আমাকে এখন বেরোতে হবে, এলিজা, জরুরী কাজ আছে…
জরুরা কাজটা কি?
দৌড়াতে যাব।
একটু আগে না দৌড়ে এলে? জানালা দিয়ে দেখলাম।
দৌড়ানো শেষ হয়নি। আবার যাব।
তাজ্জব ব্যাপার! এক সকালে কবার দৌড়াও?
যা যন্ত্রণা শুরু হয়েছে, দৌড়ানো ছাড়া উপায় কি?
কিশোরের কথা বুঝতে পারল না এলিজা, মানে?
মানেটানে কিছু না। আমি যাচ্ছি।
আমিও যাব। সাগর আর নদীর পাড় দিয়ে দৌড়াতে আমার ভাল লাগে।
আমি ওসব পারাপারে যাচ্ছি না। পাহাড়ের দিকে যাব।
ও, পাহাড় তো আরও ভাল লাগে। এক সেকেন্ড দাঁড়াও। আমি চট করে কাপড়টা বদলে আসি।
মনে মনে নাছোড়বান্দা মেয়েটার হাত থেকে বাঁচার উপায় খুঁজছে কিশোর, বাঁচিয়ে দিলেন কেরিআন্টি। ড্রইংরুমে ঢুকলেন। এলিজা, তুমি এখানে। আমার একটা কাজ করে দেবে?
বড়দের সম্মান করে এলিজা। কোন কিছু করতে বললে না করে না। কি কাজ, আন্টি?।
ফুলের তোড়াগুলো ঠিকমত বেঁধে ফুলদানিতে সাজিয়ে রাখতে হবে। আমি এক হাতে কুলিয়ে উঠতে পারছি না।
সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে গেল এলিজা। আর এই সুযোগে কিশোর দিল দৌড়। একছুটে ঘর থেকে বেরিয়ে এল। বাড়ির কোণ ঘুরে এসে জানালা দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখল, এলিজা কি করে। বড় একটা কাঁচি হাতে রান্নাঘরের দরজা দিয়ে বাগানে বেরোচ্ছে।
জানালা টপকে ভেতরে ঢুকে পড়ল কিশোর। মুসাকে ফোন করল। যথারীতি খাওয়ায় ব্যস্ত মুসা। রবিন ধরল।
কে, রবিন? বলল উত্তেজিত কিশোর। শোনো, খবর আছে। একেবারে হাতে এসে ধরা দিয়েছে চমৎকার একটা রহস্য। একটু আগে শেরিফ এসেছিলেন।
সংক্ষেপে যত দ্রুত সম্ভব, সব জানাতে লাগল কিশোর।
রান্নাঘরের দরজা দিয়ে বেরোলেও, সামনের দরজা দিয়ে ঘরে ঢুকল এলিজা। হাতে এক গোছা ডাল সহ ফুল, কেটে এনেছে। কিশোরকে দেখে দাঁড়িয়ে গেল।
কথায় এতই মশগুল কিশোর, এলিজাকে ঢুকতে দেখেনি। পেছনে দাঁড়িয়ে সব। শুনে ফেলল এলিজা। ফোন রেখে কিশোর ঘুরে দাঁড়াতেই বলল, তুমি না বললে কালকের ভবঘুরেটার কথা জানতে এসেছিলেন শেরিফ? এখন রহস্য জোগাড় হলো কোনখান থেকে।
জবাব দিল না কিশোর। চট করে তাকিয়ে দেখে নিল, কেরিআন্টি আছেন কিনা। নেই দেখে সোজা দরজার দিকে রওনা হলো।
এই কিশোর, কোথায় যাচ্ছ? এলিজা ডাকল। আমাকে নিয়ে যাও। ফুলগুলো গোছাতে দশ মিনিটও লাগবে না আমার।
কে শোনে কার কথা। কিশোর ততক্ষণে বেরিয়ে চলে এসেছে দরজা দিয়ে। লাফ দিয়ে রাস্তায় নেমেই দৌড়। বেকারদের ওখানে যাবে। নিজের ওপর ভীষণ রেগে গেছে। টেলিফোনে কথা বলার সময় সতর্ক হওয়া উচিত ছিল। সমস্ত রাগটা গিয়ে পড়ল এলিজার ওপর। ও-ই বা কেমন মেয়ে? চুরি করে অন্যের কথা শোনে!
.
০৫.
বেকারদের সামার-হাউসে কিশোরের জন্যে অপেক্ষা করছে মুসা, রবিন, জিনা আর ডল। কিশোরকে একা দেখে জিজ্ঞেস করল জিনা, রাফি কই? আনননি?
কি করে আনব? ওর চেন খুলতে গেলেই তো সুযোগ পেয়ে যেত মেয়েটা, পিছু নিত! হাঁপাতে হাঁপাতে জবাব দিল কিশোর। কি ভাবে পালিয়ে এসেছে জানাল।
রাগে মুঠো পাকিয়ে ফেলল জিনা। ধরে কাঁচি দিয়ে ওর বেণি দুটো যদি কুচ করে কেটে দিতে পারতাম এখন, ভাল হত!
তা যখন পারছ না, রবিন বলল, মেজাজ গরম না করে চুপ থাকাই ভাল। বরং রহস্যটার কথা শুনি।
আগের বিকেলে ফগ কি করে বোকা বনেছে, বন্ধুদের জানাল, কিশোর। শুনে হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ল সবাই।
শেরিফের দিয়ে যাওয়া কাগজ আর ছবিটা বের করল। ছবির ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়ল সবাই। লোকটার কালো চোখে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি, খোটা জরু, সাদামাঠা নাক, পাতলা ঠোঁট, ওপরের ঠোঁটে নাকের ঠিক নিচে একটা কাটা দাগ।
দাগটার ওপর আঙুল রেখে কিশোর বলল, এটা নিয়েই মুশকিলে পড়বে লোকটা। লুকানোর জন্যে বড় গোঁফের ব্যবস্থা করতে হবে। এমনিতে পাতলা গোঁফ আছে লোকটার, তাতে দাগটা ঢাকা পড়বে না, আলগা নকল গোফ লাগাতে হবে। শুধু গোঁফ লাগালে যদি উদ্ভট লাগে, তাহলে সেটা চাপা দেয়ার জন্যে দাড়িও লাগাতে পারে।
কেউ কিছু বলল না। শোনার জন্যে তাকিয়ে আছে কিশোরের মুখের দিকে।
চুল বেশ ঘন, আর সোজা সোজা, কোকড়া বা আগাগুলো বাকা নয়, বলল সে। সেজন্যে পার্ম করে কোকড়া করে নিতে পারে। আজকাল চুল তুলে পাতলা করে নিয়ে সাময়িকভাবে টাকও বানিয়ে নেয়া যায়। লোকটা ছদ্মবেশের ওস্তাদ। ধরা না পড়ার জন্যে অনেক কিছুই করতে পারে।
তাহলে আর ওর ছবি দেখে লাভ কি আমাদের? রবিনের প্রশ্ন।
হাতের রগগুলো ফোলা, দেখো, মুসা বলল। এগুলো ঢাকবে কি দিয়ে?
দস্তানা পরে নেবে, জিনা বলল।
হ্যাঁ, মাথা ঝাঁকাল রবিন। তা লোকটার পছন্দ-অপছন্দ কিছু আছে নাকি?
বিড়াল ভালবাসে, জবাব দিল কিশোর। কাগজটাতে লেখা আছে সব। আরও একটা ব্যাপার-অদ্ভুতই বলতে পারো-পোকামাকড়েও খুব আগ্রহ তার।
খাইছে! কলি? মুসা অবাক।
হ্যাঁ, শখের কলিওপটারিস্ট।
কনফারেন্সে যোগ দিতে যাবে না তো! চেঁচিয়ে উঠল জিনা। গুবরেপোকা ভালবাসে বলেই এসেছে গোবেল বীচে?
গোবেল বীচে হয়তো সেজন্যে আসেনি, কিশোর বলল, জেল থেকে পালিয়ে আর কোনদিকে যাওয়ার সুযোগ না দেখে এখানে ঢুকেছে। তবে আছে যখন, এ রকম একটা সম্মেলনে যোগ দেয়ার সুযোগ সে হয়তো হাতছাড়া করবে না।…কে ভাবতে পেরেছিল, জেলখাটা একজন দাগী আসামী গুবরেপোকা তালবাসে!..হ্যাঁ, বাকি রইল লোকটার তীক্ষ্ণ চোখসেটা ঢাকাও কোন ব্যাপার নয়, চশমা পরে নিলেই হলো…