ছাউনির ভেতরে একটা বাক্সে ছানাটাকে বসিয়ে দিল ফারিহা, এমন জায়গায় যেখানে টিটু ওর নাগাল পাবে না।
ছাউনিতে ঢুকে একটা বাক্স টেনে সবার মুখোমুখি বসল কিশোর। জিজ্ঞেস করল, বাড়ির চারপাশ ঘুরে দেখেছ তো সবাই?
মুসা, ফারিহা, রবিন, তিনজনেই মাথা ঝাঁকাল।
সূত্র পেয়েছ?
একপাতা কাগজ বের করল রবিন। বলল, খুব বেশি কিছু না। এই যে, রিপোর্ট।
কাগজটা দেখল না কিশোর। মুখেই বলো। শুনি।
বাড়ির চারপাশ ঘুরে দেখেছি আমরা সবাই। কোনদিক দিয়ে চোর এসেছে, দেখেছি। সামনের গেট দিয়ে ঢোকেনি। বাগানের পেছনের দেয়াল টপকে এসেছে।
কি করে বুঝলে?
জুতোর ছাপ পেয়েছি। গম্ভীর হয়ে বসে গেছে মাটিতে। ওপর থেকে লাফিয়ে পড়লেই কেবল ওরকম দাগ পড়ার কথা।
হতে পারে। বলে যাও।
ওই একই জুতোর ছাপ এগিয়ে গেছে একটা ঝোঁপের ধার পর্যন্ত। ভেতরে লুকিয়ে বসেছিল। বুঝলাম, কারণ অনেকগুলো ছাপ দেখেছি ওখানে। ওখানে বসে নিশ্চয় বাড়ির দিকে চোখ রেখেছিল লোকটা।
ছাপের নকশা একে এনেছ?
নিশ্চয়ই, মুসা বলল। পকেট থেকে একটা কাগজ বের করল। অনেক বড় পা লোকটার। এগারো নম্বর সাইজ। এই দেখো। নাইকি কোম্পানির জুতো। সোলের তলার নকশা আমার জুতোর মতই। একই জুতো। আমারটার সাইজ ওর। চেয়ে অনেক ছোট।
আর কি পেলে?
পকেট থেকে একটা সিগারেটের গোড়া বের করে দিল রবিন। এটা। মাটিতে পাতার নিচে পড়ে ছিল। সেজন্যেই ফগ দেখতে পায়নি।
ফগ ওখানে গিয়েছে কি করে জানলে?
অনেক জায়গায় ওর জুতোর ছাপ দেখেছি। সারা বাড়িতেই ঘুরেছে। ওর পা বিশাল। চোরটার চেয়েও বড়। দেখতে দেখতে মুখস্থ হয়ে গেছে। না চেনার কোন কারণ নেই। যাই হোক, আমার ধারণা, এ রকম সিগারেটের গোড়া আরও ছিল ওখানে। সে পেয়ে নিয়ে গেছে। এটা পাতার নিচে ছিল বলে দেখতে পায়নি।
তুমি পেলে কি করে?
আমি না। টিটু পেয়েছে। পাতার কাছে দাঁড়িয়ে গন্ধ শুঁকতে লাগল।
হাসল কিশোর। ও তো দেখি বড় গোয়েন্দা হয়ে গেছে।
নিজের নাম শুনে কান খাড়া করে ফেলেছে টিটু।
ওর দিকে তাকিয়ে কিশোর বলল, ওস্তাদ হয়ে যাচ্ছিস তুই।
প্রশংসা বুঝতে পারল টিটু। লেজ নাড়তে লাগল।
রবিনের দিকে ফিরল কিশোর, হ্যাঁ, আর কিছু?
ঝোঁপের ভেতর থেকে বেরিয়ে বাড়ির দিকে এগিয়েছে পায়ের ছাপ। ভাঙা জানালার নিচে গিয়ে থেমেছে। সুতরাং ওই জুতোর ছাপের মালিকই যে জানালা ভেঙে ঘরে ঢুকেছে, এটা অনুমান করতে অসুবিধে হয় না। একটা ইটের টুকরো পড়ে থাকতে দেখেছি জানালার নিচে। ওটা দিয়ে বাড়ি মেরেই কাঁচ ভেঙেছে সভবত।
ভাঙতে পারে, মাথা দোলাল কিশোর। এ ভাবে ভাঙলে শব্দ হবেই। কেউ শুনে থাকতে পারে। ঠিক আছে, খোঁজ নেয়া যাবে। বলো, আর কি পেয়েছ?
পায়ের ছাপ আরও আছে। তবে ওগুলো এমন সব জায়গায়, চোরের বলে মনে হলো না। সাইজেও মেলে না।
কোন্ কোন্ জায়গায়?
সামনের দরজা দিয়ে বেরিয়ে ফুলের বেড় মাড়িয়ে পেছন দিকে চলে গেছে। আর ফিরে আসেনি। সামনের গেটের দিকেও যায়নি।
তারমানে কোন কারণে পেছন দিয়ে বেরিয়ে গেছে। আর কেউ তো ও বাড়িতে থাকে না, সুতরাং এই ছাপগুলো কনি হুবারের হওয়ারই সম্ভাবনা।
ব্যস, এইই, কাগজটা ভাঁজ করে আবার পকেটে রেখে দিল রবিন।
.
০৩.
নিচের ঠোঁটে চিমটি কাটতে শুরু করল কিশোর। এর অর্থ গভীর ভাবনা চলেছে তার মগজে। সূত্রগুলো নিয়ে ভাবছে।
এই সময় ওপরের বাক্সে নড়েচড়ে উঠল বেড়ালছানাটা। সেদিকে তাকিয়ে ঘেউ ঘেউ শুরু করল টিটু।
বিরক্ত হয়ে ধমক লাগাল কিশোর, আহ্, বড় বেশি বিরক্ত করিস! ও তোর কি করল যে ওকে.ধমকাচ্ছিস?
চুপ হয়ে গেল টিটু।
এক এক করে সবার মুখের দিকে তাকাল কিশোর, যা বোঝা যাচ্ছে, ইবারের বাড়ি থেকে কেউ কোন জিনিস চুরি করে নিতে এসেছিল কাল রাতে।
কিন্তু নিজের বাড়ি থেকে হুবার ওভাবে পালাল কেন? মুসার প্রশ্ন।
তর্জনী তুলে নাড়ল কিশোর, তাড়াহুড়ো কোরো না। আসছি সেসব প্রশ্নে। হা, যা বলছিলাম। কাল রাতে একটা লোক হুবারের বাড়িতে ঢুকে ঝোঁপের মধ্যে লুকিয়ে রইল। ও ভেবেছিল ওই সময় হুবার ঘুমিয়ে আছে। অসচেতন অবস্থায় পেয়ে যাবে ওকে। ঘুম থেকে ডেকে তুলে পিস্তল দেখিয়ে হুমকি দেবে। আদায় করে নেবে। যেটা নিতে এসেছে।
কিন্তু কোন কারণে হুবারকে চমকে দিতে পারেনি লোকটা। হতে পারে কাঁচ ভাঙার শব্দে জেগে গিয়েছিল হুবার। বিপদের গন্ধ পেয়েছিল। সামনের দরজা দিয়ে বেরিয়ে পাল্লাটা খোলা রেখেই অন্ধকারে পাগলের মত ছুটে পালিয়েছে…
কাল রাতে চাঁদ ছিল, মনে করিয়ে দিল ফারিহা। অন্ধকার ছিল না।
তা ঠিক, থ্যাংক ইউ। জ্যোৎস্নার মধ্যে পাগলের মত ছুটে পালিয়েছে। সঙ্গে করে নিয়ে গেছে লোকটা যে জিনিস নিতে এসেছিল সেটা। তারপর লোকটা ঘরে ঢুকে যখন দেখল পাখি পালিয়েছে, জিনিসটার জন্যে সারা ঘর তছনছ করে ফেলল।
জিনিসটা কি?
এখনও জানি না। তবে খুব বড় কিংবা ভারী কিছু নয়। তাহলে নিয়ে ছুটে পালাতে পারত না।
কি জিনিস অনুমানও করতে পারো না? জিজ্ঞেস করল ফারিহা। কিশোরের বুদ্ধির ওপর ওর বড় বেশি আস্থা। তার ধারণা, ঠিকই অনুমান করে ফেলতে পারবে কিশোর।
ঘরে ঢুকে একটা জিনিস পেয়েছি, পকেট থেকে লাল দস্তানাটা বের করল কিশোর।
জিনিসটার দিকে তাকিয়ে রইল সবাই। টিটু এগিয়ে এসে শুঁকতে লাগল।