল তোমাকে। খোঁজ-খবর রাখে। তবে যত বিপজ্জনকই হোক, এবার আর ওদের মুক্তি নেই। দুই সহকারীর দিকে তাকাল সে। এনডি, ওদেরকে আমার জলজ প্রাণীগুলো দেখিয়ে আনন। গরমও যা পড়েছে আজ। মিয়ামির পচা গরম। ইচ্ছে করলে গোসল করার জন্যে পুকুরেও নামিয়ে দিতে পারো।
দাঁত বের করে হাসল কোরি। এনডিও হাসল। পিস্তল দেখিয়ে ইশারা করল দুই গোয়েন্দাকে। পিঠে পিস্তল ঠেকিয়ে পেছনের দরজার দিকে এগোতে বাধ্য করা হলো ওদের। তবে তার আগে পিছমোড়া করে হাত বেঁধে নেয়া হলো দুজনেরই।
ওদিক দিয়েই ঢুকতে দেখা গেল নীরা লেভিনকে। ওকে দেখামাত্র পিস্তল লুকিয়ে ফেলল দুই গুণ্ডা। কিশোর আর মুসার পেছনে এমন করে গা ঘেঁষে দাঁড়াল যাতে ওদের বাধন দেখতে না পায়।
থমকে দাঁড়াল নীরা। ওরা এখানে কি করছে?
দ্বিধা করল এনডি। কি-কিছু না, ম্যাম।…মিস্টার কেইনের অ্যাকোয়ারিয়াম দেখতে চাইল…
ওদের নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না, তাড়াহুড়ো করে এগিয়ে এল কেইন। একটু পরেই চলে যাবে ওরা। নীরার হাত ধরে টান দিল সে। এসো।
কিছুই তো বুঝতে পারছি না! চোখ কুঁচকে তাকিয়ে আছে নীরা। শত্রু থেকে বন্ধু হয়ে গেল কি করে হঠাৎ? তোমার চাকরি নিয়েছে নাকি?
ওসব নিয়ে পরে কথা বলব তোমার সঙ্গে, তীক্ষ্ণ হয়ে উঠল কেইনের কণ্ঠ। এখন যেতে দাও।
এগোও, কিশোরকে ধাক্কা দিল এনডি।
বাইরে দুটো বিশাল সুইমিং পুলের কাছে ওদেরকে নিয়ে আসা হলো।
সাঁতার কাটতে বলবেন নাকি? সেগুলোর দিকে তাকিয়ে ব্যঙ্গ করল মুসা, সুইমিং সুট তো ফেলে এসেছি, ভুলে।
কোন অসুবিধে নেই, হেসে জবাব দিল কোরি। অনেক আছে আমাদের। কটা লাগবে?