বেরোও! বেরোও আমার বাড়ি থেকে! চিৎকার করে উঠল কেগ।
কিন্তু নড়ল না কিশোর আর মুসা।
আমরা জানি, কেগের চিৎকারের পরোয়াই করল না কিশোর, জিনাকে কিডন্যাপ করা হয়েছে। কি বলো, মুসা?।
হঁ, মাথা ঝাঁকাল মুসা। আপনার গাড়িটার মত একটা গাড়ি দিয়ে।
আমার বিরুদ্ধে কিসের অভিযোগ আনতে চাইছ তোমরা, বুঝতে পারছি না, গলার জোর হারিয়ে ফেলেছে কেগ। সত্যি বলছি, ডগলাস কেইনের সঙ্গে কোন। সম্পর্ক নেই আমার। আমি প্রমাণ করে দিতে পারি, এখানে এ বাড়িতে দিন-রাত চব্বিশ ঘণ্টা বসে বসে আমি ছবি আঁকি, কেবল খাবার সময়টুকু বাদে। আমি একজন আর্টিস্ট। তারপর কিশোরদেরকে আর কিছু বলার কিংবা ভেতরে ঢোকার কোন সুযোগ না দিয়ে হঠাৎ পিছিয়ে গিয়ে দড়াম করে লাগিয়ে দিল দরজা।
মুসার দিকে তাকাল কিশোর। ভুরু নাচাল, কি বুঝলে? জবাবের অপেক্ষা না করে বলল, চলো, গাড়ির নম্বরটা লিখে নিই। চাকার খাঁজের ডিজাইনগুলোও দেখব।
গাড়ির কাছে এসে নোটবুকে নম্বরটা লিখে রাখল সে। তারপর পেলিক্যান লেন থেকে এঁকে আনা ডিজাইনগুলো বের করে মিলিয়ে দেখতে লাগল।
এই দেখো, মুসাকে দেখাল কিশোর। জিনার ফেলে যাওয়া গাড়ির কাছে যে সব দাগ পেয়েছি, তার সঙ্গে একটা দাগ মিলে যাচ্ছে।
ভ্যানের কাছে ফিরে এল দুজনে। কি কি জেনে এল, জানাল রবিন আর ইভাকে।
কেগকে কি মনে হলো? জিজ্ঞেস করল ইভা।
বুঝলাম না, ডাকাত দলের সর্দার, নাকি স্পাই, জবাব দিল মুসা। তবে ডগলাসের কথা শুনে চমকে গেছে, এটা ঠিক।
তার গাড়িটার দিকে এখন নজর রাখা দরকার, কিশোর বলল। এটাই আসল গাড়িটা কিনা, যেটাকে আমরা খুঁজছি, এ ব্যাপারে এখনও শিওর হওয়া যাচ্ছে না। খুঁজলে ওরকম তিনটে নম্বর মিলে যাবে বহু গাড়ির সঙ্গে। পুরো নম্বরটা ছাড়া নিশ্চিত হওয়া কঠিন। আর চাকার ডিজাইনও মিলে যাবে লক্ষ গাড়ির সঙ্গে, কারণ কোম্পানি তো আর প্রতিটি চাকারই ডিজাইন বদল করে না। কেগের গাড়ির সঙ্গে এ সব মিলে যাওয়াটা কাকতালীয়ও হতে পারে।
খাইছে! গুঙিয়ে উঠল মুসা। খুঁজে বের করব কি করে তাহলে?
ফোনে কাজটা সারা যেতে পারে, কিশোর বলল।
তাহলে দায়িত্বটা আমাকে দিতে পারো, ইভা বলল। বসে বসে যত খুশি ফোন করতে পারব আমি।
কোন কাজ? বুঝতে পারল না মুসা। গাড়ির সবুজ রঙ আর শেষ তিনটে নম্বর মিলে যায়, এমন কটা গাড়ি আছে, রেন্টাল কোম্পানিতে ফোন করে জানার কাজ, বুঝিয়ে দিল কিশোর।
ইভাকেই দায়িত্বটা দিল সে।
মোটেলের কাছে আসতে কিশোর বলল, মনে হচ্ছে আঙ্কেল ব্রুকের সঙ্গে দেখা করতে এসেছে কেউ।
সবাই দেখল, পার্কিং লটে একটা দামী বড় গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে।
মুসা গাড়িটা পুরোপুরি থামানোর আগেই হ্যাঁচকা টানে দরজা খুলে লাফিয়ে নেমে গেল ইভা। দৌড় দিল অফিসের দিকে।
তার পেছনে ছুটল কিশোর আর রবিন। গাড়িটা রেখে আসতে সামান্য দেরি হলো মুসার।
অফিসের কাছাকাছি আসতে কানে এল মিস্টার ব্রুকের কণ্ঠ, এ জায়গা বিক্রির কোন ইচ্ছেই আমার ছিল না। কিন্তু আর তো কোন উপায়ও দেখতে পাচ্ছি না।
ঘরে ঢুকল তিন গোয়েন্দা। ইভা আগেই ঢুকে পড়েছে। ফিরে তাকাল নীরা লেভিন। দীর্ঘ একটা মুহূর্ত জ্বলন্ত চোখে গোয়েন্দাদের দিকে তাকিয়ে থেকে আবার মিস্টার ব্রুকের দিকে ঘুরল।
ঠিক আছে, নয় লাখ ডলারই দিলাম, যান। দ্রুত চেক লিখে টেবিলের ওপর দিয়ে ঠেলে দিল মিস্টার ব্রুকের দিকে।
কিশোরের দিকে তাকালেন মিস্টার ব্রুক। খবর শুনেছ? আমার বোটটাও শেষ। মেরিনাতে সরানোর আর সুযোগ হয়নি। স্টার্ট দিতেই ইঞ্জিনে বিস্ফোরণ। তলা খসে গিয়ে তলিয়ে গেছে পানিতে। কোনমতে প্রাণে বেঁচে ফিরে এসেছি।
অস্ফুট শব্দ করে উঠল ইভা।
দীর্ঘ একটা মুহূর্ত স্তব্ধ হয়ে রইল কিশোর। কি বলবে ভেবে পেল না।
মাথা নামালেন মিস্টার ব্রুক। ভগ্ন, বিধ্বস্ত একজন বুড়ো মানুষ। মুখ তুলে তাকালেন আবার নীরার দিকে। খুব যে বেশি দিচ্ছ না, সেটা তুমিও জানো। রিসর্ট বানিয়ে এর দশগুণ পয়সা তুলে নেবে খুব সহজেই। চেকটার দিকে তাকালেন না তিনি।
দশ কি বলছেন? না বলে আর পারল না কিশোর। বিশ-তিরিশ গুণ এসে যাবে পয়লা দুএক বছরেই। তার পরেরগুলো তো ফাউ। অনন্তকাল ধরে পেতেই থাকবে।
তাড়াতাড়ি একটা দলিল বের করে বাড়িয়ে দিল নীরা। নিন, সই করে দিন।
চাচা, খবরদার! চিৎকার করে উঠল ইভা। সই দেবে না বলে দিলাম!
না দিয়ে কি করব, বল? ক্লান্ত, শুকনো কণ্ঠস্বর। তোরা চলে গেলি। বোটটা খুইয়ে এলাম। এসে দেখি স্টেট রিসর্ট ইন্সপেক্টর বসে আছে। হুমকি দিয়ে গেছে, আগামী কয়েক সপ্তার মধ্যে যদি প্রয়োজনীয় সংস্কার করাতে না পারি, মোটেলে তালা লাগিয়ে দেবে। বলে গেছে, নতুন আইন নাকি হয়েছে এ ব্যাপারে। কত আর লড়াই করব?
দিন, সইটা দিয়ে ফেলুন, নীরা বলল। স্টেট ইন্সপেক্টর অন্যের ঘাড়ে চাপুক।
আঙ্কেল ব্রুক, শান্তকণ্ঠে বলল কিশোর, সই করার আগে দলিলটা ভালমত পড়ে নিন। প্রয়োজন মনে করলে উকিলকে ডেকে আনুন।
এই ছেলে, তুমি থামো! ধমকে উঠল নীরা। বেশি ফড়ফড় কোরো না। আগে আমাদের বেচাকেনা শেষ হয়ে যাক, তারপর যত খুশি পরামর্শ দিয়ে। নইলে খারাপ হবে বলে দিচ্ছি।
পাত্তাই দিল না কিশোর। আঙ্কেল ব্রুক, একটা ফোন করব।
হাত নেড়ে পাশের ঘরটা দেখিয়ে দিলেন মিস্টার ব্রুক।