- বইয়ের নামঃ পেঁচার ডাক
- লেখকের নামঃ রকিব হাসান
- সিরিজঃ তিন গোয়েন্দা সিরিজ
- প্রকাশনাঃ সেবা প্রকাশনী
- বিভাগসমূহঃ রোমাঞ্চকর গল্প
পেঁচার ডাক
০১.
রবিনকে খবরটা দিল দুধওয়ালা। কাল রাতে মিস্টার হুবারের বাড়িতে চোর ঢুকেছিল, শুনেছ খবরটা?
রবিনদের পাশের বাড়ির পরের বাড়িটা হপ্তা দুই আগে ভাড়া নিয়েছে কনি হুবার। একা থাকে।
কি কি নিয়েছে?
জানা যায়নি। মিস্টার হুবার বাড়ি নেই।
কে বলল আপনাকে? উত্তেজিত হয়ে উঠেছে রবিন। ওদের বাড়ির এত কাছে এমন একটা ঘটনা ঘটে গেল, আর সে কিছুই জানে না!
সকালে দুধ দিতে গিয়ে দেখি দরজা খোলা। একটা জানালা ভাঙা। মিস্টার হুবারের নাম ধরে ডাকাডাকি করলাম। বেরোলেন না। হলঘরের দরজা দিয়ে উঁকি দিলাম। ভেতরে জিনিসপত্র সব তছনছ হয়ে আছে। সন্দেহ হলো। ঘরে ঢুকে তক্ষুণি পুলিসকে ফোন করলাম।
ওহ! তারমানে ঝামেলা এসে দেখে চলে গেছে সব! ওদের আগেই ফারাম্পারকট এসে সূত্র খুঁজে নিয়ে চলে গেছে ভেবে হতাশ হয়ে পড়ল রবিন।
হ্যাঁ। নোটবুক বের করে কি কি সব টোকাটুকি করল। ভাবসাব দেখে মনে, হলো শার্লক হোমসের বাপ। আমাকে হুকুম দিল যাতে এ খবর কাউকে না বলি। ঝামেলাটা চিরকালই একটা হাঁদারাম। আমাকে ছাগল পেয়েছে আরকি। ওর কথায় আমি মুখ বন্ধ রাখি। আমার সব কাস্টোমারকে বলে দিয়েছি। যা পারে ও করুকগে এখন।
আপনি বাড়ির আশেপাশে কিছু দেখেছেন নাকি?
না। আশেপাশে ঘোরার সময়ই পাইনি। যখনই মনে হলো, বাড়িটাতে কিছু ঘটেছে, পুলিসকে ফোন করলাম। ভেতরে আমার মনে হয় কোন কিছুতে হাত দেয়া হয়নি। তোমরা তো গোয়েন্দাগিরি করো, নিশ্চয় বুঝতে পারছ আমি কিসের কথা বলছি।
মাথা ঝাঁকাল রবিন।
দুধওয়ালা চলে যাওয়ার পর আর দেরি করল না সে। সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়ল কিশোরকে খবরটা দেয়ার জন্যে।
কিশোরও আগ্রহী হয়ে উঠল। দুজনে মিলে রওনা হলো মুসাদের বাড়িতে। না না, তিনজনে মিলে। টিটুও চলল কিশোরের সাইকেলের ঝুড়িতে সওয়ার হয়ে। বাড়ি থেকে মুসা আর ফারিহাকে ডেকে নিয়ে চলে এল ওরা কনি হুবারের বাড়িতে।
হুবার ফেরেনি।
কিশোর বলল, সূত্র খোজো সবাই। পায়ের ছাপ, পোড়া সিগারেটের গোড়া, ড্রেসার, জানালার কাছে হাতের ছাপ-এ সব। যে যা পাবে নোটবুকে লিখে রাখবে।
কিশোরকে ঘুরে আরেকদিকে রওনা হতে দেখে ফারিহা জিজ্ঞেস করল, তুমি কোথায় যাচ্ছ?
জানালা দিয়ে ঘরের ভেতরটা দেখব।
জানালার পর্দা টানা। ভেতরে দেখা সম্ভব হলো না।
এক এক করে ছোট বাড়িটার জানালাগুলোয় উঁকি দিতে শুরু করল সে। কিন্তু একটা জানালা দিয়েও ভেতরে তাকানো গেল না।
সামনের দরজাটা বন্ধ। পেছনেরটাতেও তালা দেয়া।
পেছনের ভাঙা জানালাটার কাছে এসে দাঁড়াল সে। রান্নাঘরের জানালা। চোরই আসুক বা ডাকাত, এদিক দিয়েই ঢুকেছিল।
ভেতরে হাত ঢুকিয়ে পর্দাটা সরাল কিশোর। ঝড় বয়ে গেছে যেন ঘরের মধ্যে। ড্রেসার, টেবিলের প্রতিটি ড্রয়ার খুলে জিনিসপত্র মেঝেতে ছড়িয়ে ফেলা হয়েছে। আলমারিগুলো খোলা। ওগুলোর জিনিসও সব মাটিতে।
কিছু একটা খোঁজা হয়েছে।
কি জিনিস?
রান্নাঘর থেকে হঠাৎ একটা শব্দ শোনা গেল। বোঝা গেল না কিসের। কান পাতল সে। আবার শোনা গেল শব্দটা। ভাঙা জানালা দিয়ে ভেতরে তাকাল। দুটো জ্বলজ্বলে চোখ তাকিয়ে আছে ওর দিকে।
মিআও! মিআও! ডাকল চোখের মালিক।
বেড়াল, কিশোর বলল। কি ভয় পেয়েছে দেখো। পেটে মনে হচ্ছে খিদে। খাবার দেয়ার কেউ নেই। বেচারা!।
বাড়ির কোণ ঘুরে এগিয়ে এল অন্যরা। হাতে নোটবুক।
কিশোর বলল, ঘরের মধ্যে একটা বেড়ালের বাচ্চাকে ফেলে দরজা আটকে দিয়ে গেছে। কি করা যায়?
বের করে নিয়ে এসো, সঙ্গে সঙ্গে জবাব দিল ফারিহা।
কি করে? মুসার প্রশ্ন। সমস্ত দরজা-জানালা বন্ধ।
এই জানালাটা ভাঙা, দেখাল কিশোর। রুমাল জড়িয়ে নিলে ভাঙা কাঁচের ভেতর দিয়ে হাত ঢুকিয়ে দেয়া যাবে। ছিটকানি খুলতে পারলে বের করে আনা যাবে বাচ্চাটাকে। এ ভাবেই জানালা খুলেছে চোর।
খোলো না তাহলে, রবিন বলল। ঝামেলা মনে হয় এখন আর আসবে না।
পকেট থেকে বড় একটা সাদা রুমাল বের করল কিশোর। আঙুলে শক্ত করে জড়াল। ভাঙা কাঁচের ফোকর দিয়ে ঢুকিয়ে দিল হাতটা। ছিটকানিটা খুঁজে পেয়ে বলল, পেয়েছি।
শার্সি খোলা এখন অতি সহজ। খুলে ফেলল ওটা।
চৌকাঠে উঠে বসল সে।
সঙ্গে যাওয়ার জন্যে ঘেউ ঘেউ শুরু করল টিটু।
ধমক দিয়ে কিশোর বলল, এই, থামাও তো পাজিটাকে। ওর চিল্কারে কেউ কি হয়েছে দেখতে এলেই আর ঢুকতে পারব না।
তাড়াতাড়ি সবাই মিলে চেষ্টা চালিয়ে চুপ করাল টিটুকে।
কিশোর ঢুকে পড়ল ভেতরে। বেড়ালের বাচ্চাটা আলমারির একটা তাকে বসে আছে জড়সড় হয়ে। সে এগোতেই আরও ভয় পেয়ে গেল। কিন্তু খুব তাড়াতাড়িই ভয়টা কেটে গেল যখন একবাটি দুধ এনে ওর সামনে রাখল কিশোর। ক্ষুধার্ত ভঙ্গিতে লপাত লপাত করে জিভ দিয়ে চেটে শেষ করে ফেলল দুধটা। তারপর পায়ের কাছে এসে মিউ মিউ করতে লাগল। কিন্তু যেই সে ধরতে গেল, ঘাবড়ে গেল আবার। এক দৌড়ে পালাল। ছুটে চলে গেল দরজা দিয়ে হলঘরে।
আই, পুষি, পুষি। আয়, আয়, ডাকল কিশোর।
জানালা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে মুসা জিজ্ঞেস করল, কি হয়েছে?
পালিয়েছে।