ট্যাক্সি ডাকব?
ডাকো। গুবরেপোকা সহ বাবাকে তুলে দিই। আমি ট্যাক্সিতে উঠতে পারি। কেমন বদ্ধ বদ্ধ লাগে। তোমার সঙ্গে হেঁটে হেঁটেই যাব। বেশি দূরে নাকি?
ততটা নয়। হেঁটে যাওয়া যায়। কিন্তু আমি তো সাইকেল নিয়ে এসেছি।
তাহলে সাইকেলে চেপেই যাব। সামনে ডাণ্ডায় বসে, কিংবা পেছনের ক্যারিয়ারে। চালাতে পারবে তো? না পারলে চিন্তা নেই। আমি পারব। দুজন তিনজন নিয়ে চালিয়ে অভ্যেস আছে আমার।
মেয়েটার চ্যাটাং চ্যাটাং কথায় মনে মনে চটে গেলেও মুখে ভাবটা প্রকাশ পেতে দিল না কিশোর। একটা ট্যাক্সি যেতে দেখে হাত তুলল। মিস্টার গ্রেগকে তাতে তুলে দিল। সুটকেসটা কোনমতেই সীটের ওপর কিংবা মেঝেতে রাখতে দিলেন না তিনি, নিজের হাঁটুর ওপর রেখে শক্ত করে ধরে রাখলেন। ব্যাগটা মেঝেতে রেখে কোথায় যেতে হবে ড্রাইভারকে ঠিকানা বলে দিল কিশোর।
চলে গেল ট্যাক্সি। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল এলিজা। যাক, বাঁচা গেল। এখন। ধীরে সুস্থে যাওয়া যাবে। এই, কাছাকাছি খাবারের দোকান আছে নাকি? নাস্তা করেছি সেই সকাল সাতটায়, খিদেয় পেট জ্বলছে আমার।
খানিক দূরে দাঁড়িয়ে আছে মুসারা। প্রায় সব কথাই কানে যাচ্ছে তাদের। ওদের দিকে তাকাল কিশোর। ওর কাচুমাচু মুখ দেখে হাসতে শুরু করল ওরা। এলিজার, দিকে ফিরে বলল কিশোর, আছে, দোকান। আগে এসো আমার বন্ধুদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিই।
সবাইকে হ্যালো বলল এলিজা। জিনার পাশে দাঁড়ানো রাফিয়ানকে দেখিয়ে, বলল, তোমার কুকুর নাকি?
তো আর কার?
জিনার মেজাজ জানা আছে কিশোরের। ছেড়ে কথা কইবে না এলিজাকে। ওর মুরুব্বীগিরি সওয়ার তো প্রশ্নই ওঠে না। রাস্তার ওপরই না একটা কেলেঙ্কারি ঘটে যায় এ জন্যে তাড়াতাড়ি বলল, ঠিক আছে, তোমরা যাও এখন। আমি এলিজাকে নিয়ে চা দোকানে যাচ্ছি। তারপর বাড়ি যাব।
.
০৩.
সারাটা দিন কিশোরের ফোনের অপেক্ষা করল মুসারা, কিন্তু ফোন এল না। বিকেল বেলা চা খেতে বসেছে, এই সময় হাঁপাতে হাপাতে ঘরে ঢুকল কিশোর!
রান্নাঘর থেকে ট্রে হাতে ঢুকছিলেন মিসেস বেকার, কিশোরকে দেখে থমকে দাঁড়ালেন। বড় বড় হয়ে গেল চোখ। এ কি পোশাক পরেছু! ভেজা কেন? বৃষ্টি হচ্ছে নাকি?
সরি, মিসেস বেকার, দৌড়াতে বেরিয়েছিলাম। ওই পোশাকেই চলে এসেছি। বৃষ্টি না, ঘাম।
ডল বলল, কিশোর ভাই বেশি মোটা হয়ে যাচ্ছে তো, স্লিম হওয়ার জন্যে ব্যায়াম করে।
ও, আমি তো ভাবলাম… টেবিলের দিকে এগোলেন মিসেস বেকার, এসো। চা খাও।
ধপ করে একটা চেয়ারে বসে পড়ল কিশোর।
মিসেস বেকার চলে যেতে মুসা বলল, এত তাড়াতাড়ি দৌড়াতে বেরোলে যে?
সাধে কি আর বেরোই, গুঙিয়ে উঠল কিশোর। এলিজার হাত থেকে রেহাই পাওয়ার জন্যে পালিয়েছি। একনাগাড়ে কথা বলতে থাকে ও, মাথা ধরিয়ে দেয়। যেখানে যাই, পিছে পিছে যায়। আর কোন উপায় না দেখে শোবার ঘরে গিয়ে ঢুকলাম। সেখানেও বাঁচতে পারলাম না। ঠিক গিয়ে হাজির। দরজায় থাবা মারতে শুরু করল। শেষে খুলে দিলাম। বলল, একটা বই নিতে এসেছে। বুককেসে রাখা বইগুলো ঘটতে শুরু করল।
ধাক্কা মেরে বের করে দিলে না কেন? রেগে উঠল জিনা।
দিতাম না ভেবেছ? কিন্তু কিছু করলেই তো পারকার আঙ্কেল যাবেন। খেপে…উহ, কি যে বিপদে পড়লাম!
এই বাবাটাই হলো যত যন্ত্রণার মূল! নিজে উন্মাদ, মানুষকেও পাগল বানিয়ে ছাড়বে। কাউকে শান্তিতে থাকতে দেবে না।
তারপর কি করলে? জানার জন্যে অস্থির হয়ে উঠেছে রবিন। তাড়ালে কি করে?
তাড়াতে কি আর পারি, কিশোর বলল। এ বই দেখে, ও বই ওল্টায়, সেটা ঘাটে, আর সেই সঙ্গে বকর বকর। চালিয়েই গেল। বিরক্ত হয়ে বিছানা থেকে নেমে পড়লাম। অবেলায়ই দৌড়ানোর জন্যে তৈরি হতে লাগলাম। আমাকে রানিং সুট পরতে দেখে জিজ্ঞেস করল, কোথায় যাচ্ছি। বললাম, দৌড়াতে। সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠল, সে-ও দৌড়াবে। নিজের ঘরে গেল কাপড় বদলাতে। এই সুযোগে নিচে নেমে বাগানে, গেট পেরিয়ে রাস্তায়; তারপর দৌড়, দৌড়, পেছন ফিরে তাকালাম না আর।
হেসে ফেলল মুসা, যদি এসে ধরে ফেলে এই ভয়ে?
মাথা ঝাঁকাল কিশোর।
ভাল বিপদেই পড়েছ।
বেশি দেরি করতে পারব না, করুণ কণ্ঠে বলল কিশোর। বেরোনোর সময় কেরিআন্টি দেখেছেন। দৌড়ানোর পোশাক দেখে বেরোতে বাধা দেননি, তবে তাড়াতাড়ি ফিরে যেতে বলেছেন। একা থাকতে থাকতে বিরক্ত হয়ে যদি আঙ্কেলদের বিরক্ত করতে যায় এলিজা, এই ভয়ে।
সবাই সহানুভূতি জানিয়ে নানা কথা বলল কিশোরকে, কিন্তু এলিজার হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় বাতলাতে পারল না। শেষে কিশোর বলল, এই অত্যাচার সহ্য করা যাবে না। একটা বুদ্ধি বের করতেই হবে।
বন্ধুদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাড়ি ফিরে চলল সে।
সেদিন শনিবারের সন্ধ্যা। পরদিন গির্জায় যেতে হবে বলে আর কিশোরকে বিরক্ত করার সময় পেল না এলিজা। সকাল সকাল ঘুমোতে গেল।
পরদিন সকালে উঠে গির্জায় গেল। ধর্মীয় রীতিনীতিগুলো মোটামুটি মেনে চলে সে। দুপুরে খাওয়ার পর চিঠি লিখতে বসল। তারপর যেই কিশোরকে বেরোনোর জন্যে তৈরি হতে দেখল, অমনি ডবল বেনি ঝাঁকিয়ে জিজ্ঞেস করল, কোথায় যাচ্ছ?
কাজ আছে, জবাব দিল কিশোর।
ইকটু দাঁড়াও। চিঠিটা হয়ে গেছে আমার। তোমার সঙ্গে আমিও বেরোব।