আহত হলো ফগ। অস্বস্তিতেও পড়ে গেল। স্লিম হওয়ার চেষ্টা তো করছি, স্যার। সকালে দুতিন প্লেটের জায়গায় এক প্লেট শুয়োরের মাংস খাই এখন, দুই হালি ডিমের জায়গায় মাত্র তিনটে…।
হুঁ, হতাশ ভঙ্গিতে মাথা দোলেন শেরিফ। পকেট থেকে একটা খাম বের করলেন, নাও, এতে একটা ফটোগ্রাফ আর কিছু কাগজ আছে। লোকটার স্বভাব চরিত্র সব লেখা আছে। পড়ে নিয়ো।
আগ্রহের সঙ্গে হাত বাড়িয়ে খামটা নিল ফগ। কাগজ বের করে পড়তে লাগল, মাঝারি উচ্চতা…তীক্ষ্ণ দৃষ্টি, পাতলা গোঁফ…ঠোঁটের ওপর একটা কাটা দাগ…
পড়তে পড়তে সহসা সজাগ হয়ে উঠল ফগ। স্যার, এ লোকটাকে তো দেখেছি আমি কাল!
ভুরু কুঁচকে গেল শেরিফের, কোথায়?
সাংঘাতিক লোক, স্যার! ভয়ঙ্কর! গায়ে মোষের জোর, মোষের মতই লাথি মারে। জাপটে ধরতে গেলাম। আমাকে দশ হাত দূরে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে দৌড়ে পালাল।
আরে কোথায় দেখলে?
চোখগুলো বাঘের মত জুলছিল…না না, নেকড়েবাঘের মত! গোঁফ ছিল। কাপড়-চোপড়ে মনে হচ্ছিল সাধারণ ভবঘুরে। এখন বুঝতে পারছি, ভবঘুরে নয়, ছদ্মবেশে ছিল। ইস, আগে জানলে যতই মোষের শক্তি থাক ওর, ধরে রাখার চেষ্টা করতাম।
ফগ! কঠিন হয়ে উঠল শেরিফের কণ্ঠ, বকবকানি বাদ দিয়ে জলদি বলো আমাকে, কোথায় দেখেছ?।
ঝামেলা!…আঁ, ও, মিস্টার পারকারের বাড়িতে। বাগানের ছাউনিতে ঢুকে বসেছিল। একটা মেয়ে চোর চোর বলে চিৎকার শুরু করল। আমি তখন ওপথেই যাচ্ছিলাম। সাইকেল রেখে ঢুকে পড়লাম বাগানে। ছাউনির সামনে গিয়ে যে-ই বেরোনোর জন্যে ধমক দিলাম, হুড়মুড় করে বেরিয়ে এসে আমাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়ে…
মিস্টার পারকার…তারমানে জিনাদের বাড়িতে? কি যেন ভাবছেন শেরিফ, কিশোর ছিল নাকি তখন ওখানে?
থমকে গেল ফগ, না, স্যার, ও ছিল না। খোঁজ নিয়েছি। পোস্ট অফিসে গিয়েছিল চিঠি পোস্ট করতে।
হু, চিন্তিত ভঙ্গিতে বললেন শেরিফ। ঠিক আছে, তোমাকে যে কাজটা দিলাম, সেটা করো। আমি যাচ্ছি, কিশোরের সঙ্গে কথা বলতে।
ওর সঙ্গে কথা বলে কোন লাভ নেই, স্যার। ও তখন ওখানে ছিল না। লোকটার কথা কিছু জানাতে পারবে না…
কিন্তু ফগের কথা শোনার জন্যে বসে থাকলেন না শেরিফ। উঠে রওনা দিলেন দরজার দিকে। পেছন পেছন কে এগিয়ে দিতে চলল ফগ।
জিনাদের বাড়িতে এসে দরজার বেল বাজালেন শেরিফ।
খুলে দিল আইলিন। ও, মিস্টার জিংকোনাইশান! গুড মনিং।
আইলিন, কিশোর আছে? জিজ্ঞেস করলেন শেরিফ। আর কাউকে ডাকার দরকার নেই। শুধু ওকেই ডেকে দাও।
বসার ঘরে বসলেন শেরিফ। কয়েক মিনিট পরেই রানিং সুট পরে এসে হাজির হলো কিশোর।
কি, বেরোচ্ছ নাকি? ভুরু নাচালেন শেরিফ।
না, আঙ্কেল। বাইরে থেকে এলাম।
হঠাৎ ব্যায়াম শুরু করলে কেন?
মোটা হয়ে যাচ্ছি আবার। চর্বি কমানো দরকার।
ভাল। ফুগকেও সেই পরামর্শই দিয়ে এলাম। কিশোর, একটা প্রশ্ন করব, সত্যি জবাব দেবে। কাল ছাউনিতে কাকে দেখে গেছে ফগ?
একটা মুহূর্ত দ্বিধা করল কিশোর। তারপর মুখ তুলে বলল, আমাকে, স্যার।
হুঁ, মুখটাকে গম্ভীর করে রাখলেন শেরিফ, আমার ধারণা তাহলে ঠিকই। কিন্তু ছদ্মবেশ নিতে গেলে কেন? ফগকে বোকা বানানোর জন্যে?
না, আঙ্কেল। এলিজার হাত থেকে বাঁচার জন্যে।
এলিজা?
সব কথা খুলে বলল কিশোর।
অনেক কষ্টে হাসি চাপলেন শেরিফ। বললেন, এই ব্যাপার। আর ফগ ওদিকে তোমাকেই কয়েদী সন্দেহ করে বসে আছে।
আমাকে কয়েদী সন্দেহ করেছে!
জেল থেকে এক আসামী পালিয়েছে। খবর পেয়েছি, এ গায়েই এসে ঢুকেছে।
লোকটাকে কোথায় পাওয়া যেতে পারে, কিশোরকে জানালেন শেরিফ। কিশোরের ওপর ভরসা আছে তার। বলা যায়, ফগের চেয়ে অনেক বেশিই আছে। এর আগে অনেকগুলো জটিল কেসের রহস্য সমাধান করে দিয়েছিল কিশোর। পকেট থেকে এক মুঠো কাগজপত্র বের করে বেছে বেছে একটা কাগজ আর একটা ফটোগ্রাফ নিয়ে কিশোরের দিকে বাড়িয়ে ধরলেন, নাও, এগুলোতে লোকটার স্বভাব-চরিত্র আর চেহারার বর্ণনা পাবে। তোমাকেও যে লোকটার কথা জানানো হয়েছে, এটা ফগকে বোলো না। মেলা আর কনফারেন্সে যোগ দেয়ার জন্যে নতুন নতুন লোক আসছে, অচেনা মুখ দেখা যাবে অনেক। তাদের মধ্যে লুকিয়ে থাকার চেষ্টা করবে নোকটা।
থ্যাংক ইউ, আঙ্কেল, কিশোরের নজর ছবিটার দিকে, আমাকে জানানোর জন্যে অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। লোকটাকে খুঁজে বের করার যথাসাধ্য চেষ্টা করব। আমি। মুসারা তো এ মুহূর্তে আটকে আছে মিস্টার বেকারের বাড়িতে। তদন্তে আমাকে তেমন সাহায্য করতে পারবে না। তবু, যতটা পারা যায়, কাজে লাগানোর চেষ্টা করব।
কিশোর, সাবধান করে দিলেন শেরিফ, ডাকাতির কেসে জেল হয়েছিল। লোকটার। ভীষণ বিপজ্জনক। সাথে পিস্তল- টিস্তলও থাকতে পারে। নজর রাখবে কেবল। কিছু করতে যেয়ো না! চিনতে পারলে সঙ্গে সঙ্গে আমাকে খবর দেবে।
ঠিক আছে, তাই করব, আঙ্কেল।
সোফা থেকে উঠে দরজার দিকে রওনা হলেন শেরিফ। এই সময় ওপর থেকে নেমে আসতে দেখা গেল এলিজাকে।
শেরিফ বেরিয়ে গেলেন।
কিশোরের সামনে এসে দাঁড়াল এলিজা। গোবেল বীচের শেরিফ, তাই না? কেন এসেছিলেন? গতকালকের সেই ভবঘুরেটার কথা জিজ্ঞেস করতে?
হ্যাঁ বেশি কথার মধ্যে গেল না কিশোর। জেলপালানো আসামীটার কথা জানাতে চায় না এলিজাকে।
আমাকে ডাকা উচিত ছিল তোমার, অভিযোগ করল এলিজা। হাজার হোক, ওকে আমিই প্রথম দেখেছি। আমার সাক্ষীর একটা দাম আছে। ছাউনিতে গিয়ে না দেখলে, চোর চোর করে চিৎকার না করলে ওই পুলিশম্যানটা আসত না, জানাজানি হতো না, কালকে সর্বনাশ করে দিয়ে যেত…।