তাড়াতাড়ি ধরো না। কেউ চলে এলে মুশকিল হবে।
খুঁজে বের করতে হবে তো আগে ওটাকে। তারপর না ধরা।
হলঘরে ঢুকল কিশোর। ওলটপালট হয়ে আছে জিনিসপত্র। কোট, জুতো, প্যান্ট, শার্ট এ সব জিনিস আলমারি আর একটা চেস্ট অভ ড্রয়ার থেকে বের করে ছড়িয়ে ফেলা হয়েছে মেঝেতে। বাচ্চাটাকে দেখতে পেল না। কোথায় যে গিয়ে লুকিয়েছে ওটা কে জানে। ঘর থেকে ঘরে ঘুরতে লাগল সে।
নিচে তিনটে ঘর। ওপরে তিনটে। সব কটার জিনিসপত্রের একই অবস্থা। ফায়ারপ্লেসের নিচে কালি পড়ে থাকতে দেখে বোঝা গেল যে-জিনিস খুঁজতে এসেছিল লোকটা, ওটার জন্যে চিমনির মধ্যেও ঢুকেছিল।
একটা বেডরূম থেকে বেরিয়ে আসতেই লাল জিনিসটা চোখে পড়ল ওর। তুলে নিল। দস্তানা। ছোটদের।
বিড়বিড় করল আনমনে, এখানে ছোট বাচ্চা এল কোত্থেকে? হুবার থাকে তো একা।
সন্দেহ হলো–কোনও শিশুকে কিডন্যাপ করে এনে এখানে লুকিয়ে রাখেনি তো হুবার, যার খোঁজে এসেছিল লোকটা?
আপনমনেই মাথা নাড়ল আবার। না, যত ছোট শিশুই হোক, তাকে ড্রয়ার কিংবা চিমনিতে খুজবে না লোকটা।
ছোটদের আর কোন পোশাক আছে কিনা খুঁজতে লাগল কিশোর। কিছুই নেই। যা আছে সব বড়দের, পুরুষ মানুষের।
দস্তানাটা পকেটে রেখে দিল সে। সূত্র। এক জোড়ার একটা। আরেকটা গেল কোথায়?
ব্যাপারটা অদ্ভুত লাগল ওর কাছে। গতরাতে একটা শিশু ছিল এ বাড়িতে। মনে হয় তাড়াহুড়োয় কাপড় পরানো হয়েছে ওকে। একটা দস্তানা ভুলে পরানোই হয়নি। কিংবা ঠিকমত লাগেনি বলে খুলে পড়ে গেছে।
এই সময় কানে এল মুসার চাপা ডাক, কিশোর, জলদি বেরিয়ে এসো। ঝামেলা আসছে!
.
০২.
কিশোর নিচতলায় নামার আগেই কানে এল ফগ্যাম্পারকটের ধমক, ঝামেলা।
এই, তোমরা এখানে কি করছ? যাও, ভাগো!
তারপর শুরু হলো টিটুর চিৎকার, হই-চই। মুচকি হাসল কিশোর। নিশ্চয় এখন ফগের গোড়ালির পেছনে লেগেছে টিটু।
কোনদিক দিয়ে বেরোনো যায় ভাবল কিশোর।
বাড়ির পেছন দিকে চিৎকার শোনা যাচ্ছে ফগের, পুলিসের কাজে নাক গলাতে এসেছ তোমরা আইনের বিরোধিতা করছ। ভাল চাও তো যাও এখান থেকে। উফ, ঝামেলা!
কে বলল নাক গলাচ্ছি? প্রতিবাদ করল রবিন। পড়শীর বাড়িতে চোর ঢুকেছে শুনলাম, দেখতে এসেছি। এতে নাক গলানোর কি দেখলেন?
জবাব খুঁজে না পেয়ে খানিকক্ষণ আমতা আমতা করল ফগ। তারপর ধমকে উঠল, আবার কৈফিয়ত দেয়া হচ্ছে, না? জলদি সরাও ওই শয়তানটা কুত্তাটাকে! নইলে কিন্তু ভীষণ রেগে যাব বলে দিলাম!
নিশ্চয় গোড়ালি কামড়াতে চাইছে টিটু। ফগের চেহারা কি হয়েছে এখন কল্পনা করে হাসিতে পেট ফেটে যাবার অবস্থা হলো কিশোরের। অন্যদের সঙ্গে দাঁড়িয়ে দেখার সন্যে অস্থির হয়ে উঠল। আবার ভাবল, বেরোবে কোন পথে? ও যে ঘরে ঢুকেছে এটা দেখাতে চায় না ফগকে। তাহলে পেয়ে বসবে সে। নাক গলানোর ছুতোয় ওকে থানায় ধরে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ পাবে।
তোমাদের বড় বিচ্ছুটা কোথায়? আচমকা প্রশ্ন করল ফগ। এতক্ষণে খেয়াল করেছে কিশোর নেই ওখানে। নিজে নিজেই জবাব দিল, জ্বর নাকি? বাড়িতে পড়ে আছে? নিশ্চয় তাই। নইলে ওটারই তো আগে এসে এখানে হাজির হওয়ার কথা। সবার শেষে ধরুল ওকে, তাই না? ভাল হয়েছে। ওরকম শয়তানদের বিছানায় পড়ে থাকাই উচিত। আচ্ছা শিক্ষা হয় তাহলে। এখন যাও সবাই এখান থেকে। ভাগো। নইলে বাড়িতে গিয়ে নালিশ করব। ঝামেলা
বাড়িতে নালিশ করার হুমকিটা কাজে লাগল। মায়ের বকা খাওয়ার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে নেই মুসার। রবিনেরও না। মানে মানে সরে পড়ল তাই। কিশোরকে নিয়ে ভাবল না। ওর ব্যবস্থা ও করে নিতে পারবে। ফাঁকে ফাঁকি দিয়ে সহজেই বেরিয়ে আসতে পারবে ঘর থেকে।
কিন্তু অত সহজে পার পেল না কিশোর। সামনের দরজা খুলে বেরোতে যাবে, এই সময় তালা খোলার শব্দ শুনল। ফগ খুলছে। সরার সময় পেল না। পান্না খুলে গেল। সামনে কিশোরকে দেখে এমন ডলি করল ফগ মনে হলো মাথায় বাজ পড়েছে। হাঁ হয়ে গেল মুখ।
গুড মর্নিং, মিস্টার ফল, মসৃণ গলায় বলল কিশোর। আসুন, ঘরে আসুন।
আচমকা ফেটে পড়ল ফগ, ফগর্যাম্পারকট! তুমি এখানে কি করছ? ঝামেলা!
না, কোন ঝামেলা করছি না। বাইরে থেকে শুনলাম একটা বেড়ালছানা খিদেয় কাঁদছে। ওটাকে বাঁচানোর জন্যে ঢুকেছি।
অন্যের বাড়িতে লুকিয়ে ঢোকাটা বেআইনী। এর জন্যে আমি তোমাকে হাজতে ঢোকাতে পারি, জানো?
কিন্তু বেড়ালছানা…।
মিথ্যে বলে পার পাবে না! গর্জে উঠল ফগ। তোমাকে এবার বাগে পেয়েছি আমি, ছাড়ব না। বেড়াল-টেড়াল কিচ্ছু না। আসলে বাড়ি খালি পেয়ে চুরি করতে ঢুকেছিলে তুমি…
ওর কথা শেষ হওয়ার আগেই মিআউ করে কিশোরের পায়ের কাছে এসে দাঁড়াল ছানাটা। প্রথম দর্শনেই অপছন্দ করল ফগকে। কটমট করে ওর দিকে তাকিয়ে দাঁত খিঁচিয়ে হিসিয়ে উঠল।
হেসে বলল কিশোর, দেখলেন তো, মিথ্যে আমি বলিনি। বেড়ালটাই সাক্ষি।
বেড়ালটার দিকে মিটমিট করে তাকিয়ে রইল ফগ। ধমকে উঠল, যাও, এবারের মত ছেড়ে দিলাম। ভাগো ওটাকে নিয়ে। আমার জরুরী কাজ আছে এখানে। আর আসবে না, বলে দিচ্ছি।
বেড়ালের বাচ্চাটাকে নিয়ে সোজা মুসাদের বাড়ি রওনা হলো কিশোর। আশা করল, ওখানেই পাওয়া যাবে সবাইকে।
মুসাদের বাগানের ছাউনিতে অপেক্ষা করছে সবাই। কিশোরের সাড়া পেয়ে ছুটে বেরিয়ে এল টিটু। কোন কুকুরই বেড়াল দেখতে পারে না। টিটুও পারল না। তারস্বরে চিৎকার জুড়ে দিল। ধমক দিয়ে ওকে চুপ করাল কিশোর। বাচ্চাটাকে তুলে দিল ফারিহার হাতে।