মুখ চুন করে আছে রবিন। বুঝতে পারছে, টেরিকে খোঁচাচ্ছে কিশোর! উস্কে দিচ্ছে। প্রকারান্তরে সে নিজেই প্রস্তাব দিচ্ছে, আরেকটা বাজি হোক।
দশ মিনিটও শেষ।
হাসি উধাও হয়ে গেছে টেরি-বাহিনীর।
টেরিকে বলল কিশোর, যাও, তোমাদের একশো ডলার মাফ করে দিলাম। নিতে লজ্জা লাগছে। এত সহজ বাজি। মনে হচ্ছে টাকাটা নিলে ঠকানো হবে তোমাদের।
তাই নাকি? অপমানে মুখ কালো হয়ে গেল টেরির। বেশ, মনে থাকল কথাটা। পরের বার যাতে ভয় পায়, এমন কিছুই নিয়ে আসব।
বাজির টাকাটাও বাড়াতে হবে তাহলে।
বাড়াব। যত বলল। এত সহজে ছাড়া পাবে না ও।
হ্যাঁ, সুর মেলাল টাকি, পরের বার ওকে মু-ম্মুসা বানিয়েই ছাড়ব।
দলবল নিয়ে বৃষ্টির মধ্যে বেরিয়ে গেল টেরি।
মুসার দিকে তাকিয়ে হাসল কিশোর, কত সহজেই না টাকা রোজগার করা যায়, তাই না?
আমি যাচ্ছি মারা, আর তুমি করো টাকার চিন্তা! ককিয়ে উঠল মুসা। জলদি খোলো আমার হাত! বয়ামে আটকে গেছে!
মাথা ঝাঁকাল কিশোর, কিছু যে একটা হয়েছে, বুঝতেই পারছিলাম।
তাহলে পাঁচ মিনিটের পরই বিদেয় করে দিতে পারতে ওদের, ঝঝাল কণ্ঠে বলল রবিন।
জবাব দিল না কিশোর। মুসাকে বলল, তোমার হয়েছে আমাজনের বাদরের অবস্থা। জানো না কি করে বাদর ধরে ওরা?
দোহাই তোমার, কিশোর, লেকচার থামাও! চিৎকার করে উঠল মুসা। আগে বয়ামটা খোলার ব্যবস্থা করো। নইলে আজ ঠিক কবরে যেতে হবে আমাকে।
খোলার ব্যবস্থাই তো করছি। না শুনলে বুঝবে কি করে কেন আটকে আছে হাতটা? আমাজনের শিকারিরা একটা বাঁশের মধ্যে ফল রেখে দেয়। বানরে হাতটা ঢোকায়। ফলটা তুলে নিয়ে যতই বের করতে চায় হাত আর বেরোয় না। ফলও ছাড়ে না, হাতও বেরোয় না। প্রথমে লোভ, তারপরে আতঙ্ক। মাথা যায় গরম হয়ে। কি করবে বুঝতে পারে না। শিকারি এসে ধরে ফেলে। কেন এমন হয় জানো? হাতটা ঢোকানোর সময় আঙুলগুলো সোজা থাকে, সরু থাকে, ফলটা তুলে নিলেই মুঠো বড় হয়ে যায়, বাঁশের ফাঁকে আটকে যায়…
হাতের দিকে তাকাল মুসা। এখনও মুঠো করে আছে। খুলে নিল আঙুলগুলো। সহজেই বেরিয়ে এল হাতটা। ধপাস করে বসে পড়ল সোফায়। আ-আ-আমি একটা গা-গাধা!
গা-গাধাই হও আর যা-ই হও, সত্যি তোমার সাহস আছে…
ইয়ার্কি মারছ! আমি এদিকে মরে যাচ্ছি….উহ! হাত ডলতে লাগল মুসা।
দেখি, কি হয়েছে? এগিয়ে এল কিশোর। হাতটা তুলে নিল। বাপরে, কি ফোলা ফুলেছে! আগে বের করা গেলে এটাও দেখাতাম টেরিদের-তোমার সাহসের আরও বড়াই করা যেত; এত যন্ত্রণার পরেও বের করনি বলে। যাকগে, যা গেছে গেছে…।
কিশোরের কাণ্ড দেখে রেগে গেল রবিন, তোমার হলো কি, কিশোর!…ফালতু কথা বাদ দিয়ে আগে দেখো কোন ক্রীমটিম আছে কিনা।
আছে, আছে। নিয়ে আসছি। দৌড়ে চলে গেল কিশোর।
মুসার দিকে তাকাল রবিন, বেশি ব্যথা করছে?
ব্যথার চেয়েও চুলকাচ্ছে বেশি।
হু, তারমানে বিষাক্ত না মাকড়সাগুলো।
তা তো নয়ই। আমাকে যেটা কামড়েছিল সেটার মত হলে কখন মরে যেতাম…
আঁউক! করে এক চিৎকার দিয়ে উঠল মুসা।
কি হলো! লাফ দিয়ে এগিয়ে এল রবিন।
জবাব না দিয়ে পাগলের মত জামার ভেতরে হাত ঢুকিয়ে হাতড়াতে শুরু করল মুসা। একটা মাকড়সা বের করে এনে ছুঁড়ে ফেলে দিল মেঝেতে। রাগের চোটে পা দিয়ে মাড়িয়ে ভর্তা করল। কার্পেট নষ্ট হওয়ার পরোয়া করল না। মেরিচাচীর বকা খাবে এখন কিশোর। দুঃখ অনেকটা কমল ওর।
ক্রীম নিয়ে ফিরে এল কিশোর। হাতটা লম্বা করো, মাখিয়ে দিই।
ওষুধের প্রভাবে চুলকানিটা কমল। তবে কামড়ের কারণে যে সব জায়গা ফুলে গেছে ওগুলো ফুলেই রইল।
মাকড়সাগুলো বিষাক্ত ছিল না, দেখেই চিনেছিলাম… কিশোর বলল। বাথরূমে গিয়ে ঠাণ্ডা পানি ঢালো, সেরে যাবে। আমি দেখি, ফ্রিজে কি কি পাওয়া যায়।
থাক, আর লোভ দেখাতে হবে না, উঠে দাঁড়াল মুসা। গরু মেরে জুতো দান!
বাথরূমে এসে ঢুকল মুসা। পানি ঢালায় সত্যি কাজ হলো। আয়নার দিকে তাকাল। কি রকম বিকৃত করে রেখেছে মুখটা। স্বাভাবিক করল। পরক্ষণে একটা কথা মনে পড়তে আপনাআপনি বিকৃত হয়ে গেল আবার। হুমকি দিয়ে গেছে টেরি, পরের বার আর এত সহজে ছাড়বে না। কি নিয়ে যে হাজির হবে, খোদাই জানে!
০৬.
সত্যি, মাকড়সার বয়ামে যে ভাবে হাতটা ঢুকিয়েছিলে তুমি, কিশোর বলল, আমি পারতাম না।
আর আমি হলে ঢোকাতামই না, রবিন বলল। ভীতু, কাপুরুষ, যা খুশি বলে বলুকগে আমাকে টেরি।
রোজ রোজ ওসব শোনার চেয়ে সাহস দেখিয়ে মুখটা বন্ধ করে দিলেই কি ভাল না?
ঘুষি মেরে ওর নাক ফাটিয়ে দিতাম আমি…
টেরি তো একলা নয়। কজনের ফাটাবে?
মাকড়সার বয়ামে হাত ঢোকানোর পরের আরেক শনিবার। কিশোরদের বাড়িতেই আড্ডা দিচ্ছে তিন গোয়েন্দা। সেদিনও কিশোরের চাচা-চাচী বাড়িতে নেই।
গত শনিবারের মত বৃষ্টি হচ্ছে না। আকাশ পরিষ্কার। তবে ঠাণ্ডা পড়েছে বেশ।
কিশোর আর রবিনের তর্কে যোগ দিতে পারল না মুসা। মানসিক অশান্তিতে রয়েছে সে। ভয়ানক দুশ্চিন্তা। পুরোটা সপ্তাহ ধরে তাকে ভয় দেখিয়েছে টেরি, কালটু-আমান, এবার দেখব কেমন তোমার সাহস। এমন প্ল্যান করেছি, তোতলাতেও ভুলে যাবে।
কি করতে যাচ্ছে, জানতে চেয়েছে মুসা।
মুচকে হেসেছে টেরি, ভঙ্গি করেছে সিনেমার দুষ্ট ভিলেনের মত। আগেই বলব কেন…