ওকে এড়ানোর সুযোগটা পেয়ে গেল কিশোর। বেশ, তাড়াতাড়ি শেষ করো। এমনিতেই পোস্ট অফিসে যেতে হবে আমাকে, কেরিআন্টি একটা চিঠি দিয়েছেন পোস্ট করতে। তোমারটাও করে দিয়ে আমব।
ঠিক আছে। তারপর দুজনে বেড়াতে বেরোব।
চিঠি নিয়ে পোস্ট অফিসে গেল কিশোর। ইচ্ছে করেই ফিরতে দেরি করল। অযথা এখানে ওখানে ঘুরে বেড়াল। মুসাদের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ নেই। নিশ্চয় এখন পড়তে হচ্ছে এদের। গিয়ে ডিসটার্ব করা উচিত হবে না।
এলিজার ওপর ভীষণ রাগ লাগল কিশোরের। কোথায় এখন ঘরে কিংবা বাগানে বসে বই পড়ত সে, তা না, মেয়েটার ভয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াতে হচ্ছে। ভাবতে ভাবতে একটা বুদ্ধি এসে গেল মাথায়। বাড়ি ফিরে এল। বসার ঘরের জানালা দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখল এলিজা আছে কিনা। নেই। তারমানে নিজের ঘরে বই পড়ছে কিংবা অন্য কিছু করছে। চট করে জানালার চৌকাঠ ডিঙিয়ে ঢুকে পড়ল সে। রাফিয়ান রয়েছে তার ঘরে, শেকলে বাধা। পারকার আঙ্কেল বেঁধে রাখার হুকুম দিয়েছেন, যাতে যখন তখন ঘরে ঢুকে বিরক্ত করতে না পারে। তাতে সুবিধে হলো কিশোরের। তার সাড়া পেয়ে ডাকাডাকি করে সারা বাড়ি জানান দিতে পারল না কুকুরটা।
চুপচাপ এসে নিজের ঘরে ঢুকে পড়ল কিশোর। দ্রুত ছদ্মবেশ নিয়ে ভবঘুরে সাজল। এলিজার অলক্ষে আবার ঘর থেকে বেরিয়ে, বাগান পেরিয়ে চলে এল ছাউনিতে। সঙ্গে করে বই নিয়ে এসেছে। আরাম করে বসে পড়তে শুরু করল। সে যে ফিরে এসেছে এলিজা জানতেও পারবে না। কোন কারণে যদি ছাউনিতে এসে উঁকি মারে, তাহলে দেখবে একজন ভবঘুরেকে। ধমক ধামক মারবে কিংবা হই-চই করে জোয়ালিনকে ডাকবে। নির্বিবাদে বেরিয়ে যাবে তখন কিশোর।
কিন্তু নির্বিবাদে বেরোনো আর হলো না। কিশোরের অপেক্ষা করতে করতে অস্থির হয়ে উঠল এলিজা। চিঠি পোস্ট করতে এত দেরি? শেষে আর ঘরে থাকতে না পেরে বেরিয়ে এল। কথা না বলে কতক্ষণ থাকা যায়। বাগানে অস্থিরভাবে পায়চারি করল কিছুক্ষণ। একা একা সময় কাটছে না। ছাউনিটা দেখে কৌতূহল হলো। ধীরে ধীরে চলে এল সেখানে।
পায়ের শব্দ শুনে একটা ফুটো দিয়ে উঁকি দিল কিশোর। এলিজাকে দেখে তাড়াতাড়ি ছিটকানি তুলে দিল দরজার।
শুনে ফেলল এলিজা। কৌতূহল বাড়ল তার। ফাঁক দিয়ে উঁকি মেরে দেখল, অচেনা একটা লোক দাঁড়িয়ে আছে ঘরের মধ্যে। সঙ্গে সঙ্গে চোর চোর বলে চিৎকার শুরু করে দিল সে।
এলিজার ডাক শুনে রাফিও ঘাউ ঘাউ শুরু করল। শেকলে বাঁধা থাকায় আসতে পারছে না।
রান্নাঘরের জানালা দিয়ে উঁকি দিল জোয়ালিন।
কেরিআন্টি শুয়েছেন। বেডরূম থেকে বোধহয় চিৎকার কানে যায়নি তার। স্টাডিতে দরজা-জানালা আটকে বসে থাকা মিস্টার পারকার আর মিস্টার গ্রেগের কানেও নিশ্চয় যায়নি। তাহলে বেরোতেন।
কিন্তু গেল আরেকজন বিশেষ লোকের কানে। কাকতালীয়ভাবে ঠিক এই সময় সেখান দিয়ে যাচ্ছিল ফগর্যাম্পারকট। চোর চোর শুনে একটা মুহূর্ত আর দেরি করল না। গেটের কাছে সাইকেল রেখে ছুটে ঢুকল ভেতরে। দৌড়ে এল ছাউনির দিকে। চেঁচিয়ে জিজ্ঞেস করল, কই, কোথায় চোর?
ছাউনির মধ্যে! চিৎকার করে বলল এলিজা।
ঝামেলা! দরজায় থাবা মারতে শুরু করল ফগ। এই দরজা খোলো! জলদি! ভাল হবে না বলছি!
খুলে গেল ছিটকানি।
চোরকে জাপটে ধরতে তৈরি হলো ফগ।
কিন্তু বেরোল না চোর।
আস্তে করে পাল্লা ফাঁক করে ভেতরে উঁকি দিতে গেল ফগ। সঙ্গে সঙ্গে তাকে প্রায় ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়ে ছুটে বেরোল ভবঘুরের পোশাক পরা চোরটা। একদৌড়ে গিয়ে দেয়াল টপকে অদৃশ্য হয়ে গেল ওপাশে।
বিশাল বপু নিয়ে দেয়ালের কাছে যখন পৌঁছল ফগ, কয়েকটা ইট জোগাড় করে তার ওপর উঠে তাকাল অন্যপাশে, চোর ততক্ষণে হাওয়া।
.
০৪.
পরদিন সোমবার সকালে বড় এক প্লেট মাংস ভাজা, আর তিনটে ডিম দিয়ে নাস্তা সারতে বসেছে ফগ, এই সময় বাইরে এসে থামল একটা বড় গাড়ি। সেটার দিকে চোখ পড়তেই হাঁ হয়ে ঝুলে পড়ল তার চোয়াল। কাটা চামচে গাঁথা মাংস গাথাই রইল। ডান হাতটা স্থির হয়ে রইল মাঝপথে, মুখ পর্যন্ত আর পৌঁছাল না।
ঝামেলা! ভাবছে ফগ। এই সাতসকালে শেরিফ এসে হাজির হলেন কেন? কাজের বুয়া মিসেস টারমারিককে ডেকে বলল, শেরিফকে ড্রইংরুমে বসাতে। তারপর তাড়াতাড়ি উঠে ইউনিফর্ম পরতে শুরু করল।
এক মিনিটে পোশাক পরা শেষ করে ড্রইংরুমে ঢুকল। গুড মর্নিং, স্যার। কোন জরুরী কাজ? আমাকে ডাকলেই তো চলে যেতাম।
ফগ, কোন ভূমিকার মধ্যে গেলেন না শেরিফ লিউবার্তো জিংকোনাইশান, এই এলাকায় একটা সাংঘাতিক আসামী এসে ঢুকেছে। জেল পালানো কয়েদী। ভীষণ চালাক। ছদ্মবেশ নেয়ার ওস্তাদ। গোবেল বীচে যে মেলা হচ্ছে, আমার মনে হয় ওখানে কোথাও লুকানোর চেষ্টা করবে। নজর রাখবে সেদিকে। সন্দেহজনক কিছু চোখে পড়লে সঙ্গে সঙ্গে জানাবে আমাকে।
শেরিফ বাড়ি বয়ে তাকে খবর দিতে এসেছেন, নিজেকে খুব কেউকেটা মনে হলো ফগের। কণ্ঠস্বরটাকে ভারী করে তুলে বলল, মেলাতে নজর রাখতে অবশ্যই যাব, স্যার, তবে ইউনিফর্ম পরে নয়, ছদ্মবেশে। আপনি বোধহয় জানেন না, স্যার, পুলিশ স্কুলে আমি ছদ্মবেশের ওপর স্পেশাল কোর্স করেছিলাম।
তাই নাকি? সন্দেহ জাগল শেরিফের চোখে। কিন্তু তোমার ওই মোটা শরীর লুকাবে কোথায়? পেট? ধরা পড়ে যাবে তো। ব্যায়াম-ট্যায়াম করে চর্বি একটু কমাও না। খাওয়াটাও কমাও।