যাচ্ছি, স্যার, নিরীহ কণ্ঠে জবাব দিল কিশোর।
রাগ কমছে না হুবারের। লোকটা একটা আস্ত পাগল। কোন এক কিটি নাকি তাকে বলেছে আমার বাড়িতে কুকুর, শুয়োর আর বাচ্চা শিশুর কান্না শুনেছে। কেউ কিছু বলল আর অমনি বিশ্বাস করে বসতে হবে?
পকেট থেকে সিগারেট আর লাইটার বের করে সিগারেট ধরাল হবার।
পেট ফেটে হাসি আসছে কিশোরের। চারপাশে তাকাল। আর কিছু দেখার নেই এ বাড়িতে। নতুন কিছু আর বলারও নেই হুবারের। অতএব কেটে পড়া যায়।
সিঁড়ি বেয়ে নেমে এসে বলল, যাচ্ছি, স্যার। আপনি চলে এসেছেন, ছানাটার আর কোন অসুবিধে হবে না।
না, হবে না, কর্কশ কন্ঠে জবাব দিল হুবার। এখন যাও তো। আমাকে একটু শান্তিতে একা থাকতে দাও।
বেরিয়ে এল কিশোর। শিস দিতে দিতে এগোল গেটের দিকে। হুবারের বাড়িতে ঢুকে অনেক তথ্য পাওয়া গেছে। ফগের চেয়ে অনেক বেশি জানে এখন সে। ফগ ওবাড়িতে ঢুকতেও পারেনি, কাদামাখা স্লিপার আর পাজামাটাও দেখেনি।
গেটের বাইরে বেরোতেই পড়ল ফগের মুখোমুখি। অপেক্ষা করছিল সে। ঝামেলা!
কিসের ঝামেলা? যেন কিছুই বুঝতে পারছে না কিশোর।
লাল হয়ে গেল ফগের গাল। কটমট করে তাকাল কিশোরের দিকে। তাহলে তুমি ওই লোকটার বন্ধু। জবর খবর। তোমার মত পাজি ছেলে যে কোন বড় মানুষের বন্ধু হতে পারে, ভাবতেই অবাক লাগছে।
শুনে খুশি হলাম।
ঠাস করে চড় মারার ইচ্ছেটা অনেক কষ্টে রোধ করল ফগ। যতই চালাকি করো, বিচ্ছু, এবার আর পার পাবে না। তোমার নামেও রিপোর্ট লিখব আমি।
কেন, আমি আবার কি করলাম?
কি করেছ, থানায় গিয়ে রুলের শুতে খেলেই বুঝবে।
রিপোর্টটা কি লিখবেন সেটাই তো বুঝলাম না। কাল রাতে চৌকিদার কিছু বলেছে বুঝি আমার নামে? আমি তো বেআইনী কিছু করিনি। আমার আঙ্কেল পমকে খুঁজতে বেরিয়েছিলাম। সাবধান, তার সঙ্গে ঝামেলা করতে যাবেন না, মাথা খারাপ লোক..
ঝামেলা! আগে বাড়ল ফগ। কিশোরকে টেনে টেনে ছিঁড়তে পারলে এখন জালা কমত তার। জীবনে এত রাগা বোধহয় আর রাগেনি। বাধা না পেলে নিজেকে সামলাতে পারত না, হাত তুলে বসত। তারপর পড়ত আরও ঝামেলায়। টিটু ওকে বাঁচিয়ে দিল। বউ খউ করতে করতে ঘণ্টায় ষাট মাইল বেগে তেড়ে এল গোড়ালি কামড়ানোর জন্যে।
আর সবাই যেমন তেমন, টিটুকে পরোয়া না করে উপায় নেই। সোজা সাইকেলের দিকে দৌড় দিল ফগ। লাফ দিয়ে উঠে তাড়াহুড়ো করে প্যাডেল চাপতে গিয়ে একটা পা গেল ফসকে। ঋকি লাগল। আরেকটু হলে কাত হয়ে পড়ে যাচ্ছিল সে।
পেছন পেছন খানিকদূর দৌড়ে গেল টিটু। তারপর ফিরে এল।
হাসতে হাসতে পেট চেপে ধরে রাস্তার ওপরই গড়াগড়ি খেতে লাগল কিশোর।
হুবারের বাড়িতে গিয়ে কি করল কিশোর, জানার জন্যে অস্থির হয়ে আছে সবাই। তাই হাসিটা বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না।
হু, তোমার অনুমান দেখা যাচ্ছে সবই ঠিক, শোনার পর মাথা দুলিয়ে বলল ফারিহা। পাজামা আর স্লিপার পরেই পালিয়েছিল হুবার। কোথাও গিয়ে লুকিয়ে থেকেছিল।
এবং সঙ্গে করে কোন জিনিস নিয়ে গিয়েছিল, যোগ করল কিশোর। কিন্তু ফিরে যখন এলকিটির কথা অনুযায়ী–তার হাতে তখন আর কোন কিছু ছিল না। তারমানে জিনিসটা কোথাও লুকিয়ে রেখে এসেছে।
নিশ্চয় কোন খড়ের গাদায়, রবিন বলল। গ্রীনহিলসে ওগুলোর অভাব নেই। অসংখ্য খড়ের গাদা আর গোলাঘর আছে। কোনটাতে রাখল?
জানি না। প্রয়োজন হলে খুঁজে বের করতে হবে, জবাব দিল কিশোর। হাতে সময় আমাদের কম। স্কুল খুলতে আর বেশি বাকি নেই। তার আগেই কাজ সারতে হবে।
কিন্তু কি করে কাজটা সারবে, অর্থাৎ প্রয়োজন দেখা দিলে জিনিসটা খুঁজে বের করবে, কারও মাথায় ঢুকল না। গ্রীনহিলসের সমস্ত খড়ের গাদা আর গোলাঘরে জিনিসটা খুঁজে বেড়ানো খড়ের গাদায় সুচ খোঁজার চেয়ে কঠিন। তা ছাড়া ওরা জানেও না কি জিনিস হাতে করে নিয়ে গিয়েছিল হুবার।
যাই হোক, ওটা নিয়ে মাথা ঘামানোর আগে গত রাতে চৌকিদারদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে কি করে এসেছে কিশোর, ফগকে কিভাবে হেনস্তা করেছে, কলার সুযোগ পেল এতক্ষণে।
শুরু হলো আরেকবার হাসাহাসি।
হাসতে হাসতে ফারিহা বলল, কিশোর, তুমি না, সত্যি কি বলব..হি-হি-হি। ওই ফগটাও হলো একটা আস্ত বোকা, তোমার পিছে লাগতে যায়। নিশ্চয় কাল সারারাত নদীর ধারে ঠাণ্ডার মধ্যে বসে থেকেছে তোমাকে ধরার জন্যে।
হয়তো, কিশোরও হাসছে। বুড়ো ক্যামারকে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেই সব জানা যাবে।
চলো না গিয়ে জিজ্ঞেস করা যাক, প্রস্তাব দিল মুসা। হাতে তো কোন কাজ নেই আমাদের। সময় কাটবে।
রাজি হয়ে গেল সবাই।
.
১০.
নদীর পাড়ে গিয়ে দেখল বুজে ক্যামারের কুঁড়ের দরজা বন্ধ। সারারাত জেগে থেকে এখন নিচয় ঘুমাচ্ছে সে। এই কথাটা কারও মনে হয়নি আগে। ডাকাডাকি করাটাও উচিত হবে না এখন।
নিরাশ হয়ে ফিরে যাবার কথা ভাবছে, এই সময় মুসা দেখল নদীর পাড়ে একটা ছাউনির ধারে নৌকার তলায় আলকাতরা লাগাচ্ছে তার এক পরিচিত মাঝি। নাম ওয়ালি উইলবার্ন। পাশে বসে আছে ওর টেরিয়ার কুকুরটা।
কিশোরের দিকে তাকিয়ে বলল মুসা, দাড়াও, পাওয়া গেছে লোক। জিজ্ঞেস করে আসি।
সাইকেল রেখে মুসার পেছন পেছন চলল বাকি সবাই।
লোকটার কাছে গিয়ে দাঁড়াল মুসা।
টিটুকে দেখে এগিয়ে এল টেরিয়ার কুকুরটা।