এ খবরটা আগে জানলে, ডল বলল, মিস্টার বেবিকেই সন্দেহ করতাম আমি। লোকটাকে দেখে মোটেও বিজ্ঞানী মনে হয় না। হ্যাট, মাফলার, ভারী কোট, দাড়ি, গোঁফ-একেবারে জেলপালানো ছদ্মবেশী কয়েদী।
ভাল বলেছ তো! মুসা বলল। কিশোরের দিকে তাকাল, লোকটা লম্বা কতখানি?
মিস্টার বেবির সমানই হবে, হেসে বলল কিশোর।
এ কথা এলিজাকে বলতে যেয়ো না, রবিন বলল। বলোনি তো?
না, মাথা নাড়ল কিশোর, বললাম না, রহস্যটা কি জানার জন্যে চাপাচাপি করছিল সে, সেটাই বলিনি। শুধু টেলিফোনে তোমার সঙ্গে কথা বলার সময় যেটুকু শুনেছে।
এলিজার ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে তোমার। মেয়েটার আড়িপাতারও বদস্বভাব আছে। যাকগে, কিশোর, রহস্যের তদন্তটা কি করে শুরু করব?
তোমরা তো আর তেমন কিছু করতে পারবে না, বেরোতেই পারো না। যা করার আমাকেই করতে হবে।
নিজেদের অবস্থার কথা ভেবে মুখ কালো করে ফেলল রবিন। নিজেদেরকে জেলে বন্দি কয়েদী মনে হচ্ছে এখন। কোনখান থেকে শুরু করবে?
এখানে লোকের ভিড়ে মিশে যাওয়ার চেষ্টা করবে সে, কিশোর বলল। হোটেল কিংবা বোর্ডিং-হাউসে থাকতে যাবে না, জানে, প্রথমেই ওসব জায়গায় হানা দেবে পুলিশ। কোথায় উঠল সেটার খোঁজ না করে বরং দুটো জায়গায় নজর রাখলে। সুবিধে হবে আমাদের জন্যে।
একা তো মেলায়, ডল বল। আরেকটা কোনখানে?
গুবরেপোকার সম্মেলনে, বলে দিল মুসা। তাই না, কিশোর?
গুবরেপোকার সম্মেলন বলে গুবরেপোকাদের সম্মেলন বোঝায়, হেসে শুধরে দিল কিশোর, আসলে পোকা নিয়ে তো হচ্ছে মানুষের সম্মেলন।
তাহলে কি বলব? গুবরেপোকাপ্রেমিক মানুষের সম্মোন?
হ্যাঁ, তা বলতে পারো। তবে বড়ই জটিল। বরং কলিপটাবিস্টদের কনফারেন্স বলা সহজ।
কলি হোক আর গলি হোক, জিনা বলল, যেটার সম্মেলনই হোক, যাব কি করে ওখানে আমাদের নিশ্চয় ঢুকতে দেবে না।
দেবে, কিশোর বলল। যদি মিস্টার বেবির সঙ্গে যাই। আন্টি আর আইলিন যাবে কিনা জিজ্ঞেস করেছিলেন তিনি, মানা করে দিয়েছে দুজনেই। পারকার আঙ্কেল সময় পেলে যাবেন বলেছেন। না গেলেই ভাল। আমরা যেতে পারব।
যদি ছুটি পাওয়া যায়, শুকনো মুখে বলল রবিন।
ছুটির ব্যবস্থা আমি করব, ডল বলল। যেতে না দিলে মার সামনে গিয়ে এমন কান্নাকাটি শুরু করব, বিরক্ত হয়েই শেষে বেরিয়ে যেতে বলবে।
হাসল মুসা, যদি ধমক দিয়ে বলেন?
তাহলেও বেরোব।
কিশোরের দিকে তাকাল জিনা, কবে থেকে তদন্ত শুরু করতে চাও?
আজ থেকেই, কিশোর বলল। আজ মেলায় যাব। কনফারেন্স কাল থেকে শুরু হবে।
কিন্তু আমরা আজ যেতে পারব কিনা বলতে পারছি না। সব নির্ভর করছে আমাদের দুটি পাওয়া না পাওয়ার ওপর।
এলিজাকে নিয়ে আমারও সমস্যা হবে। আমাকে বেরোনোর জন্যে তৈরি হতে দেখলেই সে সঙ্গে যেতে চাইবে। কেরিআন্টিও নিতে বলবেন। মেয়েটার হাত থেকে মুক্তির কোন উপায়ই দেখতে পাচ্ছি না! চালাকি করেও পার পাওয়া যাচ্ছে না। আচ্ছা এক মুশকিলে পড়লাম!
তোমার নাকি এত বুদ্ধি, কিশোরভাই, ডল বলল, ওকে এড়ানোর জন্যে কিছুই কি করতে পারো না?
দেখি, নিচের ঠোঁটে চিমটি কাটল কিশোর, ভাবতে হবে!
মেলায় গেলে রাফিকে নিয়ে যেয়ো, অনুরোধ করল জিনা। আমরা গেলে ওর সঙ্গে দেখা হবে।
আচ্ছা, নেব।
০৬.
বাড়ি ফিরে রান্নাঘরের জানালা দিয়ে উঁকি দিল কিশোর। ফিসফিস করে আইলিনকে জিজ্ঞেস করল, এলিজা কোথায়?
মুচকি হাসল আইলিন। ওপরে।
প্লীজ, আমার ঘর থেকে একটা বই এনে দাও। আমি যে এসেছি, আইলিনকে বোলো না।
হাসিটা বাড়ল আইলিনের। কি বই?
নাম বলল কিশোর।
মাথা ঝাঁকিয়ে চলে গেল আইলিন। কয়েক মিনিট পর ফিরে এল।
আইলিনকে ধন্যবাদ দিয়ে বইটা নিয়ে চুপচাপ ছাউনিতে চলে এল কিশোর। রাফিয়ান চেঁচামেচি করে এলিজাকে জানান দিতে পারে, সেজন্যে ওর সামনেও পড়ল না।
দুপুর পর্যন্ত নিরাপদেই বই পড়ে কাটিয়ে দিল।
লাঞ্চের আগে আগে ঘরে ঢুকল সে। কেরিআন্টি জিজ্ঞেস করলেন, এতক্ষণ কোথায় ছিলি?
বাড়িতেই তো, অবাক হওয়ার ভান করল কিশোর।
বাড়িতে কোথায়? দেখলাম না তো।
ছাউনিতে। বই পড়ছিলাম।
স্থির দৃষ্টিতে কিশোরের ছিকে তাকিয়ে রইলেন কেরিআন্টি। কি যেন ভাবলেন। তারপর নীরবে কাঁধ ঝাঁকিয়ে চলে গেলেন রান্নাঘরের দিকে।
ওপর থেকে নেমে এসে কিশোরকে দেখতে পেয়েই ঘ্যানর-ঘ্যানর শুরু করল এলিজা। ও কোথায় ছিল, কি করছিল, তাকে না নিয়ে কেন গেল-একশো একটা প্রশ্ন : এড়ানোর একটাই উপায়-চুপ করে থাকা। তা-ই রইল কিশোর।
আজ বিকেলে মেলায় যাচ্ছি আমরা, লাঞ্চের টেবিলে কিশোরের দিকে তাকিয়ে ঘোষণা করল এলিজা।
ভাল, শান্তকণ্ঠে বলল কিশোর, যদিও বুকের ধুকপুকানি বেড়ে গেছে তার।
সাবধান, হুপলা স্টলে গিয়ে রিঙ ছুঁড়ো না কিন্তু।
কেন? অবাক হলো কিশোর।
ওরা সব ঠগ রিঙগুলো ইচ্ছে করেই ছোট বানায়, যাতে পুরস্কারের জন্যে সাজিয়ে রাখা জিনিসগুলোর কোনটাতেই না ঢোকে। ঢুকলেই তো ওটা দিয়ে দিতে হবে, ওদের লস।
রিঙ ছুঁড়ে বহুবার আমি বহু জিনিস পেয়েছি। তুমি পারো না বলেই পাও না। ছোঁড়ার কায়দা আছে।
মিস্টার পারকার এলেন মিস্টার গ্রেগকে সঙ্গে করে। রান্নাঘর থেকে ট্রে হাতে ঢুকলেন কেরিআন্টি।
ভারী লেন্সের ভেতর দিয়ে কিশোর আর মেয়ের দিকে তাকিয়ে দরাজ হাসি। হাসলেন মিস্টার গ্রেগ, বাহ্, চমৎকার জমিয়ে নিয়েছ দেখছি। খুব ভালই কাটছে তোমাদের। সকালে কি কি খেললে?