ফারিহা বলে উঠল, এ তো পুতুলের দস্তানা! নাকি কোন বাচ্চার?
প্রথমে ভেবেছিলাম হুবার কোন শিশুকে কিডন্যাপ করে এনেছে। পরে বাদ দিয়েছি সম্ভাবনাটা। বাড়িতে এমন কিছু পেলাম না যাতে বোঝা যায় ওখানে কয়েকদিন একটা বাচ্চাকে রাখা হয়েছিল। শুধুই এই দস্তানাটা।
দস্তানাটা নেড়েচেড়ে দেখল রবিন। ঝকঝকে পরিষ্কার। বছর দুয়েকের কারও হাতে লাগবে বড়জোর। ফারিহা, তোমার বড় পুতুলটা কোথায়? ওই যে, পাঁচ বছরের জন্মদিনে পেয়েছিলে?
বাক্সে ভরে রেখে দিয়েছে, মুসা বলল। ও আর এখন পুতুল নিয়ে খেলে না।
আনব? উঠে দাঁড়াল ফারিহা।
নিয়ে এসো, কিশোর বলল। ফারিহা বেরিয়ে গেলে মুসা আর রবিনের দিকে ফিরল, চুরি করে ঢুকেছিল যে লোকটা তার পায়ের ছাপ একে এনেছ তোমরা। কিন্তু হুবারের ছাপ আনলে না কেন?
হাসল মুসা। গর্বিত ভঙ্গিতে বলল, এনেছি। তোমাকে দেখাতে ভুলে গিয়েছি। পকেট থেকে একটা কাগজ বের করে ভাঁজ খুলল। ছাপগুলো ছোট। কেমন চ্যাপ্টা আর অস্পষ্ট।
নীরবে ছবিটা দেখল কিশোর। বেডরূম স্লিপার পরেই পালিয়েছে হুবার। দেখো, গোড়ালি নেই। জুতো পরারই যখন সময় পায়নি, আমার ধারণা, কাপড় বদলানোরও সময় পায়নি। তারমানে অতিরিক্ত তাড়াহুড়া।
হ্যাঁ, ছাপ দেখে আমারও মনে হয়েছে স্লিপার, একমত হলো মুসা।
পুতুল নিয়ে ঢুকল ফারিহা। অনেক বড়।
ওটার হাতে দস্তানাটা পরানোর চেষ্টা করল কিশোর। আপনমনে বলল, যদি কোন শিশুরও হয়ে থাকে এটা, সে তোমার এই পুতুলটার চেয়ে বড় নয়, ফারিহা। বুঝতে পারছি না, এই দস্তানটা ফেলে গেল কিভাবে লোকটা? জিনিসটা আবার পকেটে রেখে দিল সে। থাকগে, পরে ভেবে দেখব।
কাজের মেয়েটাকে দিয়ে মুসা আর ফারিহাকে ডেকে পাঠালেন মুসার আম্মা। দুপুরের খাওয়ার সময় হয়েছে।
উঠে দাঁড়াল কিশোর। আমরাও বাড়ি যাই। রবিন, যাবে না?
মাথা ঝাঁকাল রবিন।
মুসা জানতে চাইল, আমাদের মীটিং আবার কখন বসছে?
বিকেল সাড়ে তিনটায়। অবশ্য যদি তোমার আম্মা তোমাদেরকে জোর করে শুইয়ে না রাখেন। হয়তো বলতে পারেন–সবে জ্বর থেকে উঠলে, রেস্ট নাও।
তোমাকেও তো তোমার চাচী আটকে রাখতে পারেন?
পারবে না। পালিয়ে আসব।
তাহলে আমরাও পালিয়ে আসব, বুক ফুলিয়ে বলল ফারিহা।
ওপর থেকে মিউ করে জানান দিল বেড়ালের বাচ্চাটা, আমার কথা ভুলে গেলে নাকি?
খউ খউ করে উঠল টিটু, যেন বলতে চাইল, আরে না, সবাই ভুললেও আমি ভুলিনি!
রবিন জিজ্ঞেস করল, এটার কি হবে?
কিছুই হবে না। আমি ওকে পুষব, ফারিহা বলল।
যদি মা আবার বকাবকি শুরু না করে, বলল মুসা।
মুসার আম্মা যে জন্তু-জানোয়ার দেখতে পানেন না, এ কথা সবাই জানে। রবিন বলল, করলে আর কি করব। আমি বাড়ি নিয়ে যাব। একটা বাচ্চাকে না খাইয়ে রেখে মেরে তো আর ফেলা যায় না।
.
০৪.
বিকেলে আবার মীটিং বসল মুসাদের ছাউনিতে। মুসার আম্মা কিংবা মেরিচাচী কেউই বাধা দেননি। ফলে বাধ্য হয়ে শুয়ে থাকা লাগেনি ওদের। বেঁচেছে।
আলোচনা শুরু করল কিশোর, লোকটা কিভাবে কাল হবারের বাড়িতে ঢুকেছিল, জানি আমরা। কিন্তু কি করে বেরিয়ে গিয়েছিল, জানি না। কেউ কিছু অনুমান করতে পারো?
পারি, জবাব দিল মুসা, সোজা সামনের দরজা খুলে বেরিয়ে চলে গেছে।
একটা জিনিস বোঝা যাচ্ছে, চাঁদনী রাতে প্রচুর ছোটাছুটি করেছে দুজন লোক। একজন বেরিয়েছে সামনে দিয়ে, আরেকজন পেছন দিয়ে দেয়াল টপকে। সামনের দরজা খোলা রেখে গেছে কোন একজন। বাতাসে খুলে আর বন্ধ হয়ে বাড়ি লেগে শব্দ হওয়ার যথেষ্ট সম্ভবনা আছে জেনেও সেই শব্দ কারও কানে যাওয়ার সভাবনাও বাদ দেয়া যায় না। এখন আমাদের খুঁজে বের করতে হবে, কার কানে গেছে সেই শব্দ।
কিভাবে? প্রশ্ন তুলল মুসা। জনে জনে গিয়ে তো আর জিজ্ঞেস করা যাবে না–এই মিয়া, তোমরা কি রাতের বেলা বিরাট পাওয়ালা এক লোক, আর নাইটগাউন পরা একজনকে লুকোচুরি খেলতে দেখেই? লোকে হাসবে না?
উপায় নেই, শান্তকণ্ঠে জবাব দিল কিশোর। জিজ্ঞেস না করলে জানব কি করে তবে তুমি যে ভাবে কলছ ওভাবে করব না। জিজ্ঞেসও করব বেছে বেছে।
কি জিজ্ঞেস করবে?
বলব আমার এক আঙ্কেল পম আছে, রাতের বেলা ঘুমের মধ্যে হাঁটে। কাল রাতে বেরিয়ে গিয়েছিল। কোথায় গিয়েছিল, বলতে পারছে না। কেউ কি অচেনা কোন লোককে রাস্তায় হাঁটতে দেখেছ? কিংবা কোথাও যেতে দেখেছ তাকে?
তোমার আবার আসে পম এল কোত্থেকে?
আছে। প্রয়োজনে শুধু পম নয়, আরেকজন আয়েস কমও এসে যাবে আমার। যার শখ, রাতের বেলা জোনাকি ধরা। কাল রাতে সেও বেরিয়েছিল জোনাকি ধরতে। তাকেও কেউ দেখেছে কিনা জিজ্ঞেস করব।
হাঁ হয়ে গেছে মুসা। তোমার এই আঙ্কেল পম আর বমের কথা তো কোনদিন আমাদের।
বলব কি? আমিও কি ছাই ওদের নাম শুনেছি নাকি? এইমাত্র বানিয়ে নিলাম। উদ্ভট কাণ্ডকারখানা করে তো দুজনেই। রাত দুপুরে যা খুশি করতে পারে। ওদের স্বভাবের কথা ব্যাখ্যা করে জিজ্ঞেস করলে লোকে আর হাসবে না।
হাসতে লাগল ফারিহা। নাম কি বানিয়েছ দুইধান, আহাহা! পম। বম। একজনকে নিশিতে পায়, আরেকজনের জোনাকি ধরার শখ। আসে কোধেকে তোমার মাথায় এ সব বুদ্ধি! হি-হি-হি-হি! হা-হা-হাহ!
মুসা আর রবিনও হাসছে।
মুসা বলল, তা তো বুঝলাম। কিন্তু জিজ্ঞেস করবে কাদের? সারা গায়েব সবাইকে করতে গেলে তো কয়েক মাস লেগে যাবে শুধু একটা প্রশ্নের জবাব। জানতেই।