ব্রাশ ডলা থামিয়ে মুখ ফিরিয়ে ওর দিকে তাকান ওয়ালি। হেসে জিজ্ঞেস করল, কি, স্কুল শুরু হয়নি এখনও?
না। আর অল্প কদিন বাকি।
এ সময়ে নদীর পাড়ে কি মনে করে?
একজন লোকের খবর নিতে এসেছি।
কে?
ওর চাচা, কিশোরকে দেখাল মুসা, আঙ্কেল পম। রাতে ঘুমের মধ্যেই উঠে হাঁটতে বেরিয়ে যান। কোথায় যান, কি করেন, কোন ঠিকঠিকানা থাকে না। পরশুদিন রাতেও নাকি বেরিয়েছিলেন। কিশোরদের কাজের মেয়েটা জানালার বাইরে তাকিয়েছিল, সাহেবের হাতে একটা জিনিস ছিল দেখেছে। কি জিনিস, চিনতে পারেনি। পরদিন সেকথা আর মনে করতে পারলেন না আঙ্কেল পম। আমাদের পাঠিয়েছেন খোঁজ নিতে। বলেছেন, জিনিসটা খুঁজে বের করে দিতে পারলে পুরস্কার দেবেন।
আগ্রহী মনে হলে ওয়ালিকে। কোথায় খুঁজতে হবে বলেছেন কিছু?
ছোট্ট একটা সূত্র দিতে পেরেছেন। রাতে বেরিয়ে যেদিকে গিয়েছিলেন তিনি, সেদিকে নাকি শুধু পানি আর পানি দেখেছেন। পরদিন তার স্যাণ্ডেল আর কাপড়েও কাদা পাওয়া গেছে।
অবাক হয়ে মুসার দিকে তাকিয়ে আছে কিশোর আর রবিন। বুঝতে পারছে না, কোনদিকে এগোচ্ছে সে।
পানিতে ফেলে দেননি তো? নিজেকেই যেন প্রশ্ন করল ওয়ালি।
সেটাই তো জানতে এলাম। নদীর পাড়ে থাকেন। রাতে এদিকে কেউ এলে হয়তো চোখে পড়তে পারে।
মুসার উদ্দেশ্য এতক্ষণে বুঝতে পারল কিশোর। হুবার জিনিসটা এনে নদীর পাড়ে কোথাও লুকিয়েছে কিনা, কিংবা পানিতে ফেলে দিয়েছে কিনা, ঘুরিয়ে ফিরিয়ে প্রশ্ন করে সেটা জানতে চাইছে। বাহু, মাথাটা তো ভালই খেলছে মুসার-মনে মনে প্রশংসা করল সে। যেহেতু নদীর দিকে এসেছিল হুর, তার স্লিপার আর পাজামায় কাদাও লেগে আছে, জিনিসটা নদীর পাড়েই কোথাও লুকিয়ে রেখে যাওয়াটা অসম্ভব নয়। কিংবা পানিতে ফেলে দিতে পারে।
আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে রইল কিশোর, ওয়ালি কি জবাব দেয় শোনার জন্যে।
মাথা নাড়ল ওয়ালি, না, রাতে কাউকে দেখিনি। তবে কাল রাতে চেঁচামেচি শুনে হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেল। শুনি, বুড়ো ক্যামারকে ধমকাচ্ছে ফগর্যাম্পারকট। কোন একটা ছেলেকে নাকি ধরতে চেয়েছে, ধরতে পারেনি বলেই রাগ।
পরস্পরের দিকে তাকাল গোয়েন্দারা। সবার মুখেই হাসি।
আর কি শুনলেন? জানতে চাইল মুসা।
না, আর কিছু না। কিছুক্ষণ পর বুড়োকে কড়া নজর রাখার হুকুম দিয়ে চলে গেল ফগ। আজ সকালে এসে হাজির আমার কাছে। নৌকাটা রেডি করে দিতে বলেছে। ভাড়া নেবে।
কেন?
কি জানি? বলল, দরকার, রেডি করে রাখতে। বা হাতে কানের গোড়া চুলকাল ওয়ালি। আজ যেন আমার নৌকা আর বোটকের দাম বেড়ে গেছে হঠাৎ করে।
কান খাড়া করে ফেল কিশোর, মানে?
আরও একজন এসেছিল নৌকা আর বোট-হুক চাইতে।
কে? হুবার নাকি? পানিতে ডুবিয়ে রাখা বস্তায় ভরা জিনিস বা ওই রকম কিছু খুঁজে বের করার জন্যে অনেক সময় বোট-হুক ব্যবহার করে লোকে। ফগ আর হুবার দুজনেই হুকটা চায়, তারমানে দুজনেই পানিতে খুঁজতে বেরোবে মনে হচ্ছে। ফগকে যতটা মাথামোটা ভাবে ওরা, আসলে ততটা নয়। সেও অনুমান করে বসে আছে নদীর দিকেই এসেছিল হুবার, হাতের জিনিসটা পানিতে ফেলে গেছে। একটা ব্যাপার নিশ্চিত হওয়া গেল–হুবার যে খড়ের গাদায় গিয়ে শুয়ে ছিল, এ কথা এখনও জানে না ফগ।
এই দ্বিতীয় লোকটা কে? জানতে চাইল কিশোর।
চিনি না, জনমেও দেখিনি, জবাব দিল ওয়ালি। বিশালদেহী এক লোক। গায়ের রঙ বাদামী। গালে একটা কাটা দাগ। একটা চোখেও গোলমাল আছে। দশটা ডলার বাড়িয়ে দিয়ে আমার সবচেয়ে লম্বা হুকটা ভাড়া নিতে চাইল। বোঝে ঠেলা, একটা বোট-হুঁকের জন্যে দশ ডলার দিতে চায়। লোকটাকে পাগল মনে হয়েছে আমার। নিজেকে পরিচয় দিল বিজ্ঞানী বলে। পানির নিচে জন্মে থাকা উদ্ভিদের নমুনা সংগ্রহ করবে।
তাই, নিচের ঠোঁটে চিমটি কাটা শুরু হয়ে গেছে কিশোরের। দ্বিতীয় লোকটা বার নয়। তাহলে কে? নিশ্চয় সেই লোকটা, যে বারো নম্বর জুতো পায়ে দেয়, চুরি করে সেদিন হুবারের বাড়িতে ঢুকেছিল যে।
ওয়ালিকে ধন্যবাদ দিয়ে সবাইকে নিয়ে ওখান থেকে সরে এল কিশোর।
টিটুর সঙ্গে আসতে চাইল টেরিয়ারটা। কয়েক মিনিটেই ভাল খাতির হয়ে গেছে। ডেকে ওকে ফিরিয়ে নিল ওয়ালি।
ওদের সাইকেলগুলোর কাছে এসে দাঁড়াল কিশোর। ফিরে তাকাল বন্ধুদের দিকে, জলজ উদ্ভিদের নমুনা সংগ্রহের গল্পটা বিশ্বাস করেছ?
এক বিন্দুও না, সঙ্গে সঙ্গে জবাব দিল রবিন। আমার মনে হয় সেই চোরটা। সেও সন্দেহ করেছে, হবার নদীর দিকে এসেছে, হাতের জিনিসটা পানিতে ফেলে দিয়েছে।
ফগেরও একই সন্দেহ।
আমি যাব না, বলে উঠল ফারিহা। ঝামেলা নদীতে নেমে কি করে না দেখে আমি যাব না এখান থেকে।
খানিক চিন্তা করে কিশোর বলল, এক কাজ করা যাক, তোমরা গিয়ে বসে থাকো ওয়ালির ছাউনিতে। ফগ এসে কি করে দেখবে। আমি থাকব না। আমাকে দেখলেই ভীষণ রেগে যাবে সে। কি করে বসে ঠিক নেই।
তুমি কোথায় যাবে? জানতে চাইল মুসা।
ওই দ্বিতীয় লোকটাকে খুঁজে বের করা যায় কিনা দেখি।
কিভাবে?
জবাব না দিয়ে কিশোর বলল, এসো, সাইকেলগুলো লুকিয়ে ফেলা যাক। ফগ যাতে এসেই দেখে না ফেলে।
ঝোঁপের মধ্যে সাইকেলগুলো লুকিয়ে আবার ছাউনির কাছে ফিরে এল ওরা।
মুখ তুলে তাকাল ওয়ালি, কি?
আমরা ঠিক করেছি, আজ নদীতে পিকনিক করব। আপনার ছোট নৌকাটা দরকার। ফগ কাজ সেরে চলে যাবার পরেই নাহয় নেব।