মুসা বুঝল, দুবারই ইচ্ছে করে মিস করেছে এনডি। তাকে থামানোর জন্যে।
লাফ দিয়ে চত্বরে নেমে মুসারা যেদিকে গেছে সেদিকে ছুটল কিশোর। সামনে লনের মধ্যে চেয়ার পাতা। সরানোর সময় নেই। লাফ দিয়ে একটা চেয়ার পেরোল।
কিছুদূর এগোতেই দেখল, খুব বেশি দূরে যেতে পারেনি মুসা। দাঁড়িয়ে গেছে। পেছনে এগিয়ে যাচ্ছে এনডি। নিশ্চয় পিস্তলের ভয় দেখিয়ে থামিয়ে দেয়া হয়েছে মুসাকে।
পেছন থেকে এনডিকে কাবু করতে ছুটল কিশোর। কিন্তু তার পেছনেও লোক লেগে গেছে। কোরি ছুটে আসছে ধরার জন্যে। তার পেছনে চেঁচাতে চেঁচাতে আসছে কেইন।
ছুটতে ছুটতেই ফিরে তাকাল একবার কিশোর। বুঝল, আর ছুটে লাভ নেই। ধরা পড়ে গেছে। কারণ, কেইন আর কোরি-দুজনের হাতেই উদ্যত পিস্তল।
তা ছাড়া, কুকুরগুলোকেও ছেড়ে দেয়া হয়েছে। বাঘের মত গর্জন করতে করতে ছুটে আসছে ওগুলো।
.
১২.
কজওয়ে ধরে বেরিয়ে এল গাড়িটা।
তারপর যে রাস্তাটা ধরল, দেখেই বুঝতে পারল কিশোর, ফ্লোরিডার বিখ্যাত অ্যালিগেটর অ্যালির দিকে যাচ্ছে।
মুসাকে জানাল সে-কথা।
বিড়বিড় করে মুসা বলল, এত রাতে অ্যালিগেটরগুলো এখন ঘুমিয়ে থাকলেই বাঁচি।
অ্যাই, চুপ! কোন কথা নয়, সামনের প্যাসেঞ্জার সীট থেকে ধমক দিল কোরি।
গাড়ি চালাচ্ছে এনডি।
পেছনের সীটে হাতকড়া লাগিয়ে বসিয়ে রাখা হয়েছে মুসা আর কিশোরকে। হাতকড়ার একটা মাথা হাতের কব্জিতে, অন্য মাথা গাড়ির ফ্রেমে আটকানো। কোনমতেই ছুটানো সম্ভব নয়, একমাত্র চাবি ছাড়া। কাজেই ছাড়া পাওয়ার চেষ্টা না করে চুপচাপ সুযোগের অপেক্ষায় বসে রইল দুজনে।
সৈকত থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে প্রথমে বাগানের একটা ছাউনিতে আটকে রাখা হয়েছিল ওদের। গেস্টরা যাতে না দেখে। নিশ্চয় ওদের কাছে গিয়ে কৈফিয়ত দিয়েছে কেইন, দুটো চোর ঢুকেছিল চুরি করতে। পালিয়ে গেছে।
পাটির পর গাড়িটাতে তুলে দেয়া হয়েছে ওদের। দ্বীপের বাইরে দূরে কোথাও সরিয়ে দেয়া হচ্ছে। জিনাকেও বোধহয় এ ভাবেই সরিয়ে ফেলা হয়েছে। কেইনের। গাল আইল্যান্ডের বাড়িতে যে নেই জিনা, এ ব্যাপারে শিওর এখন ওরা। তবে নেয়া হয়েছিল ওখানে, তার প্রমাণ যেফ্রিজারেটরে লাগানো ছবিটা, আর টেবিলে রাখা চশমা। হয়তো ওঘরেই প্রথমে আটকে রাখা হয়েছিল ওকে। সেজন্যেই চশমাটা ফেলে আসতে পেরেছে।
চলতে চলতে গাড়ির গতি কমে গেল হঠাৎ। কারণটা জানার জন্যে দুজনেই। বাইরে তাকাল ওরা। অতি সরু একটা রাস্তায় গাড়ি ঢুকিয়ে দিল এনডি। দুই পাশেই বিশাল জলাভূমি। অন্ধকারে পানি চেনা যাচ্ছে না। তবে আছে। ওগুলোতে কোন কোন প্রাণীর বাস, কল্পনা করে শিউরে উঠল কিশোর। জোক আছে। নানা ধরনের বিষাক্ত কীটপতঙ্গ আছে। আর আছে ঝাঁকে ঝাঁকে অ্যালিগেটর। কোন মতে যদি চাকা পিছলে ওই জলায় গিয়ে পড়ে গাড়িটা, আর উঠতে পারবে না। ভয়াবহ কাদায় আটকে যাবে। পুরোটা যদি ডুবে যায়, তাহলে জ্যান্ত কবর হবে। আর যদি না যায়, অ্যালিগেটরের খাবার হবে।
এটা কোরি কিংবা এনডির না জানার কথা নয়। তাহলে এ পথ ধরল কেন ওরা? নিশ্চয় পুলিশের ভয়ে। সামনে সম্ভবত চেক পোস্ট জাতীয় কিছু আছে। দুটো ছেলেকে গাড়ির পেছনে হাতকড়া লাগিয়ে কেন আটকে রাখা হয়েছে, অবশ্যই জানতে চাইবে ওরা। সে-সব এড়ানোর জন্যেই এই নির্জন বিপজ্জনক রাস্তা ধরেছে এনডি।
অতিরিক্ত সাবধান থেকেও চাকা সোজা রাখতে পারছে না সে। বৃষ্টিতে রাস্তা পিচ্ছিল হয়ে থাকার কারণে। সামনের ডান পাশের চাকাটা মূল রাস্তা থেকে সরে গেল কাঁচা মাটিতে। প্রচণ্ড ঝাঁকি দিয়ে কাত হয়ে গেল গাড়ির একপাশ।
শক্ত হয়ে বসে থাকো! নড়বে না কেউ! চিৎকার করে উঠল এনডি। স্টিয়ারিং চেপে চাকাটাকে তুলে আনার আপ্রাণ চেষ্টা শুরু করল।
মুক্ত হাতটা দিয়ে সামনের সীটের পেছনটা খামচে ধরল কিশোর। টের পাচ্ছে, উঠে আসার বদলে ক্রমশ রাস্তা থেকে নেমে যাচ্ছে চাকাটা।
আর মাত্র কয়েক ইঞ্চি সরে গেলেই শেষ। কোনমতেই আর তোলা যাবে না। জলাভূমিতে পড়ে যাবে গাড়ি।
শেষ চেষ্টা করল এনডি। লো গীয়ারে দিয়ে গ্যাস পেডাল পুরো চেপে ধরল ফ্লোরবোর্ডের সঙ্গে। একই সঙ্গে গায়ের জোরে যতটা সম্ভব বায়ে ঘুরিয়ে দিতে লাগল স্টিয়ারিং।
সাংঘাতিক ঝাঁকি। আরও কয়েক ইঞ্চি পিছলে গেল চাকা। তবে সামনে না গিয়ে সরে যেতে লাগল বা পাশে। উঠে চলে আসতে শুরু করল। আর গোটা কয়েক ঝাঁকুনি আর চাকা পিছলানোর পর রাস্তায় উঠে এল পড়ে যাওয়া চাকাটা।
জোরে নিঃশ্বাস ফেলে কপালের ঘাম মুছল এনডি।
গাড়ির আরোহীরা আবার স্বাভাবিক ভাবে শ্বাস নিতে শুরু করল।
আর কোন অঘটন ঘটল না। রাস্তাটা নিরাপদেই পার হয়ে এল গাড়ি। বড় রাস্তায় উঠল। যেন ক্ষতিটা পুষিয়ে নেয়ার জন্যেই দ্বিগুণ গতিতে গাড়ি ছোটাল এনডি।
প্রায় ঘণ্টা তিনেক গাড়ি ছোটানোর পর গন্তব্যে পৌঁছল ওরা। মিয়ামিতে অনেক আগেই ঢুকে পড়েছে। এখন কোথায় এল, সাইনবোর্ড দেখে বুঝতে পারল কিশোর। বিসকেইনি বে।
প্রচুর গ্রীষ্মমণ্ডলীয় গাছপালা দেখা যাচ্ছে।
আরও কয়েক মিনিট চলার পর বড় একটা দেয়াল ঘেরা বাড়ির গেটের কাছে। এসে থামল গাড়ি। ভেতরে গাছপালা, ঝোঁপঝাড়ের প্রায় জঙ্গল হয়ে আছে।
কাউকে গেটের কাছে আসতে দেখা গেল না। অথচ খুলে গেল গেটটা।