.
১৪.
এরপর কি করবে ডাকাতেরা বুঝতে পারছে কিশোর। সাদা হাতিটা দেখেছে। এই এলাকা ছাড়ার আগে ওটা ধরার চেষ্টা করবে বজ্রমানব।
সময় কম, বলল সে। ইতিমধ্যেই ধরে ফেলেছে কিনা কে জানে! তবে বোধহয় পারেনি। কারণ সকালটা গেছে জিনিস গোছগাছ করতে। সুযোগ একটা পেলেও পেতে পারি।
হোয়াইট লেকের দিকে ফিরে চলল ওরা।
অন্যমনস্ক হয়ে হাঁটছে মুসা।
কি ব্যাপার? জিজ্ঞেস করল কিশোর। ভাবছ মনে হয় কিছু?
মুখ তুলে তাকাল মুসা। হ্যাঁ, ভাবছি। একটা চালাকি করলে কেমন হয়?
কি চালাকি?
বুদ্ধিটা খুলে বলল মুসা।
হাসল কিশোর। এতে কাজ হলেও হতে পারে। এখান থেকে ক্যাম্পে যাওয়ার নিশ্চয় অন্য কোন পথ আছে, শর্ট কাট। নইলে গাঁ থেকে হাতি ধরে আনতে পারত না ডাকাতেরা। একজন পুলিশকে সাথে নিয়ে যাও তুমি, রাস্তাটা খুঁজে বের করো। আমি অন্যদের নিয়ে ঘুরপথে যাই।
বেশ। এক ঘণ্টার মধ্যে খুদে দানবকে নিয়ে হোয়াইট লেকে পৌঁছে যাব।
শর্ট কাট রাস্তাটা খুঁজে বের করতে সময় লাগল না। সেটা ধরে একজন পুলিশের সঙ্গে ক্যাম্পে এসে পৌঁছল মুসা।
সাপ্লাই ট্রাক খুঁজে একটা স্প্রে গান বের করল। সাদা রঙ ভরল সেটাতে। অবাক হয়ে তার কাজ দেখছে গ্রামবাসীরা। কিন্তু ওদের কৌতূহল মেটানোর জন্যে কোন কথা বলল না সে।
ডাক দিল খুদে দানবকে।
আনন্দে শুড় তুলে চিৎকার করতে করতে দৌড়ে এল হাতির বাচ্চা।
তোর জন্যে একটা কাজ ঠিক করেছি, খুদে। আয় আমার সঙ্গে।
পুলিশ সঙ্গীকে নিয়ে আবার হোয়াইট লেকে ছুটল মুসা। বাচ্চাটা চলল পেছন পেছন। ..
পাহাড় বেয়ে ওঠা সহজ কাজ নয়, তার ওপর তাড়াহুড়ো করতে হচ্ছে, হাঁপিয়ে পড়ল দু-জনে। খুদে দানবের অবশ্য অতটা অসুবিধে হলো না। পাহাড়ে চড়ার অভ্যেস আছে তার।
হ্রদের তীরে পৌঁছে দেখল ওদের জন্যে অপেক্ষা করছে কিশোররা। অধৈর্য হয়ে উঠেছে পুলিশ। বার বার চলে যেতে চাইছে। ওদেরকে বোঝাতে বোঝাতে অস্থির হয়ে গেছে কিশোর।
হাতে স্প্রে গান আর সঙ্গে একটা বাচ্চা হাতিকে নিয়ে মুসাকে দেখে ভুরু কুঁচকে গেল ওদের। হাজারটা প্রশ্ন করতে লাগল।
তাদের প্রশ্নের জবাব দিল না মুসা। কুয়াশার মধ্যে সাদা হাতিটাকে খুঁজছে তার চোখ।
দেরি করে ফেললাম নাকি? আনমনে বিড়বিড় করল সে। ডাকাতেরা ধরে নিয়ে গেল না তো?
এখনও নেয়নি, কিশোর বলল। তবে খারাপ খবর আছে। একজন লোক পাঠিয়েছিলাম খবর নিতে। গোপনে দেখে এসেছে ডাকাতেরা অনেক লোক, যা আন্দাজ করেছিলাম তারচেয়ে অনেক বেশি। আমাদের ডবল। এদিকেই আসছে। সবার কাছে পিস্তল আছে। সেই তুলনায় আমাদের কাছে তেমন কোন অস্ত্র নেই। পুলিশের আছে বল্লম, কুলিদের কাছে ছুরি।
আগ্নেয়াস্ত্র না থাকারই কথা, শিকার করতে আসেনি ওরা। যদি কোন কারণে বিপদে পড়ে যায়, সে-জন্যে সতর্কতা হিসেবে একটা রাইফেল এনেছে, মুংগার হাতে আছে সেটা।
একসাথে দল বেঁধে এসে যদি ঝাঁপিয়ে পড়ে আমাদের ওপর, কিশোর বলছে, ওদের সঙ্গে পারব না আমরা। তবে তোমার রঙের বুদ্ধিটা কাজে লাগলে বোকা বনতেও পারে, তাতে ছড়িয়ে পড়বে ওরা। এক এক করে কাবু করব তখন।
তা তো হলো। কিন্তু আমাদের শ্বেতহস্তী কোথায়?
ওদিকে। ওই পাথরগুলোর কাছে।
তীক্ষ্ণদৃষ্টিতে কুয়াশার মধ্যে খুঁজতে লাগল মুসা। প্রথমে সাদা-কালো কিছু পাথর চোখে পড়ল। তারপর নড়ে উঠল সাদা একটা পাথর। তার পর পরই
জায়গা বদল করল কালো একটা পাথর, ঔড় তুলে চিৎকার করে উঠল।
পা টিপে টিপে কালো হাতিটার কাছে চলে এল কিশোর আর মুসা।
ওদের দেখেই সরে যেতে লাগল হাতিটা।
দৌড়ে ওটার কাছে চলে এল দু-জনে। প্রে গান তুলে সাদা রঙ ছিটাতে শুরু করল ওটার শরীরে।
কিছুক্ষণের মধ্যেই কালো হাতিটা পরিণত হলো সাদা হাতিতে। পুরো শরীর রঙ করার দরকার পড়েনি। কুয়াশার মধ্যে বোঝারই উপায় রইল না ওটা কালো হাতি।
মানুষের অদ্ভুত আচরণে ভড়কে গেছে হাতিটা। চিৎকার করছে সমানে।
করুক, কিশোর বলল। যত চেঁচাবে, তত তাড়াতাড়ি এটাকে খুঁজে পাবে ডাকাতেরা।
শোনা গেল ডাকাতদের হই-চই। ছুটে আসছে ওরা।
দ্রুত নির্দেশ দিল কিশোর। দশ-পনেরোজন কুলিকে পাঠাল রঙ করা হাতিটার পেছনে। বাকিরা সাদা হাতিটার কাছাকাছি হ্রদের তীরে পাথরের আড়ালে লুকিয়ে পড়ল।
মনে মনে প্রার্থনা করতে লাগল কিশোর-হে কুয়াশা, আরও, আরও বেশি করে পড়ো! ঘন হয়ে পড়ো! যাতে ডাকাতেরা হাতিটাকে চিনতে না পারে।
যেন তার প্রার্থনা সত্যি শুনতে পেল চাঁদের পাহাড়। সাহায্য করল ওদেরকে। হঠাৎ করে সাংঘাতিক ঘন হয়ে গেল কুয়াশা। দশ হাত দূরের জিনিসও চোখে পড়ে না।
কুয়াশার মধ্যে শোনা গেল চিৎকার, আরবিতে চেঁচিয়ে কথা বলছে ডাকাতেরা। কি ঘটছে আন্দাজ করতে পারছে কিশোর। রঙ করা হাতিটাকে তাড়া করেছে ওরা।
পরিকল্পনার একটা অংশ তো ঠিকঠাক মতই হচ্ছে। বাকিটা হবে তো? সাদা হাতিটা এখন ডাক ছাড়লেই হয়। কিশোর দেখেছে, এটা মাদী হাতি। কালোটা পুরুষ। ওটা বিপদে পড়েছে বুঝে ডাকাডাকি করবে তো? করলে কয়েকজন ডাকাত দেখতে আসতে পারে। তখন হামলা চালিয়ে কাবু করে ফেলা যাবে ওদের।
কিন্তু সাদা হাতিটা অতিমাত্রায় ভদ্র। চুপচাপ রইল। এত শোরগোলও যেন ওটার ধৈর্যের বাধ ভাঙাতে পারল না। তবে কি ব্যর্থ হতে যাচ্ছে মুসার পরিকল্পনা?