ঠিক, হাসি ফুটল কিশোরের মুখে। এটা দিয়েই বোঝাতে চেয়েছে যে যা লিখেছে, তার অন্য অর্থ আছে। কার্ডের ছবিটার ক্যাপশন লিখেছে দেখো: মিয়ামির সমুদ্রতীর কখনও ঘুমায় না। চোখের পাতা সরু করে তাকাল কিশোর। এর মধ্যেও সূত্র আছে নিশ্চয়। ছবিটার কোন মানে না-ও হতে পারে অবশ্য। হাতের কাছে যা পেয়েছে তাতেই লিখে পাঠিয়ে দিয়েছে। সূর্যাস্তের দৃশ্য কিংবা ডলফিনের ছবিওয়ালা কার্ড পেলেও হয়তো তাতেই লিখত।
কি জানি! চিন্তিত ভঙ্গিতে কপাল চুলকাল রবিন। সূত্রের পর সূত্র দিয়ে যাচ্ছে জিনা। গাড়ির ছবি, কেইনের বাড়িতে ফ্রিজে তার বাবার ছবি, কেগের বাড়িতে ঘড়ি, এখন এটা! তারপরেও এগোতে পারছি না আমরা!
আজ রাতে কেইনের বাড়িতে ঢুকব আমরা, পার্টির সময়, কিশোর বলল। পুরো বাড়িটাতে খুঁজব। যদি ওখানে জিনাকে না পাই, তাহলে শিওর হয়ে যাব, ওকে মিয়ামিতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সমুদ্রতীরের কোন বাড়িতে আটকে রেখেছে। মিয়ামির সমুদ্রতীর কখনও ঘুমায় না-কথাটা লেখার এই একটাই অর্থ হতে পারে!
১১.
ঝড়বৃষ্টি থেমে গেছে। সকালের মত নেই আর। তবে আকাশে ভারী মেঘ জমে আছে এখনও। যে কোন সময় আবার শুরু হবে।
কেইনের বাড়ির সামনে এসে গাড়ি থামাল মুসা। সে আর কিশোর এসেছে। রবিনকে রেখে এসেছে মোটেলে, ইভার সঙ্গে। কেইনের বাড়িতে ঢুকলে বিপদ ঘটার একশো ভাগ সম্ভাবনা। সবাই আটকা পড়লে উদ্ধারের উপায় থাকবে না আর। রবিনকে রেখে এসেছে সে-কারণে। বলে এসেছে, রাত বারোটার মধ্যে ফিরে না গেলে প্রথমে যেন মিয়ামি পুলিশের কাছে যায় রবিন, কারণ ডেপুটি হেরিং গেকোকে দিয়ে কোন কাজ হবে না। তারপর রকি বীচে ফোন করে ওমর ভাইকে।
কারলু রোডে সারি সারি নানা ধরনের চকচকে গাড়ির পেছনে ভ্যানটা রাখল মুসা। একপাশে কেইনের বাড়ির দেয়াল। ওটা ঘেঁষে রাখা হয়েছে গাড়িগুলো।
বাড়ির ভেতর থেকে ভেসে আসছে হাসি আর বাজনার শব্দ।
সাগরের দিক থেকে গড়িয়ে গড়িয়ে আসছে যেন ঘন কুয়াশা। ফ্লাডলাইট জ্বেলে দিতে হয়েছে কেইনকে। তারপরেও সুবিধে হচ্ছে না। বাড়িটার খুব সামান্য জায়গাই স্পষ্ট হয়েছে তাতে। সত্তিই বোধ করছে কিশোর। কুয়াশার মধ্যে গাছপালার ভেতরে সহজে ওদেরকে চোখে পড়বে না।
পার্টির উপযুক্ত পোশাক পরে এসেছে দুজনে। উল্টোপাল্টা পোশাকে এসে মেহমানদের নজরে পড়ে গেলে ধরা পড়ে যাবে সহজেই। কিশোর পরেছে স্পোর্ট কোট আর স্ন্যাকস। মুসা গায়ে দিয়েছে উজ্জ্বল রঙের প্রিন্টওয়ালা শার্ট। পরনে জিনস।
ভেতরে ঢোকার আগে শেষবারের মত সাবধান, করল কিশোর, দেখো, কারও সন্দেহ হয়, এমন আচরণ কোরো না। সবাই যাতে ভাবে আমরাও দাওয়াত পেয়েই এসেছি।
হাসল মুসা, তা করব না। তবে সামনে খাবার পড়ে গেলে খানিকটা তো চেখে দেখতেই হবে, কি বলল? না খেলেই বরং গেস্টরা সন্দেহ করবে।
কোন রকম ঝুঁকি নেবে না। আমাদের উদ্দেশ্য হবে কাজ সেরে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নিরাপদে বেরিয়ে যাওয়া।
ড্রাইভওয়ে ধরে আগে আগে হেঁটে চলল কিশোর। পেছনে মুসা।
সামনের দরজায় দাঁড়িয়ে আছে কয়েকজন লোক। কিন্তু তাদের কাউকেই কেইনের দুই সহকারীর মত লাগল না। মেহমানই হবে ওরা।
সামনের হলঘরে ঢুকে লোকজন দেখে ফিসফিস করে কিশোরের কানের কাছে বলল মুসা, দুশো জনের কম হবে না।
এনডি আর কোরির ব্যাপারে সতর্ক থাকো, কিশোর বলল।
কোথায় ওরা? দেখছি না তো।
এখানে দেখা যাচ্ছে না বলে যে বাড়িতে নেই, সেটা ভাবা ঠিক হবে না। ওখানে দাঁড়িয়েই হলঘর আর লিভিং রূমের সমস্ত জায়গায় চোখ বোলাল কিশোর। নীরা লেভিনের সামনেও পড়া চলবে না আমাদের।
রান্নাঘরের দিকে এগোল দুজনে। চারপাশে নজর রাখতে লাগল মুসা, কিশোর এগিয়ে গেল রেফ্রিজারেটরটার দিকে।
ছবিগুলো ভালমত দেখে এসে বলল, ছবিটা নেই।
সরিয়ে ফেলল নাকি? রেফ্রিজারেটরটার দিকে তাকাল মুসা। সবই ঠিকঠাক আছে, কেবল ছবিটা সরিয়েছে।
তারমানে নজরে পড়ে গেছে ওদের, কিশোর বলল। ঠিক আছে, এক কাজ করা যাক। ভাগাভাগি হয়ে গিয়ে খুঁজতে থাকি আমরা। জিনা এ বাড়িতে আছে কিনা, বোঝা দরকার। থাকলে কোথায় আছে জানতে হবে। তুমি এই তলাতেই খোজো, আমি দোতলায় যাচ্ছি। ফোন বেজেছিল ওখানে, মনে আছে? কেইনের অফিস-টফিস থাকতে পারে।
সিঁড়ির দিকে এগোল সে। কে যেন ডেকে বলল তাকে, আই, কোথায় যাচ্ছ? কেইন এখনই চলে আসবে।
তার একটা মেসেজ আছে, সেটাই দিতে যাচ্ছি, ফিরে তাকাল না কিশোর। ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়ে। দ্রুত ভাবনা চলেছে মগজে। একটা সেকেন্ডও আর দেরি না করে একেক লাফে কয়েকটা করে সিঁড়ি টপকে দোতলায় উঠে এল।
শূন্য হলঘর। ডানে ঘুরল সে। শেষ মাথায় চলে এল। তিনটে বেডরূম আর একটা বাথরূম পেরোল। ওগুলোতেও কেউ নেই।
মুসা তখন লিভিং রূমের এক মাথার দিকে এগিয়ে চলেছে। শেষ মাথার হলে এসে পৌঁছল। ওটা ধরে এগোলে মস্ত একটা বাথরূম, গোটা দুই বেডরূম আর। একটা বসার ঘরে যাওয়া যায়।
একটা বেডরূমে ঢুকে বড় একটা দেয়াল আলমারি খুলে দেখল। বাথরূমে খুঁজল। নেই কেউ। ঘরটাও কেউ ব্যবহার করে বলে মনে হলো না।
দ্বিতীয় বেডরূমটাও প্রথমটার মতই। তবে আলমারিটা একেবারে খালি নয়। ছোট একটা বাক্স পাওয়া গেল। তাতে জাপানী ভাষায় কি যেন লেখা। তার ভেতরে কতগুলো ইলেকট্রনিক যন্ত্রাংশ দেখা গেল। ডায়োড, ট্রানজিস্টর, কম্পিউটারের চিপস এ সব জিনিস।