চলে গেল কিশোর।
ইভা বলল, চাচা, দোহাই তোমার জায়গাটা বিক্রি কোরো না!
দেখি তো দলিলটা? কেউ বাধা দেয়ার আগেই টান মেরে মিস্টার ব্রুকের হাতের নিচ থেকে তুলে নিল রবিন।
অ্যাই, দেখো! চিৎকার করে উঠল নীরা। ভাল হবে না…
দলিল সম্পর্কে তেমন কোন ধারণা নেই রবিনের, তবে ওদের ব্ল্যাক ফরেস্টের বাড়িটা কেনার সময় কিছু কিছু অভিজ্ঞতা হয়েছে। পড়তে শুরু করল সে।
কলমটা টেবিলে নামিয়ে রেখে অপেক্ষা করতে লাগলেন আঙ্কেল ব্রুক। নীরার দিকে তাকাল, পড়তে আর আপত্তি কি? পড়ুক না। ভেতরে যদি কোন রকম গণ্ডগোল করে না রাখো, অত ভয় পাচ্ছ কেন?
ঠাস করে ব্রীফকেসের ডালা বন্ধ করল নীরা। মুচকি হাসল রবিন। এতটাই প্রতিক্রিয়া হলো নীরার, এমন ভঙ্গি করল, চমকে গিয়ে এক পা পিছিয়ে গেল ইভা।
বহুত নাক গলাচ্ছ সব কিছুতে! রবিনের দিকে তাকিয়ে গজগজ করতে লাগল নীরা।
হুমকি দিচ্ছেন? রাগ দমাতে পারছে না মুসা।
পাশের ঘরের দিকে তাকাল রবিন। দরজা দিয়ে দেখা যাচ্ছে কিশোরকে। ফোনে কথা বলছে। নোটবুকে কি যেন লিখে নিয়ে ফোন রেখে দিল। ফিরে এল অফিসে।
ব্যুরো অভ কমার্শিয়াল ইন্সপেকশনে ফোন করেছিলাম, জানাল সে। স্টেট রিসর্ট ইন্সপেক্টর সেজে যে এসেছিল, সে ভুয়া লোক। নভেম্বরের আগে এ মোটেল ইন্সপেকশনে আসার কোন ইচ্ছেই নেই কর্তপক্ষের।
কিন্তু আইডেনটিটি দেখিয়েছে লোকটা, বিশ্বাস করতে পারছেন না মিস্টার ব্রুক।
ওটাও নকল, দেখুনগে।
মিথ্যে কথা! তীক্ষ্ণ কণ্ঠে চেঁচিয়ে উঠল নীরা। রাগ দমন করতে পারল না আর। এত অল্প সময়ে এত খোঁজ নিতে পারার কথা নয় তোমার। আমি এখন ফোন করলে ঠিক ওরা বলবে, তুমি কোন ফোনই করোনি। তোমাকে চিনতেই পারবে না ওরা।
যান, গিয়ে করে দেখুন তাহলে, সরে জায়গা করে দিল কিশোর।
নাক গলানো বিছুর দল! গালি দিয়ে উঠল নীরা। রবিনের হাত থেকে দলিলটা কেড়ে নিয়ে, টেবিল থেকে চেকটা তুলে ব্রীফকেসে ভরল। তারপর গর্ট গট করে রওনা হলো দরজার দিকে।
বেরোনোর আগে ফিরে তাকাল, ভেবো না পার পেয়ে যাবে। বাঘের মুখের গ্রাস ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছ তোমরা। এর চেয়ে অনেক বড় বড় ঘাগু লোককে… কথাটা শেষ করল না নীরা। সমস্ত রাগ যেন গিয়ে পড়ল মিস্টার ককের ওপর। পিস্তলের মত তার দিকে আঙুল তাক করে চেঁচিয়ে চলল, বুড়ো হাঁদা কোথাকার, সুযোগ দিয়েছিলাম, সদ্ব্যবহার করোনি। এখনও সময় আছে, মনস্থির করে বেচে দাও জায়গাটা। পরে এমন অবস্থা হবে, বেচার মত কিছু আর অবশিষ্ট থাকবে না।
.
০৮.
নীরা চলে যাওয়ার পর আরও কিছুক্ষণ কথা বলল ওরা। আলোচনা করল ব্যাপারটা নিয়ে। তারপর কিশোর বলল, আজ আর কিছু করার সময় নেই। রেন্টাল কোম্পানির অফিসও নিশ্চয় বন্ধ হয়ে গেছে। কাল সকালে যা করার করব।
আগের রাতে ভালমত ঘুমাতে পারেনি, সেদিন তাই সকাল সকাল শুয়ে পড়ল ওরা।
পরদিন সকালে ঝরঝরে শরীর নিয়ে ঘুম ভাঙল কিশোরের। মোটেলের অফিসে এসে দেখে কাজে লেগে গেছে ইভা। তাকে সাহায্য করছে রবিন।
অঘটনের যেন শেষ নেই, কিশোরকে বলল ইভা। কাল রাতে চাচার এক বন্ধু ফোন করেছিল। হিবিসকাস ড্রাইভে থাকে। তার সান-রমের জানালা ভেঙে ঘরে ঢুকে কে নাকি এয়ারকুলারটা নষ্ট করে দিয়ে গেছে। গেকোর কাছে রিপোর্ট করা হয়েছে। সে বলেছে কোন দুষ্ট ছেলের কাজ।
আহা, পুলিশ অফিসার বটে! দরজার কাছ থেকে বলে উঠল মুসা। ধীর পায়ে ঘরে ঢুকল।
তারমানে ওই ভদ্রলোকের জায়গাটার ওপরও নজর পড়েছে ওদের! আর কি খবর? জানতে চাইল কিশোর।
এয়ারপোর্টে কার রেন্টাল এজেন্সিতে ফোন করেছিলাম, ইভা জানাল।
কোন খোঁজ পেলে?
গাড়িটার বর্ণনা দিয়ে জানতে চাইলাম, কার কাছে ভাড়া দিয়েছে।
কি বলল? আগ্রহে সামনে গলা বাড়িয়ে দিল কিশোর।
রবিনের দিকে তাকাল ইভা। আবার ফিরল কিশোরের দিকে। হাসল। বলেছে, হারম্যান কেগ নামে শিকাগোর এক বীমার দালাল গাড়িটা ভাড়া নিয়ে গাল আইল্যান্ডে গেছে। স্টিকারে লেখা যে সিরিয়াল নম্বরটা দিল, সেটার শেষ তিনটে নম্বরও মিলে গেছে।
নিচের ঠোঁটে জোরে একবার টান দিয়ে ছেড়ে দিল কিশোর। চিন্তিত ভঙ্গিতে আনমনে বিড়বিড় করল, শিকাগোর একজন বীমার দালাল গাল আইল্যান্ডে এসে ছবি আঁকা শুরু করল কেন?
ছবি যে আঁকছে তার কি প্রমাণ? প্রশ্ন তুলল মুসা। ওটা ওর মুখের কথা। নিজের চোখে তো আর তাকে আঁকতে দেখিনি আমরা।
আমার মনে হচ্ছে, আরেকবার তার বাড়িতে যাওয়া উচিত আমাদের, কিশোর বলল। আমাদের জানতে হবে জিনা কেন কেগের গাড়ির ছবি তুলেছে।
ও হ্যাঁ, তোমাদের বলতে ভুলে গেছি-বীমার কথায় মনে পড়ল, ইভা বলল, চাচা গেছে মেইনল্যান্ডে। ওখান থেকে ফোন করেছিল। তোমাদের বলতে বলেছে তোমাদের ভ্যানের কাঁচটা সারিয়ে নেবে চাচা। যখন পারো টাকাটা দিয়ো। আর এখানে তার গাড়িটা ব্যবহার করতে বলেছে তোমাদেরকে। ওটার কিছু মেরামতি আছে। তাই নিতে ভরসা পায়নি। রাস্তাঘাটে যদি খারাপ হয়ে যায়। তোমাদেরটাই নিয়েছে।
মেইনল্যান্ডে গেছেন কেন? কোন জরুরী কাজ?
হ্যাঁ। বোটটার বীমা করানো ছিল। বীমা কোম্পানির সঙ্গে কথা বলতে গেছে।
আচ্ছা। ঠিক আছে, কিশোর বলল, আমাদের আগেই যদি আঙ্কেল ব্রুক ফিরে আসেন, তাঁকে আমাদের ধন্যবাদ জানিও, কাঁচটা ঠিক করে আনার জন্যে।