বাবা, কড়া গলায় মুখ ঝামটা দিল এলিজা, এমন করে কথা বলো যেন আমার বয়েস সাত, আমি একটা খুকি। কোন খেলা খেলিনি। সত্যি কথাটা হলো, সকাল থেকে প্রায় দেখাই হয়নি কিশোরের সঙ্গে আমার।
তাই নাকি? চট করে কথাটা ধরলেন মিস্টার পারকার খুব খারাপ কথা। কিশোর, এলিজা আমাদের মেহমান, মনে রাখা উচিত তোমার।
আমিও আপনাদের মেহমান-বলতে গিয়েও ঝামেলা বাধার ভয়ে বলল না। কিশোর।
ব্যাপারটা বোধহয় আঁচ করতে পারলেন কেরিআন্টি; প্রসঙ্গটা চাপা দেয়ার জন্যে বললেন, খাওয়া শুরু করো। ঠাণ্ডা হয়ে গেলে আলুগুলো আর মচমচে থাকবে না।
প্লেটে একগাদা আলুভাজা তুলে নিলেন মিস্টার গ্রেগ। অন্য সব প্রসঙ্গ বাদ দিয়ে মুহূর্তে চলে এলেন গুবরেপোকা আর কনফারেন্সের কথায়। হাপ ছেড়ে বাঁচল কিশোর।
তোমাদের টাউন হলে মীটিংটা কেমন হবে ভাবছি, কিশোরের দিকে তাকিয়ে বললেন তিনি। কোন গণ্ডগোল না হলেই বাঁচি, অনেক নামী-দামী লোক আসবে।
কারা কারা? আগ্রহী হয়ে উঠল কিশোর।
এই তো, যেমন ধরো জেফরি জেফারসন। ক্রস-ভেইন থ্রী-স্পট ম্যাকলিং বীটল অভ পেরুভিয়ার বিশেষজ্ঞ তিনি। দারুণ লোক, সত্যি অসাধারণ। একবার পুরো সাতটা দিন জলাভূমিতে গুবরেপোকার গর্তের সামনে উপুড় হয়ে পড়ে ছিলেন।
মিস্টার পারকার বিজ্ঞানী হলেও এ সব পোকামাকড় পছন্দ করেন না। অসাধারণ বলছ কি হে? ও তো একটা পাগল।
কিছু মনে করলেন না মিস্টার গ্রেগ। সেটা তোমার মনে হচ্ছে। ওঁর মত। ভদ্রলোক কোটিতে একটা পাবে না। কিশোরের দিকে তাকালেন তিনি, তারপর রয়েছেন ডরোথি কফিন। বিশ্বাস করো আর না-ই করো, তিব্বতের স্কালকিং হাঞ্চ গুবরেপোকার চুরাশিট। ডিমে তা দিয়ে বাচ্চা ফুটিয়েছেন তিনি।
মুরগীর মত তা দিয়েছেন! কিশোর অবাক।
আরে না না, নিজে বসে কি আর দিয়েছেন? একটা গরম বাক্সে রেখে দিয়েছিলেন। কিন্তু বিস্ময়কর ব্যাপারটা হলো, চুরাশিটা ডিম থেকে বেরিয়েছিল চুরাশি দুগুণে একশো আটষট্টিটা ছানা-অথচ বেরোনোর কথা চুরাশিটা। অবাক লাগছে না?
অবাক লাগবে কেন? যমজ হয়েছে আরকি, জবাব দিল কিশোর।
এই আলোচনাটা বন্ধ করলে হয় না? পোকামাকড়ের কথা শুনতে ভাল লাগছে না কেরিআন্টির। খাবারের মধ্যেও পোকা দেখা শুরু করব আমি।
সরি, মিসেস পারকার, মিস্টার গ্রেগ বললেন।
কিন্তু কিশোরের আগ্রহ কমেনি। কনফারেন্সে আর কে কে আসবে, মিস্টার গ্রেগ?
অনেকেই আসবেন, মাই বয়, কজনের কথা বলব? কিশোরের আগ্রহ খুশি করল মিস্টার গ্রেগকে। আলতু-ফালতু লোক নয় কেউ, সবাই বিশেষজ্ঞ।
আপনি তাদের সবাইকে চেনেন?
না, সবাইকে চিনি না। লিস্ট দেখেছি। নামের পাশে যে সব ডিগ্রি লেখা রয়েছে, তাতে বোঝা যায় কেউ কাঁচা লোক নয়।
লিস্টটা কোথায়? দেখা যাবে?
দিচ্ছি। পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করে নামের তালিকাটা বের করলেন মিস্টার গ্রেগ। কনফারেন্সের ব্যাপারে খুব ইনটারেস্ট দেখা যাচ্ছে তোমার। যাবে নাকি? এমনিতে তো ঢুকতে দেবে না, তবে আমি সঙ্গে নিয়ে গেলে দেবে।
কিশোরের জন্যে এটা সুখবর। অবশ্যই যাব। লিস্টটা দেয়ার জন্যে ধন্যবাদ দিল মিস্টার গ্রেগকে। কনফারেন্স নিয়ে আলোচনা করে রীতিমত খাতির জমিয়ে ফেলল তার সঙ্গে। শেষে অদ্ভুত একটা প্রস্তাব দিয়ে বসল তাঁকে, আজ বিকেলে মেলায় যাচ্ছি আমরা, মিস্টার গ্রেগ। আপনার কনফারেন্স তো কাল। হাতে সময় থাকলে চলুন না আজ আমাদের সঙ্গে, রাউন্ডএবাউটে চড়তে কেমন লাগে দেখবেন।
কিশোরের মতলবটা বুঝতে পারছেন না কেরিআন্টি। মিস্টার গ্রেগের মত একটা বিরক্তিকর চরিত্রের সঙ্গে তার এই গায়ে পড়া খাতির অবাক করল তাঁকে।
অবাক কিশোরও হলো, যখন নির্দ্বিধায় জানিয়ে দিলেন মিস্টার গ্রেগ, আমার কোন আপত্তি নেই। সেই কবে ছেলেবেলায় চড়েছি, ভুলেই গেছি। আজ সেটা মনে করব।
.
০৭.
মেলার গেটে দাঁড়িয়ে অবাক হয়ে জিনা, মুসা, রবিন আর ডল দেখল মিস্টার গ্রেগকে সঙ্গে করে নিয়ে আসছে কিশোর। মহাবিরক্তি উৎপাদনের জন্যে এক এলিজাই যথেষ্ট, তার ওপর আবার তার বাবা! কিশোরের উদ্দেশ্যটা কি?
মস্ত বোকামি হয়ে গেছে! এক ফাঁকে চুপি চুপি রবিনকে জানাল কিশোর। আসলে একটু রসিকতা করতে চেয়েছিলাম, তার খেসারত দিতে হচ্ছে। আমি ভেবেছিলাম, আসতে বললে পারকার আঙ্কেলের মত হেসে উড়িয়ে দেবেন, কিন্তু চলে যে আসবেন কল্পনাই করিনি। তিনি না এলে তার মেয়েকেও কোন ফাঁকে ফেলে চলে আসতে পারতাম।
কিন্তু সেটা আর হলো না, হতাশ কণ্ঠে বলল রবিন। ভোগান্তির চূড়ান্ত হবে এখন আমাদের। মেলা দেখা খতম।
মেলা দেখতে কিন্তু আসিনি আমরা, মনে করিয়ে দিল কিশোর। এসেছি মেলা দেখার ছুতোয় লোকটাকে খুঁজতে।
সাধারণ মেলা। একটা রাউন্ডএবাউট, একসারি দোলনা, হুপলা স্টল, একটা শূটিং রেঞ্জ, কেক আর মিষ্টির দোকান, আর কিছু ছোটখাট সাইড-শোর ব্যবস্থা আছে। ওগুলোর আশপাশ দিয়ে ঘুরে বেড়াতে লাগল গোয়েন্দারা। হুপলা স্টলে ভাগ্য পরীক্ষা করে দেখল। এলিজার কথাই যেন ঠিক, কোন জিনিসেই রিঙ পরাতে পারল না ওরা।
বলেছিলাম না, সব ফাঁকিবাজি, রিঙগুলো ছোট করে বানানো, মাথা সোজা করে বলল এলিজা। খামাখা আর পয়সা নষ্ট কোরো না।
ওর কথা শুনে ফেলল স্টল-মালিকের ছেলেটা এগিয়ে এসে বলল, মারতে পারো না, সেটা বলো। কোন ফাঁকিবাজি নেই। এই দেখো। কোনটাতে ফেলব? আট-দশটা রিঙ নিয়ে একে একে ছুঁড়তে লাগল। সে। প্রতিটা রিঙই লক্ষ্যভেদ করল। এলিজার দিকে তাকিয়ে ভুরু নাচাল। কি বুঝলে? মারার কায়দা জানো না, তাই পারোনি।