যত চেষ্টা সব বিফল। হাত আর বেরোল না।
দুই মিনিট, ঘোষণা করল টাকি।
কি করছ তুমি? ভুরু নাচাল টেরি। হাত নাড়াচ্ছ কেন ওরকম করে?
মাথা ঝাঁকাল মুসা।
দেখলে তো? হাসিমুখে টেরির দলের দিকে তাকাল কিশোর। মুসার সাহস দেখলে! পাগলের মত কামড়াচ্ছে, তা-ও হাত বের করছে না ও!
পারলে তো কখন বের করে ফেলতাম!-কাঁদতে ইচ্ছে করছে মুসার।
আবার বের করার চেষ্টা করল হাতটা। পারল না। আটকেছে ভালমতই।
রবিন শঙ্কিত হয়ে আছে, বিষের ক্রিয়ায় কখন চোখ উল্টে দিয়ে পড়ে যায় মুসা। ভয়ঙ্কর এ খেলা ভাল লাগছে না তার।
বুড়ো আঙুলে কামড় মারল একটা মাকড়সা। দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করল মুসা। চিৎকার করল না।
বের করা দরকার হাতটা! কি করা যায়। বাড়ি মেরে ভেঙে ফেলবে নাকি বয়ামটা?
কিশোর কোন সাহায্য করবে না, বুঝে গেছে। রবিনের দিকে তাকাল।
অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রবিন। একেবারে চুপ। বোবা হয়ে গেছে যেন। কি করবে সে-ও বুঝে উঠতে পারছে না। একটা ব্যাপার বুঝতে পারছে, টেরির কাজিন নিনা সত্যি কথাই বলেছে, যতই হেসে উড়িয়ে দেয়ার ভান করুক না কেন কিশোর। আজ যদি মুসা বাজিটা হারে, খেপানো শুরু হবে তাকে। গ্রীনহিলসের মত এখানেও জীবনটা নরক হয়ে যাবে ওর।
মুসার হাতের দুই পাশ দিয়েই এখন ওঠানামা করছে মাকড়সাগুলো। কব্জির কাছে ঘোরাফেরা করছে।
আবার তীক্ষ্ণ ব্যথা। আবার কামড়।
হাতটা বের করতে না পারলে নিস্তার নেই।
মাথা ঘুরছে মুসার। ঘরটা পাক খাচ্ছে চরকির মত। বেহুঁশ হয়ে যাবে না তো!
সুড়সুড়ি আর চুলকানি কোনমতে সহ্য করেছে। কিন্তু কামড়? এক কামড় খেয়েই তো মরতে বসেছিল। ভয়টা তখন থেকেই বেড়েছে। ভয় পাওয়াটা রোগ হয়ে গেছে। গ্রীনহিলসে নদীর ধারে বসে মাছ ধরছিল। গাছের ওপর থেকে টুপ করে ঘাড়ে পড়েছিল একটা মাকড়সা। কামড়ে দিল। থাবা দিয়ে ওটাকে ঘাড় থেকে ফেলে তীক্ষ্ণ ব্যথাটা ডলে সারানোর। চেষ্টা করেছিল সে। কিন্তু কয়েক মিনিটের মধ্যে তীব্র যন্ত্রণা শুরু হলো। মাথা ঘুরতে লাগল। এবং বেহুঁশ।
চব্বিশ ঘণ্টা পর হাসপাতালে জ্ঞান ফিরল। ডাক্তার বললেন, ভাগ্যিস ওটা ব্ল্যাক উইডো স্পাইডার ছিল না। তাহলে মরে যেত মুসা। তবে যেটাতে কামড়েছে সেটাও কম বিষাক্ত নয়। মুসার ভাগ্য ভাল, সময়মত চিকিৎসা পেয়েছে। নইলে বাঁচা কঠিন হয়ে যেত।
তিন দিন পর হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেল সে। কামড়ের জায়গাটায় টিপ দিলে ব্যথা লাগত। এক মাসেরও বেশি ছিল সেই ব্যথা। সবই জানে কিশোর। তারপরেও মাকড়সার বয়ামে হাত ঢোকাতে তাকে বাধ্য করল!
মাথা ঘুরছে। তারমানে এই মাকড়সাগুলোও বিষাক্ত!…যাচ্ছে…বেহুঁশ হয়ে যাচ্ছে ও…
পাঁচ মিনিট! ঘোরের মধ্যে শুনতে পেল টাকির ঘোষণা।
মাথা ঝাড়া দিল মুসা। পরিষ্কার করতে চাইল ভেতরটা।
গুঙিয়ে উঠল টেরি। মাথা নেড়ে তিক্তকণ্ঠে বলল, জিতেই গেল!
একে অন্যের দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করতে লাগল পাঁচজনেই। হতাশ।
দুই হাত মাথার ওপর তুলে নাচতে লাগল কিশোর। চিৎকার করে বলল, রবিন, আমার জিতে গেছি! জিতে গেছি! পেয়ে গেলাম পঞ্চাশটা ডলার! ভঙ্গি দেখে মনে হচ্ছে যেন টাকার জন্যেই এতসব করেছে সে।
মুসার দিকে তাকাল। হয়েছে, মুসা। সময় শেষ। হাত বের করে আনো।
ঢোক গিলল মুসা। গলাটা শুকিয়ে তুষের মত খসখসে হয়ে গেছে। হৃৎপিণ্ডটা এত জোরে লাফাচ্ছে, কথা সরছে না মুখ দিয়ে।
বয়ামের মধ্যে ওর হাত আটকে গেছে যখন বুঝতে পারবে, কি করবে টেরি? বলবে, না হয়নি, আবার নতুন করে শুরু করো?
জিভ দিয়ে শুকনো ঠোঁট চেটে মুসা বলল, না, বের করব না। আমার মজা লাগছে। আরও কিছুক্ষণ রাখব।
আঁ! হাঁ হয়ে গেল টেরি।
সব কটা চোখ এখন মুসার দিকে। সবগুলো চোখে বিস্ময়। ওর হাতের দিকে তাকাল রবিন। হাত বেয়ে উঠে আসছে মাকড়সাগুলো। বিড়বিড় করল, পাগল হয়ে গেল নাকি!
ঠিক, তা-ই হয়েছে! চিৎকার করে উঠল কডি। আতঙ্কে মাথা খারাপ হয়ে গেছে। তারমানে ভীতু…
কিশোর তার কথা কানেও তুলল না। দেখলে তো, টেরির পিঠে এত জোরে থাপ্পড় মারল সে, উপুড় হয়েই পড়ে যাচ্ছিল টেরি, আমাদের মুসা আমানের সাহস! পাঁচ মিনিট ওর জন্যে কিছু না। ও আরও রাখতে চায়। আরও পাঁচ মিনিট হয়ে যাক। কি বলো?
কিশোর, প্লীজ… বলতে গেল মুসা।
শুনল না কিশোর। দাও, টাকা দাও, টেরির দিকে হাত বাড়াল সে। পঞ্চাশ ডলার। কি ভেবে ফিরিয়ে আনল হাতটা। দাঁড়াও দাঁড়াও, সময়টা যেহেতু ডাবল করা হবে, টাকাটাও ডাবল…
কিশোর…কাতর অনুনয় ফুটল মুসার চোখে।
টাকার জন্যে ভাবছ তো? কিশোর বলল। কোন চিন্তা নেই। তোমার কাছে এখন না থাকলে আমি দিয়ে দেব। তবে আমারও দেয়া লাগবে না। জানি তো, তুমি হারবে না। টেরির দিকে তাকাল, কি, একশো ডলারের কথা শুনেই ঘেমে যাচ্ছ?
কি যে বলো! ঠিক আছে, দেবো একশো! রাজি হয়ে গেল টেরি।
মুসার হাতের ওপর হাঁটাহাঁটি করছে মাকড়সাগুলো। আবার কুট করে কামড়ে দিল একটা। ব্যথায় দপদপ করছে হাতটা।
মারা যাচ্ছি আমি!-হাল ছেড়ে দিল মুসা। আর বাঁচব না! আজ এই ঘরেই আমার মৃত্যু হবে! হায় খোদা, শেষ পর্যন্ত মাকড়সার কামড়ে মরণ লেখা ছিল আমার কপালে!
পরের বার অন্য কিছু ভেবে বার কোরো, টেরিকে উপদেশ দিচ্ছে কিশোর। তবে পারবে না। কোন কিছুকেই ভয় পায় না মুসা, হেসে রবিনের দিকে তাকাল। সমর্থনের আশায় বলল, তাই না, রবিন?