এখন থেকে তাই করতে হবে। যাই, বুড়ো ক্যামারের সঙ্গেই কথা বলে আসি।
বুড়োকে কোথায় পাওয়া যাবে জেনে নিয়ে আবার রাস্তায় এসে উঠল কিশোর। কানে এল সাইকেলের বেলের পরিচিত শব্দ। রাস্তার মোড়ের লাইটপোস্টের আলোয় সাইকেল চালিয়ে আসতে দেখা গেল ফগর্যাম্পারকটকে।
চট করে একটা গাছের আড়ালে সরে গেল কিশোর। টিটুকে না এনে ভাল কাজ করেছে। ফগকে দেখলে আর ঠেকানো যেত না ওকে। চেঁচামেচি শুরু করে দিত। তাতে তদন্তের বারোটা বাজত।
কুঁড়ের কাছাকাছি গিয়ে সাইকেল থেকে নামল ফগ। এগিয়ে গেল চৌকিদারের সঙ্গে কথা বলার জন্যে।
গাছের আড়াল থেকে বেরিয়ে আবার হাঁটতে শুরু করল কিশোর।
আবার কতগুলো লাল আলো বুঝিয়ে দিল রাস্তার পাশে আরেকজন চৌকিদারের কুঁড়ে আছে। বুড়ো ক্যামারের আস্তানা। কাছেই নদী।
এই লোকও কিশোরকে চিনতে পারল না। নাম জিজ্ঞেস করল। বানিয়ে একটা নাম বলে দিল কিশোর। ওর ভয়, এখানেও এসে হাজির হতে পারে ফগ। বেরোনোর আর সময় পেল না ঝামেলাটা! ও যখন বেরিয়েছে একেবারে ঠিক তখনই! যাকগে, পুলিসের ডিউটি পুলিস করছে, সেটা তো আর ঠেকাতে পারবে না। বুড়ো ক্যামারকে তাড়াতাড়ি প্রশ্ন করে জবাবগুলো জেনে নিয়ে এখন যত জলদি কেটে পড়া যায়।
আগের চৌকিদারের মত এত হাসিখুশি নয় বুড়ো ক্যামার। কথাও তেমন বলতে চায় না।
বুড়োকে আগ্রহী করে তোলার চেষ্টা করল কিশোর, আমার আঙ্কেল পমও রাতে ঘুমের ঘোরে হাঁটতে বেরিয়ে যেখানে আগুন দেখে সেখানেই হাত সেঁকতে বসে যায়।
কিশোরের আঙ্কেল পমের প্রতিও কোন আগ্রহ দেখাল না বুড়ো। নিশির ডাক কিংবা ঘুমের ঘোরে হাঁটা, কোনটাতেই ওর আকর্ষণ নেই।
কাল রাতে নিশ্চয় ওকে দেখেছেন আপনি, বলল কিশোর। পাজামা পরা। চটি পায়ে দিয়েই বেরিয়ে গিয়েছিল বাড়ি থেকে। দেখুন দেখি কি কাও। এই শীতের মধ্যে ওই পোশাকে ঘর থেকে বেরোনো। পাগল আর কাকে বলে।
এতক্ষণে কিছুটা আগ্রহী মনে হলো বুড়োকে। মুখ খুলল, কাল রাতে দেখেছি আমি ওকে। পাজামা পরে দৌড়াচ্ছে। পাগলই মনে হয়েছিল আমার কাছে। এখন তো বুঝলাম ঠিকই অনুমান করেছি।
আমিও ঠিক অনুমানই করেছি–ভাবল কিশোর। নদীর দিকে দৌড়ে এসেছে। হুবার। পালাচ্ছিল। কিন্তু নদীতে কেন?
হাতে কিছু ছিল নাকি আমার আঙ্কেলের?
ছিল। জিনিসটা কি চিনতে পারিনি। নদীতে নেমেছিল মনে হলো। এই ঠাণ্ডার মধ্যে! আসলেই পাগল। তাহলে ওই লোক তোমার আঙ্কেল। প্রায়ই এ রকম বেরোয় নাকি?
বেরোয়। চাঁদনি রাতেই মাথা খারাপ হয় বেশি। এদিক দিয়ে আর ফিরতে দেখেননি নিশ্চয়?
না।
আবার প্রশ্ন করতে যাবে কিশোর, এই সময় কানে এল সাইকেলের বেলের শব্দ। এসে গেছে গগ। আর এখানে থাকা নিরাপদ নয়। বুড়োকে ধন্যবাদ দিয়ে উঠে এল তার কাছ থেকে। হঠাৎ ভাবনাটা এল মাথায়। ফগ কি বলে শোনা যাক না। দ্রুত আলোর কাছ থেকে সরে এসে ঝোঁপের আড়ালে লুকিয়ে পড়ল সে।
সাইকেল থেকে নামল ফল। কেমন আছো, ক্যামার?
ভাল, মিস্টার ফগারকট। এত রাতে এখানে?
একটা কেস পেয়েছি, ক্যামার। সেটারই তদন্ত করছি। কাল রাতে সন্দেহজনক কাউকে এদিক দিয়ে যেতে দেবে নাকি?
দেখেছি। নিশিতে পাওয়া এক পাগলকে। শীতের মধ্যে পাজামা আর চটি পরে দৌড়াচ্ছিল।
ঝামেলা! কি বলছ! নিশিতে পাওয়া পাগল, এ কথা কে বলল তোমাকে?
একটা ছেলে। ওর আঙ্কেল পমের নাকি ঘুমের ঘোরে হাঁটার রোগ আছে।
ছেলেটা দেখতে কেমন?
আলোর কাছ থেকে সরে বসেছিল। ভালমত দেখিনি চেহারাটা। তবে মনে হলো চুলগুলো কোকড়া।
কোঁকড়া! প্রায় চিৎকার করে উঠল ফগ। তারমানে ওই বিচ্ছু ছেলেটাও তদন্ত শুরু করে দিয়েছে। কঠোর কণ্ঠে বলল, শোনো, ক্যামার, শুনতে পাচ্ছো?
তা পাচ্ছি। আমি কানে খাটো হলে কি হবে, এতটা খাটো নই যে আপনার চিৎকার শুনতে পাব না।
ঝোঁপের মধ্যে বসে মুচকি হাসল কিশোর।
ঝামেলা! বেশি কথা বলো তুমি! ধমকে উঠল ফগ। যা বলি মন দিয়ে শোনো। কাল রাতের ওই পাগলটা আজও আবার এ পথে আসতে পারে। ওকে দেখলেই ধরে এনে আটকাবে। কথা আদায় করবে।
পাগল ধরতে গিয়ে শেষে মরব নাকি! মাথায় যদি বাড়ি মেরে বসে? আমি পারব না। আমার কাজ রাতে পাহারা দেয়া। দিচ্ছি, ব্যস। কাউকে আটক না করার জন্যে আমার বিরুদ্ধে রিপোর্ট করতে পারবেন না।
হাসি চাপতে কষ্ট হলো কিশোরের।
ঝামেলা! ছেলেটা কোনদিকে গেছে?
হাত তুলে দেখিয়ে দিল ক্যামার।
তারমানে বাড়ি যেতে হলে এ পথেই ফিরতে হবে কিশোর পাশাকে, বিড়বিড় করল ফগ। চিৎকার করে ক্যামারকে বলল, পাগল নাহয় নাই ধরলে। ছেলেটাকে তো ধরতে পারবে? এ পথ দিয়েই যাবে ও. তোমার সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় কাঁক করে কলার চেপে ধরে আটকাবে! তারপর যা করার আমি করব। আমি এই পথের মাথায়ই লুকিয়ে থাকল।
তাহলে আপনিই ধরছেন না কেন?
ঝামেলা! খালি তর্ক করে। আমি রছি না তার কারণ আমাকে দেখলেই ছোকরা দৌড়ে পালাবে। ধরার সুযোগ আর পাব না।
ধরে কি করবেন?
সেটা আমার ব্যাপার, ধমকে উঠল ফগ!
চুপ করে ভাবতে লাগল ক্যামার। ফগকে চটিয়ে দিলে এই এলাকায় চাকরি করা কঠিন হয়ে পড়বে। অগত্যা রাজি হলো তার কথায়।
আবাঁর সাইকেলে চাপল ফগ। রাস্তা ধরে কিছুটা দূরে গিয়ে একটা বড় গাছের আড়ালে লুকিয়ে পড়ল।
ঝোঁপের মধ্যে বসে সবই দেখতে পেল কিশোর। নীরবে খুব একচোট হেসে নিল। মনে মনে বলল, থাকো বসে ওখানে সারাত। বিচ্ছু ছেলেটাকে আর ধরতে হবে না।