টিটুকে সঙ্গে আনেনি বলে আরেকবার ধন্যবাদ দিল নিজের ভাগ্যকে। হামাগুড়ি দিয়ে বেরিয়ে এল ঝোঁপ থেকে। মাথা উঁচু করল না। নেমে পড়ল রাস্তার পাশের খাদে। ওটা পার হয়ে মাঠে উঠল। ঝোঁপঝাড় আর গাছপালার অভাব নেই। ওগুলোর আড়ালে আড়ালে এখন অনেক দূর চলে যেতে পারবে ফগ আর ক্যামারের চোখ এড়িয়ে। তারপর ঘুরে ফাঁকে পার হয়ে গিয়ে আরেক জায়গা দিয়ে রাস্তায় উঠে পড়লেই হলো। নিরাপদে চলে যেতে পারবে বাড়িতে।
.
০৭.
পরদিন সকালে নাস্তা করতে বসেছে কিশোর, এই সময় বাজল টেলিফোন। মিসেস বারজি এসে বলল, তোমার ফোন। রবিন করেছে।
একা সামলাতে পারেন না মেরিচাচী, তাই ঘরের কাজে সাহায্য করার জন্যে মিসেস বারজিকে রেখেছেন। মেরিচাচীরা যখন এখানে থাকেন না, রকি বীচে চলে যান, তখন গ্রীনহিলসের তাদের বাড়ি দেখাশোনার ভারও মহিলার ওপর।
এত সকালে ফোন! লাফিয়ে উঠে দাঁড়াল কিশোর। নিশ্চয় নতুন কোন তথ্য কিংবা সূত্র পেয়েছে রবিন।
হালো?
কিশোর? ভেসে এল রবিনের উত্তেজিত গলা, হুবার ফিরে এসেছে। ফগ এখনও জানে না। তাই আগেভাগেই তোমাকে জানানো প্রয়োজন মনে করলাম।
তাই নাকি? খুব ভাল করেছ। কে বলল তোমাকে?
কিটি। সকালে বাগানে বেরিয়েছি। আমাকে দেখে এসে দেয়ালের ওপাশ থেকে কথা বলল। কাল রাতে নাকি পেঁচার ডাক শোনার জন্যে কান পেতে ছিল, এই সময় গেট খোলার আওয়াজ পায়।
কটার সময়?
রাত দুটো। চোর এসেছে ভেবে সঙ্গে সঙ্গে জানালায় গিয়ে দাঁড়ায়। দেখে চোর না, হবার। চাঁদের আলোয় চিনতে ভুল হয়নি ওর। বসার ঘরে ঢুকে আলো জ্বালে হুবার।
ওর পরনে কি ছিল?
ড্রেসিং-গাউনের মতই নাকি লেগেছে কিটির কাছে। হাতে কিছু ছিল না
তবে আগের রাতে বেরোনোর সময় একটা কিছু নিয়ে যে বেরিয়েছিল তে কোন সন্দেহ নেই। কাল রাতে চৌকিদার নিশ্চিত করেছে আমাকে এ ব্যাপারে।
তাহলে ওটা আর সঙ্গে আনেনি, রবিন বলল। কারণ হাতে যে কিছু ছিল না, এ ব্যাপারে কিটিও নিশ্চিত।
এক কাজ করো। মুসা আর ফারিহাকে ফোন করে তোমাদের বাড়িতে আসতে বলে দাও। আমি নাস্তা খেয়েই চলে আসছি। ঝামেলাও এ কেসের তদন্ত করছে। অনেকখানি এগিয়ে গেছে বলেই আমার ধারণা। আমরা যে পথে এগোচ্ছি, ঠিক সেই পথে সেও এগোচ্ছে…
কিশোর, তোর নাস্তা ঠাণ্ডা হয়ে গেল, ডাক দিলেন মেরিচাচী, জলদি আয়।
আসছি, মাউথপিসে হাতচাপা দিয়ে চিৎকার করে জবাব দিল সে। রাখি, রবিন। যা বললাম করো, রিসিভার নামিয়ে রাখতে গিয়ে মনে পড়ল কথাটা। ও হ্যাঁ, আরেকটা কথা, ফারিহাকে বোলো বেড়ালের বাচ্চাটাকে সঙ্গে নিয়ে আসতে।
খাবারগুলো কোনমতে নাকেমুখে ওঁজে, সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়ল কিশোর। ঝুড়িতে বসিয়ে নিয়েছে টিটুকে। টপ স্পীডে রওনা হলো রবিনদের বাড়িতে।
পথে ফগকে দেখতে পেল। আরেক রাস্তা দিয়ে আসছে। তবে অনেক দূরে রয়েছে এখনও। কিশোরকে দেখে জোরে জোরে হাত নেড়ে থামতে ইঙ্গিত করল। নিশ্চয় আগের রাতের কথা জিজ্ঞেস করতে চায়।
থামল না কিশোর, যদিও আগের রাতে কতক্ষণ পর্যন্ত তার অপেক্ষায় বসে ছিল ফগ জানার খুব আগ্রহ। রবিনদের বাড়িতে না গিয়ে আরেকদিকে সাইকেল চালিয়ে দিল সে।
কিশোরকে ধরার জন্যে গতি বাড়িয়ে দিল ফগ। গায়ের জোরে প্যাডেল চাপতে লাগল।
কিশোরও বাড়িয়ে দিল গতি। মোড় ঘুরে এসে লাফ দিয়ে সাইকেল থেকে নেমে ঠেলে নিয়ে ঢুকে পড়ল একটা নির্জন বাড়ির বাগানে। বেড়ার পাশে লুকিয়ে বসল।
ফগও মোড়ের এ পাশে বেরিয়ে এল। লাল টকটকে হয়ে গেছে মুখ। হা করে হাঁপাচ্ছে। উড়ে চলে গেল যেন বেড়ার ওপাশের রাস্তা দিয়ে। কিশোর চুপ থাকতে বলল টিটুকে।
ফগ চলে গেলে বেরিয়ে এল কিশোর। সাইকেলে চেপে উল্টোদিকে রওনা হলো।
ঘামতে ঘামতে এসে রবিনদের বাড়িতে ঢুকল। ওর ঘরে ঢুকে দেখল মুসা, ফারিহা, রবিন সবাই ওর জন্যে অপেক্ষা করে বসে আছে। ফারিহার কোলে বেড়ালছানাটা। ওটাকে আদর করছে সে।
দেরি হওয়ার কারণ জানতে চাইল রবিন।
ঝামেলা পিছে লেগেছিল, জানাল কিশোর। হুবারের খবর কি?
ওকে দেখা যাচ্ছে না, রবিন বলল। নিশ্চয় বাড়িতে লুকিয়ে বসে আছে। বেড়াল আনতে বলেছিলে কেন? ওটা ফেরত দেয়ার ছুতোয় ওর সঙ্গে দেখা করার মতলব নাকি?
পারলে মন্দ হত না।
ও কি তোমাকে দেখলে খুশি হবে ভেবেছ?
না হলে না থোক। এ সুযোগ আমি হাতছাড়া করতে চাই না। ঝামেলার আগেই গিয়ে ওর সঙ্গে আমার কথা বলা দরকার।
ফারিহার হাত থেকে বেড়ালছানাটা নিল কিশোর। অমনি খউ বউ করে উঠল টিটু। ধমক দিল কিশোর, চুপ কর, হিংসুটে কোথাকার!
বেরিয়ে এল সে। হুবারের গেটের কাছে দাঁড়িয়ে দ্বিধা করতে লাগল। কোনদিক দিয়ে ঢুকবে? সামনে, না পেছন? একেবারেই নির্জন লাগছে বাড়িটা। কেউ আছে বলে মনে হচ্ছে না। সে যে ফিরেছে এটা কি বুঝতে দিতে চাইছে না হুবার?
যা হোক কিছু একটা তাড়াতাড়ি করে ফেলা দরকার। এখানে দাঁড়িয়ে থাকাটা ঠিক হচ্ছে না। যে কোন সময় ফগ চলে আসতে পারে। পেছন দিয়ে যাওয়াই স্থির করল সে।
সামনের গেট দিয়ে ঢুকে সাবধানে পা টিপে টিপে ঘুরে বাড়ির পেছনে চলে এল। ভাঙা জানালাটার দিকে তাকাল। কাউকে চোখে পড়ল না। তারমানে লুকিয়ে থাকাই ঠিক করেছে হুবার। তাই যদি হয়ে থাকে সামনের গেটের বেল টিপলে দরজা খুলবে না। তাহলে কি করে ওকে বের করে আনবে?