*
বার বার ঘড়ি দেখছে কিশোর। অনেকক্ষণ হয়ে গেছে, টেরিরা গেছে, এখনও আসার নাম নেই।
রবিন বলল, আসবে না নাকি?
না এলেই তো ভাল, মুসা বলল। আসছে না দেখে তুমিও মনে হয় হতাশ! তোমরা কি আমাকে পাগল পেয়েছ…
কথা শেষ হলো না মুসার। দরজার বাইরে থেকে ভেসে এল আতঙ্কিত চিৎকার, কিশোর, দরজাটা খোলো তো, ভাই! জলদি
লাফ দিয়ে উঠে ছুটে গেল কিশোর। হাতল ঘুরিয়ে হ্যাঁচকা টানে খুলে ফেলল দরজা।
দরজায় দাঁড়ানো টাকি। চিৎকার দিয়ে উঠল, জলদি এসো! সর্বনাশ হয়ে গেছে!
বেরিয়ে এল তিন গোয়েন্দা।
কডির পেছনে হ্যারল্ড আর নিটুকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখল মুসা। তারপর দেখতে পেল টেরিকে।
দুই হাত দিয়ে দুই চোখ চেপে ধরে রেখেছে টেরি। টকটকে লাল রক্ত গড়িয়ে নামছে গাল বেয়ে।
তাকে ধরে ধরে নিয়ে ঘরে ঢুকল নিটু আর হ্যারল্ড।
তোমার চাচা-চাচী বাড়ি আছে, কিশোর? চিৎকার করে বলল কডি। আমাদের সাহায্য দরকার!
না। কি হয়েছে? জানতে চাইল কিশোর।
একটা বড় বিষাক্ত সাপ নিয়ে এসেছিলাম আমরা, টাকি জানাল। ঝাপির ঢাকনা তুলতেই পালাল ওটা। টেরি ছুটল ওটার পেছনে। জঞ্জালের মধ্যে ঢুকে পড়ল সাপটা। দৌড়ে ধরতে গিয়ে হোঁচট খেয়ে লোহা-লক্কড়ের মধ্যে পড়ে দেখো কি অবস্থা হয়েছে ওর!
শিকের খোঁচা লেগে একটা চোখ গলে বেরিয়ে চলে এসেছে, আবার চিৎকার করে উঠল কডি।
আহ্! গুঙিয়ে উঠল টেরি।
ধীরে ধীরে ডান হাতটা নামাল চোখের ওপর থেকে। হাতের তালু মেলে দেখাল।
খুলে চলে আসা রক্তাক্ত বিশাল চোখটার দিকে হাঁ করে তাকিয়ে রইল তিন গোয়েন্দা।
আহ, আমাকে…আমাকে বাঁচাও, মুসা! গোঙাতে গোঙাতে বলল টেরি। তোমার অভিশাপেই অমন হয়েছে। প্লীজ, কিছু একটা করো!
ডাক্তার ডাকো, ডাক্তার! চিৎকার করে বলল কডি। অ্যামবুলেন্স!
আহ…বাচাও আমাকে…কি যন্ত্রণা…মাগোহ! ক্রমাগত গোঙাচ্ছে টেরি।
ভয়ঙ্কর দেখাচ্ছে খুলে আসা চোখটা। পেটের মধ্যে মোচড় দিচ্ছে মুসার। মুখে হাত চাপা দিল বমি ঠেকানোর জন্যে।
অস্ফুট শব্দ করে উঠল কিশোর।
রবিনও তাকাতে পারছে না চোখটার দিকে। মুসা তাকিয়ে আছে।
দাঁড়িয়ে আছো কেন তোমরা… ককাতে ককাতে টেরি বলল। কিছু একটা করো না!…উফ, কি ব্যথা!
চোখটার দিকে তাকিয়েই আছে মুসা।
ছুটে গেল হঠাৎ। টেরির হাত থেকে এক থাবায় চোখটা তুলে নিয়ে লজেন্সের মত ছুঁড়ে দিল মুখের মধ্যে। চুষতে শুরু করল।
.
০৭.
চিৎকার করে উঠল কিশোর।
ঘৃণায় মুখ বাঁকাল রবিন।
ভীষণ চমকে গিয়ে টাকিও চেঁচিয়ে উঠল। হাঁ হয়ে গেছে কডি আর বাকি তিনজন।
টেরির দিকে ফিরে চোখটা এ গাল-গাল করতে থাকল মুসা।
হাসতে শুরু করল টেরি। অন্য হাতটা নামিয়ে আনল চোখের ওপর থেকে।
ঠোঁট ফাঁক করে জিভের ডগায় চোখটা বসিয়ে সামনে ঠেলে দিল মুসা।
টাকি হাসল। হাসতে লাগল কডি, নিটু আর হ্যারল্ড।
মুখ থেকে চোখটা হাতের তালুতে ফেলে দিল মুসা। ছুঁড়ে দিল টেরির দিকে। দেখতে একেবারে আসল চোখের মত। প্ল্যাস্টিকের। মলের কার্ড স্টোর থেকে কিনেছ, তাই না? আজই দেখে এলাম, সকাল বেলা। হ্যালোউইন ডিসপ্লেতে সাজিয়ে রেখেছিল।
হ্যাঁ, ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলল টাকি।
কিশোরের দিকে তাকাল টেরি। পেপার টাওয়েল আছে? নকল রক্তটা মুখ থেকে মুছে ফেলতাম। ফোঁটা পড়ে কাপড় নষ্ট হচ্ছে।
কিশোর চলে গেল পেপার টাওয়েল আনতে।
ফিরে এল মিনিটখানেকের মধ্যে। বড় একটা কাগজের দলা তুলে দিল টেরির হাতে। দেখলে তো? আমরা সবাই ভয় পেয়ে গেলাম, কিন্তু চোখের পাপড়িটাও একবার কাঁপেনি মুসার। তা, এটাই তোমার দুই নম্বর চ্যালেঞ্জ নাকি? বললাম না, মুসাকে ভয় দেখাতে হলে সত্যিকারের ভয়াল জিনিস দরকার।…যাও, আজও নেব না টাকা। এত সহজ কাজের জন্যে টাকা নিতে নিজের কাছেই খারাপ লাগে।
চোখটা টোকা দিয়ে ছুঁড়ে ফেলল টেরি। কিশোরের কাঁধে বাড়ি খেয়ে কার্পেটে পড়ল সেটা।
এটা আমাদের চ্যালেঞ্জ নয়, শার্লক পাশা, টাকি বলল, সামান্য রসিকতা করলাম তোমাদের সঙ্গে। দেখলাম চেষ্টা করে মু-ম্মুসা রাক্ষসটার রাতের খাওয়াটা মাটি করতে পারি কিনা।
বরং খিদেটা আরও বাড়িয়ে দিলে ওর, টাকি মাছ! কিশোর বলল। টাকি মাছের ভর্তা খাওয়ার জন্যে প্রাণ এখন আনচান করতে থাকবে ওর।
ভাবছে মুসা, কি সাংঘাতিক বাঁচা বেঁচে গেছে। ভাগ্যিস মলে দেখে এসেছিল চোখটা। নইলে বমি করে ভাসিয়ে ফেলত এতক্ষণে।
মাটি থেকে চোখটা তুলে নিয়ে হ্যারল্ডের দিকে ছুঁড়ে মারল কডি। হ্যারল্ড আবার মারল নিটুকে। ঘরের মধ্যে চোখ ছোঁড়াছুঁড়ি খেলা শুরু করে দিল ওরা।
মুখ থেকে লাল রঙ মুছে ফেলল টেরি। কাগজটা দলা পাকিয়ে আচমকা টোকা দিয়ে ছুঁড়ে দিল মুসার মুখ লক্ষ্য করে।
বোধহয় সেদিকে নজর থাকাতেই চোখটা ধরতে মিস করুল কডি। একটা ল্যাম্পের ওপর গিয়ে পড়ল সেটা। নড়ে উঠল ল্যাম্পটা, কিন্তু পড়ল না।
কি করছ! ধমকে উঠল কিশোর। সামান্য ভদ্রতাটাও শেখনি নাকি? চাচা-চাচী এসে পড়বে এক্ষুণি। তোমাদের এ সব করতে দেখলে খুশি হবে না। টেরির দিকে ফিরল সে, তারমানে সাপ তুমি আননি?
মাথা নাড়ল টেরি। না, পরে ভেবে দেখলাম, ঠিকই বলেছ তুমি, সাপ জিনিসটা ভয়াল কিছু না। যে কেউ হাতে নিতে পারে।…ভাগ্যক্রমে আবারও জিতে গেলে তুমি হিরো মিয়া। মুসার কাঁধে চাপড় দিল সে। তবে তোমাকে আমি মু-ম্মুসা না বানিয়ে ছেড়েছি তো আমার নাম টেরিয়ার ডয়েল নয়।