অফিস থেকে বেরিয়ে এল তিন গোয়েন্দা। সঙ্গে এল ইভা।
কিশোরের দিকে তাকাল মুসা। জিজ্ঞেস করল, এখন কি করব?
চলো, গাড়িটার খোঁজ-খবর করা যাক, জবাব দিল কিশোর। তারপর খেতে যাব কুপারস ডিনারে।
চলো, আমিও যাব তোমাদের সঙ্গে ইভা বলল।
খোঁজাখুঁজি করতে অনেক সময় গেল। লাঞ্চ করতে কুপারস ডিনারে যখন গেল ওরা, লাঞ্চের সময় পেরিয়ে গিয়ে প্রায় ডিনারের সময় হয়ে গেছে।
মজার ব্যাপার, কাকতালীয় ভাবে ওখানেই সবুজ গাড়িটার খোঁজ পেয়ে গেল ওরা। তবে ওটাই আসল গাড়িটা কিনা, নিশ্চিত হতে পারল না। যদিও শেষ তিনটে নম্বর মিলে যায়। গাড়িটার রঙ সবুজ।
গাড়িটা যে নিয়ে এসেছে, সে.ও কুপারস ডিনারে কফি খেতে ঢুকেছে। লোকটার কালো চুল। চামড়ার রঙ মোমের মত ফ্যাকাসে।
লোকটা বেরিয়ে গেলে ম্যাগিকে জিজ্ঞেস করে জানা গেল ওর নাম হারম্যান কেগ।
মাসখানেক হলো এসেছে, ম্যাগি জানাল। বিচিত্র স্বভাব। কারও সঙ্গে কথা বলে না। ঢোকে, চুপচাপ খেয়েদেয়ে বিল দিয়ে চলে যায়।
কোথায় থাকে, বলতে পারেন? জিজ্ঞেস করল কিশোর।
শুনেছি পেলিক্যান লেন-এ,ম্যাগি বলল।
আমিও তাই শুনেছি, পেছনের ঘর থেকে বেরিয়ে আসতে আসতে বলল কুপার। লোকটা চোর-ডাকাত হতে পারে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।
শুধু কি চোর, ম্যাগি বলল। শুনলাম, শিকাগো থেকে এসেছে সে। ওখানে মানুষ খুন করে পালিয়েছে।
হ্যাঁ, এ গল্প আমিও শুনেছি, কুপার বলল। কেউ কেউ বলে, আসলে লোকটা একটা বিদেশী স্পাই। বিশ্বাসঘাতকতার অপরাধে নিজের দেশের লোকেরা তাকে খুঁজে বেড়াচ্ছে। সেজন্যে গাল আইল্যান্ডে এসে লুকিয়ে আছে।
চোর-ডাকাত-ধুনী-স্পাই, যা-ই হোক, ইভা বলল, লোকটা যে খারাপ, দেখলেই বলে দেবে যে কেউ। আরও কিসের কিসের সঙ্গে জড়িত, কে জানে!
সেটা জানতে যাওয়ার জন্যে এখনও দিনের কিছু আলো অবশিষ্ট আছে, নাটকীয় ভঙ্গিতে বলল কিশোর।
চলো তাহলে, লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়াল মুসা, ফরেন স্পাই মিস্টার হারম্যান কেগ জিরো জিরো সেভেনের সঙ্গে দেখাটা সেরেই আসি।
.
০৭.
পেলিক্যান লেনে মোড় নেয়ার সময় গতি কমিয়ে ফেলল মুসা। অনেক জমিতে মলিন হয়ে আসা বিক্রয় হইবে সাইন দেখা গেল। একটা বাড়ি দেখা গেল, শূন্য, নির্জন, পরিত্যক্ত। গভীর মনোযোগে সব লক্ষ করছে কিশোর।
রাস্তার শেষ মাথা পর্যন্ত চলে যাও, মুসাকে বলল সে। হারম্যান কেগ কোন বাড়িতে আছে দেখে নেয়া যাক। তারপর খানিকটা সরে এসে রাস্তার দিকে মুখ করে গাড়ি পার্ক করো।
তাতে লাভটা কি? জিজ্ঞেস করল ইভা। অস্বস্তিতে ভরা কণ্ঠ।
মুচকি হাসল কিশোর। তাতে লাভটা হলো বিপদ দেখলে এক মুহূর্ত দেরি না করে পালাতে পারব।
একটা কটেজ টাইপের বাড়িতে থাকে কেগ। ছোট্ট একটা রঙচটা ডেকের মত বারান্দা বেরিয়ে আছে সামনের দরজার গোড়া থেকে। তার ওপরে চালা। একপাশে বড় বড় জানালা বাড়িটার, একেবারে মেঝে থেকে ছাতে গিয়ে ঠেকেছে। ফ্ল্যামিঙ্গো পাসের দিকে মুখ করা। ক্যাসটিলো কীর চমৎকার দৃশ্যাবলীর অনেক কিছুই দেখা যাবে ওখানে দাঁড়ালে। দেখার জন্যেই বানানো হয়েছে ওভাবে জানালাগুলো। দেয়ালের রঙ নষ্ট হয়ে গেছে। চলটা উঠে উঠে বিশ্রী ক্ষতের মত দেখাচ্ছে। চড়া রোদে খুব সহসাই রঙের ছিটেফোঁটাও আর থাকবে না বোঝ যায়। কেবল চারপাশ ঘিরে থাকা পামের সারির কোন পরিবর্তন নেই, বাড়িটার রুক্ষতার মাঝে মোলায়েম প্রলেপ যেন ওগুলো।
প্রবালে তৈরি, অযত্নে নোংরা হয়ে থাকা গাড়ি বারান্দায় গাড়িটা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মুসাকে বলল কিশোর, তোমার জিরো জিরো সেভেন মনে হয় ঘরেই আছে।
গাড়ি ঘুরিয়ে রেখে ইঞ্জিন বন্ধ করে দিল মুসা। দরজা খুলে লাফিয়ে নামল মাটিতে।
রবিন, কিশোর বলল, তুমি আর ইভা গাড়িতেই থাকো। পাহারা দাও। আমরা আসছি।
মুসাকে নিয়ে বাড়িটার দিকে রওনা হয়ে গেল সে। গাড়িটার কাছে দাঁড়িয়ে খানিকক্ষণ দেখল কিশোর। তারপর দরজার দিকে এগোল।
টোকা দেয়ার আগেই খুলে গেল দরজা। দরজায় দাঁড়িয়ে আছে কেগ। তারমানে নজর রাখছিল সে।
কি চাও? ভুরু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করল কেগ।
আপনার সঙ্গে কয়েকটা কথা ছিল, কিশোর বলল। যদি কিছু মনে না করেন।
আর যদি করি?
কেগের প্রশ্নের জবাব না দিয়ে কিশোর বলল, ভেতরে আসব?
আমার গাড়ির কাছে কি করছিলে তোমরা? কেন বিরক্ত করছ শুধু শুধু? কয়েক ইঞ্চি পিছিয়ে গেল কেগ। ওদের মুখের ওপর দরজাটা যাতে বন্ধ করে দিতে পারে।
বেশি সময় নেব না, অনুরোধ করল কিশোর।
তোমাদের সঙ্গে কথা বলার কোন দরকার আছে বলে মনে হয় না, গোঁয়ারের মত বলল কেগ। তোমাদেরকে আমি চিনিও না।
আমি কিশোর পাশা। ও আমার বন্ধু মুসা আমান।
কেগকে চুপ করে থাকতে দেখে আবার বলল কিশোর, আমাদের এক বন্ধু নিখোঁজ হয়ে গেছে এ দ্বীপ থেকে।
প্যান্টের পেছনের পকেট থেকে জিনা আর ইভার যুগল ফটোটা বের করে দেখাল সে।
গভীর মনোযোগে ছবিটা দেখল কেগ। তার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে কিশোর। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে লক্ষ করছে, কোন রকম প্রতিক্রিয়া হয় কিনা।
অবশেষে মুখ তুলে তাকাল কেগ। এদের কাউকেই দেখিনি আমি। চেনা তো দূরের কথা। দয়া করে এখন যাও তোমরা।
দেখুন, ব্যাপারটা সত্যি আমাদের জন্যে জরুরী, ছবিটা আবার পকেটে রেখে দিল কিশোর। তারপর আচমকা ঢিল ছুঁড়ে বসল অন্ধকারে। মুখ বন্ধ না রাখলে ক্ষতি করার হুমকি দিয়েছে আপনাকে ডগলাস কেইন, তাই না?