গভীর আগ্রহে শুনছে সবাই।
বলে চলেছেন ক্যাপ্টেনের সঙ্গী, তাকে সন্দেহ করে ফেলেছে অপরাধীরা, এটা টের পেয়ে গিয়ে লিস্টটা পুতুলের পোশাকের মধ্যে লুকিয়ে ফেলল ইউরিক্লেস। আমরা কোন সাহায্য করার আগেই একরাতে কিডন্যাপ হয়ে গেল সে। তার আগে কোনভাবে সহকারী হুবারকে নিশ্চয় পুতুলটার কথা জানিয়ে যেতে পেরেছিল। ও কিডন্যাপ হওয়ার পর পরই ওর ঘর থেকে পুতুলটা বের করে নিয়ে যায় হুবার। ওটার মধ্যে মূল্যবান কিছু লুকানো আছে, বোধহয় জানানো হয়েছিল ওকে। কিন্তু কি জিনিস, সেটা বলা হয়নি। গ্রীনহিলসে এসে নতুন বাসা ভাড়া করে পুতুলটা সহ হুবার লুকিয়ে রইল যাতে শত্রুরা ওকে খুঁজে না পায়। কিন্তু বাঁচতে পারল না। অত্যাচার করে নিশ্চয় ইউরিক্লেসের মুখ থেকে আদায় করে নিয়েছিল কিডন্যাপাররা লিস্টটা কোথায় লুকানো আছে। হুবারকে খুঁজে বের করল ওরা। রাতের বেলা হানা দিল ওর বাড়িতে।
কে এসেছে বুঝতে পারল হুবার। টের পেয়ে আর দেরি করল না। পুতুলের গা থেকে তাড়াতাড়ি পোশাকগুলো খুলে নিয়ে একটা ব্যাগে ভরে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে গেল বাড়ি থেকে। ওই তাড়াহুড়োর সময়ই লাল দস্তানাটা পড়ে গিয়েছিল, কিশোর যেটা খুঁজে পেয়েছে। তারপর ব্যাগটা নদীতে ফেলে দিয়ে এল হুবার। পুতুলটা লুকিয়েছে অন্য কোনখানে। হয়তো কোন খড়ের গাদায়। সেটা জরুরী নয়। কারণ লিস্টটা ওর মধ্যে নেই। ও এ সম্পর্কে কিছু জানে না, অস্বীকার করার জন্যেই সভবত এ কাজ করেছে। যাই হোক, ব্যাগটা পানিতে ফেলার কথা আজ নিয়ে জেনে গেছিল গালকাটা লোকটা। নদীতে খুঁজতে গিয়েছিল। কিন্তু ওর আগেই পেয়ে যায় ফগর্যাম্পারকট।
এবারও চুপ থাকতে পারল না ফারিহা, আরেক কাজ করলেই পারত হুবার। লিস্টটা বের করে রেখে দিয়ে কাপড়গুলো ফেলে দিতে পারত।
কাছে রাখার সাহস পায়নি হয়তো।
কিন্তু সে কি জানে না কাগজ পানিতে নষ্ট হয়ে যায়?
জানে। হয়তো এও জানে, কাগজটা এমনভাবেই রাখা আছে যাতে পানি লাগতে না পারে।
ক্যাপ্টেন বললেন, এখনই বোঝা যাবে সব। কিশোর, যাও তো, ওগুলো নিয়ে এসো।
চুপ করে রইল কিশোর। মুসা, রবিন আর ফারিহার মুখেও রা নেই।
ওদেরকে এ ভাবে চুপ হয়ে যেতে দেখে অবাক হলেন ক্যাপ্টেন। কি ব্যাপার?
ওগুলো আমার কাছে নেই, স্যার, মুখ কালো করে জবাব দিল কিশোর। ছাউনিতে রেখে বেরিয়েছিলাম, ফিরে এসে দেখি দরজা ভেঙে চুরি করে নিয়ে গেছে।
.
১৭.
মৃদু শিস দিয়ে উঠলেন ক্যাপ্টেন। সঙ্গীর দিকে তাকিয়ে বললেন, যাহ্, গেল আবার হাতছাড়া হয়ে! গালকাটা লোকটাই নাকি?
তাই হবে, আর কে? চিন্তিত ভঙ্গিতে বললেন সঙ্গী। ওই লিস্ট আমাদের হাতে পড়লে ওর এবং আরও অনেকের সর্বনাশ হয়ে যাবে। নেয়ার জন্যে মরিয়া হয়ে উঠেছিল তাই।
এবং শেষ পর্যন্ত নিয়ে ছাড়ল। কিশোরের দিকে তাকালেন ক্যাপ্টেন, সব নিয়ে গেছে?
হ্যাঁ। কেবল ছোট রুমালটা বাদে। ফারিহা ওটা পকেটে রেখে দিয়েছিল।
জিনিসগুলো কোথায় রেখেছিলে, চলো তো দেখি?
ঘর থেকে বেরিয়ে সবাই রওনা হলো ছাউনির দিকে। ফগও চলল। বিষণ্ণ হয়ে আছে খুব। যে রহস্যটা তার সমাধান করার কথা ছিল, করে ফেলেছিল প্রায়, নিজের বোকামির জন্যে সেটা হাত থেকে ফসকে গেল। এটা দুর্ভাগ্য ছাড়া আর কি।
ছাউনিতে ঢুকল সবাই। খালি জুতোর বাক্সটা দেখাল কিশোর। কিছু নেই ওর মধ্যে। আশেপাশে আরেকবার খুঁজে দেখল সবাই মিলে। কিছুই পাওয়া গেল না।
হঠাৎ মনে পড়ে গেল ফারিহার। চিৎকার করে উঠল, কিশোর, ভুলে গেছিলাম! টিটু একটা জুতো নিয়ে গিয়েছিল না?
উত্তেজিত হয়ে উঠল কিশোরও, আরে, তাই তো! ঘরের কোণের দিকে দৌড় দিল সে। বের করে আনল জুতোটা।
প্রায় ছোঁ মেরে ওর হাত থেকে ওটা নিয়ে নিলেন ক্যাপ্টেনের সঙ্গী। উল্টেপাল্টে দেখলেন। তারপর পকেট থেকে একটা ছোট ছুরি বের করে ধারাল ফলার মাথা দিয়ে খোঁচাতে শুরু করলেন জুতোর গোড়ালিতে।
খুব মজবুত করে বানানো। কেটে আলগা করতে সময় লাগল। ভেতরে একটা কুঠুরি তৈরি করা হয়েছে ইচ্ছে করে। তার মধ্যে ঠেসে ভরা হয়েছে একটা ভাঁজ করা কাগজ। মোম দিয়ে এমনভাবে বন্ধ করা হয়েছে কুঠুরির ফাঁকফোকর, পানি ঢুকতে পারেনি। বোঝা গেল জেনেশুনেই পানিতে ফেলেছিল হুবার।
চারপাশ থেকে ঘিরে আছে গোয়েন্দারা। সাবধানে ভাঁজ খুলে একনজর দেখেই পকেটে ভরে ফেললেন সেটা ক্যাপ্টেনের সঙ্গী। হাসিমুখে তাকালেন ক্যাপ্টেনের দিকে, হ্যাঁ, এটাই।
স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল গোয়েন্দারাও। ওদের মুখেও হাসি ফুটেছে। টিটুকে বার বার ধন্যবাদ দিতে লাগল। ওর শয়তানির যে এতটা সুফল মিলবে, কে বতে পেরেছিল।
কেবল ফগের মুখে হাসি নেই। সে আরও দমে গেছে।
ছাউনি থেকে দল বেঁধে আবার বেরিয়ে এল সবাই।
কিশোর জিজ্ঞেস করল ক্যাপ্টেনকে, এখন কি করবেন, স্যার?
প্রথমে হুবারের বাড়ি যাব। নিশ্চয় খুব আতঙ্কের মধ্যে কাটাচ্ছে বেচারা। এর ভয়টা দূর করব। তারপর খুঁজে বের করব গালকাটা লোকটাকে। আমার বিশ্বাস কাগজটা যেহেতু হাতে পায়নি, এখনও এই এলাকাতেই আছে সে। ধরতে তেমন অসুবিধে হবে না। ফগের দিকে তাকালেন তিনি, দায়িত্বটা তোমার ওপর দিয়ে সুবিধে হবে না। ভরসা করা যায় না। অফিসে গিয়েই লোক পাঠাচ্ছি। ওদেরকে সব রকমে সাহায্য করবে তুমি।