- বইয়ের নামঃ মাছির সার্কাস
- লেখকের নামঃ রকিব হাসান
- সিরিজঃ তিন গোয়েন্দা সিরিজ
- প্রকাশনাঃ সেবা প্রকাশনী
- বিভাগসমূহঃ গোয়েন্দা কাহিনী
মাছির সার্কাস
০১.
টেলিফোনের শব্দ শুনে নাস্তার টেবিল থেকে উঠে গেলেন মিসেস বেকার। হলরূমে গিয়ে ফোন ধরে ফিরে এলেন। কিশোর ফোন করেছে। কথা বলতে চায়। যে কোন একজন উঠে যাও। ডল, তুমিই যাও, তোমার নাস্তা তো শেষ।
কিশোরের কথা শুনে প্রায় উড়ে চলে গেল উল! মুসা আর জিনার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসল রবিন। ওরাও হাসল।
কানে এল ডলের গলা, হালো, কিশোর! আমি ডল।
মিনিট তিনেক পর হাসিমুখে ফিরে এল সে। উৎসুক হয়ে তার মুখের দিকে হাকাল মুসা, জিনা, আর রবিন। কিন্তু চুপ করে রইল ডল। মা উঠে যাওয়ার মপেক্ষা করছে।
মিসেস বেকার ডলের মা।
জানালা দিয়ে উঁকি দিলেন তিনি। বাগান থেকে পানি ছিটানোর শব্দ আসছে। সেদিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার হলো? বাজারে যেতে হবে, মনে আছে?
আর একটু, এই হয়ে গেল, জবাব দিলেন মিস্টার বেকার। আরেক কাপ চা দিয়ে যাবে?
আনছি।
কাপে চা ঢেলে তাতে দুধ আর চিনি মিশিয়ে নিয়ে উঠে গেলেন মিসেস বেকার। তিনি বেরিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে একসঙ্গে কথা বলে উঠল রবিন আর জিনা, কি বলল!
বলল, সাড়ে দশটায় হলিডে ইনে দেখা করতে। মুসার হাতের দিকে তাকাল ডল।
পাউরুটিতে আধ ইঞ্চি পুরু করে মাখন মাখিয়েছে মুসা। তাতে এক ইঞ্চি পুরু করে লাগিয়েছে আপেলের জেলি। এক হাতে রুটির টুকরো, আরেক হাতে ইয়া বড় এক সাগর কলা নিয়ে একবার রুটিতে কামড় দিচ্ছে, আরেকবার কলায়; মুখ ভর্তি খাবার নিয়ে কথা বলতে পারছে না। কোনমতে গিলে নিয়ে বলল, খুব ভাল। তুমি আমাদের বিছানা-টিছানাগুলো গুছিয়ে ফেলো…
ইস্, পারব না, ঠোঁট গোল করে বলল ডল, যার যারটা সে সে গুছিয়ে নাওগে…আমিও যাব তোমাদের সঙ্গে। কিশোর ভাইয়া যখন জরুরী খবর দিয়েছে, নিশ্চয় কোন রহস্য। গোয়েন্দাগিরি করতে কেমন লাগে, আমিও দেখব।
বেশ, জিনা বলল, নিতে আপত্তি নেই। তবে দুতিন ঘণ্টার ছুটি আর বাড়ি থেকে বেরোনোর অনুমতিটা তোমাকেই নিতে হবে।
নেব, এককথায় রাজি হয়ে গেল ডল, যদিও জানে কাজটা কত কঠিন।
এবারের ছুটিটাই হয়েছে তিন গোয়েন্দা আর জিনার জন্যে ভোগান্তির। গোবেল বীচে বেড়াতে এসেও বাড়িতে টীচারের কাছে পড়তে বসতে হলো। কারণ পরীক্ষায় ভাল করতে পারেনি জিনা। মুসার রেজাল্ট তো আরও খারাপ। রবিনেরও ভাল না। বইয়ের পোকা হলেও পাঠ্যবইয়ে তার মনোযোগ নেই, পরীক্ষার আগেও রাত জেগে জেগে গল্পের বই পড়েছে। জিনার বাবা মিস্টার পারকার সাফ বলে দিয়েছিলেন, বাড়িতেও পড়তে হবে। সেই মত একজন শিক্ষকও রাখা হয়েছিল। কিন্তু শেষমেষ দেখা গেল সেই শিক্ষক আসলে একজন স্পাই। ফর্মুলা চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়ল তিন গোয়েন্দার হাতে। পুলিশে দেয়া হলো তাকে।
বিপদে পড়ে গেলেন মিস্টার পারকার। শিক্ষক তো একজন চাই। স্কুল এখনও অনেক দিন ছুটি। তবে বাড়িতে আর টীচার রাখার সাহস হলো না তার। আবার কোন শয়তান লোক কিভাবে এসে জ্বালাতন করে। শেষে তাঁরই নিগ্রো বন্ধু বেকার দম্পতির ওপর ছেলেমেয়েদের ভার দিয়ে নিশ্চিন্ত হলেন। বেকাররা নির্ঝঞ্ঝাট। একমাত্র মেয়েকে নিয়ে বেশ বড়সড় একটা বাড়িতে থাকেন।
মিস্টার বেকার গোবেল বীচ স্কুলের শিক্ষক। মিস্টার পারকারের অনুরোধে। পড়াতে রাজি হলেন। তবে তিনি ছাত্রর বাড়ি যেতে পারবেন না, ছাত্রকেই তার বাড়িতে আসতে হবে। বাড়িতে জায়গা আছে, যদি ছাত্ররা থাকতে রাজি হয়, তাহলে আরও ভাল।
মিস্টার পারকার তো হাতে চাঁদ পেলেন। সঙ্গে সঙ্গে মুসা, রবিন আর জিনাকে পাঠিয়ে দিলেন মিস্টার বেকারের বাড়িতে। খাওয়ার খরচ তিনিই দেবেন। কিশোরের যেহেতু রেজাল্ট খুব ভাল, তার আর টীচারের বাড়িতে থাকতে যাওয়া লাগল না। সে রয়ে গেল জিনাদের বাড়িতে। সে আর জিনার কুকুর রাফিয়ান।
বড়ই বেকায়দায় পড়ে গেছে তিন গোয়েন্দা আর জিনা। স্কুলের হোস্টেল খোলা থাকলে কোনমতেই থাকত না কিশোর, ব্যাগট্যাগ গুছিয়ে সোজা ওখানে চলে যেত। মুসা আর রবিনের বাবা-মাও বাড়িতে নেই, ছুটি কাটাতে রকি বীচ থেকে বহুদূরে চলে গেছেন। কিশোরদের স্যালভিজ ইয়ার্ডে রাশেদ পাশা একা। ডনকে নিয়ে মেরিচাচী বেড়াতে চলে গেছেন তার বোনের বাড়িতে, অর্থাৎ উনদের বাড়িতে। কাজেই নানা রকম শর্ত আর বাধ্যবাধকতা সহ্য করে গোবেল বীচে পড়ে থাকতে হচ্ছে ওদের।
তবে একেবারেই যে নিরানন্দ কাটছে এখানে, তা বলা যাবে না। এই তো, এসেই তো কয়েক দিনের মধ্যেই একটা রহস্যের সমাধান করে ফেলল। আরও যে করতে পারবে না, সেটা কে বলতে পারে?
যাই হোক, বাইরে বেরোনোর অনুমতি নিয়ে ফেলল উল। পারত না, যদি বাবার বাজারে না যাওয়া লাগত। মিস্টার বেকার বাজারে যাচ্ছেন বলেই অত সহজে দুটি দিলেন।
তর সইল না আর গোয়েন্দাদের। দশটা বাজতেই বেরিয়ে পড়ল সাইকেল নিয়ে। ওদের প্রিয় জায়গা, গায়ের ছোট্ট ডেইরি শপটায় রওনা হলো। আইসক্রীম থেকে শুরু করে রুটি-বিস্কুট-কেক সব পাওয়া যায় ওখানে। এককালে সরাইখানাই ছিল ওটা, নাম ছিল হলিডে ইন, এখন সরাইখানা বন্ধ-টাকার অভাবে চালু করতে পারছে না মালিক, তবে ডেইরি শপটা বন্ধ করেনি।