পকেট থেকে ঘড়িটা বের করে দেখাল কিশোর। চিনতে পারো?
কয়েকটা সেকেন্ড তাকিয়ে থেকে জবাব দিল রবিন, জিনারটা না? জন্মদিনে পারকার আঙ্কেল যেটা দিয়েছিলেন তাকে?
মাথা ঝাঁকাল কিশোর।
কোথায় পেলে? জিজ্ঞেস করল রবিন।
কেগের ঘরে। টেবিলের ওপর। নিশ্চয় জিনাই রেখে গেছে। এত বেশি জিনিসপত্র ছড়ানো রয়েছে, ওসবের মধ্যে এটা আলাদা করে চোখে পড়েনি কেগের। এখন আমাদের জানতে হবে কেগের সঙ্গে কেইনের সম্পর্কটা কোথায়?
বৃষ্টির বিরাম নেই।
আকাশের দিকে তাকাল একবার কিশোর। চলো, আর এখানে কোন কাজ নেই। মুসা নিশ্চয় অবাক হয়ে যাচ্ছে, এতক্ষণ কি করছি আমরা ভেবে।
.
১০.
প্রচণ্ড বৃষ্টির মধ্যে শহরে ফিরে চলেছে ওরা।
গাড়ি চালাচ্ছে মুসা। ফুল স্পীডে চলছে উইন্ডশীল্ড ওয়াইপার। বৃষ্টি মেশানো ঝড়ো বাতাসের ঝাপটা বার বার এসে আঘাত হানছে গাড়ির গায়ে। সঙ্গে করে নিয়ে আসছে বালির কণা, কুটো-পাতা।
পেলিক্যান আর কারলুর কোণে এনে গাড়ি রাখল মুসা। কুপারের রেস্টুরেন্টের কাছে। খাওয়া দরকার।
বৃষ্টি থেকে বাঁচার জন্যে মাথা নুইয়ে একদৌড়ে ঘরে ঢুকল তিনজনে। খাবারের অর্ডার দিয়ে অপেক্ষা করছে এই সময় দরজায় দেখা দিল ডেপুটি গেকো। ভারিক্কি চালে এগিয়ে এসে দাঁড়াল ওদের টেবিলের কাছে।
তোমাদেরকেই খুঁজছি। তোমাদের সঙ্গে কথা আছে আমার… কিশোর আর রবিনের কাদায় মাখামাখি হয়ে থাকা কাপড়ের দিকে তাকিয়ে হাসতে লাগল গেকো। কাদার মধ্যে কুস্তি করে এসেছ নাকি?
উঁহু, মাথা নাড়ল কিশোর। বৃষ্টির সময় সাগরকে কেমন লাগে, দেখতে গিয়েছিলাম।
গোটা দুই হাঁচি দিল গেকো। হাত ঢোকাল প্যান্টের পকেটে। দেখাদেখির কাজ আমিও খানিকটা করে এসেছি। ওয়াইন্ড পাম মোটেলে গিয়েছিলাম। আরেকটা নৌ-দুর্ঘটনা ঘটিয়েছে ওরা।
দুর্ঘটনা? কুঁচকে গেল কিশোরের ভুরু। ওরা ঘটাবে কেন? ইঞ্জিনের মধ্যে বোমা পেতে রেখে এসেছিল কেউ, স্টার্ট দিলেই যাতে ফাটে।
খুব বেশি জেমস বন্ডের ছবি দেখো, একটা টুল টেনে নিয়ে ওদের কাছে বসে পড়ল গেকো।
কেন, আপনার কি ধারণা? পেট্রোলের গ্যাস জমে ইঞ্জিনটা উড়ে গেছে?
বাস্তব কথা ভাবলে সেটাই স্বাভাবিক, মহাবিজ্ঞের ভঙ্গিতে জবাব দিল গেকো। পুরানো বোট। পুরানো ইঞ্জিন। এ ধরনের ঘটনা তো ঘটতেই পারে।
হু, তা তো পারেই, ফোড়ন কাটল কুপার। কিছুদিন ধরে যে হারে স্বাভাবিক সব দুর্ঘটনা ঘটছে দ্বীপটাতে, আর কিছুদিন এ ভাবে চললে এর নাম বুক অভ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে উঠে যাবে।
ওগুলো যে দুর্ঘটনা নয়, এমন কোন প্রমাণ আছে তোমার কাছে? খেঁকিয়ে উঠল গেকো।
সে-রাতে আমার প্রোপেন ট্যাংকটা যে ফুটো হয়ে গেল, ওটার সঙ্গে যুক্ত টিউবগুলোকে টেনে খুলে বাকাচোরা করে ফেলে রাখা হলো, সেটাও নিশ্চয় দুর্ঘটনা?
র্যাকুনে করেছে, খোঁচা মারল কিশোর।
কিংবা অ্যালিগেটরে, গেকো বলল। সারা বছরই জ্বালায় ওগুলো, জানোই তো।
তারমানে আপনি বলতে চান, জিনাকেও ব্যাকুনে কিংবা অ্যালিগেটরে ধরে নিয়ে গেছে? শীতল কণ্ঠে বলল কিশোর।
মনে করিয়ে দেয়ার জন্যে ধন্যবাদ, টুলের ওপর ঘুরে বসে ওদের মুখোমুখি হলো গেকো। ওয়াইল্ড পামে ব্রুকের ভাতিজির কাছে শুনলাম খবরটা।
ইভা? শঙ্কিত হয়ে উঠল কিলোর। আবার কোন খারাপ খবর শোনাবে!
হ্যাঁ, হাসিমুখে মাথা ঝাঁকাল গেকো। কিডন্যাপিং-ফিডন্যাপিং কিছু না। তোমাদের বান্ধবী এখন মহানন্দে আরেক জায়গার সমুদ্র সৈকতে রোদ পোয়াচ্ছে।
কি করে জানলেন?
চিঠি পাঠিয়েছে। ওয়াইল্ড পামের ঠিকানায়। বিশ্বাস না হলে নিজেরাই গিয়ে দেখে এসো।
খাবার তৈরি হয়ে গেছে। নইলে তক্ষুণি উঠে চলে যেত ওরা। কোনমতে নাকে-মুখে খাবারগুলো খুঁজে, কুপারের বিল মিটিয়ে দিয়ে গাড়ির দিকে ছুটল তিনজনে।
ওয়াইল্ড পামের সামনে মুসা গাড়িটা রেখেও সারতে পারল না, ধাক্কা দিয়ে দরজা খুলে লাফিয়ে নেমে পড়ল কিশোর। দৌড় দিল অফিসের দিকে।
কিশোরকে দেখেই যা বোঝার বুঝে নিল ইভা। ডয়ার থেকে নীরবে বের করে দিল চিঠিটা। পোস্টকার্ডে লিখে পাঠিয়েছে জিনা।
জিনার হাতের লেখা, তাতে কোন সন্দেহ নেই, দেখতে দেখতে বলল কিশোর। দুই পাশে এসে দাঁড়িয়েছে মুসা আর রবিন। সিল-ছাপ্পর দেখে বলল, দুদিন আগে মিয়ামি থেকে পোস্ট করা হয়েছে।
আমাকে না জানিয়ে মিয়ামিতে চলে গেছে জিনা, বিশ্বাসই হচ্ছে না আমার! ইভা বলল। অথচ আমরা এদিকে…
যদি গিয়েই থাকে, ইচ্ছে করে যায়নি, আমি শিওর, কিশোর বলল। তা ছাড়া এটা কিডন্যাপারদের চালবাজিও হতে পারে। ওকে দিয়ে লিখিয়ে আমাদের বোঝাতে চেয়েছে লং আইল্যান্ড থেকে নিজে নিজেই মিয়ামিতে চলে গেছে সে। আর যদি জিনাই পাঠিয়ে থাকে, তাহলে কার্ডটা পাঠানোর পেছনে কোন উদ্দেশ্য আছে তার। কিছু একটা বোঝাতে চেয়েছে। ভোলা কার্ডে খোলাখুলি লিখলে শত্রুদের চোখে পড়ে যেতে পারে। সেজন্যে ইঙ্গিত দিয়ে বোঝাতে চেয়েছে। ও লিখেছে: জায়গাটা দারুণ। গতবারের চেয়ে ভাল লাগছে। ইস, তোমরা থাকলে খুব মজা হত। জিনা। মুখ তুলে তাকাল সে। বুঝতে পারছ কিছু?
বিমূঢ়ের মত মাথা নাড়ল মুসা, কিছু না। অতি সাধারণ একটা চিঠির মতই লাগছে।
রবিনের দিকে তাকাল কিশোর, তুমি বুঝেছ?
ভাবছে রবিন। হঠাৎ উজ্জ্বল হয়ে উঠল মুখচোখ। গতবার মিয়ামিতে যায়ইনি সে! লং আইল্যান্ডে গিয়েছিল!