মেয়েটা সুন্দরী, নীরা বলল। হ্যাঁ, দেখেছি ওকে। সৈকতে ঘোরাফেরা করতে। দ্বিতীয় মেয়েটার সঙ্গে।
ওদের সঙ্গে আর কাউকে দেখেছেন?
উঁহু। ওদেরকেও দেখতাম না যদি তোক বেশি থাকত। এ সীজনে ট্যুরিস্ট খুব কম এসেছে। সৈকতে তোক প্রায় ছিলই না।
শুনলাম, টুরিস্ট আসা কমে যাওয়ার পেছনে নানা রকম কারণ রয়েছে। অ্যাক্সিডেন্ট, চুরি-ডাকাতি এ সব খুব বেড়ে গেছে দ্বীপে। ট্যুরিস্ট নেই, ব্যবসা নেই-ব্যবসায়ীরা বিপাকে পড়েছে। মিস্টার কুপারের মত।
ওই গাধাটার কথা আর বোলো না! রেগে উঠল নীরা। ও রকম একটা জায়গার জন্যে দশ লাখ ডলার হাতে পেয়ে যে ফিরিয়ে দেয় সে আস্ত বোকা!
কিংবা যে অত টাকা দেয়, খোঁচা মারতে ছাড়ল না কিশোর।
বরফের মত শীতল হয়ে গেল নীরার দৃষ্টি। এনডির দিকে তাকিয়ে কঠিন স্বরে বলল, বের করে দিয়ে এসো ওদের!
কিশোরকে বলার জন্যে তর সইছে না মুসার। ওদের বাইরে বের করে দিয়ে এনডি চলে যেতেই বলল, জানো, কি দেখে এলাম?
কি?
নানা রকমের ছবি চুম্বক দিয়ে আটকে রেফ্রিজারেটরের দরজা সাজিয়েছে।
ফ্রিজের দরজা ওরকম অনেকেই সাজায়, কিশোর বলল। তাতে অবাক হওয়ার কি আছে?
আছে। পারকার আঙ্কেলের ছবি যদি লাগানো থাকে ডগলাস কেইনের ফ্রিজের দরজায়, অবাক হবে না?
০৬.
তারমানে জিনাই ছবিটা লাগিয়েছে ফ্রিজের দরজায়, কিশোর বলল।
হ্যাঁ। আর কে লাগাবে? মুসা বলল।
অথচ কেইন আর তার কর্মচারীগুলো স্রেফ অস্বীকার করল, জিনাকে দেখেনি। ছবির দিকে না তাকিয়েই। কিন্তু সে ছাড়া ওই ফ্রিজে আর কেউ লাগায়নি তার বাবার ছবি। কোন এক সুযোগে লাগিয়ে দিয়েছে। আমাদের জন্যে সূত্র। সে জানে, ওর নিখোঁজ হওয়ার কথা শুনলে আসবই আমরা। ছবিটা ছাড়া আর কিছু আছে?
না। থাকলেও দেখিনি।
আবার ঢুকতে হবে ওই বাড়িতে, কিশোর বলল। জিনার নিরুদ্দেশের ব্যাপারে কেইনের হাত থেকে থাকলে ওই বাড়িতেই তাকে আটকে রেখেছে।
পার্টির সময় ঢুকে পড়লে কেমন হয়? সবাই ব্যস্ত থাকবে পাটি নিয়ে, আমাদের কেউ লক্ষ করবে না।
ঠিক বলেছ, পরামর্শটা পছন্দ হলো কিশোরের। এখন চলো, মোটেলে ফিরে যাই। রবিনের ফেরার অপেক্ষা করি।
গাড়িতে উঠে ফিরে চলল ওরা।
ওয়াইল্ড পাম হোটেলের সামনে এনে গাড়ি থামাল মুসা। ভ্যানটার কাছে। ফিরে এসেছে রবিন। ওদের অপেক্ষাতেই ছিল।
ব্রেক করেও সারতে পারল না মুসা, ভেতর থেকে দৌড়ে বেরিয়ে এল রবিন। ১২ বাই ১৪ ইঞ্চি একটা ছবি বাড়িয়ে দিয়ে বলল, দেখো তো, কেমন হলো?
গাড়ি থেকে নেমে এসে ছবিটা হাতে নিল কিশোর। একবার দেখেই বলে উঠল, ঠিকই বলেছিলাম। আইডেন্টিফিকেশন নম্বরই এটা।
বেশির ভাগ নম্বরই অস্পষ্ট, বোঝা যায় না, রবিন বলল। দোকানের লোকটা বলল, এরচেয়ে ভাল করার আর সাধ্য নেই তার।
ঠিকই বলেছে, একমত হলো কিশোর, এর চেয়ে ভাল আর কেউই করতে পারবে না। শেষ তিনটে সংখ্যা পড়া যাচ্ছে এখন-তিন, দুই, ছয়।
মুখ তুলে তাকাল সে। এখন আমাদের পরবর্তী কাজ রেনটাল কার এজেন্সিকে ফোন করা। শেষ তিনটা সংখ্যা মেলে, এ রকম কটা গাড়ি আছে তাদের, খোঁজ নেয়া।
মোটেলের অফিস ঘরে ঢুকল ওরা।
ওদের দেখেই বলে উঠলেন মিস্টার ব্রুক, আর বোধহয় টিকতে পারলাম! কাউন্টারের ওপর একটা কাগজ রেখে ওদের দিকে ঠেলে দিলেন তিনি। পড়ো এটা।
কি? তুলে নিল কিশোর। রেডস্টার বুকিংস। কিসের কোম্পানি?
পড়ো না, তাহলেই বুঝতে পারবে। ওরা আমার কাস্টোমার জোগাড় করে দেয়। কাস্টোমারের সঙ্গে মধ্যস্থতা করে মোটেলে বুকিঙের ব্যবস্থা করে। বিনিময়ে কমিশন পায়।
কাগজটা জোরে জোরে পড়ল কিশোর: আমরা আর ওয়াইল্ড পাম মোটেলের সঙ্গে চুক্তিতে থাকতে পারছি না।
কি কারণ? জানতে চাইল রবিন।
সেটা তো আমিও বুঝতে পারছি না, ক্ষোভের সঙ্গে বললেন মিস্টার ব্রুক। ফোন করেছিলাম। জবাব দিল না। আমার কাছে একটা টাকাও পাবে না ওরা। সব পাওনা সময় মত দিয়ে দিয়েছি। কোন অভিযোগ নেই আমার বিরুদ্ধে। মোট কথা, কাজ না করার কোন কারণই নেই।
তারমানে কেউ ওদের কাজ করতে মানা করেছে, কিশোর বলল।
মনে হয়। প্রচুর টাকা খাইয়েছে, কিংবা অন্য কোন ভাবে চাপ সৃষ্টি করেছে। আমার ডক ভেঙে দিয়েছে, গাছ চুরি করেছে, এখন আমার ব্যবসার ওপর হাত দিয়েছে। জায়গাটা বিক্রির জন্যে মোটা টাকা দেয়ার প্রস্তাবও দিয়েছিল। আমি শুনিনি। এটাই সম্ভবত আমার অপরাধ। মনে হচ্ছে এরপর আমার বোটটার ওপর নজর দেবে। তাড়াতাড়ি ওটা মেরিনায় সরিয়ে না ফেললে-যেখানে পাহারার ব্যবস্থা আছে, ওটাও খোয়াতে হবে আমাকে।
আপনার বন্ধু কুপার কিন্তু রুখে দাঁড়িয়েছেন, কিশোর বলল। আমার মনে হয় আপনারও এত সহজে হাল ছেড়ে দেয়া উচিত হবে না।
বলার চেয়ে করা কঠিন, তিক্তকণ্ঠে জবাব দিলেন মিস্টার ব্রুক।
আজকের দিনটা অন্তত চুপ করে থাকুন। কোন সিদ্ধান্ত নেবেন না। বেশি উত্তেজিত হয়ে পড়েছেন। শান্ত মাথায় চিন্তা করার মত অবস্থা নেই।
মিস্টার ব্রুককে চুপ করে থাকতে দেখে কিশোর বলল, আমরা আপনাকে সাহায্য করব। আমার দৃঢ় বিশ্বাস জিনার কিডন্যাপের সঙ্গেও এ সবের কোন সম্পর্ক আছে। একটা রহস্যের সমাধান হলে আরেকটারও হয়ে যাবে।
কিছু কিছু যুদ্ধ আছে, যেগুলো করে কোন লাভ হয় না, মিস্টার ব্রুক বললেন। যাকগে, আমি কোন কথা দিতে পারছি না তোমাদেরকে।